শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি
নারায়ণগঞ্জ থেকে পাঁচ রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ
নারায়ণগঞ্জ থেকে পাঁচ রুটে লঞ্চ চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জানিয়েছে, দুর্ঘটনায় প্রাণহানি এড়াতে এসব রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়।
তবে এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন এসব রুট দিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া যাত্রীরা। প্রতি দিন শত শত যাত্রী টার্মিনালে এসে ফেরত যাচ্ছেন। বাধ্য হয়ে কয়েক গুণ বেশি ভাড়ায় সড়কপথে যেতে হচ্ছে তাদের।
বুধবার (২৩ মার্চ) সরেজমিনে দেখা গেছে, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও রিকশা এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে এসে বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা কাউন্টারের সামনে নামছেন। অপেক্ষা করে অনেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় বিরক্ত হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। টার্মিনালের পাশে নদীতে সারবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে নারায়ণগঞ্জ থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী লঞ্চ।
ছয় বছরের সন্তান ও স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে রাজধানীর মুগদা থেকে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনালে এসেছেন বাবুল মিয়া। তার সঙ্গে চারটি ব্যাগ। দুই বছর পর শ্বশুরবাড়ি মোহনপুরের এখলাসপুর যাবেন। কিন্তু এসে দেখেন, লঞ্চ চলাচল বন্ধ। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন তিনি।
তিনি গণমাধ্যমকে জানান, তিনি জানতেন না লঞ্চ চলাচল বন্ধ। সড়কপথে কোনো দিন শ্বশুরবাড়ি যাননি। এখন স্ত্রী, সন্তান আর এত মালামাল নিয়ে তিনি ভোগান্তিতে পড়েছেন। লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকার বিষয়টি স্বজনেরা তাকে আগে না জানানোয় মুঠোফোনে কল করে তাদের প্রতি ক্ষোভও প্রকাশ করেন তিনি।
অপর এক যাত্রী বলেন, ‘লঞ্চ যে বন্ধ, সরকার কোথায় ঘোষণা দিয়েছে? আমার মতো অনেকে ভাড়া খরচ করে এসে ফেরত যাচ্ছেন। এভাবে মানুষকে ভোগান্তি দেওয়ার কোনো মানে হয় না।’
শাহজাহান নামে এক যাত্রী বলেন, লঞ্চে গেলে খরচ কম, সুবিধা বেশি। সময় কম লাগে। তিনি এ রুটে দ্রুত লঞ্চ চালু করার দাবি জানান।
শহরের চাষাঢ়া স্ট্যান্ডের সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক আমিরুল ইসলাম বলেন, লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীদের চাপ বাড়ছে। তারা যাত্রীপ্রতি মোক্তারপুর পর্যন্ত ৫০ টাকা এবং রিজার্ভ ভাড়া নিচ্ছেন ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা।
যাত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে লঞ্চের ভাড়া কম। লঞ্চে খুব দ্রুত যাওয়া যায়। লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় যাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় লঞ্চ টার্মিনাল থেকে সাতটি রুটে প্রতিদিন ৭০টি যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করে। সাতটি রুট হলো নারায়ণগঞ্জ-হোমনা উত্তর থানা, নারায়ণগঞ্জ–মতলব থানা, নারায়ণগঞ্জ-চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ-শরীয়তপুর, নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ-তালতলা ও নারায়ণগঞ্জ-বাঞ্ছারামপুর। তবে তালতলা ও বাঞ্ছারামপুর রুটে নাব্যতার কারণে লঞ্চ চলাচল বন্ধ আছে। এসব রুটে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের কেন্দ্রীয় লঞ্চ টার্মিনালের শুল্ক আদায়কারী ইউসুফ আলী বলেন, তিন দিন ধরে নারায়ণগঞ্জ রুটে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ আছে। প্রতিদিন শত শত যাত্রী এসে ফেরত যাচ্ছেন। কবে নাগাদ আবার লঞ্চ চালু হবে, সেটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআইডব্লিউটিএর এক কর্মকর্তা বলেন, ছোট ছোট লঞ্চে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে মানুষ। প্রায়ই দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটছে। দেশের সব জায়গায় লঞ্চের আধুনিকায়ন হলেও নারায়ণগঞ্জে হয়নি। যদি এখানে বড় লঞ্চ চলত, তাহলে এ দুর্ঘটনা ঘটত না।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল ও যাত্রী পরিবহন সংস্থা নারায়ণগঞ্জ জোনের সভাপতি বদিউজ্জামান বাদল গণমাধ্যমকে বলেন, কার্গো জাহাজ ধাক্কা দিয়ে লঞ্চ ডুবিয়ে দিয়েছে। লঞ্চ তো ধাক্কা দেয়নি। লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীরা কষ্ট পাচ্ছেন। মালিক ও শ্রমিকেরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দ্রুত লঞ্চ চালু করার বিষয়ে নৌপরিবহনমন্ত্রী বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের যুগ্ম-পরিচালক মাসুদ কামাল গণমাধ্যমকে বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে অনির্দিষ্টকালের জন্য লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তুলনামূলকভাবে নিরাপদ নৌপথ চালুর বিষয়ে কর্তৃপক্ষ শিগগিরই কোনো ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত রবিবার নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গোর ধাক্কায় যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবে শিশুসহ ১১ জনের মৃত্যু হয়।
এমএসপি