ধারের টাকা ফেরত চাওয়ায় মুদি দোকানিকে খুন: সিআইডি
নেত্রকোনার দুর্গাপুরে পাওনা টাকা ফেরত চাওয়ায় ও মুদির দোকানে ডাকাতির সময়ে বাধা দেওয়ায় ব্যবসায়ীর মাথায় কাঠ দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়। ঘটনার সময় ওই ব্যবসায়ীর দোকানের ক্যাশ বাক্সে থাকা ১০ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা।
নিহত হেকমত আলী নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর থানার মধ্যমবাগান গ্রামের মৃত মেহের আলীর ছেলে। তিনি ওই এলাকার একজন তেল ও মুদি ব্যবসায়ী ছিলেন। এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত মাসুদ মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডি জানায়, নেত্রকোনার দুর্গাপুর থানার দুর্গাপুর ইউনিয়নের “হাবিব ভ্যারাইটিজ স্টোর” নামের একটি মুদি ও জ্বালানি তেলের দোকানে ২০ মার্চ রাত ১০টা থেকে রাত পৌনে ২টার সময়ে মাসুদ মিয়া তার সহযোগীদের নিয়ে ডাকাতি করতে যায়। তখন ওই দোকানের মালিক হেকমত আলী তাদের বাঁধা দিলে তারা হেকমত আলীকে আঘাত করে হত্যা করে।
সিআইডি বলছে, মূলত ধার দেওয়া টাকা ফেরত চাওয়ায় মুদি দোকানিকে হত্যা করা হয় এবং পরে ওই দোকানে ডাকাতি করে চক্রটি।
এ ঘটনার পরের দিন নিহত হেকমতের ছেলে মাহাবুব আলম মাসুদ মিয়ার নামে একটি হত্যা মামলা করেন। দুর্গাপুর থানার মামলা নম্বর- ১৮।
বুধবার (৩০ মার্চ) সিআইডির সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তাধর।
বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তাধর বলেন, এ ঘটনার পরে বিভিন্ন তদন্ত সংস্থার পাশাপাশি সিআইডির এলআইসি শাখা সার্বিক দিক দিয়ে তদন্ত শুরু করে। তদন্তের সময় বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য যাচাই-বাছাই করে ঘটনার সাথে মাসুদ মিয়ার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। তখন সিআইডির এলআইসির একটি চৌকস দল তাকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালায়। সিআইডির অভিযানে জামালপুরের সরিষাবাড়ী এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত মাসুদ মিয়ার বারাত দিয়ে সিআইডি জানায়, তিনি পেশায় একজন ড্রাম ট্রাকের চালক। দৈনিক দেড় হাজার টাকা হাজিরায় সপ্তাহে তিন দিন ট্রাক চালিয়ে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার টাকা করে মাসিক ১৮ হাজার টাকা আয় করতেন। হঠাৎ অজ্ঞাত কারণে তার চাকরি চলে যাওয়ায় সম্পূর্ণ বেকার হয়ে যাওয়ায় তিনি “হাবিব ভ্যারাইটিজ স্টোর” নামের মুদি ও জ্বালানি তেলের দোকানের মালিক হেকমত আলীসহ বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে বাকিতে কেনাকাটা করে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
মুক্তাধর বলেন, পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য বিভিন্ন মানুষের সামনে হেকমত আলী মাসুদ মিয়াকে চাপ দিলে, তিনি অপমানিতবোধ করেন। প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তার সাথে লোকজনসহ ওই দোকানে দস্যুবৃত্তির মাধ্যমে নগদ টাকা নেওয়ার জন্য পরিকল্পনা করেন। তখন ব্যবসায়ী হেকমত আলী তাদের চিনে ফেললে ও কাজে বাধা দিলে তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, পরবর্তীতে পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০ রাতে মাসুদ মিয়া তার সঙ্গীদের নিয়ে হেকমত আলীর দোকানে গিয়ে তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে মারপিট করতে থাকেন। এক পর্যায়ে হেকমত আলী তাদের চিনে নাম ধরে ডাক দেন এবং এই ঘটনা এলাকার সবাইকে বলে দেবে বলেন। তখন মাসুদ মিয়া পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তার মাথা কাঠের ডাসা দিয়ে আঘাত করলে, তিনি গুরুতর আঘাত পেয়ে মাটিতে পড়ে যান। ওই সময় ওই দোকানে তেল নেওয়ার জন্য অন্য লোকজন এলে মাসুদ মিয়া তার সঙ্গে থাকা লোকজনসহ দোকানের ক্যাশ বাক্সে থাকা নগদ ১০ লাখ টাকা নিয়ে আত্মগোপনে চলে যান।
গ্রেপ্তারকৃত মাসুদ মিয়া নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর থানার মধ্যমবাগান গ্রামের জালাল উদ্দিনের ছেলে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা চলমান রয়েছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
কেএম