রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৫

সন্ধ্যার পর বের হলাম খান এল খলিলি বাজারের উদ্দেশ্যে। আল মাআদি থেকে পঁচিশ-তিরিশ মিনিটের পথ, পৌঁছাতেই যদি রাত আটটা সাড়ে আটটা বেজে যায় তাহলে যে জমজমাট বাজারের কথা শুনে এসেছি তার দেখা পাবো কি না সে ব্যাপারে আমার একটু সন্দেহ ছিল। রানা ভাই আশ্বস্ত করলেন, রাত যত গভীর হবে কায়রোর আড্ডা ততই জমে উঠবে। আজ গাড়িতে চালকের আসনে সৌরভ। রানা ভাই এবং হেনা ছাড়াও আমাদের সঙ্গে আছেন পাইলট রাজি। খান এল খলিলি বাজারের প্রবেশ পথ বাঁ হাতের দিকে রেখে সৌরভ অনেকটা সামনে থেকে ইউটার্ন নিয়ে পার্কিংয়ের জায়গা খুঁজতে খুঁজতে আবার প্রবেশ পথের কাছে এসে একটা খালি জায়গা পেয়ে গেল। এখানকার গাড়ি রাখার ব্যবস্থাপনা ঢাকার নিউ মার্কেটের কথা মনে করিয়ে দেয়। তেমনি একজন ইজারাদারের লোক কিংবা স্থানীয় মাস্তানের প্রতিনিধি ডানে-বামে সামনে-পেছনে করে গাড়ি পার্ক করতেও সাহায্য করল। আমরা নেমে বিশাল বড় গেট দিয়ে সাড়ে পাঁচ শ বছর আগের বাণিজ্যিক এলাকায় ঢুকে পড়লাম।

সুলতান সালাহউদ্দিনের শাসনকালেই মিসরের ব্যবসা বাণিজ্য ফুলে ফেঁপে উঠতে শুরু করেছিল। দেশে বিদেশে আসা যাওয়ার সময় সওদাগরদের পথের পাশে গড়ে উঠেছিল অস্থায়ী সরাইখানা। আরো শ দুয়েক বছর পরে চতুর্দশ-পঞ্চদশ শতকে মামলুক সুলতানদের আমলে অস্থায়ী সরাইখানাগুলো তুলে এনে আল আযহার মসজিদের পাশের খালি জায়গায় গড়ে তোলা হয় নতুন বাজার ব্যবস্থা, নতুন বাণিজ্য কেন্দ্র। পাথরের তৈরি দ্বিতল ভবনের উপরের তলায় ব্যবসায়ীদের আবাস আর নিচের তলা এবং উঠানে রাখা হতো তাদের মালপত্র। প্রথম মামলুক সুলতান বারকুকের সময়ে সম্পদশালী ব্যবসায়ী যুবরাজ জাহারকাস আল খলিলি এখানে বিশাল এক সরাইখানা গড়ে তোলেন। তার নামেই সম্প্রসারিত বাজার এলাকার নামই হয়ে যায় খান এল খলিলি। এখানে বলে রাখা ভালো, আরবি ভাষায় ‘খান’ অর্থ সরাইখানা বা আবাসিক হোটেল! অর্থাৎ আইয়ুব খান, মোনায়েম খান থেকে শুরু করে শারুখ খান, আমির খান পর্যন্ত খান বংশের সকলেই আসলে একেকটা সরাইখানা! খোদ আরব দেশের ভাষায় যে খান সাহেবদের এমন বেইজ্জতি করা হয়েছে, কায়রোর খান এল খলিলিতে না এলে তা কখনোই জানা হতো না।

বিশাল তোরণের নিচে দিয়ে ভেতরে ঢুকলেও প্রথমে মনে হলো আমরা কী পুরনো ঢাকায় কোনো রাস্তায় ঢুকে পড়েছি! অপ্রশস্ত পথের দুপাশে পুরনো দালান। সড়কজুড়ে তেমন ব্যস্ততা নেই। দোকানগুলোতে বাতি জ্বলছে; কিন্তু আদৌ কোনো বেচা-কেনা চলছে বলে মনে হয় না। যতই সামনে এগোতে থাকি, বাজারের জনসমাগম এবং জৌলুস দুটোই বাড়তে থাকে। প্রথমেই যা দৃষ্টি আকর্ষণ করে, তা হলো–আট দশজন বয়োবৃদ্ধ মানুষের তুমুল এক আড্ডা। সৌরভ এবং রাজি হাতের বাঁ-পাশের একটা হুক্কা-কলকির দোকানে ঢুকে গেলে রানা ভাই আড্ডাবাজ বৃদ্ধদের সঙ্গে গল্প জুড়ে দেন। তাদের একজন আমাদের ডেকে বসতে বলেন। যে দুজন বসে ডোমিনো খেলছিলেন তাদের একজন জানতে চান কোন দেশ থেকে এসেছি আমরা। আলাপ পরিচয়ের পরপরই একজন কফি খাবার আমন্ত্রণ জানান। হয়তো আরো কিছুক্ষণ বসলে কফির আমন্ত্রণ রেখেই বেরোনো যেতো। কিন্তু হাতে সময় নেই বলে তাড়াতাড়ি উঠে পড়ে আমরা একটু এগিয়ে সামনে একটা আলোকোজ্জ্বল দোকানে ঢুকে পড়ি। আসলে দোকানটাই আলোর। সামনে এবং ভেতরে সুদৃশ্য বাতিদান, নকশা কাটা ল্যাম্প শেড, কাচের তৈরি রঙিন টেবল ল্যাম্প সাজানো। জিনস জ্যাকেট পরা হিজাবহীন তরুণী সেলস গার্ল আগ্রহের সঙ্গেই এটা সেটা দেখায়; কিন্তু এসব ভঙুর জিনিস নিয়ে হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে বাড়ি পৌঁছানো যে সম্ভব নয়, তা তাকে কে বোঝাবে!

খানিকটা সামনে এগিয়ে দাঁড়ালাম আলো ঝলমলে একটা তিন রাস্তার মোড়ে। মাঝখানে ছোট্ট সড়ক দ্বীপে গোটা দুই খেজুর গাছের নিচে চেয়ার টেবিল সাজিয়ে চলছে চায়ের আড্ডা। একদিকে বড় একটা রেস্টুরেন্টের গায়ে আরবিতে লেখা কোকাকোলা পেপসির বড় বড় হোর্ডিং। এ পথে এমনিতে যানবাহন চলাচল নিষেধ, তবে ছোট ছোট চার চাকা এবং তিন চাকার ডেলিভারি ভ্যান চলাচলে কোনো মানা নেই। আর মোটর সাইকেল আরোহিদের যাতায়াত বোধহয় সর্বত্র অবাধ। একটু এগিয়ে একটা অলঙ্কারের দোকানে রূপা কিংবা ব্রোঞ্জের মতো ধাতবে বসানো বিচিত্র রঙ রূপ আকৃতির পাথরের অলঙ্কার দেখে চোখ ফেরানো যায় না। রানা ভাই এখান থেকে বেশ কয়েকটা পাথর বসানো আংটি লকেট কিনে ফেললেন।

জনাকীর্ণ গলিপথ, ব্যস্ত রেস্তোরাঁ, মোড়ে মোড়ে মসজিদ আর পথের দুপাশে অগণিত সম্ভারে সাজানো খান এল খলিলি বাজার। এক একটি গলিতে পায়ে চলার পথ ধরে হাঁটতে থাকলে হাজারো পণ্যের চোখ ধাঁধানো প্রদর্শনী যে কোনো বাজার বিলাসী মানুষকে বিভ্রান্ত করবেই। এখানে যা পাওয়া যায় না তেমন কিছু বোধহয় শুধু কায়রো বা মিসরে নয়, এশিয়া বা আফ্রিকার কোনো বাজারেই খুঁজে পাওয়া যাবে না। রূপার তৈরি ঝকঝকে পানপাত্র, স্টেইন্ড গ্লাসের নানা রকম বাতি, হাতে তৈরি সুদৃশ্য বিভিন্ন সামগ্রী। সোনা রূপা তামা এবং পাথরের অলঙ্কার কিংবা মশলাপাতি, আগরবাতি, ধুপ-ধুনা এবং সুগন্ধি আতর আর তৈজসপত্র, বাসন কোসন, সিরামিক সামগ্রীর বিপুল সমাবেশ সারাদিন ধরে ঘুরেও দেখে শেষ করা সম্ভব নয়।

বাজার জুড়ে প্রত্যেক মহল্লায়, প্রতিটি রাস্তার মোড়েই রয়েছে এক একটি মসজিদ। মসজিদগুলোর খোদাই করা কাঠের দরজা, জাফরি কাটা জানালা, কারুকাজ করা খিলান মিহরাব এবং প্রায় একই ধরনের স্থাপত্যের দীর্ঘ এক বা একাধিক মিনার। রাতের প্রতিটি মিনারে বা গম্বুজে রঙিন আলো ফেলে সৃষ্টি করা হয়েছে চমৎকার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। এক জায়গায় এসে দুটি বিভক্ত পথের মাঝখানের একটি মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে আমরা একই সঙ্গে তিনটি মসজিদের সৌন্দর্য দেখি কিছুক্ষণ। খান এল খলিলি বাজারের বিভিন্ন গলিতে মসজিদের সংখ্যা ডজনখানেকের কম নয়।

রানা ভাইকে পেছনে ফেলে আর একটু এগিয়ে সৌরভ একটা সরবতের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে গেল। তাজা ফলের রস নয়, বরং শুকনো ফলের নির্যাস থেকে তৈরি পানীয় এদের বৈশিষ্ট্য। আমরা গ্লাস হাতে নিয়ে চেখে দেখার আগে তেতুলের শরবত তৈরির কলা-কৌশল দেখলাম। পরিবেশিত শরবত কুশলী শরবতওয়ালার হাতের কারুকাজ এবং মুখের কথার মতো সুস্বাদু না হলেও তেমন সমস্যা ছিল না; কিন্তু হেনা এক চুমুক মুখে দিয়েই বলল, ‘আরশোলার গন্ধ পাচ্ছি। হয় তেতুল কিংবা গ্লাসের উপর আরশোলা হেঁটে গেছে।’ তার ঘ্রাণশক্তি বেশি, আমি কিন্তু কিছুই বুঝতে পারিনি। গ্লাসে শেষ চুমুক দিয়ে বললাম, ‘অতিকায় ডাইনোসোর বিলুপ্ত হয়ে গেলেও হাজার বছর ধরে তেলেপোকা ঠিকই টিকে আছে। অতএব শ তিনেক বছরের পুরনো বাজারে আরশোলা থাকতেই পারে।’

আড়াই কিংবা তিন শ বছরের পুরনো রেস্তোরাঁ বা ক্যাফে ছড়িয়ে আছে বাজারের সর্বত্রই। আমরা একটা জনবহুল চওড়া রাস্তা থেকে খিলানযুক্ত প্রবেশ পথ পেরিয়ে এবং কয়েক ধাপ সিঁড়ি ভেঙে ক্রমেই আরো সংকীর্ণ অথচ লোকে লোকারণ্য পথে হাঁটতে থাকি। এখানে দুপাশে কাপড় চোপড়, তৈরি পোশাক, বোরকা-হিজাব, বিছানার চাদর, কুশন কভার এবং কার্পেটের দোকান। রেস্তোরাঁগুলোর বাইরে চেয়ার টেবিল সাজিয়ে চলছে জমজামাট আড্ডা এবং ডোমিনো খেলা। কোথাও কোথাও গিটার বা দলসিমার বাজিয়ে চলছে একক বা মিলিত কণ্ঠে গান এবং তার সঙ্গে মহা হৈ চৈ! আপাদমস্তক বোরকায় ঢাকা, কিংবা হিজাব পরা নারীরা আড্ডায় পিছিয়ে আছে বলে মনে হয় না। তাদের ডোমিনো খেলতে বা হৈ হৈ করে আড্ডা দিতে দেখিনি, কিন্তু চার পাঁচজন এক সঙ্গে বসে দিব্যি ‘শিশা’ নামে পরিচিত নলওয়ালা হুঁকা টানছে। এতে মসজিদ ভারাক্রান্ত খান এল খলিলি কিংবা ঈজিপশিয়ান ইসলামের কোনো ক্ষতিবৃদ্ধি হয়েছে বলেও মনে হয় না। সরু গলি পথে হাঁতে হাঁটতে যেখানে এক জায়গায় টেবিল ঘিরে পাঁচ সাতজনের একটা দল বেহালা বাজিয়ে গান গাইছেন আর আমি ভাবছি এখানে মিউজিকসহ ভিডিও রেকর্ড করতে পারলে ভালো হতো, তখনই সৌরভ বললো এই সেই বিখ্যাত এল ফিসাবি। নাগিব মাহফুজের ক্যাফে!

এল ফিসাবি যাত্রা শুরু করেছিল এখন থেকে সোয়া দুই শ বছর আগে ১৭৯৭ খ্রিস্টাব্দে। আসবাবপত্র বা পরিবেশন রীতি কিছুটা বদলে গেলেও পুরনো হলদে রঙের দেয়াল, ছোট ছোট টেবিল এবং উঁচু সিলিং থেকে ঝোলানো বাতি দেখে মনে হয় প্রাচীন এই রেস্তোরাঁর আসলে তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। দুই শতাব্দীর বেশি সময় ধরে মিসরের কবি সাহিত্যিক, শিল্পী, সঙ্গীতজ্ঞ এবং বুদ্ধিজীবীদের নিয়মিত সমাবেশের এই জায়গাটি সাধারণ মানুষের কাছে কেবলই একটি চা কফির দোকান হলেও প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এই অপরিসর রেস্তোরাঁ একটি অন্তরঙ্গ মিলনক্ষেত্র। সন্ধ্যার এ সময়টা বাইরে ভেতরে প্রায় পুরো ক্যাফেতেই কোনো আসন খালি নেই। তারপরেও আমরা কেমন করে যেনো দুটো কাছাকাছি টেবিলে পাঁচজনই বসার জায়গা পেয়ে গেলাম। সৌরভ এখানকার বিখ্যাত চায়ের কথা বলে আরবিতে কিছু ইংরেজি মিশিয়ে অর্ডার দেবার পরে আমি প্রথমেই নোবেল বিজয়ী মিসরীয় লেখক নাগিব মাহফুজের স্মৃতি জড়িত সংরক্ষিত কক্ষটি দেখতে যাই।

শুনেছি নাগিব তাঁর কায়রো ট্রিলজির অনেকটাই এল ফিসাবির এই কক্ষে বসেই লিখেছিলেন। অপরিসর ঘরটির একদিকে দেয়ালে বিশাল ফ্রেমে বাধানো আয়না, বিপরীত দিকে কাঠের কারুকাজ করা দেয়াল এবং তাকে সাদা কালো বা রঙিন ছবি। এসব ছবিতে নাগিব মাহফুজের সঙ্গে বিভিন্ন জনের যুগল বা দলগত উপস্থিতি। মাথার উপরে ঝুলছে পুরনো আমলের নকশা কাটা কাচের মাঝারি ধরনের ঝাড় বাতি। প্রবেশ পথের বিপরীত দিকের দেয়ালের দুদিকে দুটি ছোট আলমারি বা তাকের মতো কিছু একটা ছাড়াও কতগুলো বাধানো ছবির নিচে ঝুলছে আরবি ও ইংরেজিতে লেখা ‘এল ফিসাবি’। এখানেও নাগিব মাহফুজের একক কোনো আলোকচিত্র নেই। একটা তাকের উপরে কতগুলো জায়নামাজ স্তূপ করে রাখা। বিশ্বখ্যাত নোবেল বিজয়ী লেখকের স্মৃতিধন্য পুরো ঘরটা অগোছালো এবং খুব একটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নও বলা যাবে না। ‘এল ফিসাবি’র প্রতিষ্ঠাতার সপ্তম প্রজন্ম আকরাম আল ফিসাবি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমরা নতুন করে সাজাতে চাই না, কারণ আমরা রেস্তোরাঁ না, একটা ঐতিহ্য সংরক্ষণ করছি। নিয়মিত যারা এখানে আসেন, তারাও চান এটি যেমন আছে তেমনই থাকুক।’ আকরাম সাহেবের কথায় হয়তো যুক্তি আছে; কিন্তু তার মানে এ নয় যে, কিছুটা সাজিয়ে-গুছিয়ে সাফ সুতরো রাখলেই ঐতিহ্য খসে পড়বে!

বাইরে আড্ডা থেকে বেহালার সঙ্গে জোরালো কণ্ঠ সঙ্গীতের আওয়াজ ভেসে আসে। আমি নাগিব মাহফুজের কক্ষ থেকে বেরিয়ে দ্রুত বেহালাবাদক এবং তার দলের ছবি তুলতে যাই। বাইরে বসলেও এই আড্ডাটা ঘিরে রয়েছে নকশা কাটা কাঠের বেষ্টনী। ছবি তোলার ব্যাপারে আমার একটু দ্বিধা ছিল, কেউ যদি আপত্তি করে! কিন্তু ইশারায় ক্যামেরা দেখাবার পরে দুজন উঠে দাঁড়িয়ে মাথার উপরে দুই হাত তুলে গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন শুরু করলেন। ছবি তুলে ফিরে এসে দেখলাম গাঢ় নীল টি-শার্ট পরা বয়সী পরিবেশক ইতিমধ্যেই টেবিলে চা নামিয়ে দিয়ে গেছে। পুদিনা পাতা দেওয়া মিন্ট-টি এবং চায়ের মধ্যে সেদ্ধ ছোলা দেয়া বিশেষ ধরনের ভেষজ চা। ছোট ছোট স্বচ্ছ কাপে পরিবেশিত চা থেকে চামচ দিয়ে ছোলা তুলে খাবার ব্যবস্থা আছে।

ছোলা-চা খেতে খেতেই একটা বিষয় লক্ষ্য করলাম–এখানে রেস্তোরাঁ বা কফিশপের ভেতরে ফেরিওয়ালা অথবা কোনো সাহায্য প্রার্থী অবাধে ঢুকে পড়তে পড়তে পারে। প্রথমে ক্যালিগ্রাফি করা রুমাল নিয়ে একজন এবং তারপরে এলেন তসবিহর ফেরিওয়ালি। দুজন বিক্রেতাকে ফিরিয়ে দিলেও শেষে শিশু সন্তান কোলে কাঁধে ব্যাগ ঝোলানো মেরুন রঙের বোরকা পরিহিতা সাহায্য প্রার্থীকে রানা ভাই খালি হাতে ফেরাতে পারলেন না।

চা শেষ করে আরও কিছুক্ষণ বসে আমরা যখন বেরোতে যাব, সেই সময় আমাদের জানালার ঠিক বাইরে নতুন করে আরেকটা আড্ডা শুরু হলো। এবার গিটার হাতে কয়েকজন জন তরুণ শুরু করলেন সমবেত কণ্ঠে জমাট আরবি গান। গানের শেষটা না শুনে শতবর্ষের বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনা, রাজনৈতিক বিতর্ক ও লেখক কবিদের অন্তরঙ্গ কথপোকথনের কেন্দ্র এবং নিঃসঙ্গ লেখকের চেয়ার টেবিল পেছনে ফেলে আমরা সরু গলিপথ ধরে বাইরে বেরিয়ে এলাম।

(চলবে)

এসএ/

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৪

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৩

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ২

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১

Header Ad
Header Ad

হাকিমপুরে গরীবের চাল ছাত্রলীগ নেতার গুদামে

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

দিনাজপুরের হাকিমপুরে সরকারি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ওএমএস) সাড়ে ৫ মেট্রিকটন চাল ও ১০৪টি খালি চালের বস্তা উদ্ধার করা হয়েছে। এসব চাল একটি ধান ভাঙ্গা মিলের গুদামে মজুদ করা ছিল। ঘটনাটি ঘটেছে ২৬ এপ্রিল, শনিবার রাতে, যখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিত রায় অভিযান চালিয়ে এসব উদ্ধার করেন।

গুদামটির মালিক আসাদুজ্জামান আসাদ, যিনি উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের সদস্য, তার বিরুদ্ধে চাল মজুদ করার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা জানান, আলীহাট ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের কাছে তার মিলের গুদামে এসব চাল মজুদ ছিল। অভিযান চালিয়ে সাড়ে ৫ মেট্রিকটন চাল জব্দ করা হয়, তবে অভিযানের সময় মিল মালিক এবং কোনো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি পাওয়া যায়নি।

এ ঘটনায় আসাদকে গ্রেপ্তার করা না গেলেও তাকে আসামী করে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, চাল মজুদ করা বেআইনি এবং এটি অপরাধ। উদ্ধারকৃত চাল উপজেলা খাদ্যগুদামে পাঠানো হয়েছে এবং পরবর্তীতে নিয়মিত মামলায় তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা খালেদা খাতুন জানিয়েছেন, মামলাটি রবিবার বিকালে থানায় করা হবে, যেখানে আসাদুজ্জামান আসাদকে প্রধান আসামী হিসেবে দায়ের করা হবে।

এদিকে, আসাদ আগেও বৈষম্যবিরোধী দুই ছাত্র হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন।

Header Ad
Header Ad

চুরির অভিযোগে কুবির দুই শিক্ষার্থী বহিষ্কার

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

ক্যামেরার লেন্স চুরির অভিযোগ প্রমাণের ভিত্তিতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) আইন বিভাগের দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃত দুই শিক্ষার্থী হলেন ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের আইন বিভাগের আনাস আহমেদ ও শামীম ভূঁইয়া।

রবিবার (২৭ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বোর্ডের মিটিংয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে বলে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল হাকিম। 

আনাস আহমেদকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার ও আবাসিক হলের সীট বাতিল এবং শামীম ভুঁইয়াকে সাময়িকভাবে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া তার ব্যাপারে পরিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে আগামীকাল সিন্ডিকেটে আলোচনা করা হবে বলে জানা গেছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল হাকিম বলেন, "গণমাধ্যমে আনাসকে নিয়ে রিপোর্ট হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট হয়েছে। এছাড়া তার চুরির সত্যতা পাওয়া গেছে। ফলে তাকে এক বছরের বহিষ্কার এবং হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আর শামীমের ব্যাপারে শৃঙ্খলা বোর্ড বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে। আগামীকাল বিষয়টি সিন্ডিকেটে আলোচনা হবে।'

এ ব্যাপারে রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, 'শৃঙ্খলা বোর্ড দুইটি সিদ্ধান্তের সুপারিশ করেছে। এখনো সাইন হয়নি পেপারে। আগামীকাল সিন্ডিকেটে ফাইনাল হবে বিষয়টি।'

উল্লেখ্য, এর আগে কুমিল্লার একটি অভিজাত হোটেল থেকে ক্যামেরার লেন্স চুরি করে আনাস এবং শামীম। সিসি ফোটেজ বিশ্লেষণ করে এর সত্যতাও পাওয়া যায়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২৫ এপ্রিল রাতে বেশ কয়েকজন বহিরাগত এসে ক্যাম্পাসে আনাসকে মারধরও করে।

Header Ad
Header Ad

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগবাড়িয়ে কিছু করার পক্ষে নয় ঢাকা

ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

অধিকৃত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলার জেরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা বেড়েই চলছে। তবে এই ইস্যুতে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে চলমান উত্তেজনা প্রশমনের পক্ষে বাংলাদেশ। দুটি বন্ধুপ্রতিম দেশ চাইলে বাংলাদেশ মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে তার আগে আগবাড়িয়ে কিছু করার পক্ষে নয় ঢাকা।

রোববার (২৭ এপ্রিল) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

তিনি বলেন, আমাদের অবস্থান স্পষ্ট, আমরা শান্তি চাই দক্ষিণ এশিয়ায়। আমরা জানি, বিভিন্ন ইস্যুতে দীর্ঘদিন ধরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতময় সম্পর্ক আছে। কিন্তু আমরা চাই না এখানে কোনো বড় কোনো সংঘাত সৃষ্টি হোক, যাতে এটা এ অঞ্চলের মানুষের কোনো বিপদের কারণ না হয়ে উঠতে পারে। ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক বিদ্যমান।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমরা চাইব তারা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তাদের সমস্যার সমাধান করে ফেলুক। আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি, দু’একটি দেশের পক্ষ থেকে মধ্যস্থতার প্রস্তাব এসেছে। যেভাবে হোক মধ্যস্থতার মাধ্যমে হোক, দ্বিপক্ষীয় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে হোক, আমরা চাই উত্তেজনা প্রশমিত হোক এবং শান্তি বজায় থাকুক।

ভারত-পাকিস্তান দুটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক রয়েছে। ইতোমধ্যে ইরান ও সৌদি আরব ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সমস্যা সমাধানে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশও মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করতে পারি কি না– এমন প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, আমি মনে করি না এই মুহূর্তে আমাদের মধ্যস্থতা করার মতো কোনো ভূমিকা নেওয়া উচিত। আমরা চাইব, তারা নিজেরা নিজেরা সমস্যার সমাধান করুক। তারা যদি আমাদের সহায়তা চায়, আপনারা মধ্যস্থতা করুন তাহলে হয়ত আমরা যাব। কিন্তু তার আগে আমরা আগবাড়িয়ে কিছু করতে চাই না।

ভারত-পাকিস্তানের চলমান উত্তেজনার কোনো প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে কি না– জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, আধুনিক জামানায় সবকিছু সবাইকে কমবেশি প্রভাবিত করে। কাজেই কোনো কিছু আমাদের একটুও প্রভাবিত করবে না, সেটা আমি বলি না। তাদের যেই সংঘাত সেটা আমাদের সরাসরি প্রভাবিত করার কিছু নাই। কারণ, আমরা এতে কোনো পক্ষ নিইনি। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যেকোনো সংঘাত বা সম্পর্ক খারাপ হলে প্রভাব পড়ে।

‘তবে তাদের কাছ থেকে আমাদের যদি কোনো স্বার্থ থাকে আমদানি করার, আমরা করব।’, যোগ করেন তৌহিদ হোসেন।

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশ্নে উপদেষ্টা জানান, এটা হয়ত নিরাপত্তা নিয়ে যারা সরাসরি কাজ করেন তারা বলতে পারবেন। এই মুহূর্তে আমার কাছে এরকম কোনো তথ্য নেই।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

হাকিমপুরে গরীবের চাল ছাত্রলীগ নেতার গুদামে
চুরির অভিযোগে কুবির দুই শিক্ষার্থী বহিষ্কার
ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগবাড়িয়ে কিছু করার পক্ষে নয় ঢাকা
সাব-ইন্সপেক্টর পদে প্রাথমিক সুপারিশ পেল ৫৯৯ জন
দুই উপদেষ্টার এপিএস-পিও’র দুর্নীতির খোঁজে গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু
নির্বাচনে প্রতিটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা চায় জামায়াত
কক্সবাজার-১ আসনের সাবেক এমপি জাফর আলম গ্রেপ্তার
ভারতের দিকে তাক করা পাকিস্তানের ১৩০ পারমাণবিক বোমা
চার ম্যাচের নিষেধাজ্ঞায় তাওহিদ হৃদয়, বাড়ছে নাটকের রঙ
উত্তেজনার মধ্যেই যুদ্ধজাহাজ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাল ভারত
ছেলে খুঁজে পাচ্ছি না, একজন জীবনসঙ্গী দরকার: মিলা
টাঙ্গাইলে শ্রমিকদলের নেতাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধে ভারতের ১.১৪ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির শঙ্কা
দেশের পথে প্রধান উপদেষ্টা
রাজনীতির চেয়ারে ঘুণপোকা ধরেছে, এটি সংস্কার করা প্রয়োজন: ব্যারিস্টার ফুয়াদ
উত্তাল ইউআইইউ ক্যাম্পাস, ভিসি-ডিনসহ ১১ কর্মকর্তার পদত্যাগ
এপ্রিলেই দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া, সঙ্গে থাকবেন দুই পুত্রবধূ
বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে বিশাল নিয়োগ, পদ ৬০৮
ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় ফ্যাসিবাদী শাসক পালাতে বাধ্য হয়েছে: আলী রীয়াজ
মহেশপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত