বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-১৫

নেই দেশের নাগরিক

সাকিব ঘুমিয়ে পড়লে, তার গা’টা আদরের আঁচল দিয়ে ঢেকে দেয়। আরিফা ভাবে, আঁচল দিয়ে আর কতদিন আগলে রাখব? মৃত্যু তো ছো পেতে আছে! যেকোনো সময় ছোবল মারতে পারে। আঁচল কি আর মৃত্যু রুখতে পারে? এ আঁচল কি আর মুসানবীর লাঠি, যে মৃত্যুকে রুখে দেবে? এ আঁচল বড়জোর মাছি তাড়াতে পারে, মশা তাড়াতে পারে, হাওয়া দিয়ে দিতে পারে নিশ্চিন্তির ঘুম।

চোখ মোছে আরিফা। মতি নামাজের শেষ রাকাতের সিজদায় যাওয়ার জন্যে, ঝুঁকে রুকু পড়ছে। নদী আড়মোড়া ভেঙে ঝেরে ফেলছে ঘুমের আবেশ। তার থির বুকে শুইয়ে থাকা অন্ধকার কফির কাপে চুমুক দিয়ে জায়গা ছেড়ে দিচ্ছে ভোরের আলোকে। দূরে দিগন্তে পোঁতা গাছগুলো মিলেমিশে আকাশের দিকে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। ভোর হলেও গাছের লতায়-পাতায় জড়ানো আছে ছোপ ছোপ আঁধার। পুব আকাশ থেকে মিহি মিহি আলো বয়ে নিয়ে আসছে পুবালি হাওয়া। সে আলো-হাওয়াই টাটিয়ে আসছে আরিফার চোখ। ছইয়ের চালায় গোঁজা সুখ একটু একটু করে উবে যাচ্ছে শূন্য থেকে মহাশূন্যে। অথচ কত সুখের সাক্ষী এই ঘাটবাড়ি কৌশা নৌকাটা। বিয়ের আগে কতদিন লুকিয়ে মতির সঙ্গে এই নৌকাটায় নদী বিহার করেছে আরিফা। ছইয়ের ভেতর খেলেছে খুনসুটি। বাঁশের বাতাগুলোকে সেসব কথা জিজ্ঞেস করলে, এখনো লজ্জায় মুখ ঢেকে নেবে। ফিসফিস করে বলবে, ‘শরম লাগে’। একবার তো আরিফা পোয়াতি পেটে আবদার করেই বসল, আমাকে নৌকায় চাপাতেই হবে। সাকিব তখন সাতমাসের ভ্রূণ। মতি কোনোমতেই রাজি হবে না, কিন্তু আরিফা নাছোড়। সে বলে, ‘আমরা হলেম কি জেলে মানুষ, বছরভর নদীতে মাছ ধরে খাই, তুমি হচ্ছ এই পেটে আসা ব্যাটা-বিটির জেলেবাপ, তো পেট থেকে বেরোলে তো সেও মাছ ধরবে নাকি, না থানার দারোগা হবে? জেলের ব্যাটা জেলেই হবে। তাই আগে থেকেই নদীর ঢেউ লাগিয়ে রাখি। যাতে বৈঠা টানতে ভুল না হয়।‘

সেবার হালেমার কাছে খুব বকা খেয়েছিল আরিফা। আচ্ছা ঝাড় খেয়েছিল মতিও। হালেমা তেড়েফুড়ে বলেছিলেন, ‘এ মেয়ের কালেজা তো কম নয়! ভরা পেটে নৌকার দোল খায়! ফুল যখন ঝরে যাবে তখন বুঝবে। নৌকায় পাট খাওয়া বেরোবে।‘ মতিকে একহাত নিয়ে বলেছিলেন, ‘ব্যাটাবিটির বাপ হতে চলেছ, শান হবে কবে? তোর তো দেখছি, চুল পাকলেও বুদ্ধি হবে না! যত বুড়ো হচ্ছিস তত খোকা হচ্ছিস!’ আরিফা বা মতি কেউই কোন রা করেনি। আরিফা দাওয়ার খুঁটিটার কাছে মাথায় ঘোমটা টেনে মুখ নিচু করে শুনছিল। তারপর হালেমা হেঁসেলে ঢুকে গেলে, আরিফা মুখের ঘোমটাটা আলতো করে টেনে মতির চোখে চোখ ফেলে ফিক করে হেসেছিল। মতি আশপাশ জরিপ করে, দূর থেকে একটা আদরের ঘুষি চুখিয়ে ছিল।

মতির নামাজ প্রায় শেষের দিকে। সালাম ফিরে হাতের আঙুলে তসবিহ গুনছে। ভোরের চিকন আলো উড়ে এসে বসছে তার ঘাড়ে। সালাম জানাচ্ছে নতুন দিন। ফেজ টুপির ওপরে মুক্ত নীলাকাশ। শূন্যের রাজপাট। অসীম অনন্ত শূন্যকে আঁকড়ে আছে আলো-আঁধারি। আসমান ছুঁয়ে নেমে আসছে আরও একটা সকাল। আরও একটা দিন। হালেমা নামাজ শেষ করেই, মেজবৌকে ডাকে, ‘আরিফা, এই আরিফা, কই গো রা করছ না যে, এই সাতসকালে আবার ঘুমিয়ে গেলে নাকি? এই দেখো, আলো ফুটে গেছে।’ শাশুড়ির হাঁকডাকে কাঁচা ঘুম ভেঙে গেল আরিফার। বাইরের আভা ভেতরে আসার জন্য ছইয়ের বাতায়, পলিথিনের গায়ে ছটফট করছে। ছইয়ের ফাঁক গলে আলো এসে পড়ল মুখে। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসল বিছানায়। চোখে এখনও ঘুমজড়ানো। এ কি ঘুম নাকি ক্লান্তির উড়ো মেঘ? গহীন রাত হয়ে লেগে আছে চোখে। ফোলা চোখ দুটো ড্যাব ড্যাব করে দেখে, একেবারে মাঝনদীতে ভাসছে নৌকোটা! এক পাড়ে মায়ানমার আরেক পাড়ে বাংলাদেশ। দুপাড়ে দু দেশ। মন প্রশ্ন করে ওঠে, আমরা এখন কোন দেশে, মায়ানমারে না বাংলাদেশে? নাকি দেশহীন এক অনাথ নদীর কোলে ভেসে আছি? যে নদীর কোনো ধর্ম নেই, কোনো জাত নেই, কোনো সেনাব্যারাক নেই, আছে শুধু তারকাঁটাহীন এক মুক্ত নীলাকাশ।

আরিফা ছইয়ের বাইরে বের হয়ে এল। মতি তখন মোনাজাত ধরেছে। আল্লাহর কাছে দুহাত তুলে চায়ছে, ইহকাল-পরকালের সুখ, শান্তি। মিনমিন করে চাইছে, কবরের আযাব থেকে মুক্তি, পাতিক্ষুরের মতো ধারালো পুলসুরাতের দড়ি পার হওয়ার মাগফেরাত, কেয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে শেষবিচার থেকে পরিত্রাণ, দোযখ থেকে মুক্তি। নাকি মতি অন্তর ডুকরে চায়ছে, জন্মভিটে ফিরে পাওয়ার বাসনা, একটা স্বাধীন দেশ, নিজের দেশ? বৌ-বাচ্চা নিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই? নাকি মতি ইহকালের সুখ আহ্লাদ ছেড়ে শুধু পরকালের সুখই চাইছে? যে বান্দা ইহকালের সুখ ব্যাতিরেখে পরকালের সুখ চায়, আল্লাহ যে সেই বান্দাকে বেশি ভালোবাসেন। আকাশ প্রায় পরিষ্কার হয়ে এসেছে। দু-চারটে তারা আবছা আবছা চোখে সুজছে। নুহু বৈঠাটা নৌকার উপর সাট করে ফেলে রেখে, খাড়া হয়ে দাঁড়াল, বলল, ‘দাঁড়াও ভাবি, পলিথিনটা এই কোণায় টাঙিয়ে দিই। তাহলে বেপর্দা হবে না।’ নুহু, কালো রঙের তেলতেলে পলিথিনটা ছইয়ের ছাদ থেকে পেড়ে নৌকোর উত্তরকোণাটায় তিনটে বাঁশের খুঁচ খট খট করে পুঁতে একটা বোরখা ঘর বানিয়ে দিল। তিন কোণার অস্থায়ী ঘেরা বাথরুম। বদনা হাতে প্রথমে ঢুকল আরিফা। ও নাকি বেগ পেলে আর থির থাকতে পারে না। পেট কুনকুন করে। উগলায়। গুরুম গুরুম করে মেঘডাকা ডাক ডাকে। তিনদিক হেচিয়ে পেঁচিয়ে ঘেরা থাকলেও বাথরুমটার ছাদ ফাঁকা। হলহল করে পুবালি হাওয়ায় দুলছে। ফাঁকফোকর দিয়ে উঁকি মারছে সকালের মিস্টি রোদ।
‘গোটা রাখাইনটা তো নদীতে উঠে এসেছে রে!’ নামাজ শেষ করে বিস্ময়ভরা চোখে বলল মতি। যেদিকে চোখ যায়, যতদূর চোখ যায়, শুধু নৌকা আর নৌকা! নৌকাতে গিজগিজ করছে নাফ নদী!

‘কী আর করবে, বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড’ এর সেনারা যে আর বাংলাদেশে ঢুকতে দিচ্ছে না! অগত্যা নদীতেই পড়ে থাকতে হচ্ছে।’ বলল নুহু। আচমকা পরনের লুঙ্গিটা নেংটি মেরে হুট করে ছইয়ের ওপরে উঠতে গেল। ‘এ কী করছিস!’ তেড়ে উঠল মতি। ‘ছইটা ভেঙে দুমড়ে মুচড়ে যাবে যে!’

‘কিচ্ছু হবে না।’ বলে পা ফাঁক করে ছইয়ের ডাপ ধরে বানরের মতো হিড়িং বিড়িং করে উঠতে লাগল নুহু। ‘উপরে উঠে কী করবি?’ গলা খেঁকাল মতি। ‘দেখো না ক্যানে কী করছি।’ কুঁত পেরে বলল নুহু। মতির ভেতরটা ধড়াক করে উঠল, নুহু আবার ছইয়ের মাথা থেকে নদীতে লাফ মারবে না তো! যা দিনকাল যাচ্ছে, কিচ্ছু বিশ্বাস নেই। বৌ-বেটা মারা যাওয়ার পর থেকে নুহু কেমন খামখেয়ালি হয়ে গেছে! মাঝে মধ্যে মাথা বিগড়ে যায়। জ্বিনে ধরার মতো ভুল বকে। লোকে ঠিক কথায় বলে, বৌ মারা যাওয়ার আগে স্বামীর মারা যাওয়াই শ্রেয়। তানাহলে সে স্বামীর যাচ্ছেতাই ছড়াদ হয়। তারপর শুধু বৌ’ই একা নয়, জ্বলজ্যান্ত ব্যাটাটাকে মায়ের সামনে খুন করল। নুহুর খাঁ খাঁ বুক। জানে বল নেই, শুধু হাওয়াটুকু যাওয়া-আসা করে। শরীরের ভারে ছইটা একদিক আলতো কাত হয়ে গেল। কচকচ করে উঠল বাতার বাঁধন। বাঁশের ছাউনি। ছইটাকে কাত হতে দেখে, ভেতর থেকে খেঁকিয়ে উঠলেন হালেমা, ‘টাপাটাকে(ছই) ভাঙবি নাকি? ওরা তো ঘর ভেঙেছে, দেশ ভেঙেছে, এবার তোরা এই নৌকাটাও ভাঙ।’

‘দেখো, দেখো, কথা শুনছে!’ চোখ পাকালো মতি। আরিফা ভ্রূ নাচিয়ে বলল, ‘ওমা, দেওরজি, অ কী কাজ করছ গ, নামো নামো শিঘ্রি নামো। পড়ে পা ভেঙে যাবে!’

‘তোর কি ছেলেমানুষি কোনোদিন যাবে না?’ ধমকে উঠল মতি। দু-ধাপ এগিয়ে গিয়ে যেদিকে ছইটার চালা কাত হয়ে গেছে, সেদিকটা দুই হাত শক্ত করে ঠেলে ধরল। চোখ ঘুলিয়ে বলল, ‘তুই নামবি, না, পা ধরে টেনে নামাব?’
‘ওহঃ অত জ্বালাও ক্যানে! পা ছাড়ো তো। কিচ্ছু ভাঙবে না।’ বিরক্ত হয়ে নিচে বানরের লেজের মতো ঝুলতে থাকা পা’টা সড়াৎ করে টেনে উপরে তুলে নিল নুহু। মতি হাঁ করে দেখতে লাগল, ছোটভাইয়ের কিত্তিকলাপ। নুহু ছইয়ের একেবারে মটকায় উঠে, দুই হাতের তালু বড় করে মুখটা মাইকমুখ করে চিৎকার করে গলা হাঁকল, ‘দংখালীর কেউ আছো নাকি? সবুর, আলিম, মতিন, বাশার কেউ আছো? ওগো ওগো, আমার কথা তোমরা শুনতে পাচ্ছো? ও গো সব নৌকার লোক, দংখালীর কেউ আছো……?’
‘আরে এ তুই কী করছিস? স্বেচ্ছায় মরণ ডেকে আনবি নাকি? চুপ কর নুহু, দয়া করে চুপ কর, তোর গলা শত্রুর কানে পৌঁছে যাবে!’ নিচ থেকে কাঁইকুঁই করে মতি।
‘অত পাঁয়তারা করো না তো? থামো, দেখতে দাও, দংখালীর কেউ আছে কি না।’ চোখ গরম করে তাকায় নুহু। ফুটন্ত ভোরের সদ্যফোটা মিঠেরোদ তার হাড়জিরজিরে বাতাশরীরটায় এসে মোমের মতো মিশে যাচ্ছে। উসকোখুসকো ফেঁসো চুল ফিনফিনে বাতাসে ধাক্কা লেগে কাশফুলের মতো উড়ছে। নুহু যেন ইচ্ছে করেই নিচে নামতে দেরি করছে। নিচ থেকে মতি যতই হাম্বিতাম্বি করুক না কেন, ওসব এক্কেবারেই গা করছে না। নুহু দুইপায়ের গুল্লে দুটো ওপরে খাড়া করে তুলে আরও লম্বা হওয়ার চেষ্টা করল। সারস পাখির মতো গলা বাড়িয়ে আরও ওপর থেকে নদীটাকে দেখবে। পারলে আরও উঁচুতে উঠে দেখে। একেবারে আসমান থেকে। আসলে নুহু, একেবারে উপর থেকে দেখতে চাইল আল্লাহর সৃষ্ট দুনিয়াটাকে। দু পেয়ে মানুষের জগৎটাকে। নুহুর মাঝে মধ্যেই মনে হয়, আসমান থেকে দেখলে, নিশ্চয় সব মানুষকে পিঁপড়ের মতো পিলপিল করতে দেখা যাবে। কে মোটা, কে সরু, কে ধনী, কে গরীব, কিচ্ছু বোঝা যাবে না। দেশের কাঁটাতারগুলোকে মনে হবে দুনিয়ার হৃদয়ে কাঁটা আঁচড়ের দাগ। দেখতে একদম বেমানান লাগবে। মনে মনে গাল দেবে নুহু, এভাবে কেউ নিজের গায়ে আঁচড় টানে? সে দেখবে একটা হট্টিটি পাখি ‘হ টি টি ‘করতে করতে পেরিয়ে যাচ্ছে সীমান্ত। বিচ্ছেদের কাঁটাতার। একটা মেঠো ইঁদুর দাঁত দিয়ে গর্ত করতে করতে পেরিয়ে যাচ্ছে এক দেশ থেকে আর এক দেশ। এমনকি একটা শুঁয়োপোকাও বুক ঠেলে ঠেলে ঢুকে পড়ছে অন্য দেশে। শুধু আটকা পড়ে যাচ্ছে মানুষ! মানুষের পিঠে যে মারা আছে দেশ-এর ছাপ? ধর্মের স্ট্যাম্প। জাতের তকমা। নুহু ভাবে, আল্লাহ তাকে মাটির জীব না বানিয়ে আসমানের জন্তু বানালেই পারতেন? ফেরেশতা তো আর হওয়া হত না। সে না হোক, আসমানের চিল বা লাল-হলুদ মাছরাঙা হলেও হত। নুহু এবার তার হেড়ে গলায় একটা জোর হাঁক পাড়ল, ‘দংখালীর কেউ আছো গ? আমরা দংখালীর লোক।’ আর যায় কোথায়, মতি এবার লুঙ্গিটাকে ঘ্যাঁচ করে গিঁট মেরে, তড়াক করে লাফ মেরে নুহুর একটা পা ধরে নিচ সোজা মারল একটা হ্যাঁচকা টান। পড়পড় করে নিচের দিকে সড়পাতে লাগল নুহু।

‘আরে এ কী করছ বড়ভাই! ছাড়ো, ছাড়ো, পড়ে যাব তো।’ কুঁদরাতে লাগল নুহু। ‘তুই নাম, নাহলে এভাবেই নামাব।’ দাঁত খিঁচল মতি। ‘নামছি, নামছি।’ বলে নুহু ধড়াম করে ছইয়ের ওপর থেকে মারল নিচে লাফ।

চলবে…

আগের পর্বগুলো পড়ুন
নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১৪

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব ১৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১১

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৯

 

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৬

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৫

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১

আরএ/

Header Ad

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’

ছবি: সংগৃহীত

দেশের জনপ্রিয় নির্মাতা আশফাক নিপুন। কাজের পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমেও বেশ সরব তিনি। কথা বলেন নানা ইস্যু নিয়ে। সেই ধারাবাহিকতায় সরকার পতনের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনেও বিভিন্ন সময় নিজের আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যেও বিভিন্ন বার্তা দিয়েছেন। এবার এমনি একটি বার্তায় দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জনগনের আস্থার বিষয়ে আক্ষেপ জানালেন এই নির্মাতা।

বুধবার (২০ নভেম্বর) আশফাক নিপুন তার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে লেখেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সর্বস্তরের ছাত্র এবং সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল, বাসায় বসে বসে দোয়া করেছিল, যার যা সামর্থ্য দিয়ে সহায়তা করেছিল। কারণ, তারা দেখেছিল লড়াইটা আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শাসক বনাম সাধারণ ছাত্র-জনতার। এটাও অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই যে এই আন্দোলন বেগবান করতে বিরোধী সকল দলের কর্মীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাদের সংগ্রামও গত দেড় দশকের। কিন্তু এটা যদি শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার লড়াই হতো তাহলে সাধারণ মানুষ এই লড়াই থেকে দূরে থাকত। সেই প্রমাণ বিগত ১৫ বছরে আছে।

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ এখনো দেশের কোনো রাজনৈতিক দলকেই পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারে না। এটাই বাস্তবতা। এই বাস্তবতা মেনে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত কীভাবে সাধারণ জনগণের ভেতর নিজের দলের প্রতি আস্থা তৈরি করা যায় সেই বিষয়ে নিরলস কাজ করা। এই আস্থা ক্ষমতায় গিয়ে অর্জন করা সম্ভব না। কারণ, সাধারণ মানুষ আজীবন এস্টাবলিশমেন্টের বিপক্ষে। এই আস্থা অর্জন করতে হয় ক্ষমতা বলয়ের বাইরে থেকেই।

নিপুন আরও লিখেন, অরাজনৈতিক সরকার দিয়ে দীর্ঘদিন দেশ চালানো যেমন কাজের কথা না ঠিক তেমনি রাজনৈতিক সরকার হতে চাওয়া সকল রাজনৈতিক দলগুলোর বোঝা উচিত মুক্তিযুদ্ধের পরে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে সকল প্রকার পূর্বানুমান (যেমন- বর্ষাকালে আন্দোলন হয় না, নির্বাচনের আগেই কেবল জোরেশোরে আন্দোলন হয়, ঘোষণা দিয়ে বিরোধী সকল পক্ষ আন্দোলনে শামিল না হলে সফল হয় না) অগ্রাহ্য করেই। সেটা সম্ভব হয়েছে সাধারণ মানুষের ন্যায্যতার আকাঙ্ক্ষা থেকেই।

সবশেষ এই নির্মাতা লিখেছেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষার দুই পয়সার দাম দেন নাই। সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছা আর দেশপ্রেমকে পুঁজি করে অরাজনৈতিক এবং রাজনৈতিক যারাই রাজনীতি রাজনীতি খেলতে চাইবে, তাদের দশাও কোন একসময় যেন পলাতক শেখ হাসিনার মতো না হয়, সেই বিষয় নিশ্চিত করতে হবে তাদেরকেই।

Header Ad

‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা

ফাইল ছবি

জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, জুলাই-আগস্ট ছাত্র জনতার বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করেছি। এ নতুন দেশে আমাদের দায়িত্ব সকল মানুষকে এক বৃহত্তর পরিবারের বন্ধনে আবদ্ধ করা। কেউ কারো উপরে না, আবার কেউ কারো নিচেও না, এই ধারণা আমরা আমাদের জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।

তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ ছাত্র-জনতার সাহস ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে সম্প্রতি আমরা অর্জন করেছি, সেটাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যৎ গড়তে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ, আহত এবং জীবিত ছাত্র-জনতার কাছে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে চাই। যে সুযোগ তারা আমাদের দিয়েছে, তার মাধ্যমে আমাদের দেশকে পৃথিবীর সামনে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী দেশে পরিণত করতে আমরা শপথ নিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, ছাত্র আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করে যারা দেশ গঠনের সুযোগ করে দিয়েছে জাতি তাদের সারা জীবন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।

বক্তব্য শেষে সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা। পরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

Header Ad

নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু

ছবি: সংগৃহীত

নওগাঁ শহরে যানযট নিরসন ও শৃঙ্খলা ফেরাতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, পৌর কর্তৃপক্ষ ও রিকশা মালিক-শ্রমিকদের যৌথ উদ্যোগে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। এতে শহরে শৃঙ্খলা ফিরবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) অভিযানের উদ্বোধন করেন নওগাঁ পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকারের উপ পরিচালক টি.এম.এ মমিন। এ সময় নওগাঁ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জিয়া উদ্দিন, নওগাঁ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন, নওগাঁ জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আফজাল হোসেন ও অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

অভিযান শুরুর পর থেকেই শহরের বরুনকান্দি, মশরপুর, তাজের মোড় ও কালীতলাসহ মোট ৮ টি প্রবেশদ্বারে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। চেক পোষ্টগুলোতে ২ জন পুলিশ সদস্য, ২ জন ছাত্র সমন্বয়ক, ৪ জন রোভার স্কাউট সদস্য ও ২ জন রিকশা মালিক শ্রমিক প্রতিনিধিসহ মোট ১২ জন করে কাজ করছেন।

পৌর প্রশাসক জানান, নওগাঁ শহরে বৈধ যানবাহনের সংখ্যা ৪ হাজার। কিন্তু প্রতিদিন পার্শবতী বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ১০ হাজার রিকশা, ব্যাটারী চালিত অটো রিকশা ও ইজিবাইক শহরে প্রবেশ করে। এতে তীব্র যানযট ও জন মানুষের ভোগান্তি তৈরী হয়। এই দূর্ভোগ লাঘোবে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল ও পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিনের দিক নির্দেশনায় যানবাহন নিয়ন্ত্রনসহ বিশেষ অভিযানের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। বৈধ চালকদের চিহ্নিত করতে তাদের মাঝে পরিধেয় বিশেষ ধরনের জ্যাকেট প্রদান করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

নওগাঁর পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিন বলেন, নওগাঁ শহরের যানযট দীর্ঘদিনের সমস্যা। পরিকল্পিত ভাবে এই সমস্যা দূর করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের উদ্যোগে পৌর কর্তৃপক্ষ ও রিকশা মালিক শ্রমিক নেতৃবৃন্দদের সমন্বয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে স্থানীয় বাসিন্দা ও বিভিন্ন ষ্টেক হোল্ডারদের পরামর্শ নিয়ে একটি কর্ম পরিকল্পনা গ্রহক করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, অভিযান সফল ভাবে বাস্তবায়ন হলে শহরে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। জনগন এর সুফল পাবেন। সকলকে এই কার্যক্রমে সহযোগিতা প্রদানের আহবান জানান তিনি।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’
‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা
নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু
২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচন হতে পারে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত
সেনাকুঞ্জে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে খালেদা জিয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ৫ জনকে রোবটিক হাত উপহার
সেনাকুঞ্জের পথে খালেদা জিয়া
সুযোগ পেলে শেখ হাসিনার পক্ষে মামলায় লড়ব: জেড আই খান পান্না
নির্বাচন কমিশন গঠন, সিইসি হলেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব নাসির উদ্দীন
ডিএনএ টেস্টের ফলাফল: ভিনিসিয়ুসের পূর্বপুরুষ ছিলেন ক্যামেরুনের
জামিন পেলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান
বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে আসা সেই শাহজাহান ওমর গ্রেপ্তার
মিরপুর ও মহাখালীতে অটোরিকশা চালকদের সেনাবাহিনীর ধাওয়া
‘শেখ হাসিনা এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’, এমন কথা বলেননি ট্রাম্প
লেবাননে ৮ শতাধিক ইসরায়েলি সেনা নিহত
ভারতে সাজাভোগ শেষে দেশে ফিরল ২৪ বাংলাদেশি কিশোর-কিশোরী
ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে অবরোধ করে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের বিক্ষোভ
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ৮৮ ফিলিস্তিনি নিহত
সাবেক এমপি শাহজাহান ওমরের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর
১২ বছর পর সেনাকুঞ্জে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া