শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫ | ৫ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস, পর্ব: ৯

অঘ্রানের অন্ধকারে

অনেকদিন বাদে তুরি এই রেষ্টুরেন্টে এসে বসেছে। একসময় প্রায় প্রতিদিন আসত সেই উচ্ছল চঞ্চল দুরন্ত মানুষের সঙ্গে। সেই মানুষটা এখন অন্য বন্ধু জুটিয়েছে। তাদের সঙ্গে উদ্দাম সময় কাটায়। তুরির ভাবনায় আচ্ছন্ন হয়ে আসে মানুষটা। যদি আজ আবার দেখা হয় তাহলে কি সেই আগের মতো করে বলবে, তুমি এত সুন্দর করে কথা বলো কীভাবে, শুধু শুনতে ইচ্ছে করে!

আনমনা হয়ে যেত তার কথা শুনে তুরি। কী চেয়েছিল সে, সেও কি তা জানত! হয়তো পুরোটাই তার ছেলেমানুষি ছিল। ওই দুম করে পিঠের ওপর কিল মেরে বসা। চুলের বেণি ধরে আচমকা টান দিয়ে নিজের বুকের ওপর নিয়ে ফেলা। দুম করে হাত ধরে হ্যাঁচকা টানে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া। তুরিই শুধু দূরে দূরে সরিয়ে রাখত নিজেকে। এখন খুব মনে হয়, একবার যদি আসত! এসে হাতটা ধরে বলত, তোমাকে এত পছন্দ করি কেন?

ভাবনাগুলো যখন জমাট বাঁধতে শুরু করেছে তখন শাবিন এসে দাঁড়াল সামনে।

এত দেরি করলেন আপনি? আমি সেই কখন থেকে বসে আছি, গলায় প্রতীক্ষার অভিমান ছিল তুরির।

শুনে বুকের ভেতর ছটফট করে উঠল শাবিনের। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, জায়গাটা খুঁজে পাচ্ছিলাম না।

তুরির মুখোমুখি বসল শাবিন এবং মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকল। নিরাভরণ একজন মানুষ যখন এত সুন্দর হয় তখন তার মাধুর্য হয় একান্তই আপনার, ধার করা সৌন্দর্য সে নয়। না কপালে ছোট্ট টিপ। না গলায় কিছু, না কানে। আভরণহীন তুরির সেই মোহিনী মুখের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকল শাবিন।

তুরি ওর মুগ্ধতাকে ধাক্কা দিয়ে নাড়িয়ে দিলো, কিছু ভাবছেন মনে হয়?

শাবিন চমকাল তবে সত্য গোপন করে বলল, অস্বস্তি কাটছে না।

কেন?

এরকম মারমার কাটকাট দুর্দান্ত টাইপ রেষ্টুরেন্ট, মনে হচ্ছে আমি খুবই বেমানান এখানে।

এরকম মনে হচ্ছে কেন?

এমন দামী রেষ্টুরেন্টে আসা হয় না। পাড়ার ছাপড়া চায়ের স্টল, তারপর এখানকার ওই হোটেল, আমার দেখা ওই পর্যন্ত। এখানে অস্বস্তি তো লাগবেই, তাই না! সহজ-সরল স্বীকারোক্তি শাবিনের।

তুরি আস্থা মেশানো গলায় বলল, ওরকম করে ভাবছেন কেন? ভাবুন এটা আপনার জন্য স্বাভাবিক ব্যাপার। আপনি চাইলেই হবে।

হ্যাঁ, এখন খুব স্বাভাবিক। এতদিন ছিল না।

এই চিন্তাটা আপনাকে ঝেড়ে ফেলতে হবে।

কোন চিন্তাটা?

এবার তুরির কণ্ঠে অধিকারের সুর, কী ছিল, কী ছিল না। আপনি বর্তমান নিয়ে ভাববেন। আগামী নিয়ে কথা বলবেন। আপনার এখন প্রধান কাজ হবে রেগুলার ক্লাস করা এবং পরীক্ষা দেওয়ার সব রকমের প্রিপারেশান কমপ্লিট করা। আপনি কি বুঝতে পারছেন, কী বলছি?

শাবিনের ইচ্ছে করছে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে আনন্দ প্রকাশ করতে। বুকের ভেতরের খুশির ঢেউ মুখের হাসি হয়ে ফুটে উঠল, বুঝতে পারছি।

তুরি মুগ্ধচোখে শাবিনের দিকে তাকিয়ে আছে। কাতর আবেগ মেশানো গলায় তুরি বলল, আপনি খুব ভালো রেজাল্ট করবেন। সেই যোগ্যতা আপনার আছে, আপনি জানেন। ভালো চাকরিতে জয়েন করবেন। আপনার মা কেমন খুশি হবেন বলুন তো।

শাবিন বলল, আর তুমি?

তুরি চারপাশ আলো করে গেয়ে উঠল, পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে/ পাগল আমার মন জেগে ওঠে-

 

সাত দিন পার হয়ে গেল। তুরির সঙ্গে দেখা হয়নি। ফোন করলে সাদামাটা হাই-হ্যালো ধরনের কথা হয়। সামনে শাবিনের পরীক্ষা। সে পড়ায় মন দিয়েছে। খুব দরকার না হলে বাসা থেকে বের হয় না।

আরও দুদিন পার হয়েছে। এই দুদিনে তুরির কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তার ফোন বন্ধ। ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জারে তুরি নেই।

আজ শাবিনের জন্মদিন। আজ যে শাবিনের জন্মদিন সেটা আবিষ্কার করেছে তুরি। ন্যাশনাল আইডি কার্ডে জন্মদিন লেখা আছে পহেলা জানুয়ারি।

তুরি বলেছিল, খোঁজ নিয়ে দেখুন আপনার সঙ্গে যারা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে সবার জন্মদিন পহেলা জানুয়ারি।

এই তথ্য শাবিনকে অবাক করেছে। ক্লাস নাইনে রেজিস্ট্রেশনের সময় হেডস্যার ওদের বয়স ঠিক করে জন্ম তারিখ লিখে দিয়েছিলেন।

বিস্মিত হয়ে শাবিন বলল, হ্যাঁ, এই তারিখটা আমাদের স্কুলের হেডস্যার ঠিক করেছেন। অনেকের বয়স তিনি পহেলা জানুয়ারি লিখেছিলেন। আপনি জানলেন কেমন করে!

তুরি কেন জানি জেদ ধরে থাকল। সে শাবিনের আসল জন্ম তারিখ বের করতে চায়। শাবিনের মা ঠিকঠাক বলতে পারলেন না। বললেন, তোর বাবা জানত।

তুরির আগ্রহে শাবিন পুরাতন কাগজ ঘেটে জন্মদিন লেখা বাংলা সাল তারিখ বের করে এনে দিলো। ইংরেজি ক্যালেন্ডারের সঙ্গে দিনক্ষণ মিলিয়ে তুরি বের করেছে আজ শাবিনের অরিজিনাল জন্মদিন।

শাবিন জানে তুরি আজ এখানে আসবে। তুরি বলেছিল, এরপর দেখা হবে আপনার সঙ্গে আমার বিশেষ কোনো দিনে এই রেস্টুরেন্টে।

আজ বিশেষ দিন। এত বছর মনে হয়নি। আজ মনে হয়েছে। এখানে আসার আগে কেন জানি আচমকা বুকের ধড়ফড়ানি বেড়ে গেল। কাজগুলো গুছিয়ে করতে পারছিল না। স্যান্ডো গেঞ্জির ওপর শার্ট পরতে গিয়ে খেয়াল করল গেঞ্জি পরেছে উলটো করে। খুব যে গরম পড়েছে তা না। মাত্র গোসল করেছে, তাও দরদর করে ঘামছে। সবুজ ছাপছাপ শার্ট খুলে নীল প্রিন্টের শার্ট গায়ে দিলো। ভেজা তোয়ালেতে আরেকবার ঘাড় মুখ মুছে গা থেকে শার্ট, স্যান্ডো গেঞ্জি খুলে সাদা আর অ্যাশের কম্বিনেশনের পলো গেঞ্জি পরে নিলো।

বুকের ধড়ফড়ানি কমে গেলেও অস্থিরতা থেকে গেছে। তুরি আসবে কিনা নিশ্চিত না। মন বলছে তুরি আসবে। বুকের ভেতর ঢিপঢিপ করছে। তুরি আসছে না। ভুলে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। শাবিন জানে তুরি আসবে। তুরি ওকে কথা দিয়েছে।

শাবিন টেবিলের ওপর টিস্যু বক্স থেকে টিস্যু পেপার নিয়ে সমান দুই ভাঁজ করে ছিঁড়ল। দুই টুকরো টিস্যু পেপারের একটাতে লিখল ‘ওয়াই’, মানে ইয়েস। আর একটাতে লিখল ‘এন’, মানে নো।

চোখ বন্ধ করে কাগজ তুলবে। যদি ‘ওয়াই’ ওঠে, তারমানে তুরি আসবে। যদি ‘এন’ ওঠে, তাহলে জানবে তুরি আসবে না। ‘ওয়াই’ আর ‘এন’ লেখা টিস্যু পেপারের টুকরো দুটো বেশ কয়েক ভাঁজ করে টেবিলের ওপর ছড়িয়ে দিলো। চোখ বন্ধ করে হাতড়ে একটা কাগজ তুলল। খুলে দেখল তাতে লেখা ‘এন’।

শাবিন ভাবল একবার না, তিনবার দেখবে। দেখলও তাই। চোখ বন্ধ করে ভাঁজ করা কাগজ তুলল তিনবার। পরপর দুবার ‘ওয়াই’ লেখা কাগজ উঠল। 

শাবিন প্রতীক্ষায় থাকল। তুরি এলো না। শাবিন ফিরে গেল।

 

শাবিন এসেছে তুরিদের বাসায়।

বড়ো আপা শাবিনকে দেখে বললেন, কী ব্যাপার! এতদিন পর! কোথায় উধাও হয়ে গিয়েছিলে?

বড়ো আপার সঙ্গে কথা বললেই শাবিনের মন ভালো হয়ে যায়। চনমনে গলায় বলল, এই তো একটু ব্যস্ত ছিলাম।

চাকরি শুরু করেছ নাকি?

না বড়ো’পা। ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়ার প্রিপারেশন নিচ্ছিলাম।

বাহ্। খুব ভালো খবর। বসো, তোমাকে মিষ্টি খাওয়াই। ঘরে বানানো।

শাবিন জিজ্ঞেস করল, তুরি কোথায়?

ও তো চলে গেছে, বড়ো আপা এমনভাবে বললেন যেন তুরির কোথাও যাওয়ার কথা আর শাবিন সেটা জানে।

চলে গেছে মানে! কোথায়? বড্ড অস্থির শোনাল শাবিনের গলা।

বড়ো আপা হাসলেন। হেঁয়ালি করে বললেন, তুরি হারিয়ে গেছে।

প্লিজ বড়ো’পা! অমন করবেন না। বলুন ও কোথায় গেছে!

বড়ো আপার কণ্ঠস্বর এবার অপরিচিত মনে হলো। ধীর শান্ত গলায় বললেন, শোনো শাবিন। পড়াশোনা করতে চাইছ, মন দিয়ে করো। আমি শুধু ওর না, তুমি যদি সত্যি আমাকে বড়ো বোন মনে করো, তোমার সেই বড়ো বোন হয়ে বলছি, তুমি ওকে খুঁজো না।

কেন?

প্রশ্ন থাক। ধরে নাও তুরি সত্যি হারিয়ে গেছে।

হারিয়ে গেছে বলেই তো খুঁজব। না খুঁজলে পাব কীভাবে?

খুঁজলেই যে পাবে সে ব্যাপারে কি তুমি নিশ্চিত?

আমার মন বলছে।

তাহলে খুঁজতে পারো।

শাবিনের সহসা মনে হলো তুরি কোথায় যেতে পারে সে সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই। সে তুরিকে কোথায় খুঁজবে! তুরিকে খুঁজতে হবে কোনোদিন এমন কথা সে ভাবেনি কখনো।

বড়ো আপা গলার স্বর বদলে ফেললেন। কণ্ঠস্বরে গভীর আন্তরিকতা নিয়ে বললেন, আমি বলি কী, তার আগে নিজের ভিতটাকে আরও মজবুত করে নাও। আমি তোমাকে সাহায্য করব। শুধু খুঁজে পেলেই তো হবে না, তাকে ধরে রাখার মতো যথেষ্ট শক্তি থাকতে হবে।

বড়ো আপার আন্তরিকতা শাবিনকে শান্ত করতে পারল না। ভেতরটা পুড়ে খাক হয়ে গেল। হতাশ গলায় বলল, আমার আরও আগে বোঝা উচিত ছিল।

বড়ো আপা বললন, তুমি হয়তো কেবল অবলম্বন খুঁজছিলে মাত্র। তারচেয়ে বেশি কিছু না। যেটাকে তুমি অবলম্বন করবে সেটাও তো যথেষ্ট শক্ত হওয়া চায়। নাহলে যে সবশুদ্ধ হুড়মুড় করে ভেঙে পড়বে।

ঝট করে উঠে পড়ল শাবিন। বলল, যাই বড়ো’পা।

বড়ো আপা আটকালেন না, তবে একটুক্ষণ দাঁড়াতে বললেন, তুরি তোমার জন্য বই রেখে গেছে। তুমি দাঁড়াও আমি নিয়ে আসছি।

তুরিকে ফোন করল শাবিন। তুরির ফোন বন্ধ। বলছে সুইচড অফ। কেউ যদি ইচ্ছে করে হারায় তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। শাবিনের মনে হচ্ছে তুরি তার কাছ থেকে ইচ্ছে করে হারিয়ে গেছে। সিলভিয়ার ফোন নম্বর শাবিনের নেই। সে এখান থেকে বের হয়ে নিকেতনে যাবে। সিলভিয়াদের ফ্ল্যাটে।

শাবিন দাঁড়িয়ে আছে। ভেঙে পড়ছে সবকিছু। বড়ো আপা ভেতরের ঘর থেকে একটা বই এনে শাবিনের হাতে দিয়ে বললেন, তুমি আমার ওপর রাগ করলেও জেনো সব সময় তোমার এই বড়ো বোন তোমার জন্য দরজা খুলে অপেক্ষা করবে।

কোনো কথা না বলে বইটা হাতে নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ল শাবিন।

হনহন করে হেঁটে যাচ্ছে। রাগ কী অভিমান ওকে ভেঙেচুরে তছনছ করে দিচ্ছে।

সিলভিয়াকে বাসায় পাওয়া গেল না। তার বোন শাবিনকে আগে কখনো দেখেননি বা তার নাম শোনেননি বলে সিলভিয়ার ফোন নম্বর দিতে রাজি হননি।

 

শাবিন হাঁটছে রোদ্দুর ভেঙে। খানিকটা উদ্দেশ্যবিহীন, খানিকটা এলোমেলো। দরদরে তাতাল দুপুর। একেবারেই নিজের ভেতর নিজের মতো করে ডুবে আছে বলে রোদের তেজ অনুভব করতে পারছে না। হয়তো রোদ যতটুকু শরীর পোড়াতে চাইছে, নিজের সঙ্গে নিজের কথোপকথনে মন, আত্মা আর সত্তা পুড়ছে তারচেয়ে বেশি।

হাঁটতে হাঁটতে বকুল তলার সেই পুকুর পাড়ে এসে দাঁড়াল। একটা শালিক এসে বসেছে সামনের নারকেল গাছের সবচেয়ে উঁচুতে যে পাতা তার ওপর। পাতা বাতাসে তিরতির করে কাঁপছে। শাবিনের নিজের ভেতর প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, যারা খুব বেশি যুক্তি নির্ভর, যারা বাস্তবতা দিয়ে বিচার করতে পারে সবকিছু, তাদের কি কখনো বুকের ভেতর কষ্ট হয়! তাদের কি কখনো বুক চেপে আসে কষ্টে!

শাবিনের মনে হয়, কারও কারও ভেতরে কী প্রচন্ড কাঙালীপনা থাকে। সে জানে চলে যাবে, তবু কোথাও একটু আঁচড় রেখে যেতে চায়।

মনের ভেতর কবেকার একটা গান ভাসতে থাকে,

এখন আমার বড়ো দুঃসময়

মনের আকাশ মেঘে ঢাকা

যখন তখন চোখের কোণে

নিশি জমা হয়।

 

এই শহর আর টানছে না শাবিনকে। আলগা হয়ে গেছে বাঁধন। তুরি ওকে কিছু না বলে কোথাও চলে গেছে। বড়ো আপা হেঁয়ালি করে বলেছেন, তুরি হারিয়ে গেছে। তীব্র কষ্ট কিংবা অভিমান শাবিনকে একেবারে একা করে দিয়েছে। 

শাবিন ওদের গ্রামে যাচ্ছে। কেন জানি মনে হয়েছে বাবা সেখানে থাকতে পারেন। শাবিনের খুব বাবার কথা মনে পড়ছে। ছোটোবেলা থেকে যে বাবাকে সে ভয় পেয়ে আসছে। যার কাছ থেকে সবসময় দূরে থাকতে চেয়েছে। আজ সেই বাবার জন্য তার বুকের ভেতর হাহাকার করছে। মনে হচ্ছে বাবার কাছে আশ্রয় পেলে সে শান্তি পাবে।

পড়ন্ত বিকেলের ট্রেনে চেপে বসেছে। ট্রেনের কামরায় জানালার ধারে বসে আছে শাবিন। দুপাশের গাছগুলো কেবল সরে সরে যাচ্ছে। শূন্যতায় চোখ মেলে থাকা শুধু। বাইরে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগছে না। চোখ টনটন করছে। পাশের ব্যাগের ভেতর থেকে তুরির দেওয়া বই বের করল খানিকটা বেখেয়ালে। চলে যাওয়ার আগে বড়ো আপার কাছে তুরি ওর জন্য বইটা রেখে গেছে। কাহ্লিল জিবরান-এর ‘দ্য স্যান্ড অ্যান্ড ফোম।’ প্রচ্ছদের ওপর হাত বুলিয়ে মলাট ওলটালো।

বইয়ের প্রথম সাদা পাতায় গোটা গোটা অক্ষরে তুরি লিখেছে,

আমাদের জীবন অনেকগুলো ছোটো ছোটো ভুল দিয়ে গড়া। আমরা আমাদের জীবনের সেই ভুলগুলোকে ধরতে পারি না। আর ধরতে পারি না বলে আমরা হেরে যাই অনায়াসে। আমাদের কিন্তু হারার কথা ছিল না। কথা ছিল আমরা আমাদের ভুলগুলোকে হয় উপড়ে ফেলে, না হয় তোয়াক্কা না করে এগিয়ে যাব। আমরা পারিনি। আমরা কেবল পিছিয়ে পড়েছি। পিছিয়ে পড়া জীবন মানুষের জীবন না। মানুষের জীবন জয় করার জন্য, হারার জন্য নয়। জয় কীভাবে সুনিশ্চিত করা যায় সেটা আমাদের ভেবে দেখা জরুরি। নাকি আমরা প্রতিদিন একটু একটু করে ক্ষয়ে যাব! ক্ষয়ে যাওয়ার জন্য আমরা জন্মাইনি, আমরা জন্মেছি সৃষ্টি করতে। নতুন পৃথিবীর জন্ম দেব বলে আমরা জন্মেছি। আমরা জন্মাব আবার নতুন আরেকটি পৃথিবীর জন্ম দিতে।

আর তারপর? তারপর আমার নটে গাছটি মুড়োল। স্বপ্ন আমার ফুরোল। হায় রে সামান্য মেয়ে, হায় রে বিধাতার শক্তির অপব্যায়।

চোখদুটো বন্ধ করে বুকের ভেতর গভীরভাবে শ্বাস টেনে নিল শাবিন। চেপে আসছে বুকের ভেতর, ওখানে বাতাসের বড্ড অভাব। শূন্যতায় ভরা বুকের ভেতর চাপা কষ্ট গুড়গুড় করে উঠল।

(চলবে)

 

পর্ব ৮ : অঘ্রানের অন্ধকারে

পর্ব ৭ : অঘ্রানের অন্ধকারে

পর্ব ৬: অঘ্রানের অন্ধকারে

পর্ব ৫: অঘ্রানের অন্ধকারে

পর্ব ৪: অঘ্রানের অন্ধকারে

পর্ব ৩: অঘ্রানের অন্ধকারে

পর্ব ২: অঘ্রানের অন্ধকারে

পর্ব ১: অঘ্রানের অন্ধকারে

Header Ad
Header Ad

গাইবান্ধায় আগুনে পুড়লো ৫ দোকান, ৩০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি

গাইবান্ধায় আগুনে পুড়লো ৫ দোকান। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

গাইবান্ধা সদর উপজেলায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৫টি দোকান ভস্মীভূত হয়েছে। এতে প্রায় ৩০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) সকালে সদর উপজেলার বল্লমঝাড় ইউনিয়নের মাঠেরপাড় বাজারে এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে সাতটার দিকে মাঠেরপাড় বাজারে এসেছে প্রথমেই মালেক স্টোরে আগুন দেখতে পান তারা। মুহূর্তের মধ্যেই মার্কেটের ৫টি দোকানে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন লাগার খবর শুনে আশেপাশের লোকজন ছুটে এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। সেইসাথে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ করে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে আগুনে ৫টি দোকানের ফ্রিজ, টিভি, মালামাল ও আসবাবপত্র পুড়ে যায়। এ ঘটনায় প্রায় ৩০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এসময় সব হারিয়ে নিঃস্ব ব্যবসায়ীদের কান্নায় পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।

আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানগুলো হলো মালেকের মুদি দোকান, সাইদুলের মালামাল রাখার গোডাউন, মজনু স্টোর, জাহিদ ফার্মেসি, শহীদ স্টোর এবং মনজুর চা দোকানের আংশিক ভস্মীভূত হয়েছে।

মালেক স্টোরের দোকানি আব্দুল মালেক বলেন, প্রতিরাতের মতো বৃহস্পতিবার রাতেও দোকান বন্ধ করে বাড়িতে গিয়েছে। শুক্রবার সকালে ঘুমে থাকা অবস্থায় শুনতে পাই আমার দোকান আগুনে পুড়ে গেছে।

গাইবান্ধা ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডর আবু মোত্তালেব বলেন, সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে খবর পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে এসে দুইটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই। অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।

আগুনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বল্লমঝাড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুলফিকার রহমান।

এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মাহমুদ আল হাসান ভোরের আকাশকে বলেন, বল্লমঝাড় মাঠেরপাড় বাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, এটি খুবই দুঃখজনক। উপজেলা পরিষদের পক্ষে থেকে ক্ষতি গ্রস্থ ব্যবসায়ীদেরকে টিন বিতরণ করা হবে।

Header Ad
Header Ad

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথে বড় সমস্যা আরাকান আর্মি: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথে বড় সমস্যা আরাকান আর্মি: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। ছবি কোলাজ: ঢাকাপ্রকাশ

দূতাবাসের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আরাকান আর্মি বড় সমস্যার জায়গা। বাংলাদেশ না পারছে তাদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করতে, না পারছে তাদেরকে এড়িয়ে যেতে।

শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) ফরেন সার্ভিস ডে উপলক্ষে কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় এ কথা বলেন তিনি।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথে বড় সমস্যা আরাকান আর্মি। বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি রাষ্ট্রীয় বা আন্তর্জাতিক স্বীকৃত কোনো প্রতিষ্ঠান না হওয়ায় তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় যাওয়া যাচ্ছে না। আবার তাদের এড়িয়েও এ সংকট সমাধান সম্ভব নয়।

তবে জাতীয় স্বার্থে অরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনায় বসা যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি। সম্প্রতি দুই মার্কিন উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে ট্যারিফ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলেও জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, কর্মীদের বিদেশ পাঠানোর ক্ষেত্রে ৮০ ভাগ সমস্যা দেশ থেকেই তৈরি হয়। পরে সৃষ্ট সমস্যা সামলাতে হয় দূতাবাসকে। সুতরাং প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা দিয়েই কর্মী পাঠানো গেলে প্রবাসীদের সমস্যা কম হবে। একইসঙ্গে মিশনগুলোর ওপর চাপ কমবে।

রেমিটেন্সের ব্যাপারে তৌহিদ হোসেন বলেন, ১৯৮০ এর দশকে এক বিলিয়ন ডলার রফতানি ছিল। এখন (বর্তমান) ৬০ বিলিয়ন ডলার, যেখানে কিছুটা হলেও দূতাবাসের ভূমিকা আছে। এছাড়া সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এক কোটি প্রবাসী দেশে রেমিটেন্স পাঠান।

এছাড়া ভারতের মুর্শিদাবাদের দাঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশকে জড়িয়ে অভিযোগ তোলার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয় থেকে লিখিত প্রতিবাদ জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ফরেন সার্ভিস ডে'তে ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল সাবেক রাষ্ট্রদূত হোসেন আলীর নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক কূটনীতিক পাড়ায় বাংলাদেশ মিশনের যাত্রা শুরুর বিষয়টি তুলে ধরেন উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।

Header Ad
Header Ad

টঙ্গীতে ফ্ল্যাট বাসা থেকে দুই শিশুর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার

ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরের টঙ্গীতে দুই শিশুকে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) বিকেলে স্থানীয় পূর্ব আরিচপুর রূপবানের মারটেক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করে।

নিহতরা হলো- আব্দুল্লাহ (৪) ও মালিহা (৬)। তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার তাতুয়াকান্দি গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী আব্দুল বাতেন মিয়ার ছেলে ও মেয়ে।

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্র জানায়, আব্দুল বাতেন মিয়া পরিবার নিয়ে পূর্ব আরিচপুরের রূপবানের টেক এলাকার একটি আটতলা ভবনের তৃতীয় তলায় ভাড়া থাকেন। পরিবারের তিন সন্তানের মধ্যে বড় সন্তান ছিলেন নানাবাড়িতে। শুক্রবার দুপুরে মা সালেহা বেগম মাথা ব্যথার ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে দেখেন ঘরের মেঝেতে দুই শিশুর রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে আছে।

পরিবারের ধারণা, বিকেল ৪টা থেকে সাড়ে ৪টার মধ্যে কোনো এক সময় দুর্বৃত্তরা ফ্ল্যাটে ঢুকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে শিশুদের ওপর হামলা চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়। ঘটনার পর দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করছি। এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। হত্যার কারণ উদঘাটনে তদন্ত চলছে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

গাইবান্ধায় আগুনে পুড়লো ৫ দোকান, ৩০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথে বড় সমস্যা আরাকান আর্মি: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
টঙ্গীতে ফ্ল্যাট বাসা থেকে দুই শিশুর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার
মালয়েশিয়ায় ১৬৫ বাংলাদেশিসহ ৫০৬ অবৈধ অভিবাসী আটক
ভেঙে গেল পরীমনি-সাদীর প্রেম? রহস্যময় পোস্টে তোলপাড় নেটদুনিয়া
বগুড়া বিমানবন্দর চালুর প্রস্তুতি চূড়ান্ত, জুলাই থেকেই শুরু হতে পারে ফ্লাইট চলাচল
বেনজীরকে বোট ক্লাব থেকে বহিষ্কার, ৩২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
ঢাকায় আবারও আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, ড. ইউনূসের পদত্যাগ দাবি
২০২৬ বিশ্বকাপে খেলা নিয়ে আশাবাদী মেসি, সিদ্ধান্ত নেবেন সময়মতো
পশ্চিমবঙ্গে সহিংসতা নিয়ে বাংলাদেশের মন্তব্য ‘অযৌক্তিক’: ভারত
দর্শনা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবলের আত্মহত্যা
দাদা ও চাচার বিরুদ্ধে স্কুলছাত্রীকে বিষ প্রয়োগে হত্যার অভিযোগ
গত ৯ মাসে এক আকাশ ভালোবাসা অর্জন করেছি : প্রেসসচিব
বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে সিরিজে আগ্রহ দেখায়নি বেসরকারি চ্যানেল, দেখাবে বিটিভি
সন্ত্রাসী তালিকা থেকে তালেবানকে বাদ দিলো রাশিয়া
ভিনগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব আছে, জানালেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক
ব্রাজিলের ভক্তদের ‘বানরের’ সঙ্গে তুলনা, নিষেধাজ্ঞার মুখে আর্জেন্টিনা
নারীরা কেন বয়সে ছোট পুরুষের সঙ্গে প্রেমে জড়াচ্ছেন?
জুলাই-মার্চ মাসে ৩০.২৫ বিলিয়ন ডলার পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ
সংঘর্ষে উড়ে গেছে বাসের ছাদ, তবুও ১০ কিলোমিটার চালিয়ে ৬০ যাত্রীকে বাঁচালেন চালক