উত্তাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী দিবসের অনন্য আয়োজন
ছাত্রীকে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে সন্ত্রাসীদের গণধর্ষণ এবং এর প্রতিবাদে ছাত্র, ছাত্রী, শিক্ষক, উপাচার্যের ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করায় পরদিন সন্ত্রাসী বাহিনীর ইট, লাঠি দিয়ে হামলার প্রতিবাদে উত্তাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ছাত্রীদের ক্যাম্পাসে টানা আন্দোলনের কথা সবার জানা। প্রতি মুহুূর্তে তারা প্রতিবাদে ফেটে পড়ছেন যৌন নিপীড়নের বিপক্ষে। এরমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. রাজিউর রহমানের মামলার বাদী হিসেবে আশ্বাস প্রদানে তারা ৭২ ঘন্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন। তবে তারপর আন্তর্জাতিক নারী দিবস, ২০২২। ফলে আন্দোলন ও বিরুদ্ধ ক্যাম্পাসটির অধ্যাপক এবং শিক্ষাথীরা মিলে প্রতিবাদমূলক অনেক আয়োজন করেছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২২ উদযাপন কমিটি’র সভাপতি পদার্থবিজ্ঞানের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক মোছা. হালিমা খাতুন। তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকা প্রকাশ প্রতিনিধি সফিকুল আহসান ইমন বিস্তারিত জানিয়েছেন। তাদের অনন্য এই কমসূচির শুরুতে সকাল সাড়ে ১১টায় হয়েছে গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর জম্মস্থানের বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী দিবসের বিশেষ র্যালি। তাতে সামনে এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক নারীরা। তারা পুরুষ শিক্ষকদের নিয়ে র্যালি করেছেন পুরো ক্যাম্পাসে। এরপর শান্তির প্রতীক শাদা রঙের পায়রা সবাই উড়িয়ে দিয়েছেন আকাশে। তারা প্ল্যাকার্ড বহন করেছেন প্রতিবাদের। মায়েরা তাদের শিশু সন্তানদের নিয়ে এসেছেন।
দুপুর ১টায় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি (বিএসএমবিটিএসডিএস)’ বা ‘বশেমুরবিপ্রবি ডিবেটিং সোসাইটি’ নামে বিতর্কের অঙ্গণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পরিচিত ক্লাবটি নারী দিবসের বিতক ‘পেশাজীবি মডেল’-এ তাদের গণধর্ষণের শিকার ছাত্রীর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পেশাজীবি অধ্যাপক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে আয়োজন করেছে। তাতে গণধর্ষণের বিপক্ষে এক হয়ে যাওয়া ছাত্র-শিক্ষকের আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন অন্যতম প্রতিবাদকারী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. কামরুজ্জামান। ছিলেন বাংলা বিভাগের সভাপতি ও সহকারী অধ্যাপক জাকিয়া সুলতানা মুক্তা, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক এমদাদুল হক ও সাদিয়া আফরিন, সমাজবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক শামসুল আরেফীন; বঙ্গবন্ধু, লিবারেশন ওয়ার অ্যান্ড বাংলাদেশ স্টাডিজের সহকারী অধ্যাপক সোহানা সুলতানা ইতি, প্রভাষক সানিয়া আক্তার ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রভাষক নুসরাত তায়েফ। তারা পেশাজীবি হিসেবে নারী ও পুরুষ-এর পার্থক্য ইত্যাদি বিষয়ে বিতর্ক করেছেন।
বিকেল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। উদ্বোধন করেছেন নারী দিবস উদযাপন কমিটি’র সভাপতি ও সহযোগী অধ্যাপক মোছা. হালিমা খাতুন। তার শুভেচ্ছা বক্তব্যের পর ক্ষোভে উত্তাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ছাত্রী, শিক্ষক, শিক্ষিকাদের আয়োজন শুরু হয়। উপস্থাপনা করেছেন বঙ্গবন্ধু, লিবারেশন ওয়ার অ্যান্ড বাংলাদেশ স্টাডিজের প্রভাষক সোনিয়া আক্তার ও মিরাজুল ইসলাম। নারী জাগরণের গান, মেয়েদের সৃজনশীল নাচ, নারী শিক্ষকদের আবৃত্তিসহ ছাত্রীদের নানা পরিবেশনায় মুখর ছিল সাংস্কৃতিক আয়োজন।
এরপর বাংলার সহকারী অধ্যাপক শামীমা আক্তারের গ্রন্থনা ও ইংরেজির সহকারী অধ্যাপক হাবিবুর রহমানের নির্দেশনায় ছাত্র, ছাত্রীরা পরিবেশন করেছেন হেনরিক ইবসেনের অমর নাটক ‘অ্যা ডলস হাউজ’। সারা বিশ্বজুড়ে অসংখ্যবার প্রদর্শিত নাটকটি ইউনেসকো ২০০১ সালে ‘মেমরি অব ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার’ভুক্ত করেছে।
এরপর হয়েছে নারী নির্যাতন ও সহিংসতা রোধে সামাজিক মনস্তত্ব গড়ে তোলার জন্য করনীয় নিয়ে আলোচনা সভা। অনলাইনের এই সভায় সভাপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. কিউ. এম, মাহবুব। তার নেতৃত্বে আলোচনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সিলিং সাইকোলজির অধ্যাপক ড. মেহজাবীন হক ও উপস্থাপক বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসনের সহকারী অধ্যাপক প্রদীতা দত্ত।
ওএস।