‘একটা হাত গেলেও ভাইকে যদি দেখতে পেতাম...’
‘আমার ভাইরে একটা হাতও যদি চলে যাইত, একটা পা ও যদি চলে যাইত আমরা কামাই (আয়) করে খাওয়াইতাম। ওভাই তুই কই। আমার বুকটার ভিতরে কেমন করে ভাই। আমাকে কে গাইডলাইন করবে ভাই। ও ভাই তুই কোথায়।’
এভাবেই আর্তনাদ করছিলেন ইউক্রেন রকেট হামলায় নিহত ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজের নিহত নাবিক হাদিসুর রহমানের (আনিস) ছোট ভাই গোলাম মওলা প্রিন্স।
বুধবার (৯ মার্চ) দুপুর ১২টা ৩ মিনিটে বাংলার সমৃদ্ধির বাকি ২৮ জন নাবিক দেশে ফেরেন। এই জাহাজে ২৯ জন নাবিক ছিলেন। তাদের সকলের এক সঙ্গেই আসার কথা ছিল।
সহকর্মীরা এলেও হাদিসুর রহমানের লাশ কফিনেই রয়ে গেল ইউক্রেনে। দেশে ফেরার পর অন্য নাবিকদের স্বজনরা ফুল দিয়ে স্বাগত জানাচ্ছেন কিন্তু হাদিসুরের পরিবারের আর্তনাদে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
হাদিসুর রহমান আনিসরা চার ভাই বোন। সবার বড় বোন এরপর দ্বিতীয় সন্তান ছিলেন আনিস। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিও ছিলেন হাদিসুর রহমান। অন্য দুই ভাই তারেক ও গোলাম মওলা প্রিন্স লেখাপড়া করছেন। দুই ভাই ও বৃদ্ধ বাবা-মার একমাত্র উপার্জনকারী এখন না ফেরার দেশে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সিইপি গেটের সামনে অপেক্ষমান গণমাধ্যমর্কীদের সামনে এসে ভাই ভাই করে চিৎকার করতে থাকেন গোলাম মওলান প্রিন্স। বুক চাপড়ে বলতে থাকেন ‘একটা মাত্র ভাই আমার, ভাই কই। এই বুকটা ফাইটা যায়, এই বুকটার মধ্যে কেমন করে, বুকটার ভেতরে কেমন করে। আমার ভাইকে চাই। আমার ভাই যে কবে আসবে। আমার বুকটা কেমন করে। পরিবারের একমাত্র অবলম্বন ছিল আমার ভাই। আমার ভাই কত কষ্ট করছে আমার জন্য। ও ভাই ভাই যখন কেবিনে আসা যাওয়া করতাম, বাড়িতে ভাইয়ের বুকে মাথা রেখে ঘুমাতাম, ও ভাই। আমার ভাই কইত তোদের নিয়ে তো স্বপ্ন দেখি ভাই, তোরা বেলাইনে (বিপথে) যাবি না। ও ভাই কার বুকে মাথা রাখব। ভাই গো...আমার ভাইরে দেখাও।’
‘প্রতিদিন রাত ২টায় কথা হইতো এরপর ঘুমাতাম। একবার যদি ভাইডারে দেখতে পেতাম। ২৮ জন আসছে আমার ভাই আসার কথা না? যদি একটা হাত ও যাইত, পাও যাইত আমরা দুইভাই কষ্ট করে খাওয়াইতাম। তুই বয়ে (বসে) থাকতি। তুই যে গাইড লাইন দিতি সেই গাইড লাইনেই থাকতাম। কে সাপোর্ট দেবে ভাই।
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের মালিকানাধীন বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজটি তুরস্কের ইরাগলি বন্দর থেকে পণ্য বোঝাই করতে গত ২১ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়। দুইদিন পর অলভিয়া বন্দরের জলসীমায় নোঙর করে। পরদিন বৃহস্পতিবার ভোরে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করলে জাহাজটি আটকে যায়।
এসএম/এমএমএ/