শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ৯ ফাল্গুন ১৪৩১
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-১৫

নেই দেশের নাগরিক

সাকিব ঘুমিয়ে পড়লে, তার গা’টা আদরের আঁচল দিয়ে ঢেকে দেয়। আরিফা ভাবে, আঁচল দিয়ে আর কতদিন আগলে রাখব? মৃত্যু তো ছো পেতে আছে! যেকোনো সময় ছোবল মারতে পারে। আঁচল কি আর মৃত্যু রুখতে পারে? এ আঁচল কি আর মুসানবীর লাঠি, যে মৃত্যুকে রুখে দেবে? এ আঁচল বড়জোর মাছি তাড়াতে পারে, মশা তাড়াতে পারে, হাওয়া দিয়ে দিতে পারে নিশ্চিন্তির ঘুম।

চোখ মোছে আরিফা। মতি নামাজের শেষ রাকাতের সিজদায় যাওয়ার জন্যে, ঝুঁকে রুকু পড়ছে। নদী আড়মোড়া ভেঙে ঝেরে ফেলছে ঘুমের আবেশ। তার থির বুকে শুইয়ে থাকা অন্ধকার কফির কাপে চুমুক দিয়ে জায়গা ছেড়ে দিচ্ছে ভোরের আলোকে। দূরে দিগন্তে পোঁতা গাছগুলো মিলেমিশে আকাশের দিকে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। ভোর হলেও গাছের লতায়-পাতায় জড়ানো আছে ছোপ ছোপ আঁধার। পুব আকাশ থেকে মিহি মিহি আলো বয়ে নিয়ে আসছে পুবালি হাওয়া। সে আলো-হাওয়াই টাটিয়ে আসছে আরিফার চোখ। ছইয়ের চালায় গোঁজা সুখ একটু একটু করে উবে যাচ্ছে শূন্য থেকে মহাশূন্যে। অথচ কত সুখের সাক্ষী এই ঘাটবাড়ি কৌশা নৌকাটা। বিয়ের আগে কতদিন লুকিয়ে মতির সঙ্গে এই নৌকাটায় নদী বিহার করেছে আরিফা। ছইয়ের ভেতর খেলেছে খুনসুটি। বাঁশের বাতাগুলোকে সেসব কথা জিজ্ঞেস করলে, এখনো লজ্জায় মুখ ঢেকে নেবে। ফিসফিস করে বলবে, ‘শরম লাগে’। একবার তো আরিফা পোয়াতি পেটে আবদার করেই বসল, আমাকে নৌকায় চাপাতেই হবে। সাকিব তখন সাতমাসের ভ্রূণ। মতি কোনোমতেই রাজি হবে না, কিন্তু আরিফা নাছোড়। সে বলে, ‘আমরা হলেম কি জেলে মানুষ, বছরভর নদীতে মাছ ধরে খাই, তুমি হচ্ছ এই পেটে আসা ব্যাটা-বিটির জেলেবাপ, তো পেট থেকে বেরোলে তো সেও মাছ ধরবে নাকি, না থানার দারোগা হবে? জেলের ব্যাটা জেলেই হবে। তাই আগে থেকেই নদীর ঢেউ লাগিয়ে রাখি। যাতে বৈঠা টানতে ভুল না হয়।‘

সেবার হালেমার কাছে খুব বকা খেয়েছিল আরিফা। আচ্ছা ঝাড় খেয়েছিল মতিও। হালেমা তেড়েফুড়ে বলেছিলেন, ‘এ মেয়ের কালেজা তো কম নয়! ভরা পেটে নৌকার দোল খায়! ফুল যখন ঝরে যাবে তখন বুঝবে। নৌকায় পাট খাওয়া বেরোবে।‘ মতিকে একহাত নিয়ে বলেছিলেন, ‘ব্যাটাবিটির বাপ হতে চলেছ, শান হবে কবে? তোর তো দেখছি, চুল পাকলেও বুদ্ধি হবে না! যত বুড়ো হচ্ছিস তত খোকা হচ্ছিস!’ আরিফা বা মতি কেউই কোন রা করেনি। আরিফা দাওয়ার খুঁটিটার কাছে মাথায় ঘোমটা টেনে মুখ নিচু করে শুনছিল। তারপর হালেমা হেঁসেলে ঢুকে গেলে, আরিফা মুখের ঘোমটাটা আলতো করে টেনে মতির চোখে চোখ ফেলে ফিক করে হেসেছিল। মতি আশপাশ জরিপ করে, দূর থেকে একটা আদরের ঘুষি চুখিয়ে ছিল।

মতির নামাজ প্রায় শেষের দিকে। সালাম ফিরে হাতের আঙুলে তসবিহ গুনছে। ভোরের চিকন আলো উড়ে এসে বসছে তার ঘাড়ে। সালাম জানাচ্ছে নতুন দিন। ফেজ টুপির ওপরে মুক্ত নীলাকাশ। শূন্যের রাজপাট। অসীম অনন্ত শূন্যকে আঁকড়ে আছে আলো-আঁধারি। আসমান ছুঁয়ে নেমে আসছে আরও একটা সকাল। আরও একটা দিন। হালেমা নামাজ শেষ করেই, মেজবৌকে ডাকে, ‘আরিফা, এই আরিফা, কই গো রা করছ না যে, এই সাতসকালে আবার ঘুমিয়ে গেলে নাকি? এই দেখো, আলো ফুটে গেছে।’ শাশুড়ির হাঁকডাকে কাঁচা ঘুম ভেঙে গেল আরিফার। বাইরের আভা ভেতরে আসার জন্য ছইয়ের বাতায়, পলিথিনের গায়ে ছটফট করছে। ছইয়ের ফাঁক গলে আলো এসে পড়ল মুখে। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসল বিছানায়। চোখে এখনও ঘুমজড়ানো। এ কি ঘুম নাকি ক্লান্তির উড়ো মেঘ? গহীন রাত হয়ে লেগে আছে চোখে। ফোলা চোখ দুটো ড্যাব ড্যাব করে দেখে, একেবারে মাঝনদীতে ভাসছে নৌকোটা! এক পাড়ে মায়ানমার আরেক পাড়ে বাংলাদেশ। দুপাড়ে দু দেশ। মন প্রশ্ন করে ওঠে, আমরা এখন কোন দেশে, মায়ানমারে না বাংলাদেশে? নাকি দেশহীন এক অনাথ নদীর কোলে ভেসে আছি? যে নদীর কোনো ধর্ম নেই, কোনো জাত নেই, কোনো সেনাব্যারাক নেই, আছে শুধু তারকাঁটাহীন এক মুক্ত নীলাকাশ।

আরিফা ছইয়ের বাইরে বের হয়ে এল। মতি তখন মোনাজাত ধরেছে। আল্লাহর কাছে দুহাত তুলে চায়ছে, ইহকাল-পরকালের সুখ, শান্তি। মিনমিন করে চাইছে, কবরের আযাব থেকে মুক্তি, পাতিক্ষুরের মতো ধারালো পুলসুরাতের দড়ি পার হওয়ার মাগফেরাত, কেয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে শেষবিচার থেকে পরিত্রাণ, দোযখ থেকে মুক্তি। নাকি মতি অন্তর ডুকরে চায়ছে, জন্মভিটে ফিরে পাওয়ার বাসনা, একটা স্বাধীন দেশ, নিজের দেশ? বৌ-বাচ্চা নিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই? নাকি মতি ইহকালের সুখ আহ্লাদ ছেড়ে শুধু পরকালের সুখই চাইছে? যে বান্দা ইহকালের সুখ ব্যাতিরেখে পরকালের সুখ চায়, আল্লাহ যে সেই বান্দাকে বেশি ভালোবাসেন। আকাশ প্রায় পরিষ্কার হয়ে এসেছে। দু-চারটে তারা আবছা আবছা চোখে সুজছে। নুহু বৈঠাটা নৌকার উপর সাট করে ফেলে রেখে, খাড়া হয়ে দাঁড়াল, বলল, ‘দাঁড়াও ভাবি, পলিথিনটা এই কোণায় টাঙিয়ে দিই। তাহলে বেপর্দা হবে না।’ নুহু, কালো রঙের তেলতেলে পলিথিনটা ছইয়ের ছাদ থেকে পেড়ে নৌকোর উত্তরকোণাটায় তিনটে বাঁশের খুঁচ খট খট করে পুঁতে একটা বোরখা ঘর বানিয়ে দিল। তিন কোণার অস্থায়ী ঘেরা বাথরুম। বদনা হাতে প্রথমে ঢুকল আরিফা। ও নাকি বেগ পেলে আর থির থাকতে পারে না। পেট কুনকুন করে। উগলায়। গুরুম গুরুম করে মেঘডাকা ডাক ডাকে। তিনদিক হেচিয়ে পেঁচিয়ে ঘেরা থাকলেও বাথরুমটার ছাদ ফাঁকা। হলহল করে পুবালি হাওয়ায় দুলছে। ফাঁকফোকর দিয়ে উঁকি মারছে সকালের মিস্টি রোদ।
‘গোটা রাখাইনটা তো নদীতে উঠে এসেছে রে!’ নামাজ শেষ করে বিস্ময়ভরা চোখে বলল মতি। যেদিকে চোখ যায়, যতদূর চোখ যায়, শুধু নৌকা আর নৌকা! নৌকাতে গিজগিজ করছে নাফ নদী!

‘কী আর করবে, বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড’ এর সেনারা যে আর বাংলাদেশে ঢুকতে দিচ্ছে না! অগত্যা নদীতেই পড়ে থাকতে হচ্ছে।’ বলল নুহু। আচমকা পরনের লুঙ্গিটা নেংটি মেরে হুট করে ছইয়ের ওপরে উঠতে গেল। ‘এ কী করছিস!’ তেড়ে উঠল মতি। ‘ছইটা ভেঙে দুমড়ে মুচড়ে যাবে যে!’

‘কিচ্ছু হবে না।’ বলে পা ফাঁক করে ছইয়ের ডাপ ধরে বানরের মতো হিড়িং বিড়িং করে উঠতে লাগল নুহু। ‘উপরে উঠে কী করবি?’ গলা খেঁকাল মতি। ‘দেখো না ক্যানে কী করছি।’ কুঁত পেরে বলল নুহু। মতির ভেতরটা ধড়াক করে উঠল, নুহু আবার ছইয়ের মাথা থেকে নদীতে লাফ মারবে না তো! যা দিনকাল যাচ্ছে, কিচ্ছু বিশ্বাস নেই। বৌ-বেটা মারা যাওয়ার পর থেকে নুহু কেমন খামখেয়ালি হয়ে গেছে! মাঝে মধ্যে মাথা বিগড়ে যায়। জ্বিনে ধরার মতো ভুল বকে। লোকে ঠিক কথায় বলে, বৌ মারা যাওয়ার আগে স্বামীর মারা যাওয়াই শ্রেয়। তানাহলে সে স্বামীর যাচ্ছেতাই ছড়াদ হয়। তারপর শুধু বৌ’ই একা নয়, জ্বলজ্যান্ত ব্যাটাটাকে মায়ের সামনে খুন করল। নুহুর খাঁ খাঁ বুক। জানে বল নেই, শুধু হাওয়াটুকু যাওয়া-আসা করে। শরীরের ভারে ছইটা একদিক আলতো কাত হয়ে গেল। কচকচ করে উঠল বাতার বাঁধন। বাঁশের ছাউনি। ছইটাকে কাত হতে দেখে, ভেতর থেকে খেঁকিয়ে উঠলেন হালেমা, ‘টাপাটাকে(ছই) ভাঙবি নাকি? ওরা তো ঘর ভেঙেছে, দেশ ভেঙেছে, এবার তোরা এই নৌকাটাও ভাঙ।’

‘দেখো, দেখো, কথা শুনছে!’ চোখ পাকালো মতি। আরিফা ভ্রূ নাচিয়ে বলল, ‘ওমা, দেওরজি, অ কী কাজ করছ গ, নামো নামো শিঘ্রি নামো। পড়ে পা ভেঙে যাবে!’

‘তোর কি ছেলেমানুষি কোনোদিন যাবে না?’ ধমকে উঠল মতি। দু-ধাপ এগিয়ে গিয়ে যেদিকে ছইটার চালা কাত হয়ে গেছে, সেদিকটা দুই হাত শক্ত করে ঠেলে ধরল। চোখ ঘুলিয়ে বলল, ‘তুই নামবি, না, পা ধরে টেনে নামাব?’
‘ওহঃ অত জ্বালাও ক্যানে! পা ছাড়ো তো। কিচ্ছু ভাঙবে না।’ বিরক্ত হয়ে নিচে বানরের লেজের মতো ঝুলতে থাকা পা’টা সড়াৎ করে টেনে উপরে তুলে নিল নুহু। মতি হাঁ করে দেখতে লাগল, ছোটভাইয়ের কিত্তিকলাপ। নুহু ছইয়ের একেবারে মটকায় উঠে, দুই হাতের তালু বড় করে মুখটা মাইকমুখ করে চিৎকার করে গলা হাঁকল, ‘দংখালীর কেউ আছো নাকি? সবুর, আলিম, মতিন, বাশার কেউ আছো? ওগো ওগো, আমার কথা তোমরা শুনতে পাচ্ছো? ও গো সব নৌকার লোক, দংখালীর কেউ আছো……?’
‘আরে এ তুই কী করছিস? স্বেচ্ছায় মরণ ডেকে আনবি নাকি? চুপ কর নুহু, দয়া করে চুপ কর, তোর গলা শত্রুর কানে পৌঁছে যাবে!’ নিচ থেকে কাঁইকুঁই করে মতি।
‘অত পাঁয়তারা করো না তো? থামো, দেখতে দাও, দংখালীর কেউ আছে কি না।’ চোখ গরম করে তাকায় নুহু। ফুটন্ত ভোরের সদ্যফোটা মিঠেরোদ তার হাড়জিরজিরে বাতাশরীরটায় এসে মোমের মতো মিশে যাচ্ছে। উসকোখুসকো ফেঁসো চুল ফিনফিনে বাতাসে ধাক্কা লেগে কাশফুলের মতো উড়ছে। নুহু যেন ইচ্ছে করেই নিচে নামতে দেরি করছে। নিচ থেকে মতি যতই হাম্বিতাম্বি করুক না কেন, ওসব এক্কেবারেই গা করছে না। নুহু দুইপায়ের গুল্লে দুটো ওপরে খাড়া করে তুলে আরও লম্বা হওয়ার চেষ্টা করল। সারস পাখির মতো গলা বাড়িয়ে আরও ওপর থেকে নদীটাকে দেখবে। পারলে আরও উঁচুতে উঠে দেখে। একেবারে আসমান থেকে। আসলে নুহু, একেবারে উপর থেকে দেখতে চাইল আল্লাহর সৃষ্ট দুনিয়াটাকে। দু পেয়ে মানুষের জগৎটাকে। নুহুর মাঝে মধ্যেই মনে হয়, আসমান থেকে দেখলে, নিশ্চয় সব মানুষকে পিঁপড়ের মতো পিলপিল করতে দেখা যাবে। কে মোটা, কে সরু, কে ধনী, কে গরীব, কিচ্ছু বোঝা যাবে না। দেশের কাঁটাতারগুলোকে মনে হবে দুনিয়ার হৃদয়ে কাঁটা আঁচড়ের দাগ। দেখতে একদম বেমানান লাগবে। মনে মনে গাল দেবে নুহু, এভাবে কেউ নিজের গায়ে আঁচড় টানে? সে দেখবে একটা হট্টিটি পাখি ‘হ টি টি ‘করতে করতে পেরিয়ে যাচ্ছে সীমান্ত। বিচ্ছেদের কাঁটাতার। একটা মেঠো ইঁদুর দাঁত দিয়ে গর্ত করতে করতে পেরিয়ে যাচ্ছে এক দেশ থেকে আর এক দেশ। এমনকি একটা শুঁয়োপোকাও বুক ঠেলে ঠেলে ঢুকে পড়ছে অন্য দেশে। শুধু আটকা পড়ে যাচ্ছে মানুষ! মানুষের পিঠে যে মারা আছে দেশ-এর ছাপ? ধর্মের স্ট্যাম্প। জাতের তকমা। নুহু ভাবে, আল্লাহ তাকে মাটির জীব না বানিয়ে আসমানের জন্তু বানালেই পারতেন? ফেরেশতা তো আর হওয়া হত না। সে না হোক, আসমানের চিল বা লাল-হলুদ মাছরাঙা হলেও হত। নুহু এবার তার হেড়ে গলায় একটা জোর হাঁক পাড়ল, ‘দংখালীর কেউ আছো গ? আমরা দংখালীর লোক।’ আর যায় কোথায়, মতি এবার লুঙ্গিটাকে ঘ্যাঁচ করে গিঁট মেরে, তড়াক করে লাফ মেরে নুহুর একটা পা ধরে নিচ সোজা মারল একটা হ্যাঁচকা টান। পড়পড় করে নিচের দিকে সড়পাতে লাগল নুহু।

‘আরে এ কী করছ বড়ভাই! ছাড়ো, ছাড়ো, পড়ে যাব তো।’ কুঁদরাতে লাগল নুহু। ‘তুই নাম, নাহলে এভাবেই নামাব।’ দাঁত খিঁচল মতি। ‘নামছি, নামছি।’ বলে নুহু ধড়াম করে ছইয়ের ওপর থেকে মারল নিচে লাফ।

চলবে…

আগের পর্বগুলো পড়ুন
নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১৪

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব ১৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১১

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৯

 

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৬

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৫

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১

আরএ/

Header Ad
Header Ad

সার্ক পুনরুজ্জীবনের প্রশ্নে বাংলাদেশকে যে বার্তা দিলো ভারত

ওমানের মাসকটে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বৈঠক। ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি ওমানের রাজধানী মাস্কাটে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার ( ২১ ফেব্রুয়ারি) নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ভারত- বাংলাদেশের মধ্যকার উক্ত বৈঠকের আলোচ্য বিষয়ে কিছু তথ্য তুলে ধরেছেন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল।

তিনি বলেন, মাস্কাটে ওই বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সার্ক পুনরুজ্জীবনের প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন। দক্ষিণ এশিয়ার সবাই জানে কোন দেশ ও তার কী ধরনের কর্মকাণ্ড সার্ককে কোণঠাসা করে রেখেছে। তৌহিদ হোসেনকে জয়শঙ্কর এ কথাও বলেছেন, সন্ত্রাসবাদের স্বাভাবিকীকরণ করাটা বাংলাদেশের উচিত নয়।

ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের কোনো কোনো উপদেষ্টার কিছু কিছু মন্তব্য নিয়েও প্রশ্ন করা হয়। জবাবে রণধীর জয়সোয়াল বলেন, ভারত এসব মন্তব্য নজরে রেখেছে। ওই ধরনের মন্তব্য ও বাংলাদেশের সঙ্গে কাজকর্মে তার প্রভাব–প্রতিক্রিয়ার বিষয়ও ভারতের গোচরে রয়েছে।

তিনি বলেন, এ ধরনের মন্তব্য অবশ্যই সহায়ক নয়। এর প্রতিক্রিয়া কী, তা তাদেরই ভেবে দেখা দরকার।

নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও বিএসএফের মহাপরিচালকদের বৈঠক সদ্য শেষ হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, বাংলাদেশে ৫ আগস্টের পালাবদলের পর সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগগুলো অতিরঞ্জিত, মিডিয়ার সৃষ্টি।

এ প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে জয়সোয়াল বলেন, গত কয়েক মাসে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর কী হয়েছে, সে বিষয়ে সবাই অবগত। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে ভারতের উদ্বেগ বারবার প্রকাশ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সম্প্রতি ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওই প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। যুক্তরাষ্ট্রকেও এ বিষয়ে ভারতের উদ্বেগের কথা জানানো হয়েছে।

Header Ad
Header Ad

জামায়াতের আমিরকে যানজট মুক্ত করতে গিয়ে প্রাণ দিলেন কর্মী

ছবিঃ সংগৃহীত

যানজটে আটকে থাকা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের গাড়ি বহরকে সাইড করে দিতে গিয়ে বাস চাপায় নিহত হয়েছেন জসিম উদ্দিন (৫৩) নামে জামায়াতের একজন কর্মী।

নিহত জসিম উদ্দিন উপজেলার বাগমারা উত্তর ইউনিয়নের সৈয়দপুর পশ্চিম পাড়ার মৃত আলী আশ্রাফ মোল্লার ছেলে। তার স্ত্রী ও শিশুসহ তিন ছেলে সন্তান রয়েছে।

শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টায় কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের লালমাই উপজেলার সৈয়দপুর এলাকার ওয়ালটন শো-রুমের সামনে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী সৈয়দপুর গ্রামের বাসিন্দা মারুপ সিরাজী বলেন, লক্ষীপুর যাওয়ার পথে জামায়াত আমিরের বহরের ৪টি গাড়ি বাগমারা উত্তরবাজারে যানজটে আটকা পড়লে জামায়াতের নেতাকর্মীরা ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। হঠাৎ তিশা পরিবহনের ঢাকামুখী একটি দ্রুতগতির বাস ধাক্কা দিলে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনকারী জামায়াতের কর্মী জসিম উদ্দীনের মাথা থেতলে যায়। রক্তক্ষরণ হয়ে ঘটনাস্থলেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

বাগমারা বাজারের ব্যবসায়ী মফিজুল ইসলাম মুন্না বলেন, কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত হলেও বাগমারা বাজার অংশে অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে দুই লেন করা হয়েছে।সে কারণে ২৪ ঘণ্টাই সড়কের এই অংশে যানজট লেগে থাকে। যানজট নিরসনে পুলিশ দায়িত্ব পালন করলে আজ হয়তো এমন মৃত্যু হতো না।

লালমাই উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা ইমাম হোসেন বলেন, আমিরে জামায়াত লক্ষীপুর যাওয়ার পথে বাগমারা উত্তর বাজার বালুর মাঠে পথসভা করেন। পথসভাস্থলে পৌঁছার কিছুক্ষণ আগে তাঁর গাড়ি বহর যানজটে আটকা পড়ে।

তখন আমিসহ সংগঠনের ১৫/২০ জন কর্মী ট্রাফিকের দায়িত্ব শুরু করি। আমরা আমিরে জামায়াতকে নিয়ে পথসভায় চলে যাওয়ার পর জামায়াতের কর্মী জসিম উদ্দিন বাস চাপায় মারা যান।

লালমাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ আলম বলেন, বাগমারা উত্তরবাজারে বাস চাপায় জসিম উদ্দিন নামের একজন মারা গেছেন। মরদেহ নিহতের বাড়িতে রয়েছে। খবর পেয়েই নিহতের বাড়িতে গিয়েছি।

 

Header Ad
Header Ad

সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা  

ছবিঃ সংগৃহীত

সুনামগঞ্জের মধ্যনগর বাজারে অনির্দিষ্ট কালের জন্য সভা-সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন। পুলিশের আসামি ধরাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং দলীয় অফিস ভাঙচুরের ঘটনায় এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টা থেকে ওই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উজ্জ্বল রায়।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় আসামি ধরাকে কেন্দ্র করে মধ্যনগর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম মজনু এবং যুবদল নেতা শহিদ মিয়ার লোকজনের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় বিএনপি ও যুবদলের অস্থায়ী অফিস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর থেকে মধ্যনগর বাজার এলাকায় উভয় পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করে। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনার আশঙ্কা এবং সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে পরবর্তী নির্দেশ দেওয়ার আগে পর্যন্ত বাজার এবং আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ মিছিল-মিটিং নিষিদ্ধ করা হয়।

মধ্যনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সজীব রহমান বলেন, ‘মধ্যনগর যুবদল নেতা শহিদ মিয়া ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাঈযুম মজনুর লোকজনের মধ্যে পুলিশের আসামি ধরা নিয়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। পরে উভয় পক্ষের লোকজন বিএনপি ও যুবদলের অফিস ভাঙচুর করে। এতে বাজারের সাধারণ ব্যবসায়ী ও মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বাজার ও আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে উপজেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে। বিশৃঙ্খল অবস্থা এড়াতে বাজারে পুলিশের টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাজার ও আশপাশের এলাকায় পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।’

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

সার্ক পুনরুজ্জীবনের প্রশ্নে বাংলাদেশকে যে বার্তা দিলো ভারত
জামায়াতের আমিরকে যানজট মুক্ত করতে গিয়ে প্রাণ দিলেন কর্মী
সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা  
একুশে টিভির জিডি, কর্মচারির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে জামায়াত  
আফ্রিকার রানের চাপে বড় ব্যবধানে হারলো আফগানিস্তান
আগামীকাল দুই বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে
অপারেশন ডেভিল হান্ট: ২৪ ঘণ্টায় গ্রেপ্তার ৪৬১
খিলগাঁওয়ে স-মিলে ভয়াবহ আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১০ ইউনিট
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
পশ্চিম তীরে নতুন করে হামলার নির্দেশ দিলেন নেতানিয়াহু
মেসির অটোগ্রাফ চেয়ে শাস্তি পেলেন রেফারি
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বেনাপোলে হয়নি দুই বাংলার মিলন মেলা
মাতৃভাষার গুরুত্ব ও ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে যা বললেন ড. ইউনূস
চলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানি: তিন দিন পর মামলা, আতঙ্কে যাত্রীরা
বিপ্লবের আত্মত্যাগ উন্নত বাংলাদেশের পথে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে : পররাষ্ট্রসচিব
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে ২০২৪ সালে আওয়ামী সরকারের পতনের কারণ উদঘাটন
চ্যাম্পিয়নশিপের দল শেফিল্ডে মাসে ৪০ কোটি টাকা বেতন পাবেন হামজা চৌধুরী
পবিপ্রবিতে আবাসিক হলগুলোর নাম পরিবর্তন, মুছে ফেলা হলো শেখ পরিবারের নাম
ইসরায়েলের তেল আবিবে তিনটি বাসে বিস্ফোরণ
বিয়ের ছবি ভাইরাল, বললেন শুভকামনা জানানোর জন্য ধন্যবাদ