সরকারের প্রনোদনা প্রকাশকরা পায়নি
বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্প হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে যাচ্ছে। এই এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছে বাংলাদেশ বেসরকারি সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি। সেই প্রকাশকদের প্রচেষ্টায় বাংলা একাডেমিতে বেসরকারিভাবেই অমর একুশে বইমেলা শুরু হয়েছিল। পরবর্তীতে বাংলা একাডেমির হস্তক্ষেপে এটি এখন বড় আকারের মেলাতে পরিণত হয়েছে।
করোনা পরিস্থিতির কারণে গত বছর বইমেলা ঠিক মতো হয়নি। প্রকাশকরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সৃজনশীল বই আসলে কারা পড়ে? সেই মানুষগুলি যখন ফুরফুরে অবস্থায় থাকে, রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকেনা, একটি সুস্থ সুন্দর পরিবেশ সৃস্টি হয় যে পরিবেশের কারণে মানুষ বইমেলায় যোগদান করে। করোনাকালীন অবস্থায় আমরা সেই পরিবেশ না পাওয়ার কারণে প্রকাশকরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। অনেক প্রকাশক খুব ভেঙ্গে পড়েছে যে, তারা ঠিকমতো দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে কি না! প্রকাশকরা সবসময় প্রত্যাশা নিয়ে থাকে, তারা কোন কারণে হতাশ হয় না। আমরা চেষ্টা করছি। ব্যবসা বানিজ্যে সরকার একটি প্রনোদনা দিয়েছে সেই প্রনোদনা কিন্তু প্রকাশকরা পায়নি।
সরকারের লক্ষ একটি উন্নত দেশ। সেই উন্নত দেশ হতে হলে আমাদের অবশ্যই আমাদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। প্রত্যেক জেলা শহর সহ গ্রামে গঞ্জে পাঠক লাইব্রেরি গড়ে তুলতে হবে। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলিতে বই পড়ার যে অভ্যাস, যেমন তারা ট্রেনে যাচ্ছে, বাসে যাচ্ছে, বই পড়ছে। আমাদের মধ্যে কি সেই দৃশ্য আমরা খুঁজে পাই? আমরা আমাদের দেশেও সেই দৃশ্য দেখতে চাই। সেক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা করতে হবে। প্রকাশকরা সেই চেষ্টাটুকু করেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বললেন, সময়সীমা বাড়ানো হলে তার আপত্তি নেই। আমাদের সংস্কৃতি মন্ত্রীও সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। অনেকের মধ্যেই আমরা লক্ষ করি রাতারাতি জনপ্রিয় লেখক হবার একটা চেষ্টা থাকে। সেই জনপ্রিয় লেখক দিয়ে কিন্তু দেশের উন্নয়ন এবং শিল্প সাহিত্যের উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমরা একজন হুমায়ূন আজাদ অথবা আহমদ শরীফের মতো লেখক কিন্তু তৈরি করতে আজ ও পারিনি। হুমায়ুন আজাদের নারী, লাল নীল দীপাবলী, কত নদী সরোবরে ইত্যাদি পড়ে আমাদের ভাবতে হয়। এরকম একটি দুটি বই পাচ্ছি না। সেক্ষেত্রে লেখকদেরও এগিয়ে আসতে হবে। মননশীল লেখকের বইয়ের জন্যই কিন্তু অমর একুশে গ্রন্থমেলা। সেই মেলার উদ্দেশ্য সাহিত্যের পাঠক সৃষ্টি করা।
আমাদের প্রকাশকদেরতো আশা নিয়েই থাকতে হয়, সেদিক বিবেচনায় আমি খুবই আশাবাদী। নতুনদের এগিয়ে আসতে হবে। নতুন লেখক যারা আছেন, তারা যদি একটি ব্রত নিয়ে আসেন, লেখাপড়া করে আসেন, তারা যদি বুঝতে পারেন, পড়ালেখার বিকল্প কিছু নেই। যেকোন বিষয়ে আমি যদি জানতে চাই, সেই বিষয়ে আমাদের পড়তে হবে, সময় দিতে হবে। তরুণ লেখকদের উদ্দেশ্যে আমি এটুকুই বলবো, তারা যেন প্রচুর পড়ালেখা করে, জেনে শিখে তারপর যেন বই লিখতে আসে।
‘মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্ত চেতনা ‘এই দুইয়ের প্রত্যয়ে আমাদের প্রকাশনা। এই অঙ্গীকার নিয়েই আমরা যাত্রা শুরু করেছি। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুসহ আমাদের সর্বমোট বইয়ের সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। এবারও আমাদের একশ'র অধিক বই প্রকাশিত হবে। হুমায়ুন আজাদের রচনাবলী ১ ও ২ খন্ড প্রকাশিত হবে। মোনায়েম সরকারের বই প্রকাশিত হবে। আমাদের এম আবদুল আলীমের বই প্রকাশিত হচ্ছে। এরকম প্রচুর লেখকের বই আগামী প্রকাশনী থেকে যাচ্ছে। ভাষা আন্দোলনের উপর খুবই গুরুত্বপূর্ণ বই প্রকাশিত হচ্ছে। এটি একটি গবেষণাধর্মী বই এবং এটি লাইম লাইটে আসবে বলে আমার ধারণা। আব্দুল জব্বারের ইতিহাসের গল্প ও বাংলাদেশ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব; বিশ শতকের একজন মহিয়সী নারী, আনোয়ারা সৈয়দ লিখেছেন, নারীর কথা নারীর লেখা। আরও বেরিয়েছে বঙ্গমাতা ও দুই কন্যার কথা। পান্না কায়সার এবার একুশে পদক পেয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের গবেষণার জন্য। তাঁর একটি বই আগামী প্রকাশনী বের করছে। রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি; সহ অনেক অনেক বই প্রকাশিত হচ্ছে।প্রবীন লেখকদের পাশাপাশি আমরা নবীন লেখকদের নিয়েও কাজ করছি এবং আমি আশাবাদী তাঁদের ভিতর থেকেই আমরা ভাল গুণ মান সম্পন্ন লেখক পেয়ে যাবো যারা এই প্রকাশনা শিল্পকে অনেকদূর নিয়ে যাবে।
লেখক: মুক্তিযোদ্ধা ও প্রকাশক, আগামী প্রকাশনী