রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৪

মিসরের সবচেয়ে বড় প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা সাক্কারা আসলে সাড়ে দশ বর্গ কিলোমিটারজুড়ে এক বিশাল সমাধি ক্ষেত্র। প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে নীল নদের পশ্চিম তীরে গিজা থেকে দাসুর পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় সে সময়ের রাজধানী মেমফিসের নাগরিকদের সমাধিস্থ করার জন্য বেছে নেয়া হয়েছিল থেকে কয়েক কিলোমিটার উত্তরে সাক্কারার মরু প্রান্তর। বছরের পর বছর ধরে সম্রাট এবং পরিবারের সদস্য ও সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি থেকে শুরু করে সাধারণ পেশাজীবী মানুষের অগণিত মৃতদেহ সমাহিত হয়ে আছে সাক্কারায়।

কায়রো কিংবা গিজা থেকে সাক্কারায় আসার জন্যে গণপরিবহন নেই। পর্যটকদের জন্য প্রাইভেট কার, ট্যাক্সি অথবা দলবেঁধে ভ্রমণের জন্য ভাড়া করা বাস মিনিবাস সহজলভ্য। অসংখ্য নামি-অনামি টুর অপারেটর বিদেশি পর্যটক পরিবহনের জন্য একপায়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের টুর গাইড সিলভিয়া এবং চালক বাসামও পেশাদার পর্যটন ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত। সাক্কারায় প্রবেশের ছাড়পত্র সংগ্রহের জন্যে বাসাম যেখানে এসে দাঁড়ালো সেটি টিকিট ঘর, প্রক্ষালণ কক্ষ এবং আর্কিওলজিকাল সাইটের অফিস মিলিয়ে পাথরের তৈরি একটি কমপ্লেক্স। এই ভবনটির বিপরীতে রাস্তার ওপারে মরুভূমিতে বালির স্তুপ জমতে জমতে পাহাড় হয়ে গেছে আর সেই পাহাড়ের পায়ের কাছে তিনটি পাথরের স্তম্ভ এখনো পুরোপুরি টিকে আছে। আরো কয়েকটি ভাঙাচোরা স্তম্ভ এবং ছড়িয়ে থাকা প্রস্তখণ্ডের মধ্যেও দাঁড়িয়ে আছে কয়েকটি খেজুর গাছ।

কমপ্লেক্স চত্বরে গাড়ি রাখার সঙ্গে সঙ্গেই নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পোশাকধারী পুলিশ এগিয়ে এসে তার খাতার পাতায় গাড়ির নম্বর লিখে সিলভিয়াকে কিছু একটা জিজ্ঞেস করলো। সিলিভিয়া উত্তর দিল বাংলাদেশ! দুবার শোনার পরে ‘ব্যাংলাদেস, ব্যাংলাদেস’ উচ্চারণ করে বড় কষ্টে তার খাতায় আমাদের দেশের নাম অন্তর্ভূক্ত করতে পেরেছে বলে মনে হলো। সম্ভবত জীবনে প্রথমবারের মতো তিনি এই দেশটির নাম শুনেছেন। আসলে তাকেও দোষ দেওয়া যায় না। গিজার গ্রেট পিরামিডের তুলনায় খুব কম পর্যটকই সাক্কারা পর্যন্ত আসে।

সাক্কারার টিকিট কাউন্টারের সামনে বিভিন্ন মূল্যমানের টিকিটের দীর্ঘ তালিকা ঝুলছে। সিলভিয়ার সঙ্গে কথা বলে আমরা আগেই ঠিক করেছিলাম পুরো এলাকা ঘুরে আসার ১৮০ ইজিপশিয়ান পাউন্ডের স্ট্যান্ডার্ড টিকিট কিনব, এ ছাড়া আমাদের বাহনের জন্য দিতে হবে মাত্র পাঁচ পাউন্ড। রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য বর্তমানে সাক্কারার মূল আকর্ষণ স্টেপ মিরামিডে প্রবেশ নিষেধ! অন্য পাঁচ-ছয়টি পিরামিডের ভেতরে প্রবেশের ইচ্ছে না থাকায় ৪৪০ পাউন্ডের টিকিট কেনার প্রয়োজন নেই। বিভিন্ন মূল্যের টিকিট কিনে একেকটি পিরামিডেও প্রবেশ করা যেতে পারে।

নিচে ঘন খেজুরের বন পেরিয়ে অনেক দূরে দূরে কিছু বসত বাড়ির আভাস হাতের ডান দিকে এবং বাঁয়ে বালির পাহাড় রেখে আমরা উপরে উঠতে থাকি। কিছুটা উপরে ওঠার পরে ডান দিকে নেক্রোপলিস এলাকায় ঢুকে গেলে বাঁয়ের সবুজ অদৃশ্য হয়ে যায়। দুদিকেই পাথরের দেয়াল আর মরুর বালিতে ছড়ানো প্রস্তরখণ্ডের ভেতর দিয়ে এগোতে চোখে পড়ে মিসরের এবং প্রকৃতপক্ষে বিশ্বের প্রথম পিরামিড চার হাজার সাতশ বছর আগের অসমাপ্ত নির্মাণ ‘দ্য স্টেপ পিরামিড অব জোসের’। এর নির্মাণ কাজের দায়িত্বে ছিলেন স্থপতি, প্রকৌশলী ও জ্যোতির্বিদ ইমহোটেপ।

আমাদের গাড়িটি পার্কিং এলাকায় পৌঁছালে গাড়ি থেকে নেমে সামনে এগোবার আগেই পথ আগলে দাঁড়ায় ফারাওয়ের ফেরিওয়ালা। তার মেলে ধরা স্কার্ফ, গামছা, রুমাল চাদরের সর্বত্র রামেসেস, নেফারতিতি, তুতেনখামেন, আনুবিস আর হাজার তিন চার বছর আগের দাস-দাসীদের নানা আকার আকৃতির নানা বর্ণের প্রতিকৃতি। ফেরিওয়ালার হাঁকডাক উপেক্ষা করে আমি এগোতে থাকি। কারণ তখন সামনে দেখতে পাচ্ছি গোলাপি, খয়েরি, বাদামি পাথরের তৈরি দীর্ঘ দেয়াল, যার দুপাশের খানিকটা অংশ ভেঙে না পড়লে মনে হতো এটি আধুনিক স্থাপত্যের সাম্প্রতিক কোনো নির্মাণ! সাড়ে দশ মিটার উঁচু এবং দেড় হাজার মিটারের বেশি দীর্ঘ এই দেয়াল এক সময় ঘিরে রেখেছিল পুরো এলাকা। তবে স্টেপ পিরামিডের মতো এই দেয়ালটিও নাকি অসমাপ্ত। সম্রাট জোসেরের সঙ্গে স্থপতি ইমহোটেপের নামও উৎকীর্ণ করা আছে এই দেয়ালে।

ফারাও সাম্রাজ্যের তৃতীয় রাজবংশের দ্বিতীয় সম্রাট জোসের রাজত্ব করেছেন ঊনত্রিশ বছর। এরই মধ্যে সিনাই থেকে আসোয়ান পর্যন্ত বিস্তৃত করেছিলেন সাম্রাজ্য, উত্তরের মরু অঞ্চলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বিদ্রোহ দমন করে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করছেন, যার অন্যতম হলো–সে সময়ের রাজধানী মেমফিসের অদূরে এই সাক্কারা নেক্রোপলিসের স্টেপ পিরামিড এবং প্রবেশ পথের সীমানা দেয়াল সংলগ্ন মন্দির। গোলাপি গ্রানাইট পাথরে তৈরি দেয়ালের মাঝখানের অনেক উঁচু অথচ অপরিসর দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে দুপাশের পাথরের তৈরি পিলারের মাঝখানের করিডোর দিয়ে এগোতে থাকি। চার হাজার সাতশ বছর আগে কী প্রক্রিয়ায় কোন যন্ত্রে এ সব বিশাল প্রস্তর খণ্ডের ভেতরে খাঁজ কেটে সঠিক মাপে সংযোজন করে নির্মিত হয়েছে এই বিশাল স্থাপনা! কঠিন শিলা খণ্ডকে সম্পূর্ণ সিলিন্ডারের আকৃতি দিয়ে তৈরি হয়েছে এর সিলিং। ভেতরের কলাম বীম এবং বেদির অনেকটাই এখনো অক্ষত থেকে গেছে। মন্দিরে প্রবেশের জন্য একটি এবং পঁচিশটি পিলার পার হয়ে পিরামিড চত্বরে প্রবেশের জন্য আরো একটি আয়তকার দরজা ছাড়াও একটি আধখোলা ছোট দরজা রয়েছে এই প্রস্তর মন্দিরে। ধারণা করা হয় ইহজগৎ থেকে সরাসরি পরজগতে পারি দেবার জন্যে খোলা রাখা হয়েছিল এই দরজা। তবে দুর্ভাগ্য অসময়োচিত মৃত্যুর কারণে অন্তিম ইচ্ছা অনুসারে নিজের পরিকল্পিত স্টেপ পিরামিডের নির্মাণ কাজ যেমন শেষ হয়নি, তেমনি সেখানে তার দেহাবশেষও রাখা সম্ভব হয়নি। অতএব পারলৌকিক জীবনে তিনি আদৌ পৌঁছাতে পেরেছিলেন কি না, সে ব্যাপারে সন্দেহ থেকেই যায়।

চত্বরের ভেতরে দেয়ালের ছায়ায় বসে রানা ভাইকে যখন সিলভিয়া স্টেপ পিরামিডের আদ্যোপান্ত ইতিহাসের বিবরণ দিচ্ছে তখন আমরা দুজন সামনে এগিয়ে গেছি। দক্ষিণ সমাধি ক্ষেত্রে যাবার জন্যে সিঁড়ি দিয়ে উপরে ওঠার পরে উট চালকদের দুজন প্রথমে আমাদের উটে চড়াবার প্রস্তাব করে। বুঝিয়ে বলতে চেষ্টা করলাম এই বয়সে নড়বড়ে হাড়হাড্ডি নিয়ে উটে উঠে পুরোপুরি ভেঙে পড়তে চাই না। এরপর তারা আমাদের ছবি তুলে দেয়ার জন্যে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। যতই বলি, আমরা নিজেদের ছবি নিজেরাই তুলতে পারি, তা ছাড়া সঙ্গে আমাদের বন্ধুরা আছে। শেষ পর্যন্ত তারা সম্ভবত সাক্কারার ইতিহাসের সঙ্গে সর্প দেবতার একটি সম্পর্কের গল্প বলে দেয়ালে পাথরের তৈরি একসারি সাপের দিকে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এরই মধ্যে রানা ভাই এবং সিলভিয়া এসে পড়ায় উষ্ট্র ভাতৃদ্বয়ের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে আমরা রেলিং দিয়ে ঘেরা একটি গভীর খাত অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যাই।

এরপর বিস্তৃত এলাকাজুড়ে কেবলই পিরামিড, অসংখ্য সমাধি, ছড়ানো ইট-পাথর, অসমাপ্ত অথবা ধ্বংসপ্রাপ্ত এক বিস্তৃত বিরাণভূমি। তবে এখানে পিরামিড বলতে গিজার সেই দৃষ্টি নন্দন বিশাল নির্মাণ নয়, অনেক ক্ষেত্রেই তা কেবলই পাথরের স্তূপ। এখানে অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের পাথর, এমনকি কাদামাটির ইটও ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে উনাসের পিরামিড বা নিউ কিংডম সিমেট্রি বলে উল্লেখ থাকলেও তা সাধারণ পর্যটকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে না। আমরা সিঁড়ি দিয়ে নেমে এমনি একটি পিরামিডের গহ্বরে প্রবেশের চেষ্টা করি। অনেকটা নেমে যাওয়ার পর লোহার রেলিং দেয়া গেটে বাধা পেয়ে ফিরে আসতে হয়। ভেতরে দৃষ্টি দিয়ে দেখি সেখানেও কিছু নেই, কেবলই অন্ধকার।

হাতের ডানে-বাঁয়ে অগুণতি চিহ্নিত এবং তারচেয়ে বেশি নাম গোত্রহীন কবর রেখে সমাধি প্রান্তরের মঝখান দিয়ে আমাদের পথ। হলুদ নির্দেশ ফলকে মেহুর সমাধি, ইদুতের সমাধি, উনাসাঙ্খার সমাধি, নেবুতের সমাধি, নেবকাওরের সমাধি ইত্যাদি লেখা থেকে অনুমান করা যায় এ সবই সম্রাটের আত্মীয় পরিজন বা অভিজাত শ্রেণির মানুষ। আর যাদের কবরে কোনো ফলক নেই সেই লক্ষ লক্ষ মানুষ পুনরুজ্জীবনের স্বপ্ন নিয়ে যাদের মৃত্যু হয়েছিল, হাজার বছর ধরে তারা এই বিস্তৃত মরুভূমিতে শুয়ে আছে। সিলভিয়া একটা গল্প বলেছে। সেই তিন থেকে সাড়ে চার বছর আগের শ্রমজীবী মানুষ, নির্মাণ শ্রমিক, সেবাদাস, সাধারণ সৈনিক, কামার, কুমার, তাঁতীসহ কর্মজীবী মানুষেরা ফারাওয়ের রাজ্যে বিনা পারিশ্রমিকে কেবল মাত্র পেটে-ভাতে কাজ করেই নিজেদের ভাগ্যবান মনে করতো। কারণ তাদেরও বিশ্বাস ছিল সাক্কারা নেক্রোপলিসে সমাধিস্থ হলে ফারাওয়ের সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর পরে যে অনন্ত জীবন সেই দুঃখ-শোক-শ্রম-শংকাহীন জীবনে প্রবেশ করবে তারা। হাজার বছর আগের রাজতন্ত্র ও পুরোহিতের প্রচার এবং সাধারণ মানুষের বিশ্বাস এখনো প্রায় একই রকম থেকে গেছে।

ফিরতি পথে বাঁ দিকে একটা খাল দীর্ঘক্ষণ ধরে আমাদের পাশাপাশি চলছে। খালের দুপারে ডান বাম দুদিকেই ওয়ানওয়ে। দৃশ্যপট আগের মতোই, তবে এবারে ডান দিকে ফসলের চাষ এবং সবুজের সমারোহ দেখে মনে হয় চাষাবাদের পরিমাণ এ দিকে অনেক বেশি। হঠাৎ করেই খেজুর গাছ এবং সবুজ ফসলের ক্ষেতের মধ্যে দেখা যায় অসংখ্য বক। প্রথমে দৃষ্টি বিভ্রম বলে মনে হয়েছিল। এই মরুভূমির দেশে নীল নদের পানি ঢেলে জমিতে ফসল ফলানো সম্ভব হলেও জলাভূমির পাখি বক আসবে কোথায় থেকে! কিন্তু না, সত্যি বকেরা মাঠ জুড়ে এক পা তুলে অপেক্ষা করছে, তবে মাছের জন্য নয় নিশ্চয়ই। আমরা দুপাশে দেখতে দেখতে এগোচ্ছি। মাঝে মধ্যেই দুই একটা গাধা, আবার কোথাও গাধায় টানা গাড়িও দেখা যায়। রানা ভাই পথের দিকে খেয়াল রেখেছিলেন, কোথাও কফিশপ কিংবা চায়ের দোকান পাওয়া যায় কি না!

কায়রো তখনো পনের বিশ মিনিটের পথ। রানা ভাই বাসামকে গাড়ি থামাতে বললেন। সিলভিয়াসহ আমরা দুজন নেমে মাল্টা, পেয়ারা এবং আপেল সাজানো একটা ভ্যানের কাছে দাঁড়ালাম। ভ্যানটা আমাদের রিকশাভ্যান নয়, ঘোড়ায় টানা। পাগড়ি মাথায় ফলওয়ালা আয়েশ করে চা খাচ্ছেন আর তার ঘোড়া দেয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে সামনে বাধা ঝোলা থেকে ছোলা খাচ্ছে। যে ভবনের সামনে ভ্যানটা দাঁড়িয়ে আছে সেটা শুধু রঙচটা নয়, উপরটা অসমাপ্ত আর নিচের অংশ যেকোনো মুহূর্তে খসে পড়বে। আশ্চর্যের বিষয় এই রংচটা ভবনের গায়ে অন্তত গোটা তিনেক স্পিøটএসির কন্ডেন্সার ইউনিট ঝুলছে। বাইরে ধ্বসে পড়ুক, ভেতরটা ঠাণ্ডা রাখা চাই! ফলের দাম কার্ডবোর্ডে লেখাই ছিল, তারপরেও সিলভিয়া ফলওয়ালার সঙ্গে কি কথাবার্তা বললো জানি না। দুটো পলিথিন ব্যাগ ভরে আমরা পেয়ারা এবং মাল্টা কিনে গাড়িতে উঠে বসলাম।

মাআদি এলাকায় ঢুকে পড়ার পরে মনে হলো আমাদের মোবাইল ফোনের জন্য সিম কার্ড কেনা জরুরি। প্যারিসে এবং কুয়ালালামপুরে সিম কেনার অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়েছিল যে কোনো বিমান বন্দরেই মোবাইল ফোন চালু করার ব্যবস্থা থাকবে। কিন্তু কায়রোর এয়ারপোর্টে পর্যন্ত ভুয়া কোভিড টেস্টের ধাক্কায় আমরা জ্ঞানশূন্য হয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম। মাআদির বিখ্যাত নয় নম্বর সড়কে বার দুয়েক চক্কর দিয়েও কোনো সদাশয় ফোনালাপের আউটলেট পাওয়া গেল না। আমরা ক্ষ্যান্ত দিতে বললেও বাসাম নাছোড় বান্দা। শেষ পর্যন্ত সে আমাদের যথাস্থানে পৌঁছে দিয়ে ছাড়লো। ভেতরে ঢুকে বুঝলাম মানুষ প্রায় সব কালে সব দেশে খেতে না পেলেও কথা বলতে চায়। ভিড়ের কারণে দাঁড়াবারও জায়গা নেই। এরই মধ্যে বয়োবৃদ্ধ ডোরম্যানের কল্যাণে একটা লাল সোফার কোণায় বসে পড়ার সুযোগ পেলাম। সিমের দাম শুনে অবশ্য শিগগিরই লাফিয়ে উঠে দাঁড়াতে হলো। এক হাজার মিনিট লোকাল টকটাইম এবং এক জিবি ডেটাসহ সিমের দাম ৪২৫ ইজিপশিয়ান পাউন্ড, যা আড়াই হাজার টাকার সমান। রানা ভাই সিলভিয়াকে ইন্টারপ্রেটার হিসাবে কাজে লাগিয়ে কোন প্যাকেজ নেওয়া সুবিধাজনক তা অনেকক্ষণ ধরে বুঝতে চেষ্টা করছিলেন। আমি বাইরে এসে কায়রোর অভিজাত এলাকায় আশেপাশের বিপনী বিতান, রাস্তায় যানবাহন এবং ফুটপাথে মানুষের চলাচল দেখছিলাম। রানা ভাই তার সিমকার্ড কিনে বাইরে এলে সিলভিয়া সকালে যেখানে গাড়ি রেখে আমাদের পথ দেখাতে বেরিয়েছিল, সেই কিয়স্কের সামনে তাকে নামিয়ে দিয়ে ঘরে ফিরলাম।

(চলবে)

এসএ/

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ৩

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ২

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১

Header Ad
Header Ad

হাকিমপুরে গরীবের চাল ছাত্রলীগ নেতার গুদামে

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

দিনাজপুরের হাকিমপুরে সরকারি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ওএমএস) সাড়ে ৫ মেট্রিকটন চাল ও ১০৪টি খালি চালের বস্তা উদ্ধার করা হয়েছে। এসব চাল একটি ধান ভাঙ্গা মিলের গুদামে মজুদ করা ছিল। ঘটনাটি ঘটেছে ২৬ এপ্রিল, শনিবার রাতে, যখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিত রায় অভিযান চালিয়ে এসব উদ্ধার করেন।

গুদামটির মালিক আসাদুজ্জামান আসাদ, যিনি উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের সদস্য, তার বিরুদ্ধে চাল মজুদ করার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা জানান, আলীহাট ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের কাছে তার মিলের গুদামে এসব চাল মজুদ ছিল। অভিযান চালিয়ে সাড়ে ৫ মেট্রিকটন চাল জব্দ করা হয়, তবে অভিযানের সময় মিল মালিক এবং কোনো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি পাওয়া যায়নি।

এ ঘটনায় আসাদকে গ্রেপ্তার করা না গেলেও তাকে আসামী করে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, চাল মজুদ করা বেআইনি এবং এটি অপরাধ। উদ্ধারকৃত চাল উপজেলা খাদ্যগুদামে পাঠানো হয়েছে এবং পরবর্তীতে নিয়মিত মামলায় তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা খালেদা খাতুন জানিয়েছেন, মামলাটি রবিবার বিকালে থানায় করা হবে, যেখানে আসাদুজ্জামান আসাদকে প্রধান আসামী হিসেবে দায়ের করা হবে।

এদিকে, আসাদ আগেও বৈষম্যবিরোধী দুই ছাত্র হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন।

Header Ad
Header Ad

চুরির অভিযোগে কুবির দুই শিক্ষার্থী বহিষ্কার

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

ক্যামেরার লেন্স চুরির অভিযোগ প্রমাণের ভিত্তিতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) আইন বিভাগের দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃত দুই শিক্ষার্থী হলেন ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের আইন বিভাগের আনাস আহমেদ ও শামীম ভূঁইয়া।

রবিবার (২৭ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বোর্ডের মিটিংয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে বলে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল হাকিম। 

আনাস আহমেদকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার ও আবাসিক হলের সীট বাতিল এবং শামীম ভুঁইয়াকে সাময়িকভাবে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া তার ব্যাপারে পরিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে আগামীকাল সিন্ডিকেটে আলোচনা করা হবে বলে জানা গেছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল হাকিম বলেন, "গণমাধ্যমে আনাসকে নিয়ে রিপোর্ট হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট হয়েছে। এছাড়া তার চুরির সত্যতা পাওয়া গেছে। ফলে তাকে এক বছরের বহিষ্কার এবং হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আর শামীমের ব্যাপারে শৃঙ্খলা বোর্ড বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে। আগামীকাল বিষয়টি সিন্ডিকেটে আলোচনা হবে।'

এ ব্যাপারে রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, 'শৃঙ্খলা বোর্ড দুইটি সিদ্ধান্তের সুপারিশ করেছে। এখনো সাইন হয়নি পেপারে। আগামীকাল সিন্ডিকেটে ফাইনাল হবে বিষয়টি।'

উল্লেখ্য, এর আগে কুমিল্লার একটি অভিজাত হোটেল থেকে ক্যামেরার লেন্স চুরি করে আনাস এবং শামীম। সিসি ফোটেজ বিশ্লেষণ করে এর সত্যতাও পাওয়া যায়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২৫ এপ্রিল রাতে বেশ কয়েকজন বহিরাগত এসে ক্যাম্পাসে আনাসকে মারধরও করে।

Header Ad
Header Ad

ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগবাড়িয়ে কিছু করার পক্ষে নয় ঢাকা

ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

অধিকৃত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলার জেরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা বেড়েই চলছে। তবে এই ইস্যুতে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে চলমান উত্তেজনা প্রশমনের পক্ষে বাংলাদেশ। দুটি বন্ধুপ্রতিম দেশ চাইলে বাংলাদেশ মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে তার আগে আগবাড়িয়ে কিছু করার পক্ষে নয় ঢাকা।

রোববার (২৭ এপ্রিল) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

তিনি বলেন, আমাদের অবস্থান স্পষ্ট, আমরা শান্তি চাই দক্ষিণ এশিয়ায়। আমরা জানি, বিভিন্ন ইস্যুতে দীর্ঘদিন ধরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতময় সম্পর্ক আছে। কিন্তু আমরা চাই না এখানে কোনো বড় কোনো সংঘাত সৃষ্টি হোক, যাতে এটা এ অঞ্চলের মানুষের কোনো বিপদের কারণ না হয়ে উঠতে পারে। ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক বিদ্যমান।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমরা চাইব তারা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তাদের সমস্যার সমাধান করে ফেলুক। আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি, দু’একটি দেশের পক্ষ থেকে মধ্যস্থতার প্রস্তাব এসেছে। যেভাবে হোক মধ্যস্থতার মাধ্যমে হোক, দ্বিপক্ষীয় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে হোক, আমরা চাই উত্তেজনা প্রশমিত হোক এবং শান্তি বজায় থাকুক।

ভারত-পাকিস্তান দুটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক রয়েছে। ইতোমধ্যে ইরান ও সৌদি আরব ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সমস্যা সমাধানে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশও মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করতে পারি কি না– এমন প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, আমি মনে করি না এই মুহূর্তে আমাদের মধ্যস্থতা করার মতো কোনো ভূমিকা নেওয়া উচিত। আমরা চাইব, তারা নিজেরা নিজেরা সমস্যার সমাধান করুক। তারা যদি আমাদের সহায়তা চায়, আপনারা মধ্যস্থতা করুন তাহলে হয়ত আমরা যাব। কিন্তু তার আগে আমরা আগবাড়িয়ে কিছু করতে চাই না।

ভারত-পাকিস্তানের চলমান উত্তেজনার কোনো প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে কি না– জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, আধুনিক জামানায় সবকিছু সবাইকে কমবেশি প্রভাবিত করে। কাজেই কোনো কিছু আমাদের একটুও প্রভাবিত করবে না, সেটা আমি বলি না। তাদের যেই সংঘাত সেটা আমাদের সরাসরি প্রভাবিত করার কিছু নাই। কারণ, আমরা এতে কোনো পক্ষ নিইনি। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যেকোনো সংঘাত বা সম্পর্ক খারাপ হলে প্রভাব পড়ে।

‘তবে তাদের কাছ থেকে আমাদের যদি কোনো স্বার্থ থাকে আমদানি করার, আমরা করব।’, যোগ করেন তৌহিদ হোসেন।

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশ্নে উপদেষ্টা জানান, এটা হয়ত নিরাপত্তা নিয়ে যারা সরাসরি কাজ করেন তারা বলতে পারবেন। এই মুহূর্তে আমার কাছে এরকম কোনো তথ্য নেই।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

হাকিমপুরে গরীবের চাল ছাত্রলীগ নেতার গুদামে
চুরির অভিযোগে কুবির দুই শিক্ষার্থী বহিষ্কার
ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগবাড়িয়ে কিছু করার পক্ষে নয় ঢাকা
সাব-ইন্সপেক্টর পদে প্রাথমিক সুপারিশ পেল ৫৯৯ জন
দুই উপদেষ্টার এপিএস-পিও’র দুর্নীতির খোঁজে গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু
নির্বাচনে প্রতিটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা চায় জামায়াত
কক্সবাজার-১ আসনের সাবেক এমপি জাফর আলম গ্রেপ্তার
ভারতের দিকে তাক করা পাকিস্তানের ১৩০ পারমাণবিক বোমা
চার ম্যাচের নিষেধাজ্ঞায় তাওহিদ হৃদয়, বাড়ছে নাটকের রঙ
উত্তেজনার মধ্যেই যুদ্ধজাহাজ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাল ভারত
ছেলে খুঁজে পাচ্ছি না, একজন জীবনসঙ্গী দরকার: মিলা
টাঙ্গাইলে শ্রমিকদলের নেতাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধে ভারতের ১.১৪ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির শঙ্কা
দেশের পথে প্রধান উপদেষ্টা
রাজনীতির চেয়ারে ঘুণপোকা ধরেছে, এটি সংস্কার করা প্রয়োজন: ব্যারিস্টার ফুয়াদ
উত্তাল ইউআইইউ ক্যাম্পাস, ভিসি-ডিনসহ ১১ কর্মকর্তার পদত্যাগ
এপ্রিলেই দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া, সঙ্গে থাকবেন দুই পুত্রবধূ
বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে বিশাল নিয়োগ, পদ ৬০৮
ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় ফ্যাসিবাদী শাসক পালাতে বাধ্য হয়েছে: আলী রীয়াজ
মহেশপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত