শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

ধারাবাহিক ভ্রমণ, পর্ব: ৩

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা

বেলা বাড়ার সাথে সাথে গিজার পিরামিড ঘিরে পর্যটকের ভিড় বাড়তে থাকে। পার্কিংয়ে জমতে থাকে বিশাল টুরিস্ট বাসের সারি। যন্ত্রচালিত বাস এবং ছোট ছোট গাড়ির ফাঁকে অশ্বচালিত বাহনের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। গিজায় মানুষ গিজগিজ করতে শুরু করলে পিরামিডের এবড়ো থেবড়ো পাথুরে দেয়াল থেকে অতি সাবধানে নেমে আসেন রানা ভাই এবং হেনা।

একটু বেখেয়াল হয়ে পিরামিডের শরীর থেকে গড়িয়ে পড়লে হাড্ডি গুঁড়ো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বাস্তবায়িত হতে দেরি হবে না। ওরা দুজন নেমে আসার পর সিলভিয়াকে অনুসরণ করে আমরা আবার কাঠের পাটাতন ধরে হেঁটে একটি তিন রাস্তার মোড়ে এসে দাঁড়ালাম। এখানে দাঁড়িয়ে গিজার গ্রেট মিরামিড পুরোটা দেখা যায়। সামনের পিচঢালা পথ ধরে বিরতিহীনভাবে চলছে মাইক্রোবাস, ট্যাক্সি এবং ঘোড়ার গাড়ি। রাস্তার নিচে বালিতে ‘টুরিস্ট পুলিশ’ লেখা সাদা একটা জিপ দাঁড়িয়ে থাকলেও আশপাশে কোনো পুলিশ দেখা গেল না। হয়তো তারা কাছেই কোথাও আড্ডা দিচ্ছেন।

আমরা যখন তে-মাথায় ঘুরে ফিরে ছবি তুলছি, তখন পাশ দিয়ে যাবার সময় টাঙ্গাওয়ালা গতি কমিয়ে কী যেন জিজ্ঞেস করে গেল, উত্তর দিল সিলভিয়া। বুঝলাম, কাছাকাছি অন্য কোনো গন্তব্যে নিয়ে যাওয়ার আহবান ছিল তার, কিন্তু সিলভিয়ার কথা শুনে হাতের চাবুকে শব্দ তুলে ঘোড়া হাঁকিয়ে চলে গেল। ঠিক এই সময় গাড়িসহ এসে হাজির হলো বাসাম। গাইড জানালো, এবারে আমরা যাচ্ছি প্যানোরমা পয়েন্টে। ক্রমেই গিজার গ্রেট পিরামিড থেকে দূরে সরে যাচ্ছি আমরা এবং যতো দূরে যাই ততোই পিরামিডের নান্দনিক সৌন্দর্য দৃশ্যমান হয়ে উঠতে থাকে। সিলভিয়া বলেছিল বেশ কয়েকটি নির্বাচিত জায়গা থেকে পিরামিড সবচেয়ে সুন্দর দেখায়। স্বাভাবিকভাবেই সেইসব স্পট যথেষ্ট বিস্তৃত হলেও পর্যটক বা ছবি শিকারিদের কারণে দাঁড়াবার জায়গা পাওয়াই কঠিন। আমাদের অবশ্য খুব বেশি অপেক্ষা করতে হলো না। আট দশজনের একটা দল জায়গা ছাড়ার পরে দূরে থেকে দেখা হলো দূরের পিরামিড।

বিস্তৃত মরুভূমির বালিতে সকালের ঝলমলে রোদে অনেক দূরের তিনটি পিরামিড তাদের বিস্মৃত প্রায় ইতিহাসের আদিম গৌরব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আসলে যে কোনো বড় জিনিস, প্রকৃতির বিশাল বিন্যাস, কোনো স্থাপনা এমনকি কোনো বড় মাপের মানুষকে নির্ধারিত দূরত্ব থেকেই সবচেয়ে ভালো দেখা যায়। দূরের দৃষ্টি নন্দন পিরামিড দেখে আমার ভ্রাম্যমাণ পাদাবলী থেকে কয়েকটি লাইন মনে পড়ে যায়। ‘দূরের পাহাড় জুড়ে কে যেনো বিছিয়ে রাখে সবুজ মখমল/কাছে গেলে কাঁটা বেঁধে–চোখে পড়ে গুল্ম লতা মাটি ও পাথর/পাহাড় দূরেই ভালো–কাছে এসে তাই আমি বাঁধি নাই ঘর।’ পাহাড়ের মতো পিরামিডও দূর থেকে দেখাই ভালো। স্থাপত্যশিল্পের এই অনন্য নিদর্শন দেখতে হলে তার কাছে যাওয়ার, অমসৃণ পাথর ছুঁয়ে দেখার, শরীর বেয়ে আরোহণ করার দরকার নেই।

প্যানোরমা পয়েন্টে পিরামিডের পটভূমিতে আমরা বেশ কিছুক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে বসে যৌথ এবং এককভাবে ছবি তুললাম। দেখা গেল স্থিরচিত্রে স্থায়ী হবার বাসনায় কেউ কারো চেয়ে কম নয়। আমাদের সাথে সিলভিয়া এবং বাসামও ছবি তুলতে দাঁড়িয়ে গেল। প্যানোরমার ভিউয়িং পয়েন্টের ঠিক বিপরীত দিকে অস্থায়ী চালাঘর তুলে স্মারক সামগ্রীর বেচা-কেনার বাজার বসেছে। যেখানে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আসা যাওয়া, সেখানে সেদেশের জিনিসপত্র এবং স্যুভেনিয়ারের বাণিজ্য থাকবে এবং সেটাই স্বাভাবিক। নীল, ধূসর কিংবা সাদা পাথরের পিরামিডের সেট, দ্বিতীয় রামসেস এবং নেফারতিতি বা অন্য কোনো ফারাও সম্রাটের ধাতব ও সিরামিকের ছোট ছোট মূর্তি, প্যাপিরাসের পাতায় স্থানীয় শিল্পীদের হাতে আঁকা প্রত্নতাত্ত্বিক মিসরের গুহাচিত্রের নানা দৃশ্যের রঙিন ছবির পসরা সাজানো আকর্ষণীয় সুভেনিয়ার সংগ্রহের প্রলোভন সযত্নে এড়িয়ে আবার গাড়িতে উঠে বসি। এবারে গন্তব্য মরু প্রান্তরে ছড়িয়ে থাকা ওপেন এয়ার এক্সিবিশন।

গিজার পিরামিড থেকে বেশখানিটা দূরে দূরে বিস্তৃত মালভূমি এলাকাজুড়ে এই প্রথমবারের মতো একটি উন্মুক্ত শিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। মিসরের পর্যটন ও পুরাতত্ত্ব মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে শিল্প ও ঐতিহ্যের মিসরীয় সংস্থা ‘আর্ট ডি ইজিপ্ট’। যথারীতি ইওনেস্কোও তার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। বছর খানেকের প্রস্তুতির পর ‘ফর এভার ইজ নাউ’ শিরোনামে মিসরের এই আন্তর্জাতিক ওপেন এয়ার আর্ট এগজিবিশনে স্থান পেয়েছে দেশি বিদেশি দশজন শিল্পী ও ভাস্করের স্থাপনা। আমরা এক একটি শিল্প-স্থাপনা হাতের বামে রেখে সামনে এগোতে থাকি। প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে যেখানে প্রথম যাত্রা বিরতি দিয়েছি সেটি ইতালির শিল্পী লরেঞ্জো কুইনের ভাস্কর্য ‘টুগেদার’। দশটির মধ্যে ছয়টি ভাস্কর্য দেখে ফেলার পরে মনে হয়েছে এটিই আমার দেখা সবচেয়ে ভালো লাগা শিল্পকর্ম। পিরামিডের আকারে যুক্ত করা দুটি হাতের ভেতর দিয়ে অনেক দূরে দৃশ্যমান গিজার তিনটি পিরামিড। স্টেইনলেস স্টিলের তার ব্যবহার করে ৩৬ হাজার পয়েন্টে ওয়েল্ডিং করে জোড়া দিয়ে নয় মাস ধরে তৈরি ভাস্কর্যটি নিঃসন্দেহে একটি সুদৃশ্য শৈল্পিক সৃষ্টি।

এ ছাড়া আমাদের দেখা সেরা কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে মিসরীয় শিল্পী মোয়াতাজ নাসেরের ১৪ মিটার লম্বা নৌকার আকৃতির আকৃতি এবং অনেকগুলো বৈঠাকে আড়াআড়ি সাজিয়ে নিচের ত্রিভুজের ভেতর দিয়ে পিরামিড অবলোকন ‘বারজাখ’। এখানে সামনে থেকে দেখার পরে উল্টো দিক থেকে দেখার জন্যে আমি স্থাপনাটি ঘিরে রাখা রেলিং অতিক্রম করে উন্মুক্ত বালির চত্বরে হাঁটতে থাকি। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কিশোর বয়সী একজন স্বেচ্ছাসেবক এসে বিনয়ের সাথে জানায়, ‘বালির উপরে হাঁটাচলা করা নিষেধ।’ নিষেধাজ্ঞা শিরোধার্য করে আমরা এসে গাড়িতে উঠে পড়ি। সময়ের কারণে সবগুলো স্থাপনা দেখা সম্ভব না হলেও মিসরের শিল্পী মোতাজ নাসেরের ‘বারজাখ’ এবং ইউক্রেনের আলেক্সান্দার পোনোমারেভের ‘ওরোবোরোস’ স্থাপনা দুটিও ভালো লেগেছে, আর সবচেয়ে বেশি ভালো লাগার বিষয় ছিল এই পুরো পরিকল্পনা।

‘আর্ট ডি ইজিপ্ট’এর প্রতিষ্ঠাতা শিল্পী নাদিন আবদেল গাফ্ফার বলেছেন, এই প্রদর্শনী প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতা ও সমসাময়িক বিশ্বের শিল্প চর্চার এক ঐতিহাসিক মেলবন্ধন। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের শিল্পীদের মধ্যে সৌহার্দ্য বা অভিজ্ঞতা বিনিময়ই শুধু নয় বরং পৃথিবীর সংকটকালে আমরা সবার কাছে শান্তি মানবতা ও আশার বাণী পৌঁছে দিতে চাই।’ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যেতে পারে, ‘আর্ট ডি ইজিপ্ট’এর প্রতিষ্ঠাতা, পরিচালক, শিল্পী এবং নির্বাহীদের সকলেই নারী। সৌরভ এই প্রদর্শনীর ব্যাপারে আগে থেকে না জানালে এই অভিনব শিল্পকর্ম দেখার বিরল সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতাম এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই আয়োজক এবং শিল্পীদের সাথে ধন্যবাদ সৌরভেরও প্রাপ্য।

সমসাময়িক শিল্পের জগৎ থেকে আমরা আবার সাড়ে চার হাজার বছর আগে ফিরে যাই। হাতের ডান দিকে পিরামিডগুলো রেখে আমাদের লাল গাড়ি গিজা নেক্রোপলিসের গ্রেট স্ফিংসের পথে ছুটতে থকে। চলার পথে পিরামিডের পটভূমিতে প্রতি মুহূর্তে দৃশ্য বদলে যায়। দূরে বালির পাহাড় ডিঙ্গিয়ে একদল উট জোর কদমে ছুটে যাচ্ছে, একটি টাঙ্গার ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছে একটি বিদেশি যুগল, পিরামিডে চূড়া পারস্পেক্টিভের কারসাজিতে পর্যটকের হাতের তালুতে স্পর্শ করিয়ে ছবি তুলছে স্থানীয় ফটোগ্রাফার, কক্সবাজারের সমুদ্র তীরে যেমন রঙিন ছাতার নিচে অগণিত পর্যটক শুয়ে বসে থাকেন, তেমনি পিরামিড পেছনে রেখে প্রান্তর জুড়ে সাদা ছাতার নিচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে সময় কাটাচ্ছে বিলাসী টুরিস্ট। তবে এখানে প্রায় প্রত্যেক ছাতার কাছাকাছি হাঁটু মুড়ে বসে আছে একটা বা দুটো উট।
স্ফিংসের কাছাকাছি ভিউ পয়েন্টে আমরা নেমে পড়লে একটু দূরে রাস্তার উপরেই গাড়ি নিয়ে দাঁড়ায় বাসাম। মানুষের মাথা এবং সিংহের দেহ বিশিষ্ট চুনাপাথরের পৌরাণিক প্রাণি স্ফিংসের নির্মাণকাল সম্পর্কে সঠিক তথ্য না থাকলেও সাধারণ ধারণা ফারাও সম্রাট খুফুর পুত্র খাফরের রাজত্বকালে অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ অব্দের কাছাকাছি কোনো এক সময় কঠিন শিলার স্তরে নির্মিত হয়েছিল এই বিশাল মূর্তি।

সকালের সূর্য প্রণামের উদ্দেশ্যে স্ফিংসের মুখ পূর্ব দিকে বলে মত দিয়েছেন গবেষকরা। সামনে অথবা ডাইনে বাঁয়ে অনেক দূর পর্যন্ত দাঁড়ালে পেছনে সার্বক্ষণিকভাবে দৃশ্যামান গিজার গ্রেট পিরামিড। সন্ধ্যায় স্ফিংসের মুখোমুখি বসে দর্শকদের জন্য লাইট এ্যান্ড সাউন্ড শোর ব্যবস্থা আছে। সময় করে মাত্র ৪০ ডলারের টিকেট কিনে রাতের রঙিন আলোয় পিরামিড এবং স্ফিংসের সৌন্দর্য ও ইতিহাসের ধারা বিবরণী শোনা যেতো, কিন্তু সময়টাই শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠেনি।

প্রত্নতত্ত্ববিদ পণ্ডিতদের অনেকেই বলে থাকেন স্ফিংসের মুখে ঠিক যেনো খাফরের চেহারা কেটে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। তা তো হতেই পারে। সম্রাট সেকালের সব স্থপতি, পুরকৌশলী, রাজমিস্ত্রি এবং শ্রমিক যোগাড় করে, তাদের খাইয়ে পরিয়ে, হাতে হাতুড়ি ছেনি তুলে দিয়ে নিজের চেহারাই তো ফটিয়ে তুলতে বলবেন। সেই কারণে ২৫৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রাজত্ব শেষ হয়ে গেলেও স্ফিংস দেখতে এসে অন্তত একবার হলেও মহামহিম খাফরের নাম নিতে হচ্ছে। তবে সাম্রাট বাহাদুরের নাকটা কেমন করে যেনো ভেঙে পড়েছে। তবে এটা নিজের নাক কেটে পরের যাত্রাভঙ্গের মতো কোনো ব্যাপার নিশ্চয়ই নয়। সাড়ে চার হাজার বছর পরে সম্রাটের মুণ্ডু যথাস্থানে আছে এবং সিংহের থাবা ও লেজ যে খসে পড়েনি, এই তো যথেষ্ট।

আমরা ব্যস্ত রাস্তার পাশে স্ফিংসের স্থাপনা ঘিরে গড়ে তোলা পাথরের দেয়ালের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ করেই স্কুলের কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী ছবি তোলার জন্যে হেনাকে ঘিরে ধরল। ছবি তোলার পরে কিছুটা নিচে নেমে ভিন্ন একটা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে চেষ্টা করলাম বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন এই ভাস্কর্য। স্ফিংসের সামনের প্রান্তর জুড়ে পর্যটকরা ঘুরে বেড়াচ্ছে, ছবি তুলছে আবার অল্প দু-চারজন আর্ট এগজিবিশনের স্থাপনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পী গিলেসা কোনোলের শিল্পকর্ম ‘ইটারনিটি নাউ’ দেখছেন। এই স্থাপনাটি সম্পর্কে বলা হয়েছে এটি অতীত বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সময়হীন মুহূর্তকে মূর্ত করে তুলে সাড়ে চার হাজার বছরের ইতিহাসের সাথে একীভূত হয়ে গেছে। বিবরণীতে যাই লেখা হোক, শিল্পকর্মটির মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝিনি এবং এটি দেখতেও তেমন আহামরি কিছু মনে হয়নি।

আরও অনেকটা পথ হেঁটে সিঁড়ি ভেঙে পুরো স্ফিংস চত্বর না ঘুরে শক্তি এবং সময় বাঁচিয়ে আমার আবার বাসামের গাড়িতে উঠে পড়ি। সাক্কারার পথে গিজা থেকে বেরিয়ে পথের দুপাশে চোখে পড়ে সবুজ গাছপালা কিংবা একটুকরো বাগানে ঘেরা বাড়ি, স্কুল, মসজিদ অথবা দেয়াল দিয়ে ঘেরা কোনো কারখানা। কোথাও কোথাও অসমাপ্ত ভবনের র্নিমাণ কাজ চলছে। তবে বসতবাড়ি কিংবা অন্য যে কোনো দুটি স্থাপনার মাঝখানের খালি জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে পাঁচ সাতটা খেজুর গাছ। পথে ছোট ছোট ফসলের ক্ষেত এবং ক্ষেতের পাশে খেজুর পাতায় ছাওয়া ঝুপড়ি ঘর পেরিয়ে সাক্কারার দূরত্ব কমতে থাকলে খেজুর গাছের সংখ্যা বাড়তে থাকে। প্রথমে যা খেজুরের বাগান মনে হয়েছিল, তা এক সময় খেজুরের বনের মতো মনে হয়। অবশ্য খেজুরের ঘন বনও এক সময় উধাও হয়ে যায়, তার পরিবর্তে স্পষ্ট হয়ে উঠতে থাকে মরুভূমির দৃশ্য। গিজা থেকে সাক্কারার পঁচিশ কিলোমিটার পথের শেষ দিকে এসে আমরা দুপাশের বালিয়াড়ির মাঝখান দিয়ে কিছুটা উঁচু-নিচু পথ পাড়ি দিয়ে আবার উপরে উঠতে থাকি। পর্যটকের চোখে মরুভূমিকে তার প্রকৃত রূপে তুলে ধরতেই বোধহয় এখানে বালির সমুদ্রের মধ্যে কোথাও কোথাও মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে দুই একটা খেজুর গাছ।

(চলবে)

এসএ/

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ২

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১

Header Ad

শহীদ আব্দুল্লাহর বাড়িতে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোবারক হোসেন

ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

২৪ এর গনঅভূ্থানে ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম যোদ্ধা, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী, শহীদ আব্দুল্লাহর বাড়িতে যান বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোবারক হোসেন।

এ সময় মোবাইল ফোনে লাউডস্পিকারে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা.শফিকুর রহমান বলেন, আব্দুল্লাহ দেশের জন্য মানুষের জন্য মানবতার কল্যাণের জন্য জীবনকে উৎস্বর্গ করে আল্লাহর দরবারে চলে গেছেন, আল্লাহ তাকে শহীদ হিসাবে কবুল করুন। শহীদরা মরে না। তারা আল্লাহর জীম্মায় জীবন্ত থাকে। এ সময় শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন তিনি।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুর ১২ টার দিকে যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানার বড় আঁচড়া গ্রামে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোবারক হোসেন আব্দুল্লাহর বাড়িতে গিয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারের খোঁজ খবর নেন,কবর জিয়ারত করেন এবং তার রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করেন।

এর আগে তিনি নাভারণ দারুল আমান ট্রাষ্টে ওলামা সম্মেলনে যোগদান করেন। পরে ২০১৬ সালে গুম হওয়া ইসলামি ছাত্র শিবিরে নেতা রেজোয়ানের বাড়িতে যান এবং খোঁজ খবর ও সমবেদনা জানান।

এসময় তিনি জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মৃত্যু বরনকারী সকলে ন্যায় বিচার পাবেন বলে পরিবারের সদস্যদের সান্তনা দেন। এবং গনঅভূ্থানে নিহত সকল পরিবারের সাথে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলাম আছে থাকবে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য মাওলানা আজিজুর রহমান, যশোরের জেলা আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা গোলাম রসূল, সাবেক জেলা আমীর মাওলানা হাবীবুর রহমান, জেলা জামায়াতের নেতা মাওলানা আবু জাফর, মাওঃ শিহাব উদ্দিন শার্শা থানা আমীর রেজাউল ইসলাম, সেক্রেটারী মাওলানা ইউসুফ আলী ও ঝিকরগাছা থানা আমীর মাওলানা আসাদুল আলম প্রমূখ।

Header Ad

বিরামপুরে আদিবাসী নারীর লাশ উদ্ধার

ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

দিনাজপুরের বিরামপুরে বিশনি পাহান (৫৫) নামের এক আদিবাসী নারীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলার কাটলা ইউনিয়নের ময়না মোড় এলাকার ধানক্ষেত থেকে ওই নারীর হাতবাঁধা লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত বিশনি পাহান উপজেলার কাটলা ইউনিয়নের বেণুপুর গ্রামের সাধন পাহানের মেয়ে।

নিহতের ভাই চরকা পাহান বলেন, আমার ছোট বোনের স্বামী বিশনি পাহানকে ছেড়ে চলে গেছেন। সে প্রতিরাতেই নেশা করতো। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই আমার বাড়িতে থাকতো আমার বোন। আমার বোন এলাকায় মানুষের জমিতে কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। শুক্রবার বিকেলে এলাকার এক ব্যক্তির জমিতে ধান কাটার কাজ শেষ করে আর বাড়িতে ফেরেননি। রাতে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাকে কোথাও পাওয়া যায়নি। শনিবার সকালে ধানক্ষেতে হাতবাঁধা অবস্থায় তার লাশ পাওয়া যায়।

বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক জানান, এলাকাবাসীর দেওয়া খবরে ঘটনাস্থল থেকে আদিবাসী এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যাচ্ছে তাকে কে বা কাহারা হত্যা করেছে। তদন্ত করলেই প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।

Header Ad

বিএনপির কাঁধে অনেক দ্বায়িত্ব: তারেক রহমান

ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বিএনপির কাঁধে এখন অনেক দ্বায়িত্ব। এদেশের মানুষের অনেক প্রত্যাশা, আকাঙ্ক্ষা বিএনপি কে নিয়ে।  সুতারাং দেশের মানুষের আকাঙ্খা অনুযায়ী নেতা-কর্মীদের আচরন করতে হবে। তৈরী হতে হবে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন,  অন্তবর্তী সরকারকে বুঝতে হবে জনগন কি চায়। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। সব সংস্কার অন্তবর্তী সরকারের দ্বারা সম্ভব নয়। তারা একটি অবাধ সুষ্ঠ নির্বাচনের আয়োজন করে জনগণের সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। তারপর নির্বাচিত সরকার বাকী সংস্কার করবে।

এ সময় দ্রুত নির্বাচনের দেয়ার  দাবী জানান তারেক রহমান। 

বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘদিন পর বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনা এবং আনন্দ মুখর পরিবেশে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সম্মেলন-২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার বেলা সাড়ে ১০ টার সময় স্থানীয় টাউন ফুটবল মাঠে আনুষ্ঠানিক ভাবে সম্মেলনের উদ্বোধন করতে যেয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এদেশে ফ্যাসিবাদের জনক শেখ মুজিবুর রহমান। তার হাত ধরেই অর্থাৎ তার নেতৃত্বেই এদেশে হত্যা, লুণ্ঠন, এবং অপরাজনীতি শুরু হয়। যুদ্ধ বিধ্বস্ত নতুন বাংলাদেশে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বদলে গনতন্ত্র হত্যা করে সকল দলকে নিষিদ্ধ করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে একটি রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতির সৃষ্টি করে মানুষের কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়ে দেশকে একটি বদ্ধ কারাগারে পরিণত করা হয়েছিল।

এসময় তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ মুজিবের উত্তরসূরী ফ্যাসিবাদের চুড়ান্ত বাস্তবায়নকারী শেখ হাসিনা গত ১৭ বছর এদেশের জনগণের ঘাড়ে অবৈধভাবে চেপে বসে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে অবরুদ্ধ করে অসংখ্য খুন গুম ব্যাংক লুট এবং অনিয়ম দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করছিল। হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে বাংলাদেশকে দেউলিয়া এবং চরম দারিদ্র্যের শেষ সীমায় পৌঁছে দিয়ে গেছে।

মির্জা ফখরুল দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দাবি করে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বলেন, দেশকে দেশি ও বিদেশি চক্রান্তের মোকাবেলা করে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। আর এটা করতে হলে অবিলম্বে দেশে একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দরকার।

শুরুতে সম্মেলনের উদ্বোধক বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। পবিত্র কোরআন ও গীতা পাঠ করা হয়। এরপরে সম্মেলনের উদ্বোধক সহ আমন্ত্রিত অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। বিগত দিনে জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা কর্মীদের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন জেলা বিএনপি নেতা ওয়াহেদুজ্জামান বুলা। সম্মেলনে ভার্চুয়ালী যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবু। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন বিএনপির সহ-সভাপতি শামসুজ্জামান দুদু, এড.নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, খুলনা বিভাগীয় সহ সভাপতি বাবু জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সাংসদ সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী, মেহেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সাংসদ মাসুদ অরুন, ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল মজিদ, সাংগঠনিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন খন্দকার আব্দুল জব্বার সোনা, বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব শরীফুজ্জামান, শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শাহজাহান খান, সাধারণ সম্পাদক মোমিন মালিথা, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবু তালহা, জেলা জাসাসের সভাপতি সেলিমুল হাবিব, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রশিদ ঝন্টু, জেলা কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক তবারক হোসেন, জেলা মৎস্যজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাবলু, জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী রউফুন নাহার রিনা, জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি এম জেনারেল ইসলাম, জেলা বিএনপি নেতা সিরাজুল ইসলাম মনি, দর্শনা থানা বিএনপির সভাপতি খাজা আবুল হাসনাত, জীবননগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন খাঁন খোকন, সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান কবির, আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজিজুর রহমান পিন্টু, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রোকন, দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান লিপ্টন, কৃষকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মিলিমা ইসলাম বিশ্বাস মিলি, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মির্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলু প্রমুখ।

সম্মেলনের একপর্যায়ে জেলার বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা যারা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারের হাতে তারেক রহমানের পক্ষে উপহার সামগ্রী তুলে দেয়া হয়। 

সম্মেলনে একমাত্র প্রার্থী হিসাবে আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবু ইতিমধ্যেই চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে একাধিক প্রার্থী থাকায় আজকের সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে ৮০৮ জন কাউন্সিলর তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

শহীদ আব্দুল্লাহর বাড়িতে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোবারক হোসেন
বিরামপুরে আদিবাসী নারীর লাশ উদ্ধার
বিএনপির কাঁধে অনেক দ্বায়িত্ব: তারেক রহমান
'জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হওয়া উচিত'- তোফায়েল আহমেদ
৩ মাসে জ্বালানি খাতে সাশ্রয় হয়েছে ৩৭০ কোটি টাকা : জ্বালানি উপদেষ্টা
জুটি বাধলেন মিঠুন চক্রবর্তী-আফসানা মিমি
দেশ ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দ্রুত নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই : তারেক রহমান
২৪ ঘণ্টার মধ্যে বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের আশঙ্কা
অক্টোবরে সড়কে প্রাণ গেছে ৪৭৫ জনের
গায়ানায় দলের সঙ্গে যোগ দিলেন সাকিব
আইপিএল নিলামের আগেই নিষিদ্ধ হলেন ভারতের ২ ক্রিকেটার
গাজীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু
কবে বিয়ে করবেন জানালেন তামান্না ভাটিয়া
পঞ্চগড়ে ৫০০ টাকায় সন্তান বিক্রি, অতঃপর যা ঘটল...
অ্যান্টিগায় প্রথম দিন শেষে স্বস্তিতে টাইগাররা
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন পরীমণির প্রথম স্বামী
বিচারের আগে আ.লীগের মাঠে থাকার সুযোগ নেই: উপদেষ্টা নাহিদ
মাকে হত্যার পর থানায় হাজির ছেলে
৮ ক্রিকেটারসহ ৯ জনকে নিষিদ্ধ করলো বিসিবি
উপদেষ্টাদের যাচ্ছেতাই কর্মকাণ্ড মেনে নেওয়া হবে না: রিজভী