শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | ৬ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-২০

নেই দেশের নাগরিক

‘খিদে নেই বললেই হল, সেই কোন সাতসকালে একগাল মুড়ি খেয়েছেন, সারাদিন পেটে কিচ্ছুটি পড়েনি! পেটে দানাপানি না পড়লে কী করে শ্বাস নেবেন?’ পাশ থেকে বলল আরিফা। সে একটা ছোট্ট থালাতে দুমুঠো জাওভাত নিয়ে কুঁজো হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
‘এমনি করে হবে না। জোর করে একগাল খাইয়ে দাও।’ বলল নুহু। মতি বাপটার দিকে কাতর দৃষ্টিতে তাকাল। মুখে কিচ্ছু বলল না। মনে মনে বলল, রিজিক থাকলে ঠিক খাবে।
‘দেখি, একটু খাড়া হয়ে উঠ তো।’ দু’হাত দিয়ে ঠেসা মারলেন হালেমা। আরিফা হাতের থালাটা পাশে রেখে, শশুরের হাতদুটো ধরে ছইয়ের চালায় হেলান দিয়ে বসিয়ে দিল। পিঠে দিয়ে দিল একটা বালিশ।
‘নাও, বৌমা, এবার একগাল খাইয়ে দাও।’ বললেন হালেমা। তিনি জাফরের মুখটা তার আঁচল দিয়ে ভালো করে মুছিয়ে দিলেন।

‘খা-আ-ব না।’ আবছা করে বললেন জাফর। তার এতিম চোখে দুনিয়ার মায়া ফ্যাকাসে হয়ে উঠছে। একবার মিহি করে চোখ নামিয়ে দেখলেন নদীটাকে। থক করে উঠল তার ভেতর। ভেতরের নদী উছাল মারল জড়ানো চোখে।

‘মুখটা হাঁ কর তো দেখি।’ বলেই ঠোঁট দুটো ধরে দুই কলসা ফাঁক করলেন হালেমা, আরিফাকে বললেন, ‘দাও, বৌমা, এবার খাইয়ে দাও।’ আরিফা জাওভাতের একটা ছোট্ট দলা পাকিয়ে শশুরের মুখে পুরে দিল। ফোকলা গালে চিবোতে লাগলেন অশক্ত জাফর। কিছুক্ষণ চিবোতেই আরিফা জলের গিলাসটা মুখের কাছে ধরল। কুক কুক করে জল গিললেন জাফর। দুবারের পর আর তৃতীয়বার কোনমতেই মুখে দেওয়া গেল না। মুখ কব্জার মতো এঁটে থাকলেন। হালেমা বললেন, ‘থাক, দু গাল তো খেল।’ আঁচল দিয়ে এঁটো মুখটা ভালো করে মুছিয়ে দিলেন। তারপর আবারও পিঠে হাত দিয়ে কাত করে শুইয়ে দিলেন বিছানায়। জাফরের রোগা চামটা শরীরটা এলিয়ে গেল। অন্ধকার তখন ছইয়ের বাইরে থেকে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছে। দরজা আটকে দাঁড়িয়ে আছে কুপির আলো। আলো-ছায়ায় ঘুরঘুর করছে রাতের ঘুম। সেও হন্যে হয়ে খুঁজছে জেগে থাকা চোখ। ফুরসত পেলেই নামিয়ে নেবে চোখের পাতা। চোখ কেবলই ঢুলু ঢুলু করতে লেগেছে, অমনি একটা চাপা গুঞ্জন ভেসে এল। চিৎকার চেঁচামেচির একটা হুল্লোর।
গুঞ্জনটা নয়াপাড়া থেকে ভেসে আসছে। কিছু একটা হুলুস্থুল বেঁধেছে নিশ্চয়, ভাবল মতি। ভারি চোখদুটো আলসেমি করে তুলল। নৌকোর পাটাতনে উপুড় হয়ে শুইয়ে আছে সে। টিপটিপ করে জ্বলছে আলোর পর আলো। একটা নৌকোর লেজের সঙ্গে আরেকটা নৌকোর মাথা জুড়ে আছে। পাশে কানায় কানা লেগেও ভেসে আছে অজস্র নৌকো। যেন মনে হচ্ছে এক একটা কালো মোষ পিঠের কুঁজ তুলে দাঁড়িয়ে আছে। নৌকোতে ছয়লাপ নয়াপাড়া ঘাট। আজ গতরাতের মতো অত অন্ধকার নেই। পুব আকাশে কাস্তের মতো ফালি চাঁদ উঠেছে। সেই রূপোলী চাঁদ থেকে নেমে আসছে চিকন আলো। থিনথিনে হলুদ জ্যোৎস্না। নদীর কুলকুল জল সে জ্যোৎস্না গায়ে মেখে খৈএর মতো ফুটছে। চোখটা ঘুলিয়ে আসতেই কখন যে চাঁদটা ফুটেছে, টেরই পায়নি মতি। ‘ঘড়’ ‘ঘড়’ করে নাক ডাকছে নুহু। বৈঠা হাতে করেই ঘুমে ঢুলে পড়েছে সে। টানা তিনদিনের ধকল শরীরটাকে একেবারে কাদা করে দিয়েছে। জ্যোৎস্না তার হাড়গিলে চামটা শরীর গলে সুড়সুড় করে নেমে যাচ্ছে নদীতে। হাওয়ার ধাক্কা লাগায় গুঞ্জনটা আরও বেগ পেল। কী যে হচ্ছে, এতদূরে আছি, কিচ্ছু বুঝতেও পারছি না!

আনচান করে উঠল মতি। বলতে বলতে ‘ধড়াম’ করে একটা বিকট শব্দ হল! তড়াক করে উঠে বসল মতি। জ্যোৎস্নার আলোতে চোখ ফেড়ে তাকাল নয়াপাড়ার দিকে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই, আবারও ‘ধড়াম’ শব্দটা কানে এল! এতক্ষণে বুঝল মতি, এ গুলির শব্দ! ভয়ে বুকের হাড় কেঁপে উঠল তার। কী ব্যাপার! কীসের হট্টগোল! এই সন্ধ্যা রাতে হঠাৎ গুলি ছুটছে কেন! নুহুকে কি ডাকব? না, থাক, ব্যাচারি জানভরে ঘুমোচ্ছে। তাহলে, ইয়াসিন মাস্টার? হ্যাঁ, মাস্টারকেই ডাকা যাক। তারা আবার ঘুমিয়ে পড়েনি তো? আমার হাঁকডাকে বাকিদের ঘুম ভেঙে গেলে, গালমন্দ করবে না তো? একে তো ক-দিন থেকে চোখে ঘুম নেই। মাথার ঘেলু পোকার মতো কাটতে থাকে মতির। কী করবে, ভেবে উঠতে পারে না। পাশের নৌকোটার লোকগুলোও ঘুমিয়ে কাদা। তারপাশের নৌকোটাতেও কোন আলো জ্বলছে না। অন্ধকার আর ঘুম একসঙ্গে নৌকোগুলোয় ঢুকে পড়েছে। অন্ধকার আর ঘুম একসঙ্গে জোড় বেঁধে যে মানুষকে গিলে নেয়, সে মানুষের ঘুম ঢোল পিটলেও ভাঙতে চায় না। মতি মহা ফ্যাসাদে পড়ে গেল। চাপা গুঞ্জনটা আবারও স্রোত ঠেলে কানে বাজল। তার কান যেন এখন ফুঁসে ওঠা সমুদ্রের তটভূমি, একের পর এক গুঞ্জনের ভয়াল স্রোত আছড়ে আছড়ে পড়ছে। ভেঙে দিচ্ছে আরাম-আয়েশের ভাস্কর্য। জানের বেগাত্তায় পালিয়ে বেড়ানো মানুষের আরাম-আয়েশ তো বালির ভাস্কর্যই। একটা ঠুনকো স্রোতেই হুড়মুড় করে ভেঙে যেতে পারে। মতি পাটাতনের ওপর দিয়ে পা টিপে টিপে গিয়ে একেবারে মটকায় জিরাফের মতো গলা তুলে তাকাল। নাহ, কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না! নয়াপাড়ার বড়বড় ল্যাম্পপোস্টের হলুদ আলোগুলো ঠিকরে পড়ছে পাড়ে, এটুকুই প্রতিভাত হচ্ছে মাত্র। আলো যেখানে ঠিকরে পড়ছে, সে জায়গাটা নৌকোর সারিতে আটকা পড়ে যাচ্ছে। কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। মতি এবার চোখ ফেড়ে তাকাল, তাকিয়েই তার ভেতরটা থক করে উঠল, একদলা সাদা ধোঁয়া কুন্ডলি পাকিয়ে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় কিলবিল করে উপরে উঠছে! যা ভাবছি, তাই! এ তো কার্তুজের ধোঁয়া! শুকনো ঢোক গিলল মতি। তবে কি বিজিবি ধরে নিয়ে গিয়ে গুলি করছে! না, চুরি করে বাংলাদেশে ঢুকছিল, এই অজুহাতে রোহিঙ্গাদের কতুল করছে!

‘এত গুলির শব্দ কেন!’ ঘুম ভেঙে উঠে পড়েছেন ইয়াসিন মাস্টার। ইয়াসিন মাস্টারকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, মতি চোখ বড় করে বলল, ‘আর রেহাই নেই মনে হচ্ছে মাস্টার, এবার বিজিবিও রোহিঙ্গাদের ধরে ধরে গুলি করছে!’

‘সেটা তো না হতেও পারে। হয়ত এটা ওদের রুটিন প্র্যাক্টিস। বার্মা সেনাদের কাছে তাদের উপস্থিতি জানান দেওয়াও তো হতে পারে? এখন তো শোনা যাচ্ছে, বার্মা সেনারা গোপনে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের এইসব রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ল্যান্ডমাইন পুঁতে আসছে! বাংলাদেশ সরকার সে অভিযোগ রাষ্ট্রসংঘে করেছে। হয়ত এরকম কিছুর আভাস পেয়েছে বিজিবি। আর সেসব ফন্দিফেউর বানচাল করতেই হয়ত গুলি ছুটাচ্ছে।’ চিকন জ্যোৎস্নার মিহি অন্ধকার ফুঁড়ে কথাগুলো ভেসে এল মতির কানে। মতি বলল, ‘সেসব যে হবে না, তা নয়, হতেও পারে। কিন্তু হৈচৈ হচ্ছে কেন?’
‘সেটা তো ভুল কিছু বলেননি। তাই তো! এত গুঞ্জন কেন!’ ইয়াসিন মাস্টারের চোখ বড় হয়ে উঠল। মতি বলল, ‘আমার মন বলছে, বড় কিছু একটা ক্যাচাল বেঁধেছে!’
‘চলুন, কিছুটা এগিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি আঁচ করে আসি।’ খাড়া হয়ে দাঁড়ালেন ইয়াসিন মাস্টার। মতি ভ্রূ টান করে বলল, ‘কিন্তু কীভাবে যাব? নৌকো তো এগোনো যাবে না!’
“নৌকো কেন? আমরা একলা যাব। আমার কাছে দুটো সেফটিজ্যাকেট আছে। সেগুলো পরে সাঁতার কেটে যাব।’

‘তা হলে তো খুব ভালো হয়। ব্যাপারটা দেখে আসাই ভালো, হাবভাব মতিগতি টের পাওয়া যাবে। সেরকম হলে এখান থেকে নৌকো ঘুরিয়ে আগেভাগে চট করে পালাতে পারব।’

‘এই নিন।’ ইয়াসিন মাস্টার একটা লালরঙের সেফটিজ্যাকেট মতির দিকে ছুড়ে দিল। খপ করে ধরে নিল মতি। আর সাতপাঁচ না ভেবে টপাটপ গায়ে গলিয়ে নিল। ইয়াসিন মাস্টারও প্রস্তুত। মতির মাথায় একটা প্রশ্ন সেই কখন থেকে ঘুরপাক খাচ্ছে, উনি মাস্টার মানুষ, সাঁতরে যেতে পারবেন তো! প্রশ্নটা এবার করেই ফেলল মতি, ‘আপনি অতদূর সাঁতরে যেতে আসতে পারবেন তো? সেরকম হলে, না হয় আমি একাই গিয়ে দেখে আসছি।’

‘আরে না না, তা কেন যাবেন। এইটুকু সাঁতার কাটা কোন ব্যাপার নয়। আমার অভ্যেস আছে। আরে নদীর পাড়ের মানুষ সাঁতার জানব না, তাই কি হয়? আর জীবনে যে একবার সাঁতার শেখে, সে কখনও ভুলে না। আমার আব্বাও একসময় নদীতে মাছ ধরতেন। সাঁতার আমাদের রক্তে।’ ঝপাং করে নদীতে ঝাঁপ মারলেন ইয়াসিন মাস্টার। মতিও লুঙ্গি নেংটি মেরে ‘ঝপাং’ করে লাফ মারল। দুজনের লাফ মারার শব্দে আবুলের পাতলা ঘুম ভেঙে গেল। থড়বড় করে উঠে ব্যাপারস্যাপার দেখে তার তো আকাশ থেকে পড়ার অবস্থা। চোখ দল্লাতে দল্লাতে বলল, ‘আপনি কোথায় যাচ্ছেন মাস্টারভাই!’

‘পাড়ে কিছু একটা গণ্ডগোল পেকেছে, আমরা একটু কিছু দূর গিয়ে দেখে আসি, তোরা নৌকোতেই থাক, কোত্থাও যাস না।’ ইয়াসিন মাস্টারের কথা শুনে কান খাড়া করল আবুল। দূর পাড়ের কিছু শোনার চেষ্টা করল। ঠোঁট নড়িয়ে বলল, ‘হ্যাঁ, তাই তো, একটা চাপা গুঞ্জন ভেসে আসছে!’ তারপর ইয়াসিন মাস্টারের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কিন্তু, আপনি যাচ্ছেন কেন? আমিই দেখে আসতাম। আপনি উঠে আসুন, আমি যাচ্ছি।’ খাড়া হয়ে দাঁড়াল আবুল।

‘তোকে আর যেতে হবে না, আমি যখন পানিতে নেমেই পড়েছি, আমিই যাচ্ছি, তাছাড়া আমি তো একা যাচ্ছি না, আমার সঙ্গে মতিভাইও যাচ্ছেন। তুই কাউকে কিচ্ছু বলিস ন্যা, যে যা ঘুমোচ্ছে ঘুমোক।’ নদীতে মুখ তুলে ফিসফিস করে বললেন ইয়াসিন মাস্টার।

‘ঠিক আছে, কিন্তু বেশি দূর যাবেন না। রাতের নদীতে কুমির থাকে। সাবধানে যাবেন।’ আবুলের দুরুদুরু কণ্ঠ। বৈঠাটা হাতে নিয়ে খাড়া হয়ে দাঁড়ায়। ভেতরটা তার ধুকপুক করছে। আলো-আঁধারে ঘুমের আবেশ মিশে থাকা চোখগুলো পিটপিট করছে।
উপুড় হয়ে গলা চুবড়িয়ে সাঁতার কাটতে থাকে মতি আর ইয়াসিন মাস্টার। মতি সামনে, ইয়াসিন মাস্টার পেছনে পেছনে। ঠান্ডা কালহা জল। জলের ঢেউ মুখে ঠক্কর দিতেই, নুনতা স্বাদ পেল জিভ। বুক সাঁতার কেটে সামনে এগোতে লাগল তারা। ইয়াসিন মাস্টার একবার বুক-সাঁতার একবার প্রজাপতি-সাঁতার কেটে এগোচ্ছেন। মতি একনাগাড়ে বুক-সাঁতার কেটেই চলছে। উপুড় হয়ে বুক জলের ওপর রেখে দু’হাত একসঙ্গে মাথা বরাবর জলের ভেতর দিয়ে সামনে নিয়ে দু’হাতের তালুতে জল আটকিয়ে পেছন দিকে টেনে এবং দু’পা হাঁটু বরাবর ভাঁজ করে ব্যাঙের মতো দু’পায়ের পাতা দিয়ে পেছনে লাথি মেরে শরীর সামনের দিকে এগিয়ে হুশ হুশ করে চলতে থাকল। মতি ইয়াসিন মাস্টারের চেয়ে সামনে অনেকটা এগিয়ে গেল। মতিকে পেরে উঠছেন না ইয়াসিন মাস্টার।

কালো জল ছলাৎ ছলাৎ করে শব্দ কামড় দিয়ে উঠছে। বেশ কিছুটা সামনে এগিয়ে গিয়ে মতি থামল। ঘুত ঘুত করে শ্বাস পড়ছে। পেছনে তাকিয়ে মিহি করে বলল, “এলে গেছেন নাকি মাস্টার?’

 

‘না না, থামলেন কেন? চলুন চলুন।“ কন্ঠে দোম লাগিয়ে বললেন ইয়াসিন মাস্টার। ঘুত ঘুত করে বলদের মতো হাঁপাচ্ছেন। আসলে তিনি এলে গেছেন। সাঁতার যতই রক্তে থাক, দোম বাড়াতে গেলে তো অভ্যাস দরকার। সে অভ্যাস তো তাঁর নেই। ফলে কিছুটা গিয়েই এলে ভূতি। কিন্তু বুদ্ধিমান ইয়াসিন মাস্টার সেসব মতিকে না বুঝতে দেওয়ার চেষ্টা করলেন। মতি ইয়াসিন মাস্টারের হাল দেখে, আস্তে আস্তে এগোতে থাকে। সে বুঝে গেছে, মাস্টার যতই না এলিয়ে যাওয়ার ভাব করুন, তার চোখমুখ বলছে ভেতর এলে কাহিল। নদীর পুরো পশ্চিমপাড় লাগোয়া সারি সারি নৌকো। নানান কিসিমের নৌকো। কোনো কোনো নৌকোর দুই প্রান্ত সরু হয়ে ধনুকের মতো বেঁকিয়ে আসমানে উঠে গেছে! কোনো কোনো নৌকোর দুইপ্রান্ত আবার পাখির লেজের মতো ঝাকড়া আবার কোনো কোনো প্রান্ত পাখির ঠোঁটের মতো সরু। একজায়গাতে এসে থমকে দাঁড়াল মতি। নৌকোর খোল নয়, বাঁশের একটা বড়সড় মাচান দড়ি দিয়ে সেলাই হয়ে ভাসছে! মাচানটা অর্ধনিমজ্জিত! নদীর জল মাচানটার নাক পর্যন্ত উঠে ছলছল করছে। আর তাতে কুকুর-শেয়ালের মতো জড়সড় হয়ে পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছে প্রায় অর্ধশত মানুষ! তাদের সবারই শরীর ভেজা। পরনের কাপড়চোপড় ভিজে জুবুথুবু। এদিকে ওদিকে ইতস্তত পড়ে রয়েছে মুখ বাঁধা বস্তা। বস্তা আর মানুষকে আলাদা করা মুশকিল। চাঁদের চিকন আলোয় সবগুলোকেই মনে হচ্ছে লাশ। মাচান-নৌকোর কিণারা ধরে কিছুক্ষণ জিরোনোর পর, আবারও সাঁতার লাগাল মতি।

এবার প্রজাপতি সাঁতার কাটতে লাগল সে। একটা ডিঙি নৌকোর কাছে এসে পেছন থেকে ফ্যাসফেসে গলায় ডেকে উঠলেন ইয়াসিন মাস্টার, ‘মতিভাই, আমার পক্ষে আর এগোনো সম্ভব নয়। হাত-পা এলে যাচ্ছে।’ ঘুত ঘুত করে হাঁপাচ্ছেন ইয়াসিন মাস্টার। ডিঙি নৌকোটোর কিণারা খামচে ধরে ঝুল খেতে লাগলেন। হলবল করে নড়ে উঠল ডিঙি নৌকোটা। নৌকোর ভেতর থেকে কে একজন চমকে উঠল, ‘কে! কে এখানে?’ ঢ্যাসঢেসে গলা। লোকটি মনে হয় ঘুমোচ্ছিল। ইয়াসিন মাস্টারের নড়াচড়া করাতে তার ঘুম ভেঙে গেল।

চলবে...

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১৯

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১৮

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১৭

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১৬

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১৫

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১৪

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব ১৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১১

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৯

 

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৬

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৫

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১

 

 

 

Header Ad
Header Ad

দিনাজপুরের বিরামপুর থানায় ওপেন হাউস ডে অনুষ্ঠিত

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

"শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা, প্রগতি"—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে দিনাজপুরের বিরামপুর থানায় অনুষ্ঠিত হয়েছে ওপেন হাউস ডে।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিরামপুর থানা চত্বরে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মমতাজুল হক। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন দিনাজপুর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফত হুসাইন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুজহাত তাসনিম আওন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম, ড. মুহাদ্দিস এনামুল হক, বিএনপির বিরামপুর উপজেলা শাখার সভাপতি মিঞা শফিকুল ইসলাম মামুন, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজু, উপজেলা আমির হাফিজুল ইসলাম, যুবদলের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শিরণ আলম, ইঞ্জিনিয়ার শাহিনুর ইসলামসহ বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য, স্থানীয় শিক্ষক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।

পুলিশ সুপার মারুফত হুসাইন তার বক্তব্যে বলেন, “প্রথমে আমি আমার পুলিশকে ঠিক করেছি। এখন আমাদের সামনের দিনগুলো ভালো প্রত্যাশা চাই। আমরা আমাদের সমাজে আর কোনো অপরাধ করতে দেব না এবং এই জেলাকে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও মাদকমুক্ত করব ইনশাল্লাহ।”

তিনি আরও বলেন, পুলিশের সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা এবং সহযোগিতাই পারে সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূল করতে। তাই সবাইকে আরও সচেতন ও সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

Header Ad
Header Ad

পাকিস্তানের বিপক্ষে বড় হার, শঙ্কায় বাংলাদেশের নারী বিশ্বকাপ স্বপ্ন

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের শুরুতে দুর্বল প্রতিপক্ষদের বিপক্ষে টানা তিন জয়ে শীর্ষে ছিল নিগার সুলতানা জ্যোতির নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। তবে শক্ত প্রতিপক্ষের মুখে পড়ে একের পর এক হারে এখন অনিশ্চয়তায় পড়েছে তাদের বিশ্বকাপ স্বপ্ন। প্রথমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৩ উইকেটে হারের পর শনিবার (১৯ এপ্রিল) লাহোরে পাকিস্তানের কাছে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরে বসেছে বাংলাদেশ।

টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। মাত্র ২১ রানের মধ্যেই ফিরেছেন তিন ব্যাটার—ফারজানা হক (০), দিলারা আক্তার (১৩) ও অধিনায়ক নিগার সুলতানা (১)। এরপর শারমিন আক্তার ও রিতু মনির ৪৪ রানের জুটি এবং রিতু ও নাহিদা আক্তারের ৪৭ রানের জুটি কিছুটা স্থিতি আনলেও তা বড় সংগ্রহ গড়তে পারেনি। রিতু মনি করেন ৪৭ রান, আর ফাহিমা খাতুন অপরাজিত থাকেন ৪৪ রানে। ৫০ ওভারে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ৯ উইকেটে ১৭৮ রান। পাকিস্তানের সাদিয়া ইকবাল ২৮ রানে ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ ধসিয়ে দেন।

 

ছবি: সংগৃহীত

জবাবে পাকিস্তানও শুরুতেই শাওয়াল জুলফিকারকে হারায়, যাকে এলবিডব্লিউ করেন মারুফা আক্তার। তবে এরপর সিদরা আমিন (৩৭), মুনিবা আলি (৬৯), আলিয়া রিয়াজ (৪৮*) এবং নাতালিয়া পারভেজ (১৩*) মিলে ৩৯.৪ ওভারে জয় তুলে নেয় পাকিস্তান।

এই হারের ফলে বাংলাদেশের নেট রানরেট নেমে এসেছে +০.৬৪-এ। অন্যদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের নেট রানরেট এখন -০.২৮। ফলে এখন বাংলাদেশকে তাকিয়ে থাকতে হবে থাইল্যান্ড বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের দিকে। ক্যারিবিয়ানরা যদি বড় ব্যবধানে না জেতে, তবেই কেবল বিশ্বকাপে জায়গা করে নেওয়ার সম্ভাবনা থাকবে বাংলাদেশের।

শক্ত প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ব্যর্থতা, ব্যাটিং দুর্বলতা এবং ধারাবাহিকতা না থাকায় কঠিন হয়ে উঠেছে টাইগ্রেসদের বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করা। এখন সব কিছু নির্ভর করছে অন্য দলের পারফরম্যান্সের ওপর, যা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ নারী দলের জন্য উদ্বেগের বিষয়।

Header Ad
Header Ad

ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ জানানো যাবে দুই মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে

ছবি: সংগৃহীত

ঘুষ, দুর্নীতি বা হয়রানির শিকার হলে এখন সরাসরি ই-মেইলে অভিযোগ জানানো যাবে স্থানীয় সরকার ও যুব ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে। অভিযোগকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে এবং যথাযথ প্রমাণসহ অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ঘুষ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরি এবং ব্যবস্থা গ্রহণের অংশ হিসেবে সরাসরি অভিযোগ জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) এক ফেসবুক পোস্টে তিনি জানান, দুই মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ যেকোনো সংস্থা বা দফতরে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ঘুষ চাওয়া, দুর্নীতি, অনিয়ম কিংবা সেবা নিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হলে তা ই-মেইলে জানাতে পারবেন সেবা গ্রহীতারা।

অভিযোগ পাঠানোর ঠিকানা:
advisorasifofficial1@gmail.com

পোস্টে বলা হয়, অভিযোগের সঙ্গে যথাযথ তথ্য ও প্রমাণ সংযুক্ত করলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেকোনো অভিযোগ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হবে এবং অভিযোগকারীর পরিচয় সম্পূর্ণরূপে গোপন রাখা হবে।

"জনস্বার্থে এই উদ্যোগ। ঘুষ, অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়তে সক্রিয় নাগরিক অংশগ্রহণ আমাদের সবচেয়ে বড় প্রেরণা।"

এ উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অনেকে। তারা মনে করছেন, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘব এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এটি একটি সাহসী পদক্ষেপ।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

দিনাজপুরের বিরামপুর থানায় ওপেন হাউস ডে অনুষ্ঠিত
পাকিস্তানের বিপক্ষে বড় হার, শঙ্কায় বাংলাদেশের নারী বিশ্বকাপ স্বপ্ন
ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ জানানো যাবে দুই মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে
টঙ্গীতে দুই শিশুকে বঁটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা, মায়ের স্বীকারোক্তি
টানা ৫ দিন দেশজুড়ে বৃষ্টি, তাপমাত্রা বাড়ার পূর্বাভাস
বাফুফের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা সরফরাজের পদত্যাগ
ভর্তুকি মূল্যে পাটের তৈরি বাজারের ব্যাগ সরবরাহ করা হবে : পরিবেশ উপদেষ্টা
রবিবার সারা দেশে মহাসমাবেশের ঘোষণা পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের
দেশের ইতিহাসে এবারের নির্বাচন সর্বোত্তম হবে: প্রধান উপদেষ্টা
বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে ভারত: রিজভী
ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালই যেন নিজেই অসুস্থ!
জাতীয় পার্টি কোনো সুবিধাবাদী দল নয়: জিএম কাদের
প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে আইসিইউতে পরিচালক সৃজিত মুখার্জি
জুলাই গণঅভ্যুত্থান যেন কোনোভাবেই ব্যর্থ না হয় : নাহিদ ইসলাম
আ.লীগের মিছিল ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নির্দেশ
হাসিনা-কাদেরসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে ‘রেড নোটিশ’ জারির আবেদন
নিখোঁজের ১৪ ঘণ্টা পর সেই শিশু সেহেরিশের লাশ উদ্ধার
আগামী ঈদের আগেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কাজ করছে সরকার
লাল কাপড়ে ঢাকা হবে দেশের সব পলিটেকনিকের ফটক
৬০ বছর বয়সে বিয়ে করলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ