যোগাযোগ ক্ষেত্রে চেহারা পাল্টে যাচ্ছে কক্সবাজারের

সড়ক, রেল ও আকাশ পথে আমূল বদলে যাচ্ছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজার। গত কয়েক বছরে এই পর্যটন শহরের উন্নয়নে সরকার নানামুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এসব পরিকল্পনার কিছুটা বাস্তবায়ন হয়েছে। কিছু প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। নতুন করে আরও কিছু প্রকল্পের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে কক্সবাজারের এসব উন্নয়ন কর্মকান্ড নিয়ে বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে অনুষ্ঠিত হবে জমকালো অনুষ্ঠান। ‘উন্নয়নের নতুন জোয়ার, বদলে যাওয়া কক্সবাজার’ শিরোনামে এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যেখানে তুলে ধরা হবে কক্সবাজারকে ঘিরে নেওয়া সরকারর নানামুখী উন্নয়ন কর্মকান্ড।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পর্যটন শহর ক্সবাজারকে ঘিরে সেড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সরকার ব্যপক উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চালিয়েছে কক্সবাজারে। শুধু তাই নয়, কক্সবাজারের সঙ্গে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতেও বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের উন্নয়নে নেওয়া সরকারের পদক্ষেপগুলোর মধ্যে যে কয়টি বাস্তবায়ন হয়েছে সেগুলোর মধ্যে, কক্সবাজারের কলাতলি পয়েন্ট থেকে টেকনাফ পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছে ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ। ৯৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে মেরিন ড্রাইভটি নির্মাণ করা হয়েছে ২০১৮ সালে। ২০ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে টেকনাফ-শাহপরীর আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্থকরণ ও দ্বীপ শক্তিশালী করার কাজ হয়েছে। চৌফলদন্ডী সেতুসহ চৌফলদন্ডী-খুরসখুল সড়কের ১০ কিলোমিটার জেলা সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।
২০১৮ সালে নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে বালুখালি-ঘুনধুম বর্ডার সড়কের নির্মাণকাজ। বিসিআইএম করিডোরভূক্ত ১ দশমিক ৭০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের চার লেনের এ সড়ক নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৭৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
কক্সবাজারে বর্তমানে সড়ক-মহাসড়ক বিভাগের আওতায় উন্নয়নের মহাযজ্ঞ চলছে। চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজ। মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ফাসিয়াখালি পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সংযোগ সড়ক নির্মাণে ব্যয় ৮ হাজার ৮২১কোটি ৩৪ লাখ টাকা। যারমধ্যে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ২ হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ টাকা। আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সড়ক ও সেতুর নকশা চূড়ান্ত করা হয়েছে। দরপত্র ডকুমেন্ট তৈরি করে সম্মতির জন্য পাঠানো হয়েছে। এই প্রকল্পের জন্য ৫২৫ দশমিক ১৮৭ একর ভূমি অধিগ্রহণের কাজও চলমান রয়েছে।
মাতারবাড়ী কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের কোহেলিয়া সেতু নির্মাণ ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার মহাসড়কের সংযোগ সড়ক নির্মাণে প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল ২০১৫ সালে। কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের জুন মাসে। কিন্তু নানান জটিলতার কারণে এই প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
এডিবির অর্থায়নে বিদ্যমান কক্সকবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের উন্নয়ন। ৪৫৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। কাজের মেয়াদ আগামী জুন মাস পর্যন্ত। টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ জেলা মহাসড়কের হাড়িয়াখালি থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্ন্ত সড়ক পুনঃনির্মাণ ও প্রশস্তকরা। কক্সবাজার লিংক রোড-লাবণী মোড় সড়ক চার লেনে উন্নিত করা, রামু-ফতেখাঁরকুল-মারচ্যা জাতীয় মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, চট্টগ্রাম-কক্সাবাজার এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পপ, সীতাকুন্ড-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের প্রাক-সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্প সহ আরও বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।
একইভাবে কক্সবাজারের উন্নয়নে আরও অন্তত পাঁচটি প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
রেলপথ উন্নয়নেও দ্রুতগতিতে কাজ এগিয়ে চলছে। ইতিমধ্যে চট্টগ্রামের দোহাজারি থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণের কাজ অনেকদূর এগিয়ে গেছে। কক্সবাজারে ঝিনুক আকৃতির আধুনিক রেল স্টেশন নির্মাণের কাজও চলছে সমানতালে।
আকাশপথেও কক্সবাজারের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ করতে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপ দেওয়া হচ্ছে। বিমানবন্দরের উন্নয়নে কাজ চলছে। সাগরের উপরে নির্মাণ করা হচ্ছে রানওয়ে। কক্সবাজারে অবতরণের সময়ই যাত্রীরা সমুদ্রের ছোয়া পাবেন।
সব মিলিয়ে আগামী কয়েক বছরে যোগাযোগ অবকাঠামোর ক্ষেত্রে চেহারা পাল্টে যাবে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের।
/এএস
