ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ঢাকা-ওয়াশিংটনের লক্ষ্য অভিন্ন: মার্কিন রাষ্ট্রদূত
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য ভিন্ন হলেও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য দু’দেশের রূপকল্প অভিন্ন বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি. হাস।
বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) রাজধানীর ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সি বাংলাদেশ ক্যাম্পাসে ‘মুভি ফরোয়ার্ড ইন দ্যা ইন্দো-প্যাসিফিক: বাংলাদেশ’স রোল ইন ফস্টারিং অ্যান ওপেন, রেজিলিয়েন্ট অ্যান্ড ইন্টারকানেক্টেড বে অব বেঙ্গল অ্যান্ড বিইয়ন্ড’ শীর্ষক একাডেমিক কনফারেন্সে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এ মন্তব্য করেন।
ঢাকার মার্কিন দূতাবাস ও ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সি বাংলাদেশর সেন্টার ফর বে অব বেঙ্গল স্টাডিজ যৌথভাবে এই কনফারেন্সের আয়োজন করে।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, যেসব ক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য অভিন্ন হয়, সেগুলো নিয়েই আমরা অগ্রসর হই, একসঙ্গে কাজ করতে পারি এবং করি।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালের প্যারিস শান্তি ফোরামে এই অঞ্চলের জন্য বাংলাদেশের রূপকল্প বর্ণনা করেছেন। সেই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র একমত।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলপত্রে পাঁচটি মূল উপাদান রয়েছে যা এ অঞ্চলে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী সম্পৃক্ততার পথনির্দেশ করবে। যুক্তরাষ্ট্র এমন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের স্বপ্ন দেখে যা হবে অবাধ ও উন্মুক্ত, আন্তঃসংযুক্ত, সমৃদ্ধশালী, নিরাপদ এবং ঝুঁকি-সহিষ্ণু।
আজকের সম্মেলনটি উক্ত প্রতিটি স্তম্ভ, সেগুলো অর্জনে বাংলাদেশের অবদান এবং ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে বাংলাদেশের সাথে অংশীদার হতে পারে সেসব বিষয়ে আলোকপাত করার সুযোগ এনে দিয়েছে মন্তব্য করে পিটার হাস বলেন, প্রথমত যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল গঠনের বিষয়টিকে এগিয়ে নেবে। এর অর্থ এমন একটি অঞ্চল যেখানে স্বচ্ছভাবে সমস্যার সমাধান করা হবে ।
নিয়মনীতি প্রণীত এবং প্রয়োগ করা হবে ন্যায়সঙ্গতভাবে। প্রতিটি দেশ তাদের নিজস্ব পথ ও তাদের নিজস্ব অংশীদার বেছে নিতে সক্ষম হবে।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার নৃশংস ও বিনা প্ররোচনায় আগ্রাসন বিশ্বের জন্য একটি সতর্কবাণী। আমাদের নীতি-আদর্শগুলো অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। একটি বিষয় আমি সুস্পষ্ট করতে চাই, এই নীতি-আদর্শগুলো সুরক্ষার লক্ষ্য কোনো দেশকে দাবিয়ে রাখা নয়। বরং সব দেশের জন্য তাদের নিজ নিজ পথ বেছে নেওয়ার অধিকার সুরক্ষা করা, যা হবে জবরদস্তি ও ভয়ভীতিমুক্ত।
এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে উল্লেখ করে পিটার হাস বলেন, উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশ তাদের স্থল ও সমুদ্র-সীমান্ত বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে বঙ্গোপসাগরকে বিশ্বের কাছে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত করে তুলেছে। তা ছাড়া অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল হবে এমন একটি এলাকা যেখানে মালামাল, ধারণা ও মানুষ অবাধে স্থল, সাইবার পরিসর ও উন্মুক্ত সমুদ্রে চলাচল করবে।
ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল কোন সামরিক জোট নয়। এর উদ্দেশ্যও সেটা নয়। ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল যুক্তরাষ্ট্রপন্থী অঞ্চল বা চীনপন্থী অঞ্চলের মধ্যেকার প্রতিযোগিতাও নয়। প্রকৃতপক্ষে, আমরা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে স্বাতন্ত্র্য অঞ্চল হিসেবেই দেখি।
ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলটি কোন দেশকে বিভিন্ন দেশের মধ্যে কোনটিকে বেছে নেওয়ার উদ্দেশেও প্রণয়ন করা হয়নি উল্লেখ করে পিটার হাস বলেন, কৌশলটির অন্যতম মূলনীতি হলো, প্রতিটি দেশই চাপ বা জবরদস্তি ছাড়াই নিজস্ব পথ বেছে নিতে সক্ষম হবে।
সংক্ষেপে, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলটি এমন একটি অঞ্চল তৈরির এক ইতিবাচক ও সম্মিলিত রূপকল্প যার আওতায় সমস্ত দেশ তথা বাংলাদেশ, চীন, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও এ অঞ্চলের দেশেগুলোর প্রতিটি জেলাই উন্নতি লাভ করতে পারবে।
২১ শতকের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা যেমন জলবায়ু সংকট, বিশ্ব স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ এবং দেশগুলো স্বাধীনভাবে তাদের নিজস্ব পথ বেছে নিতে পারবে কিনা তার সবই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সঙ্গে সম্পর্কিত এমনটা জানিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, অন্য যেকোনো অঞ্চলের তুলনায় এ অঞ্চলের সম্ভাব্য ঘটনাগুলো একবিংশ শতাব্দীর বৈশ্বিক গতিপথ রূপায়ণে সবচেয়ে সক্রিয় ভুমিকা রাখবে।
তাই এই যৌথ রূপকল্প বাস্তবায়নের অংশীদার হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের এক সঙ্গে কাজ করা জরুরি বলে অভিমত ব্যক্ত করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।
আরইউ/এমএমএ/