বাড়ছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা, ঠাঁই হচ্ছে না হাসপাতালের বিছানায়
দুই মাস আগের তুলনায় দেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। এর ফলে হিমশিম খেতে হচ্ছে আইসিডিডিআর,বি'র হাসপাতালকে। কারণ হাসপাতাল ভাষ্যমতে এক মাস আগেও প্রতিদিন রোগী ভর্তি হতো ৪৫০ থেকে ৫০০, এখন সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৫০ থেকে ১৩০০ জনে। ফলে হাসপাতালের বিছানায় ঠাঁই হচ্ছে না নতুন ভর্তি হওয়া রোগীদের। তাদের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের টাঙানো তাবুর নিচেই নিতে হচ্ছে চিকিৎসাসেবা।
আইসিডিডিআর,বি'র হিসাবে দেখা যায়, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত মঙ্গলবার ১ হাজার ২৭২, বুধবার ১ হাজার ২৩৩, বৃহস্পতিবার ১ হাজার ১৭৬, শুক্রবার ১ হাজার ১৩৮, শনিবার ১ হাজার ২৪৫, রবিবার ১ হাজার ২৩০, সোমবার ১ হাজার ২০৭ জন রোগী হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়েছে। অতএব এক সপ্তাহে ডায়রিয়া রোগী ভর্তির সংখ্যা দাঁড়াল মোট সাড়ে আট হাজার।
এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক চিকিৎসা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারছেন না বলে জানালেন আইসিডিডিআরবি'র হাসপাতাল শাখার প্রধান ডা. বাহারুল আলম। এ প্রসঙ্গে তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, 'দুই মৌসুমে বাংলাদেশে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ে। একটা গরমের শুরুতে, আরেকটা শীতের শুরুতে। এখন গরমের মৌসুম শুরু হচ্ছে। ফলে ডায়রিয়ার রোগী কিছুটা বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু গত কয়েকদিনে এই বৃদ্ধির হারটা একটু বেশি। দুই মাস আগের তুলনায় এখন অন্তত আড়াই গুণ রোগী বেশি ভর্তি হচ্ছে। সবার মধ্যে একটা ভুল ধারণা আছে, সেটা হলো ডায়রিয়া হলেই আইসিডিডিআরবিতে যেতে হবে। ফলে আমাদের এখানে রোগীর চাপ এতটাই বেশি যে, আমরা স্বাভাবিক চিকিৎসা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারছি না। সরকারি যে কোনো হাসপাতালে গেলেই ডায়রিয়া রোগের চিকিৎসা পাওয়া যায়। সব জায়গাতেই একই ধরনের চিকিৎসা।'
এদিকে গরমের মৌসুমে ডায়রিয়ার প্রকোপ ঠেকাতে একটা সমন্বিত উদ্যোগ দরকার বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ডা. বেনজীর আহমেদ। তাঁর মতে, 'আমি যখন দায়িত্বে ছিলাম, তখন স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশন ও ওয়াসাকে সঙ্গে নিয়ে কিছু যৌথ উদ্যোগ নিয়েছিলাম। সেগুলোর আর বাস্তবায়ন হয়নি। মূলত আইসিডিডিআর,বি এই উদ্যোগগুলো নিতে পারে। তাদের মূল কাজ তো ডায়রিয়া নিয়ে গবেষণা করা। কিন্তু তারা এখন এই কাজের বাইরে আরো অনেক রোগ নিয়ে গবেষণা করছে। ফলে মূল কাজ থেকে ফোকাস হারিয়ে যাচ্ছে। এখন এদিকে তাদের মনোযোগ দরকার।'
অন্যদিকে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার পেছনে মানুষের অসাবধানতাকেই দায়ী করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ' করোনা মহামারির বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর মানুষের অসাবধানতা, বাইরের খাবার ও পানীয় গ্রহণে অসর্কতার কারণে এবার ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। বিশেষ করে ঢাকার যাত্রাবাড়ী, মুগদা, শনিরআখড়া, মানিকনগর, উত্তরখান, দক্ষিণখান, কড়াইল, মোহাম্মদপুর, মিরপুরে ডায়রিয়ার প্রকোপটা বেশি। ওইসব এলাকায় এখন খাবার পানির তীব্র সংকট। ফলে ওই এলাকার বাসিন্দারা যে পানি খাচ্ছেন, সেটা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দূষিত। এখন ওয়াসাকে দ্রুত ওইসব এলাকায় খাবার পানির ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।' সূত্র-ডয়চে ভেলে
এসআইএইচ