বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-২০

নেই দেশের নাগরিক

‘খিদে নেই বললেই হল, সেই কোন সাতসকালে একগাল মুড়ি খেয়েছেন, সারাদিন পেটে কিচ্ছুটি পড়েনি! পেটে দানাপানি না পড়লে কী করে শ্বাস নেবেন?’ পাশ থেকে বলল আরিফা। সে একটা ছোট্ট থালাতে দুমুঠো জাওভাত নিয়ে কুঁজো হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
‘এমনি করে হবে না। জোর করে একগাল খাইয়ে দাও।’ বলল নুহু। মতি বাপটার দিকে কাতর দৃষ্টিতে তাকাল। মুখে কিচ্ছু বলল না। মনে মনে বলল, রিজিক থাকলে ঠিক খাবে।
‘দেখি, একটু খাড়া হয়ে উঠ তো।’ দু’হাত দিয়ে ঠেসা মারলেন হালেমা। আরিফা হাতের থালাটা পাশে রেখে, শশুরের হাতদুটো ধরে ছইয়ের চালায় হেলান দিয়ে বসিয়ে দিল। পিঠে দিয়ে দিল একটা বালিশ।
‘নাও, বৌমা, এবার একগাল খাইয়ে দাও।’ বললেন হালেমা। তিনি জাফরের মুখটা তার আঁচল দিয়ে ভালো করে মুছিয়ে দিলেন।

‘খা-আ-ব না।’ আবছা করে বললেন জাফর। তার এতিম চোখে দুনিয়ার মায়া ফ্যাকাসে হয়ে উঠছে। একবার মিহি করে চোখ নামিয়ে দেখলেন নদীটাকে। থক করে উঠল তার ভেতর। ভেতরের নদী উছাল মারল জড়ানো চোখে।

‘মুখটা হাঁ কর তো দেখি।’ বলেই ঠোঁট দুটো ধরে দুই কলসা ফাঁক করলেন হালেমা, আরিফাকে বললেন, ‘দাও, বৌমা, এবার খাইয়ে দাও।’ আরিফা জাওভাতের একটা ছোট্ট দলা পাকিয়ে শশুরের মুখে পুরে দিল। ফোকলা গালে চিবোতে লাগলেন অশক্ত জাফর। কিছুক্ষণ চিবোতেই আরিফা জলের গিলাসটা মুখের কাছে ধরল। কুক কুক করে জল গিললেন জাফর। দুবারের পর আর তৃতীয়বার কোনমতেই মুখে দেওয়া গেল না। মুখ কব্জার মতো এঁটে থাকলেন। হালেমা বললেন, ‘থাক, দু গাল তো খেল।’ আঁচল দিয়ে এঁটো মুখটা ভালো করে মুছিয়ে দিলেন। তারপর আবারও পিঠে হাত দিয়ে কাত করে শুইয়ে দিলেন বিছানায়। জাফরের রোগা চামটা শরীরটা এলিয়ে গেল। অন্ধকার তখন ছইয়ের বাইরে থেকে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছে। দরজা আটকে দাঁড়িয়ে আছে কুপির আলো। আলো-ছায়ায় ঘুরঘুর করছে রাতের ঘুম। সেও হন্যে হয়ে খুঁজছে জেগে থাকা চোখ। ফুরসত পেলেই নামিয়ে নেবে চোখের পাতা। চোখ কেবলই ঢুলু ঢুলু করতে লেগেছে, অমনি একটা চাপা গুঞ্জন ভেসে এল। চিৎকার চেঁচামেচির একটা হুল্লোর।
গুঞ্জনটা নয়াপাড়া থেকে ভেসে আসছে। কিছু একটা হুলুস্থুল বেঁধেছে নিশ্চয়, ভাবল মতি। ভারি চোখদুটো আলসেমি করে তুলল। নৌকোর পাটাতনে উপুড় হয়ে শুইয়ে আছে সে। টিপটিপ করে জ্বলছে আলোর পর আলো। একটা নৌকোর লেজের সঙ্গে আরেকটা নৌকোর মাথা জুড়ে আছে। পাশে কানায় কানা লেগেও ভেসে আছে অজস্র নৌকো। যেন মনে হচ্ছে এক একটা কালো মোষ পিঠের কুঁজ তুলে দাঁড়িয়ে আছে। নৌকোতে ছয়লাপ নয়াপাড়া ঘাট। আজ গতরাতের মতো অত অন্ধকার নেই। পুব আকাশে কাস্তের মতো ফালি চাঁদ উঠেছে। সেই রূপোলী চাঁদ থেকে নেমে আসছে চিকন আলো। থিনথিনে হলুদ জ্যোৎস্না। নদীর কুলকুল জল সে জ্যোৎস্না গায়ে মেখে খৈএর মতো ফুটছে। চোখটা ঘুলিয়ে আসতেই কখন যে চাঁদটা ফুটেছে, টেরই পায়নি মতি। ‘ঘড়’ ‘ঘড়’ করে নাক ডাকছে নুহু। বৈঠা হাতে করেই ঘুমে ঢুলে পড়েছে সে। টানা তিনদিনের ধকল শরীরটাকে একেবারে কাদা করে দিয়েছে। জ্যোৎস্না তার হাড়গিলে চামটা শরীর গলে সুড়সুড় করে নেমে যাচ্ছে নদীতে। হাওয়ার ধাক্কা লাগায় গুঞ্জনটা আরও বেগ পেল। কী যে হচ্ছে, এতদূরে আছি, কিচ্ছু বুঝতেও পারছি না!

আনচান করে উঠল মতি। বলতে বলতে ‘ধড়াম’ করে একটা বিকট শব্দ হল! তড়াক করে উঠে বসল মতি। জ্যোৎস্নার আলোতে চোখ ফেড়ে তাকাল নয়াপাড়ার দিকে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই, আবারও ‘ধড়াম’ শব্দটা কানে এল! এতক্ষণে বুঝল মতি, এ গুলির শব্দ! ভয়ে বুকের হাড় কেঁপে উঠল তার। কী ব্যাপার! কীসের হট্টগোল! এই সন্ধ্যা রাতে হঠাৎ গুলি ছুটছে কেন! নুহুকে কি ডাকব? না, থাক, ব্যাচারি জানভরে ঘুমোচ্ছে। তাহলে, ইয়াসিন মাস্টার? হ্যাঁ, মাস্টারকেই ডাকা যাক। তারা আবার ঘুমিয়ে পড়েনি তো? আমার হাঁকডাকে বাকিদের ঘুম ভেঙে গেলে, গালমন্দ করবে না তো? একে তো ক-দিন থেকে চোখে ঘুম নেই। মাথার ঘেলু পোকার মতো কাটতে থাকে মতির। কী করবে, ভেবে উঠতে পারে না। পাশের নৌকোটার লোকগুলোও ঘুমিয়ে কাদা। তারপাশের নৌকোটাতেও কোন আলো জ্বলছে না। অন্ধকার আর ঘুম একসঙ্গে নৌকোগুলোয় ঢুকে পড়েছে। অন্ধকার আর ঘুম একসঙ্গে জোড় বেঁধে যে মানুষকে গিলে নেয়, সে মানুষের ঘুম ঢোল পিটলেও ভাঙতে চায় না। মতি মহা ফ্যাসাদে পড়ে গেল। চাপা গুঞ্জনটা আবারও স্রোত ঠেলে কানে বাজল। তার কান যেন এখন ফুঁসে ওঠা সমুদ্রের তটভূমি, একের পর এক গুঞ্জনের ভয়াল স্রোত আছড়ে আছড়ে পড়ছে। ভেঙে দিচ্ছে আরাম-আয়েশের ভাস্কর্য। জানের বেগাত্তায় পালিয়ে বেড়ানো মানুষের আরাম-আয়েশ তো বালির ভাস্কর্যই। একটা ঠুনকো স্রোতেই হুড়মুড় করে ভেঙে যেতে পারে। মতি পাটাতনের ওপর দিয়ে পা টিপে টিপে গিয়ে একেবারে মটকায় জিরাফের মতো গলা তুলে তাকাল। নাহ, কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না! নয়াপাড়ার বড়বড় ল্যাম্পপোস্টের হলুদ আলোগুলো ঠিকরে পড়ছে পাড়ে, এটুকুই প্রতিভাত হচ্ছে মাত্র। আলো যেখানে ঠিকরে পড়ছে, সে জায়গাটা নৌকোর সারিতে আটকা পড়ে যাচ্ছে। কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। মতি এবার চোখ ফেড়ে তাকাল, তাকিয়েই তার ভেতরটা থক করে উঠল, একদলা সাদা ধোঁয়া কুন্ডলি পাকিয়ে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় কিলবিল করে উপরে উঠছে! যা ভাবছি, তাই! এ তো কার্তুজের ধোঁয়া! শুকনো ঢোক গিলল মতি। তবে কি বিজিবি ধরে নিয়ে গিয়ে গুলি করছে! না, চুরি করে বাংলাদেশে ঢুকছিল, এই অজুহাতে রোহিঙ্গাদের কতুল করছে!

‘এত গুলির শব্দ কেন!’ ঘুম ভেঙে উঠে পড়েছেন ইয়াসিন মাস্টার। ইয়াসিন মাস্টারকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, মতি চোখ বড় করে বলল, ‘আর রেহাই নেই মনে হচ্ছে মাস্টার, এবার বিজিবিও রোহিঙ্গাদের ধরে ধরে গুলি করছে!’

‘সেটা তো না হতেও পারে। হয়ত এটা ওদের রুটিন প্র্যাক্টিস। বার্মা সেনাদের কাছে তাদের উপস্থিতি জানান দেওয়াও তো হতে পারে? এখন তো শোনা যাচ্ছে, বার্মা সেনারা গোপনে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের এইসব রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ল্যান্ডমাইন পুঁতে আসছে! বাংলাদেশ সরকার সে অভিযোগ রাষ্ট্রসংঘে করেছে। হয়ত এরকম কিছুর আভাস পেয়েছে বিজিবি। আর সেসব ফন্দিফেউর বানচাল করতেই হয়ত গুলি ছুটাচ্ছে।’ চিকন জ্যোৎস্নার মিহি অন্ধকার ফুঁড়ে কথাগুলো ভেসে এল মতির কানে। মতি বলল, ‘সেসব যে হবে না, তা নয়, হতেও পারে। কিন্তু হৈচৈ হচ্ছে কেন?’
‘সেটা তো ভুল কিছু বলেননি। তাই তো! এত গুঞ্জন কেন!’ ইয়াসিন মাস্টারের চোখ বড় হয়ে উঠল। মতি বলল, ‘আমার মন বলছে, বড় কিছু একটা ক্যাচাল বেঁধেছে!’
‘চলুন, কিছুটা এগিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি আঁচ করে আসি।’ খাড়া হয়ে দাঁড়ালেন ইয়াসিন মাস্টার। মতি ভ্রূ টান করে বলল, ‘কিন্তু কীভাবে যাব? নৌকো তো এগোনো যাবে না!’
“নৌকো কেন? আমরা একলা যাব। আমার কাছে দুটো সেফটিজ্যাকেট আছে। সেগুলো পরে সাঁতার কেটে যাব।’

‘তা হলে তো খুব ভালো হয়। ব্যাপারটা দেখে আসাই ভালো, হাবভাব মতিগতি টের পাওয়া যাবে। সেরকম হলে এখান থেকে নৌকো ঘুরিয়ে আগেভাগে চট করে পালাতে পারব।’

‘এই নিন।’ ইয়াসিন মাস্টার একটা লালরঙের সেফটিজ্যাকেট মতির দিকে ছুড়ে দিল। খপ করে ধরে নিল মতি। আর সাতপাঁচ না ভেবে টপাটপ গায়ে গলিয়ে নিল। ইয়াসিন মাস্টারও প্রস্তুত। মতির মাথায় একটা প্রশ্ন সেই কখন থেকে ঘুরপাক খাচ্ছে, উনি মাস্টার মানুষ, সাঁতরে যেতে পারবেন তো! প্রশ্নটা এবার করেই ফেলল মতি, ‘আপনি অতদূর সাঁতরে যেতে আসতে পারবেন তো? সেরকম হলে, না হয় আমি একাই গিয়ে দেখে আসছি।’

‘আরে না না, তা কেন যাবেন। এইটুকু সাঁতার কাটা কোন ব্যাপার নয়। আমার অভ্যেস আছে। আরে নদীর পাড়ের মানুষ সাঁতার জানব না, তাই কি হয়? আর জীবনে যে একবার সাঁতার শেখে, সে কখনও ভুলে না। আমার আব্বাও একসময় নদীতে মাছ ধরতেন। সাঁতার আমাদের রক্তে।’ ঝপাং করে নদীতে ঝাঁপ মারলেন ইয়াসিন মাস্টার। মতিও লুঙ্গি নেংটি মেরে ‘ঝপাং’ করে লাফ মারল। দুজনের লাফ মারার শব্দে আবুলের পাতলা ঘুম ভেঙে গেল। থড়বড় করে উঠে ব্যাপারস্যাপার দেখে তার তো আকাশ থেকে পড়ার অবস্থা। চোখ দল্লাতে দল্লাতে বলল, ‘আপনি কোথায় যাচ্ছেন মাস্টারভাই!’

‘পাড়ে কিছু একটা গণ্ডগোল পেকেছে, আমরা একটু কিছু দূর গিয়ে দেখে আসি, তোরা নৌকোতেই থাক, কোত্থাও যাস না।’ ইয়াসিন মাস্টারের কথা শুনে কান খাড়া করল আবুল। দূর পাড়ের কিছু শোনার চেষ্টা করল। ঠোঁট নড়িয়ে বলল, ‘হ্যাঁ, তাই তো, একটা চাপা গুঞ্জন ভেসে আসছে!’ তারপর ইয়াসিন মাস্টারের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কিন্তু, আপনি যাচ্ছেন কেন? আমিই দেখে আসতাম। আপনি উঠে আসুন, আমি যাচ্ছি।’ খাড়া হয়ে দাঁড়াল আবুল।

‘তোকে আর যেতে হবে না, আমি যখন পানিতে নেমেই পড়েছি, আমিই যাচ্ছি, তাছাড়া আমি তো একা যাচ্ছি না, আমার সঙ্গে মতিভাইও যাচ্ছেন। তুই কাউকে কিচ্ছু বলিস ন্যা, যে যা ঘুমোচ্ছে ঘুমোক।’ নদীতে মুখ তুলে ফিসফিস করে বললেন ইয়াসিন মাস্টার।

‘ঠিক আছে, কিন্তু বেশি দূর যাবেন না। রাতের নদীতে কুমির থাকে। সাবধানে যাবেন।’ আবুলের দুরুদুরু কণ্ঠ। বৈঠাটা হাতে নিয়ে খাড়া হয়ে দাঁড়ায়। ভেতরটা তার ধুকপুক করছে। আলো-আঁধারে ঘুমের আবেশ মিশে থাকা চোখগুলো পিটপিট করছে।
উপুড় হয়ে গলা চুবড়িয়ে সাঁতার কাটতে থাকে মতি আর ইয়াসিন মাস্টার। মতি সামনে, ইয়াসিন মাস্টার পেছনে পেছনে। ঠান্ডা কালহা জল। জলের ঢেউ মুখে ঠক্কর দিতেই, নুনতা স্বাদ পেল জিভ। বুক সাঁতার কেটে সামনে এগোতে লাগল তারা। ইয়াসিন মাস্টার একবার বুক-সাঁতার একবার প্রজাপতি-সাঁতার কেটে এগোচ্ছেন। মতি একনাগাড়ে বুক-সাঁতার কেটেই চলছে। উপুড় হয়ে বুক জলের ওপর রেখে দু’হাত একসঙ্গে মাথা বরাবর জলের ভেতর দিয়ে সামনে নিয়ে দু’হাতের তালুতে জল আটকিয়ে পেছন দিকে টেনে এবং দু’পা হাঁটু বরাবর ভাঁজ করে ব্যাঙের মতো দু’পায়ের পাতা দিয়ে পেছনে লাথি মেরে শরীর সামনের দিকে এগিয়ে হুশ হুশ করে চলতে থাকল। মতি ইয়াসিন মাস্টারের চেয়ে সামনে অনেকটা এগিয়ে গেল। মতিকে পেরে উঠছেন না ইয়াসিন মাস্টার।

কালো জল ছলাৎ ছলাৎ করে শব্দ কামড় দিয়ে উঠছে। বেশ কিছুটা সামনে এগিয়ে গিয়ে মতি থামল। ঘুত ঘুত করে শ্বাস পড়ছে। পেছনে তাকিয়ে মিহি করে বলল, “এলে গেছেন নাকি মাস্টার?’

 

‘না না, থামলেন কেন? চলুন চলুন।“ কন্ঠে দোম লাগিয়ে বললেন ইয়াসিন মাস্টার। ঘুত ঘুত করে বলদের মতো হাঁপাচ্ছেন। আসলে তিনি এলে গেছেন। সাঁতার যতই রক্তে থাক, দোম বাড়াতে গেলে তো অভ্যাস দরকার। সে অভ্যাস তো তাঁর নেই। ফলে কিছুটা গিয়েই এলে ভূতি। কিন্তু বুদ্ধিমান ইয়াসিন মাস্টার সেসব মতিকে না বুঝতে দেওয়ার চেষ্টা করলেন। মতি ইয়াসিন মাস্টারের হাল দেখে, আস্তে আস্তে এগোতে থাকে। সে বুঝে গেছে, মাস্টার যতই না এলিয়ে যাওয়ার ভাব করুন, তার চোখমুখ বলছে ভেতর এলে কাহিল। নদীর পুরো পশ্চিমপাড় লাগোয়া সারি সারি নৌকো। নানান কিসিমের নৌকো। কোনো কোনো নৌকোর দুই প্রান্ত সরু হয়ে ধনুকের মতো বেঁকিয়ে আসমানে উঠে গেছে! কোনো কোনো নৌকোর দুইপ্রান্ত আবার পাখির লেজের মতো ঝাকড়া আবার কোনো কোনো প্রান্ত পাখির ঠোঁটের মতো সরু। একজায়গাতে এসে থমকে দাঁড়াল মতি। নৌকোর খোল নয়, বাঁশের একটা বড়সড় মাচান দড়ি দিয়ে সেলাই হয়ে ভাসছে! মাচানটা অর্ধনিমজ্জিত! নদীর জল মাচানটার নাক পর্যন্ত উঠে ছলছল করছে। আর তাতে কুকুর-শেয়ালের মতো জড়সড় হয়ে পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছে প্রায় অর্ধশত মানুষ! তাদের সবারই শরীর ভেজা। পরনের কাপড়চোপড় ভিজে জুবুথুবু। এদিকে ওদিকে ইতস্তত পড়ে রয়েছে মুখ বাঁধা বস্তা। বস্তা আর মানুষকে আলাদা করা মুশকিল। চাঁদের চিকন আলোয় সবগুলোকেই মনে হচ্ছে লাশ। মাচান-নৌকোর কিণারা ধরে কিছুক্ষণ জিরোনোর পর, আবারও সাঁতার লাগাল মতি।

এবার প্রজাপতি সাঁতার কাটতে লাগল সে। একটা ডিঙি নৌকোর কাছে এসে পেছন থেকে ফ্যাসফেসে গলায় ডেকে উঠলেন ইয়াসিন মাস্টার, ‘মতিভাই, আমার পক্ষে আর এগোনো সম্ভব নয়। হাত-পা এলে যাচ্ছে।’ ঘুত ঘুত করে হাঁপাচ্ছেন ইয়াসিন মাস্টার। ডিঙি নৌকোটোর কিণারা খামচে ধরে ঝুল খেতে লাগলেন। হলবল করে নড়ে উঠল ডিঙি নৌকোটা। নৌকোর ভেতর থেকে কে একজন চমকে উঠল, ‘কে! কে এখানে?’ ঢ্যাসঢেসে গলা। লোকটি মনে হয় ঘুমোচ্ছিল। ইয়াসিন মাস্টারের নড়াচড়া করাতে তার ঘুম ভেঙে গেল।

চলবে...

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১৯

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১৮

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১৭

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১৬

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১৫

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১৪

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব ১৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১১

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৯

 

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৬

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৫

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১

 

 

 

Header Ad

‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা

ফাইল ছবি

জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, জুলাই-আগস্ট ছাত্র জনতার বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করেছি। এ নতুন দেশে আমাদের দায়িত্ব সকল মানুষকে এক বৃহত্তর পরিবারের বন্ধনে আবদ্ধ করা। কেউ কারো উপরে না, আবার কেউ কারো নিচেও না, এই ধারণা আমরা আমাদের জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।

তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ ছাত্র-জনতার সাহস ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে সম্প্রতি আমরা অর্জন করেছি, সেটাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যৎ গড়তে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ, আহত এবং জীবিত ছাত্র-জনতার কাছে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে চাই। যে সুযোগ তারা আমাদের দিয়েছে, তার মাধ্যমে আমাদের দেশকে পৃথিবীর সামনে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী দেশে পরিণত করতে আমরা শপথ নিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, ছাত্র আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করে যারা দেশ গঠনের সুযোগ করে দিয়েছে জাতি তাদের সারা জীবন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।

বক্তব্য শেষে সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা। পরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

Header Ad

নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু

ছবি: সংগৃহীত

নওগাঁ শহরে যানযট নিরসন ও শৃঙ্খলা ফেরাতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, পৌর কর্তৃপক্ষ ও রিকশা মালিক-শ্রমিকদের যৌথ উদ্যোগে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। এতে শহরে শৃঙ্খলা ফিরবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) অভিযানের উদ্বোধন করেন নওগাঁ পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকারের উপ পরিচালক টি.এম.এ মমিন। এ সময় নওগাঁ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জিয়া উদ্দিন, নওগাঁ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন, নওগাঁ জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আফজাল হোসেন ও অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

অভিযান শুরুর পর থেকেই শহরের বরুনকান্দি, মশরপুর, তাজের মোড় ও কালীতলাসহ মোট ৮ টি প্রবেশদ্বারে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। চেক পোষ্টগুলোতে ২ জন পুলিশ সদস্য, ২ জন ছাত্র সমন্বয়ক, ৪ জন রোভার স্কাউট সদস্য ও ২ জন রিকশা মালিক শ্রমিক প্রতিনিধিসহ মোট ১২ জন করে কাজ করছেন।

পৌর প্রশাসক জানান, নওগাঁ শহরে বৈধ যানবাহনের সংখ্যা ৪ হাজার। কিন্তু প্রতিদিন পার্শবতী বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ১০ হাজার রিকশা, ব্যাটারী চালিত অটো রিকশা ও ইজিবাইক শহরে প্রবেশ করে। এতে তীব্র যানযট ও জন মানুষের ভোগান্তি তৈরী হয়। এই দূর্ভোগ লাঘোবে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল ও পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিনের দিক নির্দেশনায় যানবাহন নিয়ন্ত্রনসহ বিশেষ অভিযানের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। বৈধ চালকদের চিহ্নিত করতে তাদের মাঝে পরিধেয় বিশেষ ধরনের জ্যাকেট প্রদান করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

নওগাঁর পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিন বলেন, নওগাঁ শহরের যানযট দীর্ঘদিনের সমস্যা। পরিকল্পিত ভাবে এই সমস্যা দূর করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের উদ্যোগে পৌর কর্তৃপক্ষ ও রিকশা মালিক শ্রমিক নেতৃবৃন্দদের সমন্বয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে স্থানীয় বাসিন্দা ও বিভিন্ন ষ্টেক হোল্ডারদের পরামর্শ নিয়ে একটি কর্ম পরিকল্পনা গ্রহক করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, অভিযান সফল ভাবে বাস্তবায়ন হলে শহরে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। জনগন এর সুফল পাবেন। সকলকে এই কার্যক্রমে সহযোগিতা প্রদানের আহবান জানান তিনি।

Header Ad

২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচন হতে পারে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত

বক্তব্য রাখছেন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে ২০২৬ সালের মাঝামাঝি নির্বাচন হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ অন্তর্বর্তী সরকারের নৌ পরিবহন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ডক্টর এম সাখাওয়াত হোসেন।

সম্প্রতি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব লর্ডসে মানবাধিকার সংগঠন ‘ভয়েস ফর বাংলাদেশ’ আয়োজিত সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

‘ডিসকাশন অন ডেমোক্রেটিক কলাপ্স অ্যান্ড রিবিল্ডিং অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই সম্মেলনে হাউস অব লর্ডসের সিনিয়র সদস্য আলেক্সান্ডার চার্লস কার্লাইল কিউসি সভাপতিত্ব করেন। ভয়েস ফর বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্রডকাস্টার আতাউল্লাহ ফারুকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এম সাখাওয়াত হোসেন।

সম্মেলেনে সাবেক ব্রিটিশ মন্ত্রী পল স্কালি বলেন, বাংলাদেশে যে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে, তার সঠিক তদন্ত শেষে যথাযথ বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে করে এ ধরনের ঘটনার পুররাবৃত্তি না হয়।

লর্ড হোসাইন বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সব সংস্কার এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে সব ধরনের সহায়তা পাবে।

সম্মেলনে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান লেবার দলীয় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি রুপা হক।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা
নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু
২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচন হতে পারে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত
সেনাকুঞ্জে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে খালেদা জিয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ৫ জনকে রোবটিক হাত উপহার
সেনাকুঞ্জের পথে খালেদা জিয়া
সুযোগ পেলে শেখ হাসিনার পক্ষে মামলায় লড়ব: জেড আই খান পান্না
নির্বাচন কমিশন গঠন, সিইসি হলেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব নাসির উদ্দীন
ডিএনএ টেস্টের ফলাফল: ভিনিসিয়ুসের পূর্বপুরুষ ছিলেন ক্যামেরুনের
জামিন পেলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান
বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে আসা সেই শাহজাহান ওমর গ্রেপ্তার
মিরপুর ও মহাখালীতে অটোরিকশা চালকদের সেনাবাহিনীর ধাওয়া
‘শেখ হাসিনা এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’, এমন কথা বলেননি ট্রাম্প
লেবাননে ৮ শতাধিক ইসরায়েলি সেনা নিহত
ভারতে সাজাভোগ শেষে দেশে ফিরল ২৪ বাংলাদেশি কিশোর-কিশোরী
ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে অবরোধ করে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের বিক্ষোভ
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ৮৮ ফিলিস্তিনি নিহত
সাবেক এমপি শাহজাহান ওমরের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর
১২ বছর পর সেনাকুঞ্জে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া
ধামরাইয়ে শ্রমিকবাহী বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ৪