জাতীয় প্রেস ক্লাব ও ডিআরইউতে পীর হাবিবের প্রতি শ্রদ্ধা
সহকর্মী সাংবাদিক ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সিক্ত হলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক পীর হাবিবুর রহমান। রবিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীতে তিনটি নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পীর হাবিবুর রহমানের দ্বিতীয় নামাজে জানাজা দুপুর ১২টা ৫৮ মিনিটে জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবের স্থায়ী সদস্য ছিলেন। জানাজায় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের সম্পাদক, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতা ও সহকর্মীরা অংশ নেন। জানাজা শেষে মরদেহে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
জানাজা নামাজের আগে কান্না জড়িত কন্ঠে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘পীর হাবিবুর রহমান সাহসী সাংবাদিক ছিলেন। আমরা একজন সাহসী সাংবাদিককে হারালাম। তার অগণীত পাঠক আছেন, যারা তার কলামের জন্য অপেক্ষা করতেন। তারাও তাদের প্রিয় কলামিস্টকে হারালেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অতি আপনজন ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সিনিয়র সদস্য পীর হাবিবুর রহমানকে বিদায় জানাচ্ছি। এই বিদায় হয়তো আনুষ্ঠানিকতার। কিন্তু আমাদের মনে থাকবেন তিনি। তিনি তার লেখনীর মাঝে বেঁচে থাকবেন। তিনি যেটা বিশ্বাস করতেন, তার নীতি আদর্শের ব্যাপারে অটল ছিলেন। এরকম একজন সাহসী সাংবাদিককে আমরা হারিয়েছি। এতে আমাদের যেমন ক্ষতি, তেমনি সাংবাদিকতার জন্যও ক্ষতি।’
পীর হাবিবুর রহমানের ছেলে ব্যারিস্টার অন্তর বলেন, ‘আমাদের পরিবারের সবার জন্য আমার বাবা ছায়া হিসেবে ছিলেন। তিনি থাকলে মনে হতো সব হয়ে যাবে। আমি আমার ছায়াকে হারালাম। বাবা বলতো আমার টাকা পয়সার দরকার নেই। আমার মৃত্যুর পর আমাকে শহীদ মিনার এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবে নিয়ে যেও। বাবা মানুষের জন্য লিখতে চেয়েছেন। সেই সাহস তার ছিল। তবে আমাদের মাঝে মাঝে ভয় হত। তারপরও অনেক কিছু সহ্য করে লিখে গেছেন।’
আরও বক্তব্য রাখেন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান।
জানাজায় উপস্থিত ছিলেন দ্য ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল, এডিটরস গিল্ডের সভাপতি মোজাম্মেল বাবু, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, সাইফুল আলম প্রমুখ।
জানাজা শেষে তার মরদেহে শ্রদ্ধা জানায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটি, এডিটরস গিল্ড, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ভারতীয় হাই কমিশন, দৈনিক দেশ রূপান্তর, সকালের সময়, মতিহারসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা কর্মীরাও তার মরদেহে শ্রদ্ধা জানায়।
ডিআরইউতে শ্রদ্ধা নিবেদন
সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমানের তৃতীয় নামাজে জানাজা বেলা ১.৩০টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। তিনি এ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
জানাজার পূর্বে সংগঠনের সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু বলেন, সাংবাদিকতার মাধ্যমে মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন পীর হাবিবুর রহমান। তার অকালে চলে যাওয়ায় সাংবাদিক, সাংবাদিকতা ও দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হল। সাহসী সাংবাদিকতার জন্য পীর হাবিব স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।’ আরও বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম হাসিব।
জানাজায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ডিআরইউ’র সাবেক সভাপতি শাহেদ চৌধুরী, শাখাওয়াত হোসেন বাদশা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘পীর হাবিবুর রহমান ছিলেন কঠিন কলমযোদ্ধা। দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন তিনি। তিনি চিরদিন বেঁচে থাকবেন তার কর্মের মাধ্যমে।’
আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘দেশের মানুষ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমানের ছিল অপরিসীম শ্রদ্ধা। তাকে হারানোয় সাংবাদিকতার পাশাপাশি পুরো দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হল।’
জানাজা শেষে ডিআরইউ, সিলেট বিভাগ সাংবাদিক সমিতি ও ক্রাইম রিপোর্টার এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
বাংলাদেশ প্রতিদিন কার্যালয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন
সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমানের চতুর্থ নামাজে জানাজা বেলা সাড়ে ৩টায় তার সর্বশেষ কর্মস্থল বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। তিনি এ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন। এ সময় তার সহকর্মীরা মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর তার মরদেহে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য যাত্রা করে।
সিলেট শহিদ মিনারে রাত ৯টায় শ্রদ্ধা নিবেদন
সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমানের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পথে সিলেট শহিদ মিনারে আজ (রবিবার) রাত ৯টায় শ্রদ্ধা জানানোর জন্য কিছুক্ষণ রাখা হবে।
এর আগে সকাল সাড়ে ১১টায় পীর হাবিবুর রহমানের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে রাখা হয়। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যবস্থাপনায় সেখানে প্রয়াত এ সাংবাদিকের প্রতি শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি ও সর্বস্তরের মানুষ।
আরও পড়ুন : শহীদ মিনারে সাংবাদিক পীর হাবিবকে শেষ শ্রদ্ধা
তারও আগে শনিবার বাদ এশা রাজধানীর উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টর পার্ক জামে মসজিদে পীর হাবিবুর রহমানের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
সুনামগঞ্জে শ্রদ্ধা সোমবার
পীর হাবিবুর রহমানের প্রতি নিজ এলাকার মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার মরদেহ সোমবার দুপুর ১২টায় সুনামগঞ্জ পৌর শহীদ মিনারে রাখা হবে। এরপর বাদ জোহর সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় মসজিদে এবং নিজ গ্রাম মাইজবাড়ীতে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে পিতা-মাতার কবরের পাশে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে।
শনিবার বিকেলে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পীর হাবিবুর রহমান শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৮ বছর।
তিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সার, কিডনি জটিলতাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। সর্বশেষ করোনাভাইরাস আক্রান্ত ও স্ট্রোক করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
আরও পড়ুন : সাংবাদিক পীর হাবিব আর নেই