‘ফেরাটা আমাদের জন্য ছিল অকল্পনীয়’
অনেক বড় দেশের নাবিকরা ইউক্রেনে আটকা আছেন। তারা এখনও পর্যন্ত উদ্ধার হননি, সেখান থেকে দেশে ফেরাটা আমাদের কাছে ছিল অকল্পনীয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় কূটনীতিকদের পরিশ্রমে আমরা দ্রুত দেশে ফিরতে পেরেছি।
বুধবার (৯ মার্চ) দুপুর ১২টায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজের ক্যাপ্টেন জি এম নূরে আলম (নাবিক) গণমাধ্যমকে এ কথা বলেন।
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সিআইপি গেট দিয়ে বের হওয়ার সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ইউক্রেনে আটকা পড়া ২৮ নাবিকের সবাই দেশে ফিরতে পেরে খুশি এবং আমরা সবাই কূটনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি কৃতজ্ঞ।
ক্যাপ্টেন জি এম নূরে আলম বলেন, আমাদের ফিরে আসা হয়তো সম্ভব ছিল না। দেশের কূটনৈতিক ব্যবস্থাকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। দেশে আসতে পেরে আমরা খুশি, আমাদের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে ভেতরে দেখা হয়েছে। আমাদের খুবই ভালো লাগছে। আমরা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে দোয়া চাই।
সুস্থভাবে দেশে ফিরতে পেরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজের ২৮ নাবিক। একই সঙ্গে সহকর্মী ও জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমানের মৃত্যুতে গভীর সমবেদনা জানান তারা।
ক্যাপ্টেন জি এম নূরে আলম আরও বলেন, অনেক বড় দেশের ক্রুরা (নাবিক) সেখানে আটকা আছেন। তারা এখন পর্যন্ত উদ্ধার হননি। আমাদের বাংলাদেশ খুব ছোট দেশ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় কূটনীতিকরা অনেক পরিশ্রম ও চেষ্টা করে আমাদের দেশে ফিরিয়ে এনেছেন।
জি এম নূরে আলম বলেন, আমরা সবাই আনন্দিত সুস্থভাবে দেশে ফিরতে পেরেছি। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীকে অনেক ধন্যবাদ। প্রধানমন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন এবং পোল্যান্ড, রোমানিয়া ও অস্ট্রিয়ার দূতাবাস কঠোর পরিশ্রম করেছে। ফলে আমরা এত দ্রুত দেশে ফিরতে পেরেছি। এটা ছিল আমাদের জন্য অকল্পনীয়।
তিনি বলেন, একই সঙ্গে অত্যন্ত গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি আমাদের সহকর্মী ও থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুরের মৃত্যুতে। তার মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এজন্য আমরা তার মরদেহ হিমঘরে রেখে এসেছি।
ইউক্রেনে বাংলাদেশি জাহাজে হামলার বিষয়ে জি এম নূরে আলম বলেন, আমরা নিয়মিত ডিউটিতে ছিলাম। বিকালে যখন হামলা হয় তখন জাহাজের ব্রিজে আগুন লেগে যায়। এরপর আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে ব্যস্ত হয়ে যাই।
তিনি বলেন, দেশবাসী আমাদের জন্য অনেক দোয়া করেছেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আমার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেন। তিনি বিভিন্ন পরামর্শ ও সাহস দিয়েছেন। এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফোন করে আমাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার পদক্ষেপ নেন।
নূরে আলম আরও বলেন, আমরা সেখানে দেখেছি প্রায় ৬০ কিলোমিটার হেঁটে রিফিউজিরা সীমান্ত অতিক্রম করছে। কিন্তু আমাদের হেঁটে পার হতে হয়নি।
তিনি বলেন, যেদিন থেকে যুদ্ধ শুরু হয় সেদিন সকাল থেকেই চ্যানেল বন্ধ হয়ে যায়। সেখান থেকে বের হয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না, এজন্য আমরা আটকা পড়ি।
প্রসঙ্গত, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী দেশে ফেরা ২৮ নাবিক হলেন- জি এম নূর ই আলম, মো. মনসুরুল ইসলাম খান, সেলিম মিয়া, রামকৃষ্ণ বিশ্বাস, মো. রোকনুজ্জামান রাজীব, ফারিয়াতুল জান্নাত তুলি, ফয়সাল আহমেদ সেতু, মো. ওমর ফারুক, সৈয়দ আশিফুল ইসলাম, রাজীবুল আউয়াল, সালমান সরওয়ার সামি, ফারজানা ইসলাম মৌ, মো. শেখ সাদী, মো. মাসুদুর রহমান, মো. জামাল হোসাইন, মোহাম্মদ হানিফ, মো. আমিনুর ইসলাম, মো. মোহিন উদ্দিন, হোসাইন মোহাম্মদ রাকিব, সাজ্জাদ ইবনে আলম, নাজমুল উদ্দিন, মো. নজরুল ইসলাম, সারওয়ার হোসাইন, মো. মাসুম বিল্লাহ, মোহাম্মদ হোসাইন, মো. আতিকুর রহমান, মো. শফিকুর রহমান ও মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন।
কেএম/এসএন/আরএ/