সাংবাদিক হাবীবকে বেদনাসিক্ত বিদায়
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি প্রাঙ্গণে হাবীবের প্রথম নামাজে জানাজা
একরাশ বেদনা নিয়ে অকাল প্রয়াত তরুণ সাংবাাদিক হাবীবুর রহমান হাবীবকে বিদায় জানালেন গণমাধ্যম কর্মীরা। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাবীবের (৩৪) রাজধানীতে তিন দফা নামাজে জানাজা শেষে দাফনের জন্য গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
বুধবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুর ২ টা ৩০ মিনিটে ডিআরইউ প্রাঙ্গণে হাবীবের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে হাজারো সহকর্মীর উপস্থিতিতে শেষবারের মতো ডিআরইউ থেকে বিদায় জানানো হয়। আর কোনো দিন হাবীবকে দেখা যাবে না এই কথা বলতে বলতে অনেক সাংবাদিককে চোখ মুছতে দেখা গেছে। উপস্থিত সবাই স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন। সদা হাস্যোজ্জ্বল প্রতিশ্রুতিশীল রিপোর্টার হাবীব নিজের মেধা ও প্রজ্ঞা দিয়ে সবার মন জয় করে নিয়েছিলেন। চলে এসেছিলেন নেতৃত্বের আসনে।
হাবীবের নেতৃত্ব গুণের প্রশংসা করে ডিআরইউ’র সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু বলেন, তার সাংগঠনিক দক্ষতা অনেক বেশি। আমরা দেখেছি স্বল্প সময়ের নোটিশে যেকোনো প্রোগ্রাম অবলীলায় ব্যবস্থা করতে পারতেন। হাবিব যে কত জনপ্রিয় আজকে ডিআরইউ’র প্রাঙ্গণে সবার উপস্থিতিতেই বোঝা যাচ্ছে।
ডিআরইউ সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিব বলেন, ‘আমরা একসাথে ২০১৭ সালে কার্যনির্বাহী কমিটিতে কাজ করেছি। তিনি তখন কার্যনির্বাহী সদস্য। হাবীবের মধ্যে তখন সাংগঠনিক দক্ষতা, সততা ও নিষ্ঠা দেখেছি। তিনি ডিআরইউ’র জন্য ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ।’
জানাজা শেষে ডিআরইউ’র পক্ষ থেকে হাবীবের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী প্রেস উইং এবং আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ ছাড়া সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
জানাজায় উপস্থিত হয়ে সমবেদনা প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেস সচিব-৩ হাসান জাহিদ তুষার, প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব-২ মু. আশরাফ সিদ্দিকী বিটু, আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক আবু সায়েম খান।
এছাড়া ডিআরইউ’র সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, শাহেদ চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম, ইলিয়াস হোসেন, মুরসালিন নোমানী; সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, সাজ্জাদ আলম খান তপু, রাজু আহমেদ, সৈয়দ শুকুর আলী শুভ, কবির আহমেদ খান ও মসিউর রহমান খান উপস্থিত ছিলেন।
প্রথম জানাজা শেষে হাবীবের মরদেহ নিয়ে যাওয়া তার প্রিয় বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে। সেখানে জানাজা শেষে তার কর্মস্থল দৈনিক সময়ের আলো অফিসের নিচে তৃতীয় জানাজা শেষে তার জন্মস্থান কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া থানার মানুরা গ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে শেষ জানাজার পর তাঁকে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হবে।
মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে রাজধানীর হাতিরঝিল থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাবীবকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) নেওয়া হয়। সেখানে নেয়ার পর জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাতিরঝিল থানার এএসআই কায়েস উদ্দিন সংবাদ মাধ্যমকে জানান, রাত ২টা ৩৮ মিনিটে রাসেল নামের এক পথচারী ৯৯৯-এ ফোন করে দুর্ঘটনার খবর দেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ যায়। ততক্ষণে কে বা কারা সাংবাদিক হাবীব রহমানকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যায়। দুর্ঘটনাকবলিত মোটরসাইকেল তখনো পাহারা দিচ্ছিলেন পথচারী রাসেল, মোটরসাইকেলটি হাতিরঝিল থানায় নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, মোটরসাইকেল আরোহী সাংবাদিক হাবিব দুর্ঘটনা কবলিত নাকি হত্যার শিকার তা নিয়ে রহস্য দেখা দিয়েছে। তার ব্যবহার করা মোটরসাইকেলটি প্রায় অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে এবং ময়নাতদন্ত শেষে এ বিষয়ে জানানো হবে বলে জানায় পুলিশ।
হাবীব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে ২০১৩ সালে মাস্টার্স করেন। এক সময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য ছিলেন। সময়ের আলো পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আওয়ামী লীগ বিটের রিপোর্টার হিসেবে সাংবাদিকতা করতেন।
হাবীবের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মানুরা গ্রামে। বাবা প্যারা মিয়া ও মা পিয়ার জাহান। এক ভাই, তিন বোন। তিনি পরিবারের বড় সন্তান এবং পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন। হাবীব স্ত্রী ও আড়াই বছরের একটি ছেলে রেখে গেছেন।
হাবীব ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) প্রথমবার বিপুল ভোটে কার্যনির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হন। পরে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন।
দৈনিক সময়ের আলোর সিনিয়র রিপোর্টার ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাবীবুর রহমান হাবীবের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক শোকবার্তায় একথা জানানো হয়। শোক বার্তায় বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
এসএম/এপি