ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-২০
নেই দেশের নাগরিক
‘খিদে নেই বললেই হল, সেই কোন সাতসকালে একগাল মুড়ি খেয়েছেন, সারাদিন পেটে কিচ্ছুটি পড়েনি! পেটে দানাপানি না পড়লে কী করে শ্বাস নেবেন?’ পাশ থেকে বলল আরিফা। সে একটা ছোট্ট থালাতে দুমুঠো জাওভাত নিয়ে কুঁজো হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
‘এমনি করে হবে না। জোর করে একগাল খাইয়ে দাও।’ বলল নুহু। মতি বাপটার দিকে কাতর দৃষ্টিতে তাকাল। মুখে কিচ্ছু বলল না। মনে মনে বলল, রিজিক থাকলে ঠিক খাবে।
‘দেখি, একটু খাড়া হয়ে উঠ তো।’ দু’হাত দিয়ে ঠেসা মারলেন হালেমা। আরিফা হাতের থালাটা পাশে রেখে, শশুরের হাতদুটো ধরে ছইয়ের চালায় হেলান দিয়ে বসিয়ে দিল। পিঠে দিয়ে দিল একটা বালিশ।
‘নাও, বৌমা, এবার একগাল খাইয়ে দাও।’ বললেন হালেমা। তিনি জাফরের মুখটা তার আঁচল দিয়ে ভালো করে মুছিয়ে দিলেন।
‘খা-আ-ব না।’ আবছা করে বললেন জাফর। তার এতিম চোখে দুনিয়ার মায়া ফ্যাকাসে হয়ে উঠছে। একবার মিহি করে চোখ নামিয়ে দেখলেন নদীটাকে। থক করে উঠল তার ভেতর। ভেতরের নদী উছাল মারল জড়ানো চোখে।
‘মুখটা হাঁ কর তো দেখি।’ বলেই ঠোঁট দুটো ধরে দুই কলসা ফাঁক করলেন হালেমা, আরিফাকে বললেন, ‘দাও, বৌমা, এবার খাইয়ে দাও।’ আরিফা জাওভাতের একটা ছোট্ট দলা পাকিয়ে শশুরের মুখে পুরে দিল। ফোকলা গালে চিবোতে লাগলেন অশক্ত জাফর। কিছুক্ষণ চিবোতেই আরিফা জলের গিলাসটা মুখের কাছে ধরল। কুক কুক করে জল গিললেন জাফর। দুবারের পর আর তৃতীয়বার কোনমতেই মুখে দেওয়া গেল না। মুখ কব্জার মতো এঁটে থাকলেন। হালেমা বললেন, ‘থাক, দু গাল তো খেল।’ আঁচল দিয়ে এঁটো মুখটা ভালো করে মুছিয়ে দিলেন। তারপর আবারও পিঠে হাত দিয়ে কাত করে শুইয়ে দিলেন বিছানায়। জাফরের রোগা চামটা শরীরটা এলিয়ে গেল। অন্ধকার তখন ছইয়ের বাইরে থেকে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছে। দরজা আটকে দাঁড়িয়ে আছে কুপির আলো। আলো-ছায়ায় ঘুরঘুর করছে রাতের ঘুম। সেও হন্যে হয়ে খুঁজছে জেগে থাকা চোখ। ফুরসত পেলেই নামিয়ে নেবে চোখের পাতা। চোখ কেবলই ঢুলু ঢুলু করতে লেগেছে, অমনি একটা চাপা গুঞ্জন ভেসে এল। চিৎকার চেঁচামেচির একটা হুল্লোর।
গুঞ্জনটা নয়াপাড়া থেকে ভেসে আসছে। কিছু একটা হুলুস্থুল বেঁধেছে নিশ্চয়, ভাবল মতি। ভারি চোখদুটো আলসেমি করে তুলল। নৌকোর পাটাতনে উপুড় হয়ে শুইয়ে আছে সে। টিপটিপ করে জ্বলছে আলোর পর আলো। একটা নৌকোর লেজের সঙ্গে আরেকটা নৌকোর মাথা জুড়ে আছে। পাশে কানায় কানা লেগেও ভেসে আছে অজস্র নৌকো। যেন মনে হচ্ছে এক একটা কালো মোষ পিঠের কুঁজ তুলে দাঁড়িয়ে আছে। নৌকোতে ছয়লাপ নয়াপাড়া ঘাট। আজ গতরাতের মতো অত অন্ধকার নেই। পুব আকাশে কাস্তের মতো ফালি চাঁদ উঠেছে। সেই রূপোলী চাঁদ থেকে নেমে আসছে চিকন আলো। থিনথিনে হলুদ জ্যোৎস্না। নদীর কুলকুল জল সে জ্যোৎস্না গায়ে মেখে খৈএর মতো ফুটছে। চোখটা ঘুলিয়ে আসতেই কখন যে চাঁদটা ফুটেছে, টেরই পায়নি মতি। ‘ঘড়’ ‘ঘড়’ করে নাক ডাকছে নুহু। বৈঠা হাতে করেই ঘুমে ঢুলে পড়েছে সে। টানা তিনদিনের ধকল শরীরটাকে একেবারে কাদা করে দিয়েছে। জ্যোৎস্না তার হাড়গিলে চামটা শরীর গলে সুড়সুড় করে নেমে যাচ্ছে নদীতে। হাওয়ার ধাক্কা লাগায় গুঞ্জনটা আরও বেগ পেল। কী যে হচ্ছে, এতদূরে আছি, কিচ্ছু বুঝতেও পারছি না!
আনচান করে উঠল মতি। বলতে বলতে ‘ধড়াম’ করে একটা বিকট শব্দ হল! তড়াক করে উঠে বসল মতি। জ্যোৎস্নার আলোতে চোখ ফেড়ে তাকাল নয়াপাড়ার দিকে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই, আবারও ‘ধড়াম’ শব্দটা কানে এল! এতক্ষণে বুঝল মতি, এ গুলির শব্দ! ভয়ে বুকের হাড় কেঁপে উঠল তার। কী ব্যাপার! কীসের হট্টগোল! এই সন্ধ্যা রাতে হঠাৎ গুলি ছুটছে কেন! নুহুকে কি ডাকব? না, থাক, ব্যাচারি জানভরে ঘুমোচ্ছে। তাহলে, ইয়াসিন মাস্টার? হ্যাঁ, মাস্টারকেই ডাকা যাক। তারা আবার ঘুমিয়ে পড়েনি তো? আমার হাঁকডাকে বাকিদের ঘুম ভেঙে গেলে, গালমন্দ করবে না তো? একে তো ক-দিন থেকে চোখে ঘুম নেই। মাথার ঘেলু পোকার মতো কাটতে থাকে মতির। কী করবে, ভেবে উঠতে পারে না। পাশের নৌকোটার লোকগুলোও ঘুমিয়ে কাদা। তারপাশের নৌকোটাতেও কোন আলো জ্বলছে না। অন্ধকার আর ঘুম একসঙ্গে নৌকোগুলোয় ঢুকে পড়েছে। অন্ধকার আর ঘুম একসঙ্গে জোড় বেঁধে যে মানুষকে গিলে নেয়, সে মানুষের ঘুম ঢোল পিটলেও ভাঙতে চায় না। মতি মহা ফ্যাসাদে পড়ে গেল। চাপা গুঞ্জনটা আবারও স্রোত ঠেলে কানে বাজল। তার কান যেন এখন ফুঁসে ওঠা সমুদ্রের তটভূমি, একের পর এক গুঞ্জনের ভয়াল স্রোত আছড়ে আছড়ে পড়ছে। ভেঙে দিচ্ছে আরাম-আয়েশের ভাস্কর্য। জানের বেগাত্তায় পালিয়ে বেড়ানো মানুষের আরাম-আয়েশ তো বালির ভাস্কর্যই। একটা ঠুনকো স্রোতেই হুড়মুড় করে ভেঙে যেতে পারে। মতি পাটাতনের ওপর দিয়ে পা টিপে টিপে গিয়ে একেবারে মটকায় জিরাফের মতো গলা তুলে তাকাল। নাহ, কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না! নয়াপাড়ার বড়বড় ল্যাম্পপোস্টের হলুদ আলোগুলো ঠিকরে পড়ছে পাড়ে, এটুকুই প্রতিভাত হচ্ছে মাত্র। আলো যেখানে ঠিকরে পড়ছে, সে জায়গাটা নৌকোর সারিতে আটকা পড়ে যাচ্ছে। কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। মতি এবার চোখ ফেড়ে তাকাল, তাকিয়েই তার ভেতরটা থক করে উঠল, একদলা সাদা ধোঁয়া কুন্ডলি পাকিয়ে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় কিলবিল করে উপরে উঠছে! যা ভাবছি, তাই! এ তো কার্তুজের ধোঁয়া! শুকনো ঢোক গিলল মতি। তবে কি বিজিবি ধরে নিয়ে গিয়ে গুলি করছে! না, চুরি করে বাংলাদেশে ঢুকছিল, এই অজুহাতে রোহিঙ্গাদের কতুল করছে!
‘এত গুলির শব্দ কেন!’ ঘুম ভেঙে উঠে পড়েছেন ইয়াসিন মাস্টার। ইয়াসিন মাস্টারকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, মতি চোখ বড় করে বলল, ‘আর রেহাই নেই মনে হচ্ছে মাস্টার, এবার বিজিবিও রোহিঙ্গাদের ধরে ধরে গুলি করছে!’
‘সেটা তো না হতেও পারে। হয়ত এটা ওদের রুটিন প্র্যাক্টিস। বার্মা সেনাদের কাছে তাদের উপস্থিতি জানান দেওয়াও তো হতে পারে? এখন তো শোনা যাচ্ছে, বার্মা সেনারা গোপনে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের এইসব রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ল্যান্ডমাইন পুঁতে আসছে! বাংলাদেশ সরকার সে অভিযোগ রাষ্ট্রসংঘে করেছে। হয়ত এরকম কিছুর আভাস পেয়েছে বিজিবি। আর সেসব ফন্দিফেউর বানচাল করতেই হয়ত গুলি ছুটাচ্ছে।’ চিকন জ্যোৎস্নার মিহি অন্ধকার ফুঁড়ে কথাগুলো ভেসে এল মতির কানে। মতি বলল, ‘সেসব যে হবে না, তা নয়, হতেও পারে। কিন্তু হৈচৈ হচ্ছে কেন?’
‘সেটা তো ভুল কিছু বলেননি। তাই তো! এত গুঞ্জন কেন!’ ইয়াসিন মাস্টারের চোখ বড় হয়ে উঠল। মতি বলল, ‘আমার মন বলছে, বড় কিছু একটা ক্যাচাল বেঁধেছে!’
‘চলুন, কিছুটা এগিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি আঁচ করে আসি।’ খাড়া হয়ে দাঁড়ালেন ইয়াসিন মাস্টার। মতি ভ্রূ টান করে বলল, ‘কিন্তু কীভাবে যাব? নৌকো তো এগোনো যাবে না!’
“নৌকো কেন? আমরা একলা যাব। আমার কাছে দুটো সেফটিজ্যাকেট আছে। সেগুলো পরে সাঁতার কেটে যাব।’
‘তা হলে তো খুব ভালো হয়। ব্যাপারটা দেখে আসাই ভালো, হাবভাব মতিগতি টের পাওয়া যাবে। সেরকম হলে এখান থেকে নৌকো ঘুরিয়ে আগেভাগে চট করে পালাতে পারব।’
‘এই নিন।’ ইয়াসিন মাস্টার একটা লালরঙের সেফটিজ্যাকেট মতির দিকে ছুড়ে দিল। খপ করে ধরে নিল মতি। আর সাতপাঁচ না ভেবে টপাটপ গায়ে গলিয়ে নিল। ইয়াসিন মাস্টারও প্রস্তুত। মতির মাথায় একটা প্রশ্ন সেই কখন থেকে ঘুরপাক খাচ্ছে, উনি মাস্টার মানুষ, সাঁতরে যেতে পারবেন তো! প্রশ্নটা এবার করেই ফেলল মতি, ‘আপনি অতদূর সাঁতরে যেতে আসতে পারবেন তো? সেরকম হলে, না হয় আমি একাই গিয়ে দেখে আসছি।’
‘আরে না না, তা কেন যাবেন। এইটুকু সাঁতার কাটা কোন ব্যাপার নয়। আমার অভ্যেস আছে। আরে নদীর পাড়ের মানুষ সাঁতার জানব না, তাই কি হয়? আর জীবনে যে একবার সাঁতার শেখে, সে কখনও ভুলে না। আমার আব্বাও একসময় নদীতে মাছ ধরতেন। সাঁতার আমাদের রক্তে।’ ঝপাং করে নদীতে ঝাঁপ মারলেন ইয়াসিন মাস্টার। মতিও লুঙ্গি নেংটি মেরে ‘ঝপাং’ করে লাফ মারল। দুজনের লাফ মারার শব্দে আবুলের পাতলা ঘুম ভেঙে গেল। থড়বড় করে উঠে ব্যাপারস্যাপার দেখে তার তো আকাশ থেকে পড়ার অবস্থা। চোখ দল্লাতে দল্লাতে বলল, ‘আপনি কোথায় যাচ্ছেন মাস্টারভাই!’
‘পাড়ে কিছু একটা গণ্ডগোল পেকেছে, আমরা একটু কিছু দূর গিয়ে দেখে আসি, তোরা নৌকোতেই থাক, কোত্থাও যাস না।’ ইয়াসিন মাস্টারের কথা শুনে কান খাড়া করল আবুল। দূর পাড়ের কিছু শোনার চেষ্টা করল। ঠোঁট নড়িয়ে বলল, ‘হ্যাঁ, তাই তো, একটা চাপা গুঞ্জন ভেসে আসছে!’ তারপর ইয়াসিন মাস্টারের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কিন্তু, আপনি যাচ্ছেন কেন? আমিই দেখে আসতাম। আপনি উঠে আসুন, আমি যাচ্ছি।’ খাড়া হয়ে দাঁড়াল আবুল।
‘তোকে আর যেতে হবে না, আমি যখন পানিতে নেমেই পড়েছি, আমিই যাচ্ছি, তাছাড়া আমি তো একা যাচ্ছি না, আমার সঙ্গে মতিভাইও যাচ্ছেন। তুই কাউকে কিচ্ছু বলিস ন্যা, যে যা ঘুমোচ্ছে ঘুমোক।’ নদীতে মুখ তুলে ফিসফিস করে বললেন ইয়াসিন মাস্টার।
‘ঠিক আছে, কিন্তু বেশি দূর যাবেন না। রাতের নদীতে কুমির থাকে। সাবধানে যাবেন।’ আবুলের দুরুদুরু কণ্ঠ। বৈঠাটা হাতে নিয়ে খাড়া হয়ে দাঁড়ায়। ভেতরটা তার ধুকপুক করছে। আলো-আঁধারে ঘুমের আবেশ মিশে থাকা চোখগুলো পিটপিট করছে।
উপুড় হয়ে গলা চুবড়িয়ে সাঁতার কাটতে থাকে মতি আর ইয়াসিন মাস্টার। মতি সামনে, ইয়াসিন মাস্টার পেছনে পেছনে। ঠান্ডা কালহা জল। জলের ঢেউ মুখে ঠক্কর দিতেই, নুনতা স্বাদ পেল জিভ। বুক সাঁতার কেটে সামনে এগোতে লাগল তারা। ইয়াসিন মাস্টার একবার বুক-সাঁতার একবার প্রজাপতি-সাঁতার কেটে এগোচ্ছেন। মতি একনাগাড়ে বুক-সাঁতার কেটেই চলছে। উপুড় হয়ে বুক জলের ওপর রেখে দু’হাত একসঙ্গে মাথা বরাবর জলের ভেতর দিয়ে সামনে নিয়ে দু’হাতের তালুতে জল আটকিয়ে পেছন দিকে টেনে এবং দু’পা হাঁটু বরাবর ভাঁজ করে ব্যাঙের মতো দু’পায়ের পাতা দিয়ে পেছনে লাথি মেরে শরীর সামনের দিকে এগিয়ে হুশ হুশ করে চলতে থাকল। মতি ইয়াসিন মাস্টারের চেয়ে সামনে অনেকটা এগিয়ে গেল। মতিকে পেরে উঠছেন না ইয়াসিন মাস্টার।
কালো জল ছলাৎ ছলাৎ করে শব্দ কামড় দিয়ে উঠছে। বেশ কিছুটা সামনে এগিয়ে গিয়ে মতি থামল। ঘুত ঘুত করে শ্বাস পড়ছে। পেছনে তাকিয়ে মিহি করে বলল, “এলে গেছেন নাকি মাস্টার?’
‘না না, থামলেন কেন? চলুন চলুন।“ কন্ঠে দোম লাগিয়ে বললেন ইয়াসিন মাস্টার। ঘুত ঘুত করে বলদের মতো হাঁপাচ্ছেন। আসলে তিনি এলে গেছেন। সাঁতার যতই রক্তে থাক, দোম বাড়াতে গেলে তো অভ্যাস দরকার। সে অভ্যাস তো তাঁর নেই। ফলে কিছুটা গিয়েই এলে ভূতি। কিন্তু বুদ্ধিমান ইয়াসিন মাস্টার সেসব মতিকে না বুঝতে দেওয়ার চেষ্টা করলেন। মতি ইয়াসিন মাস্টারের হাল দেখে, আস্তে আস্তে এগোতে থাকে। সে বুঝে গেছে, মাস্টার যতই না এলিয়ে যাওয়ার ভাব করুন, তার চোখমুখ বলছে ভেতর এলে কাহিল। নদীর পুরো পশ্চিমপাড় লাগোয়া সারি সারি নৌকো। নানান কিসিমের নৌকো। কোনো কোনো নৌকোর দুই প্রান্ত সরু হয়ে ধনুকের মতো বেঁকিয়ে আসমানে উঠে গেছে! কোনো কোনো নৌকোর দুইপ্রান্ত আবার পাখির লেজের মতো ঝাকড়া আবার কোনো কোনো প্রান্ত পাখির ঠোঁটের মতো সরু। একজায়গাতে এসে থমকে দাঁড়াল মতি। নৌকোর খোল নয়, বাঁশের একটা বড়সড় মাচান দড়ি দিয়ে সেলাই হয়ে ভাসছে! মাচানটা অর্ধনিমজ্জিত! নদীর জল মাচানটার নাক পর্যন্ত উঠে ছলছল করছে। আর তাতে কুকুর-শেয়ালের মতো জড়সড় হয়ে পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছে প্রায় অর্ধশত মানুষ! তাদের সবারই শরীর ভেজা। পরনের কাপড়চোপড় ভিজে জুবুথুবু। এদিকে ওদিকে ইতস্তত পড়ে রয়েছে মুখ বাঁধা বস্তা। বস্তা আর মানুষকে আলাদা করা মুশকিল। চাঁদের চিকন আলোয় সবগুলোকেই মনে হচ্ছে লাশ। মাচান-নৌকোর কিণারা ধরে কিছুক্ষণ জিরোনোর পর, আবারও সাঁতার লাগাল মতি।
এবার প্রজাপতি সাঁতার কাটতে লাগল সে। একটা ডিঙি নৌকোর কাছে এসে পেছন থেকে ফ্যাসফেসে গলায় ডেকে উঠলেন ইয়াসিন মাস্টার, ‘মতিভাই, আমার পক্ষে আর এগোনো সম্ভব নয়। হাত-পা এলে যাচ্ছে।’ ঘুত ঘুত করে হাঁপাচ্ছেন ইয়াসিন মাস্টার। ডিঙি নৌকোটোর কিণারা খামচে ধরে ঝুল খেতে লাগলেন। হলবল করে নড়ে উঠল ডিঙি নৌকোটা। নৌকোর ভেতর থেকে কে একজন চমকে উঠল, ‘কে! কে এখানে?’ ঢ্যাসঢেসে গলা। লোকটি মনে হয় ঘুমোচ্ছিল। ইয়াসিন মাস্টারের নড়াচড়া করাতে তার ঘুম ভেঙে গেল।
চলবে...
আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>