শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | ৬ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

জান্নাত লাবণ্য

ফারুক মঈনউদ্দীনের ভ্রমণপিয়াসী মনের প্রতিচ্ছবি

একজন  ভ্রমণপিয়াসী মানসিকতার মানুষ ছাড়া ভ্রমণকাহিনি লেখা সম্ভব নয়। কল্পনা করে আর যা-ই হোক, ভ্রমণকাহিনি লেখাও সম্ভব নয়। কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক ফারুক মঈনউদ্দীনের ভ্রমণগ্রন্থ পাঠ করলে সাহিত্যের এ ধারা সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ও আকর্ষণীয় ধারণা যায়, বোঝা যায় ভ্রমণকাহিনি বিশ্বসাহিত্যেরই গুরুত্বপূর্ণ শাখা।

‘সুদূরের অদূর দুয়ার’ ফারুক মঈনউদ্দীন রচিত সপ্তম ভ্রমণগ্রন্থ। এ গ্রন্থে লেখক মিয়ানমার, শ্রীলংকা, হংকং এবং অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি ভ্রমণকাহিনি রচনার ক্ষেত্রে সবকিছুর পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা করতে ভালোবাসেন। এ গ্রন্থের প্রথম পর্ব ‘বার্মা মুলুক মান্দালয়ে’ শুরু হয়েছে মান্দালয় বিমানবন্দরে অবতরণের গল্প থেকে। এরপর লেখক পাঠককে নিয়ে ঢুকে গেছেন মান্দালয়ের পথে, দর্শনীয় স্থানে, ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে।

ফারুক মঈনউদ্দিন যা দেখেন তার বর্তমান-অতীত সব তথ্য প্রকাশে তৎপর থাকেন। মান্দালয় শহরের সরলরেখার মতো সড়ক, শহরের বর্ণনা, মান্দালয় রাজধানী প্রতিষ্ঠার পেছনে গৌতম বুদ্ধের ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে জনশ্রুতি, ইরাবতী নদীতে নৌ-বিহার, প্যাগোডা দর্শন, উবেইন সেতু ভ্রমণ, পুতুল নাচ দর্শনের কথা দিয়ে এই অংশটি শেষ হয়েছে। এর মাঝেই লেখক আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন সেখানকার সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ে বিভিন্ন কথা। লেখক এমন সব তথ্য পেশ করেছেন যা সাধারণ ভ্রমণকারীদের হয়তো জানা সম্ভব নাও হতে পারে।

এখানে শাসকদলের মদদপুষ্ট ধনকুবেরদের ক্রোনি বলে ডাকা হয়। বার্মিজ মেয়েরা থানাকা নামক গাছের কান্ড পানিতে ভিজিয়ে পাথরে ঘষে গুড়ো দিয়ে তৈরি মন্ড মুখে প্রলেপ দিয়ে ঘুরে বেড়ায়। রয়্যাল প্যালেসে ঘুরতে গিয়ে লেখক বলে ফেলেন সিংহাসন দখলের ইতিহাস, ইরাবতী নদীর উৎপত্তি, প্যাগোডা তৈরি ইতিহাস, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বর্ণনা,বর্মি নারীদের আচরণ ইত্যাদি বিষয় লেখক গল্প বলার মতো করে উপস্থাপন করেছেন।

দ্বিতীয় পর্বের নাম ‘মঠের সোনালি শহর বাগান’। এখানে উঠে এসেছে ঈদুল আজহার দিনের চেহারা, গ্রামের বর্ণনা, সাধারণ মানুষের জীবন যাপনের ছবি। সেখানকার খাবারের বিষয়েও জানা যায়। ভিন্নধর্মী খাবার যেমন চা পাতার সালাদের রেসিপি বলা হয়েছে। যা ‘লাপেতো’ নামে পরিচিত। ফারুক মঈনউদ্দীন কোথাও ভ্রমণে গেলে সবসময় সেখানকার ইতিহাস ও তথ্য জানতে যে ইন্টারনেটের সাহায্য নেন এবং বেশ হোমওয়ার্ক করেন, তা এখানে উল্লেখ করেছেন। এ অংশে বর্মি পোশাক, হস্তশিল্প বিশেষ করে বাঁশের তৈরি জিনিস পত্রের বর্ণনা পাওয়া যায় বিস্তারিতভাবে।

তৃতীয় পর্বের নাম ‘রঙ্গিলা রেঙ্গুন’। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনমুক্ত হওয়ার পর থেকে  বার্মার শাসন, শোষণ, প্রশাসক, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের অবয়ব লেখক এখানে বর্ণনা করেছেন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের সাথে রাজনৈতিক অবস্থার সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য  গুলো খুঁজেছেন। যেমন, ১৯৬২ সালে রেঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ে সেনা মোতায়েন করে হামলা চালিয়ে ছাত্রদের দমন করা হয়। তখন দুই বছর বার্মার সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়। অন্যদিকে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানের সামরিক চক্র বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে আক্রমণ চালিয়ে হত্যা করে নিরীহ ছাত্রদের। তারপর মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সব বিশ্ববিদ্যালয় খোলা রেখে বিশ্বকে দেখাতে চেষ্টা করে যে পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। বাংলাদেশের সামরিক শাসকেরা অসাংবিধানিক ক্ষমতা দখল করার পর সেটাকে বৈধতা দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক দল গঠন করে। নে উইনও সেটাই করেছিলেন। তবে তার পদক্ষেপটা ছিল রাডিক্যাল। বাংলাদেশের অবৈধ শাসকেরা প্রভাবশালী রাষ্ট্রের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। নে উইন সেখানে কারও তোয়াক্কা করেননি। দেশকে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার দুঃসাহস দেখিয়েছেন। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের বিস্তৃত বর্ণনার পাশাপাশি লেখক এ অংশে চট্টগ্রামের সাথে বার্মার সংস্কৃতি, ভাষার মিল বন্ধন, শোয়েডাগন প্যাগোডার উৎপত্তি ও বিকাশ বিষয়ে লিখেছেন। সর্বশেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের সমাধি স্থানে ভ্রমণ করার বর্ণনা দিতে গিয়ে লেখক পাঠককে জানিয়ে দেন মোগল শাসন ব্যবস্থার শেষ সময়ের রাজনৈতিক ইতিহাস।

তারপর হংকং ভ্রমণের ইতিবৃত্ত লিখেছেন লেখক। এই পর্বের নাম ‘হংকংয়ের গ্রামে তিন হাউ পরব’। হংকংয়ের রেলস্টেশনে চিত্র, সাধারণ মফস্বল শহর, সরু রাস্তা ঘাট, অলিগলি, বাড়িঘরের বর্ণনা দিতে দিতেই লেখক একাদশ শতাব্দীর চীন থেকে আসা তাং গোত্রের আগমন, গ্রাম গঠন, হংকংয়ের উপর ব্রিটিশ শাসন, চীন থেকে শরনার্থী আগমন ইত্যাদি সহ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের গল্প করতে করতে তুলে ধরেন তিন হাউ পরবের মিছিল দেখার অভিজ্ঞতা।

তার পরের পর্বের নাম ‘হংকংয়ের গ্রামের ইচ্ছাপূরণ বৃক্ষ’। বিখ্যাত লাম সুয়েন উইশিং ট্রি দেখার বর্ণনা দিতে গিয়ে লেখক অবহিত করেন সেখানে যাতায়াতের যানবাহন,  হংকংয়ের মফস্বল শহরের স্বরূপ, সেখানকার মানুষের আচার-আচরণ, তিন হাউ মন্দিরের বিবরণের চিত্র।

ইচ্ছা পূরণ বৃক্ষের উদ্ভব নিয়ে তৈরি বিভিন্ন লোককথাও লেখক গল্পচ্ছলে পাঠককে জানিয়ে দেন।  পূর্বে রীতি ছিল ইচ্ছা পূরণের মানত করার জন্য মন্দির থেকে ছাপানো কাগজে নাম, জন্ম তারিখ আর ইচ্ছের কথা লিখতে হয়। তারপর কমলার সাথে কাগজটি বেঁধে গাছের দিকে ছুঁড়ে মারতে হবে। ছুঁড়ে মারা কাগজটা কমলাসহ গাছের ডালে আঁটকে গেলে বুঝতে হবে ইচ্ছা পূরণ হবে। কিন্তু একবার চীনা নববর্ষে মানুষ এতো কমলা ছুড়ে মেরেছিল, যে গাছের ডাল ভেঙ্গে পড়ে এবং এক বৃদ্ধ ও এক কিশোর আহত হয়। এরপর এই রীতি বন্ধ করা হয়। লেখক দেখতে পান, একটি নোটিশ বোর্ডে সারি সারি হুক গেঁথে দেওয়া, সেখানেই ইচ্ছার কাগজ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। লেখক ‘ জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক’ এই ইচ্ছা পোষণ করেন। এখানেই  শেষ হয় লেখকের হংকং ভ্রমণের ইতিবৃত্ত।

পরের পর্বের নাম ‘ভিক্টোরিয়ার স্বর্ণখনির সন্ধানে’। অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণের গল্প শুরু হয়েছে, মেলবোর্ন থেকে প্রায় দেড়শ মাইল দূরে বালারাত শহরের স্বর্ণখনি সোভরেনের ইতিহাস ও বর্তমান অবস্থার বর্ণনা দিয়ে। সেই সাথে স্বর্ণ আহরণকে ঘিরে জনবসতির রাজনীতি ও প্রেক্ষিত, খনির ভিতরে প্রবেশের অভিজ্ঞতা, শ্রমিক পল্লী অবস্থা,  খনিতে বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনায় নিহত মানুষের তথ্য ইত্যাদি বিষয় লেখক চমৎকারভাবে প্রকাশ করেছেন।

ফারুক মঈনউদ্দীনের লেখনীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, তিনি ভ্রমণ করা স্থানটি সম্পর্কে অন্য বিখ্যাত মানুষদের রচনার উদ্ধৃতি দিয়ে থাকেন।  এই অংশে তিনি ব্রিটিশ লেখিকা এলেন ক্লাসির (১৮৩০-১৯০১) অভিজ্ঞতালব্ধ ‘অ্যা লেডিজ ভিজিট টু দ্য গোল্ড ডিগিংস অভ অস্ট্রেলিয়া ইন’, জন শেরার ‘ গোল্ড ফাইন্ডার অভ অস্ট্রেলিয়া’ বইয়ের উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছেন। বার্মা মুলুক মান্দালয়ে লেখক ইংরেজ কবি রুডইয়ার্ড কিপলিং এর ১৮৯০ সালে কলকাতা থেকে বার্মা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা ‘মান্দালয়’ নামক কবিতাটি তুলে ধরেছেন। ‘মঠের সোনালি শহর বাগান’ অংশে লেখক জুডিথ গ্রেগরি স্মিথের ভ্রমণস্মৃতি গ্রন্থ  ‘মিয়ানমার: অ্যা মেমোয়ের অভ লস অ্যন্ড রিকভারি’ থেকে তথ্য বর্ণনা করেছেন।

ফারুক মঈনউদ্দীন নিজের অভিজ্ঞতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্থানে বিখ্যাত মানুষদের অভিজ্ঞতার তথ্যও তুলে ধরেন। যেমন, তিমির দর্শনের কথা বলতে গিয়ে লেখক উল্লেখ করেছেন ‘শ্রীকান্ত’ উপন্যাসে শরৎচন্দ্র মূল চরিত্রের জবানিতে লিখেছিলেন, ‘যাহাকে সমুদ্রপীড়া বলে, সে উপসর্গটা আমার বোধ করি ছেলেবেলায় নৌকার উপরেই কাটিয়া গিয়াছিল; সুতরাং বমি করার দায়টা আমি একেবারেই এড়াইয়া গিয়াছিলাম।’

‘বার্মা মুলুক মান্দালয়ে’ অংশতেও লেখক শরৎচন্দ্রের রেঙ্গুন রেলওয়েতে অস্থায়ী চাকরি লাভের কথা তুলে ধরেছেন। সেই চাকরি চলে গেলে শরৎচন্দ্র  বার্মার পাবলিক ওয়ার্কস অ্যাকাউন্ট অফিসে নিয়োগ পান। এই দপ্তরে তিনি কাজ করেছিলেন প্রায় দশ বছর। বার্মা প্রবাসের সময়ই ‘রামের সুমতি’ সহ বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য গল্প উপন্যাস রচনা করেছিলেন।

স্থানীয় মানুষের পোশাকের চিত্র প্রকাশেও লেখক সর্বদা তৎপর। পাশাপাশি ফারুক মঈনউদ্দীন কোন একটি স্থানের বর্ণনা দিলে একই ধরনের অন্য স্থানের তথ্য ও তুলনা হাজির করেন। শ্রীলঙ্কার কান্ডিতে অবস্থিত হাতির অনাথালয় বর্ণনা করার পাশাপাশি লেখক মাউন্ট কেনিয়া অ্যানিম্যাল অরফানেজের তুলনামূলক আলোকপাত করেছেন।

ফারুক মঈনউদ্দীনের লেখনীর ভাষা খুবই সহজ, সরস আর গতিময়। ছোটগল্প লেখার অভিজ্ঞতা তিনি ভ্রমণকাহিনিতে সফলভাবে প্রয়োগ করেছেন। তিনি ভ্রমণকাহিনি শুরু করেন একদম গন্তব্যে রওনা দেওয়ার বর্ণনা থেকে। তারপর যাওয়ার রাস্তা, থাকার স্থান, পরিচিত মানুষের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ, খাবার, আড্ডা, স্থানের বিবিধ  তথ্য  ও ইতিহাস এবং স্থানটির  বিশ্লেষণী বর্ণনা দিয়ে লেখা শেষ  করেন। তার রচনার সার্থকতা এটাই যে, কোন স্থান বিষয়ে পাঠকের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করে তাঁর রচনা। পাঠকের মনে একঘেয়েমি দূর করতে সক্ষম হয় তাঁর রসবোধ। এভাবেই বাংলা ভ্রমণ-সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে যাবেন লেখক, শুভকামনা রইলো।

 

সুদুরের অদূর দুয়ার
লেখক: ফারুক মঈনউদ্দীন
প্রকাশক: সময় প্রকাশন
দাম: ৩০০ টাকা

Header Ad
Header Ad

হাসিনা-কাদেরসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে ‘রেড নোটিশ’ জারির আবেদন

ছবি: সংগৃহীত

শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিশ’ জারির জন্য আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করা হয়েছে। রেড নোটিশ জারি করতে ইন্টারপোলের কাছে পৃথক তিনটি ধাপে আবেদন করেছে বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)।

শেখ হাসিনা ছাড়া আরও যাদের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির আবেদন করা হয়েছে তারা হলেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত ও সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, আদালত, প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) অথবা তদন্ত সংস্থার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি শাখা ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির আবেদন করে থাকে।

পুলিশের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, শেখ হাসিনাসহ যে ১২ জনের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির আবেদন করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে করা আবেদনে আর্থিক অপরাধের অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে। অন্যদের বিরুদ্ধে করা আবেদনে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার তথ্য-উপাত্ত যুক্ত করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা ও বেনজীর আহমেদ ছাড়া অন্য ১০ জনের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে এনসিবি থেকে ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করা হয় ১০ এপ্রিল। এর আগে তাঁদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরে নথিপত্রসহ চিঠি পাঠায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়।

শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করতে রেড অ্যালার্ট জারির জন্য ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করতে গত বছরের নভেম্বরে পুলিশ সদর দপ্তরকে অনুরোধ করেছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়।
অন্যদিকে বেনজীরের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করতে ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করা হয় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে। এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার একটি আদালত বেনজীরের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির জন্য ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।

তবে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির আবেদনের বাইরে ভারতসহ যেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে, সে চুক্তির আওতায় বিদেশে পলাতক ব্যক্তিদের ফেরানোর চেষ্টাও রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে। তবে বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় ফেরানো সহজ হবে না বলেও মনে করছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। এখনো সেখানেই অবস্থান করছেন তিনি। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে। এই চুক্তির আওতায় তাঁকে ফেরত আনতে বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে আবেদন করেছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত মোট তিনটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে একটি মামলা রয়েছে। সেই মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনও আসামি। এ ছাড়া ২০১৩ সালে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের হত্যা-নির্যাতনের ঘটনায় একটি এবং বিগত সাড়ে ১৫ বছরে গুম-খুনের ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরেকটি মামলা রয়েছে।

মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরসহ একাধিক প্রসিকিউটর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। আগামীকাল রোববার এ মামলায় ট্রাইব্যুনালে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য রয়েছে।

Header Ad
Header Ad

নিখোঁজের ১৪ ঘণ্টা পর সেই শিশু সেহেরিশের লাশ উদ্ধার

ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের চকবাজারের হিজলা খালে পড়ে যাওয়া ছয় মাস বয়সী শিশু সেহরিসকে নিখোঁজের ১৪ ঘণ্টা পর উদ্ধার করা হয়েছে।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) সকালে তার লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।
এর আগে শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে কাপাসগোলার নবাব হোটেলের পাশের নালায় ওই শিশুটি নিখোঁজ হয়।

স্থানীয়রা জানান, চট্টগ্রাম মহানগরের চকবাজার থানার কাপাসগোলা এলাকায় মা ও ছয় মাস বয়সী শিশুসহ একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা নালায় পড়ে যায়। এ ঘটনায় মাকে উদ্ধার করা গেলেও শিশুটি পানির স্রোতে তলিয়ে যায়। এরপর শিশুটির লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।

জানা গেছে, দুর্ঘটনার পর রিকশাচালক পালিয়ে যায়। দ্রুত গতির কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার ঘটনাটি ঘটে। খবর পেয়ে চসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মী এবং ফায়ার সার্ভিসের দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেন।

শিশুটির মামা মারূফ জানান, আসাদগঞ্জ থেকে চেহরিসকে নিয়ে তার মা ও দাদি তার (মারূফ) বাসায় বেড়াতে আসছিল। বাড়ির কাছে এসে রাস্তায় পানি থাকায় রিকশা নেয় তারা। কিন্তু নালার পাশে থাকা বাঁশের বেষ্টনী খুলে ফেলার কারণে তারা রিকশা নিয়ে নালায় পড়ে যায়। পরে চেহরিসের মা সালমা ও দাদি আয়েশাকে উদ্ধার করা গেলেও চেহরিস হারিয়ে যায়।

Header Ad
Header Ad

আগামী ঈদের আগেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কাজ করছে সরকার

ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে আরাকানকে নিরাপদ স্থান হিসেবে গড়ে তুলতে সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে সরকার।

প্রধান উপদেষ্টার প্রত্যাশা মতে, আগামী ঈদের আগেই যাতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব হয় সে লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।

শুক্রবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার শহরের টেকপাড়ায় রাখাইন সম্প্রদায়ের বর্ষবরণ উৎসব সাংগ্রেং—১৩৮৭ পরিদর্শন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. খলিলুর রহমান আরো বলেন, ‘আমি আজকেও (শুক্রবার) রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছি। তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। একসঙ্গে নামাজ আদায় করেছি। তাদেরকে বলছি যে, আন্তর্জাতিক ফোরামে তারা যেন প্রত্যাবাসন বিষয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন।’

ড. খলিলুর রহমান রাখাইনদের উৎসব প্রসঙ্গে বলেন, ‘বাংলাদেশ সকল ধর্মের, সকল নৃ—গোষ্ঠীর এবং সকল সংস্কৃতির একটি দেশ। আমাদের দেশের এই সময়টা উৎসবের সময়। তিনি বর্ষবরণের চমৎকার অনুষ্ঠান উপহার দেওয়ার জন্য রাখাইন সম্প্রদায়ের প্রতি অভিনন্দন জানান।’

এসময় উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন, শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নিজাম উদ্দিন আহমেদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন।

এর আগে, গত রমজান মাসে জাতিসংঘের মহাসচিবকে নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় তিনি, আগামী ঈদের আগেই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের জোর প্রচেষ্টায় থাইল্যান্ডে বিমসটেক সম্মেলন চলাকালে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয় মিয়ানমার সরকার।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

হাসিনা-কাদেরসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে ‘রেড নোটিশ’ জারির আবেদন
নিখোঁজের ১৪ ঘণ্টা পর সেই শিশু সেহেরিশের লাশ উদ্ধার
আগামী ঈদের আগেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কাজ করছে সরকার
লাল কাপড়ে ঢাকা হবে দেশের সব পলিটেকনিকের ফটক
৬০ বছর বয়সে বিয়ে করলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ
চুয়াডাঙ্গা সীমান্তে ১২ কেজি রূপার গয়না জব্দ
ফয়জুল করীমকে বরিশালের মেয়র ঘোষণার দাবি
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি যুবক নিহত
গোবিন্দগঞ্জে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আটক
বাংলাদেশি যুবককে ধরে নিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দিল ভারতীয়রা
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এনসিপির বৈঠক শনিবার
বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে যা জানাল পাকিস্তান
গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলা, শিশুসহ একই পরিবারের ১৩ জন নিহত
ভারতীয় ক্রিকেটাররা আমাকে নগ্ন ছবি পাঠাত, অভিযোগ ট্রান্সজেন্ডার ক্রিকেটারের
১৮৭ জনকে নিয়োগ দেবে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর
গাইবান্ধায় আগুনে পুড়লো ৫ দোকান, ৩০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথে বড় সমস্যা আরাকান আর্মি: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
টঙ্গীতে ফ্ল্যাট বাসা থেকে দুই শিশুর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার
মালয়েশিয়ায় ১৬৫ বাংলাদেশিসহ ৫০৬ অবৈধ অভিবাসী আটক
ভেঙে গেল পরীমনি-সাদীর প্রেম? রহস্যময় পোস্টে তোলপাড় নেটদুনিয়া