সংসদে আনন্দের ঘটনা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর জীবনের সব থেকে আনন্দের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন। তিনি বলেন, গৃহহীন মানুষকে একটা ঘর দিতে পেরেছি। সেই মানুষটার জীবনকে সে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। আমার জীবনে সেটাই হচ্ছে সব থেকে বড় আনন্দের দিন। একজন মানুষ যার কিছুই ছিল না তাকে একটা ঘর দিয়ে তার মুখে হাসি ফোঁটাতে পেরেছি এর থেকে বড় আনন্দের কিছু হতে পারে না। সেদিন শুধু আনন্দ না, সেদিন চোখের পানি রাখতে পারিনি। আমি অঝর ধারায় কেঁদেছি।
বুধবার (৩০ মার্চ) জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা এভাবে কথা বলেন। যদিও প্রশ্নকারী সম্পূরক প্রশ্ন করতে গিয়ে প্রশ্ন না করে প্রধানমন্ত্রীর স্মৃতি জানতে চেয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশের বহু মানুষ গৃহহারা, ভূমিহীন, ঘর নাই, বাড়ি নাই, ফুটপাতে থাকে, রাস্তার পাশে থাকে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর উদ্যোগ নিয়েছিলেন যে প্রত্যেকের জমির পরিমাণ ১০০ বিঘা করে সিলিং করে দিয়ে অতিরিক্ত জমি খাস জমি করে সেটা ভূমিহীনদের মাঝে বিতরণ করবেন এবং তাদের বিনা পয়সায় গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প নিয়ে ঘর বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার কাজ শুরু করেছিলেন। কারণ তার স্বপ্ন ছিল এই দেশের কোন মানুষ গৃহহীন থাকবে না। কোন মানুষ ঠিকানাবিহীন থাকবে না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সংগ্রাম করেছেন তার এটা একটা লক্ষ্য ছিল। জাতির পিতার যে স্বপ্ন সেটা বাস্তবায়ন করাই তো আমরা একমাত্র কাজ। এদেশের মানুষকে উন্নত জীবন দেওয়া। আমরা জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ১৯৯৬ সাল থেকে যখন সরকারে এসেছি ভূমিহীন মানুষের মাঝে ঘর তৈরি করে দিচ্ছি এবং পুন:বাসন করে দিচ্ছি।
তিনি বলেন, আমরা যে ঘর দিচ্ছি, শুধু ঘর দিয়ে বসে থাকছি না। ঘর দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অর্থ দেওয়া হচ্ছে, ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে এবং তাদের জীবন জীবিকা পাল্টে দেওয়া হচ্ছে। আমার জীবনে মনে হয় ১৫ আগস্টের পর যে দু:খ, কষ্ট, যন্ত্রণা আমাদের ভোগ করতে হয়েছে সেই দু:খের বোঝা নিয়েই তো বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলাম, যে আমার বাবার যে স্বপ্নটা দেখেছেন এদেশের মানুষকে নিয়ে সেই স্বপ্ন পূরেণ করব। ঘর দেওয়ার এক বছর বা দুই বছর পর আবার যখন আমি মাঝে মাঝে খোঁজ নিই, প্রধানমন্ত্রীর অফিস খুব ভালোভাবে মনিটর করে। আমাদের অফিসের মূখ্যসচিব নিজে অনেক সময় যাচ্ছেন, গৃহহীন সেই মানুষরা কেমন আছে দেখতে। ঘুরে এসে যে ছবি সেদিন আমার কাছে পাঠালা তখন সেই মানুষের যে অনুভূতি। একটা ঠিকানা পেয়েছে সেই আনন্দে তাদের চোখের যে কাঁন্না, সেই হাসি কাঁন্না বেদন উপলব্ধি করতে পেরে আমিও আপ্লুত হই।
শেখ হাসিনা বলেন, একটা মানুষ, একটা পরিবার যার ঠিকানা ছিল না। সেই ঘর পাওয়ার পর তার জীবন যে পাল্টে গেছে, সেই অভাব দারিদ্র এগুলো আর তার মাঝে নেই। তার জীবনকে সে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। আমার জীবনে সেটাই হচ্ছে সব থেকে বড় আনন্দের দিন। যে একজন মানুষ যার কিছুই ছিল না তার একটা ঘর দিয়ে তার মুখে হাঁসি ফোঁটাতে পেরেছি। এর থেকে বড় আনন্দের কিছু হতে পারে না।
এসএম/