বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ৬ ফাল্গুন ১৪৩১
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-১৪

নেই দেশের নাগরিক

“কোথায় আজান হচ্ছে বাপ? আমাদের দংখালীর মসজিদের আজান এখানে ভেসে আসছে!” কান খাড়া করলেন হালেমা।
“না না, কোথায় দংখালী আর আমরা কোথায় আছি! এটা বাংলাদেশের নয়াপাড়া থেকে ভেসে আসছে।“ চোখ বাঁকালো মতি। তারপর হাতে পিতলের ঘটিটা নিয়ে, নৌকার কানা থেকে নদীতে পা ঝুলিয়ে বসে বলল, “ওজু করে নাও। আমি নদীর পানি তুলে দিচ্ছি।“ বলেই ‘ছলাৎ’ করে ঘটিটা জলে চুবড়িয়ে নিল। স্বচ্ছ জল। লবণ মিশে মোটা হয়ে গেছে। জলের ঘটিটা ছইয়ের কাছে হাত বাড়িয়ে আরিফাকে দিয়ে বলল, “মা’কে দাও, ওজু করবে।“ মতি নিজে কোমর কুঁজো করে হাত দিয়ে সরাসরি নদী থেকে জল তুলল। সে জল খরচ করে ওজু করতে লাগল। মতি পাকা মুসল্লি। আগে ওত পরহেজগার ছিল না। বছর পাঁচেক আগে জামাতের পাল্লায় পড়ে সেই যে নামাজ ধরল, ধরল তো ধরল, আর এক ওয়াক্তও কাজা করেনি। মতি, মুখে ওজুর জল দিয়ে বলল, “নুহু, তুই শক্ত করে হাল ধরে থাক। জোয়ার আসতে পারে। আমি নামাজটা পড়ে নিই।“ মতির খেয়াল আছে শেষ জোয়ার আসা বারো ঘণ্টা পার হয়ে গেছে। গতকাল বিকেলে মুখ্য জোয়ার এসেছিল। সুতরাং একটা হাল্কা পাতলা গৌণ জোয়ার যেকোনো সময় ধেয়ে আসতে পারে! তারপরে নৌকাটা অনেকটাই মোহনার দিকে চলে এসেছে। ফলে জোয়ারের একটা প্রবল ধাক্কা খাওয়ার ঘোর সম্ভাবনা। এরকম জোয়ারে নৌকা অনেকসময় পাল্টিও খায়। ঢেউ এর ঝুঁটি ধরে আঁকড়ে থাকতে হয়। এখন নদী একেবারে ডোবা পুকুরের মতো থির। চোখে এখনও ঘুম জড়ানো। কোনো হেলদোল নেই। যেন জোয়ারের জোর ধাক্কা খাওয়ার জন্যে, চোখ বন্ধ করে অজানা সংকেতের প্রহর গুণছে! খোলা নৌকার পাটাতনের ওপরে কেবলামুখী করে নামাজে দাঁড়িয়ে গেল মতি। কেবলামুখী অর্থাৎ মক্কার কাবাশরীফের দিকে মুখ। ধিক ধিক করে চলছে নৌকাটা। যেন ক্লান্ত। শ্রান্ত। শরীর আর নিচ্ছে না। পূবালী বাতাসটা ঝিরঝির করে বয়ছে। আকাশের নীল তটরেখা দিয়ে উড়ে গেল এক ঝাঁক হরিয়াল। পাখিগুলোর গায়ে জড়িয়ে আছে ভোরের মিহি আলো।
নুহু আসমানের দিকে চোখ তুলে দেখল, পাখিগুলো নয়াপাড়া থেকে উড়ে যাচ্ছে আকিয়াবের দিকে। পাখিগুলোকে এভাবে শূন্যে ডানা মেলে আপন খেয়ালে উড়ে যেতে দেখে, নুহুর মনপাখিটাও পাখা ঝাপ্টালো। মনের পালকে লাগল উড়ুক্ক হাওয়ার দোলা। নুহু ভাবল, আহাঃ যদি পাখি হতাম, যেদিকে ইচ্ছে উড়ে যেতাম! কেউ কখনও মানা করত না। সব দেশই আমার দেশ হয়ে যেত। কোনো সংবিধানই আমাকে কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে রাখতে পারত না। আমি সকালে এক দেশে খেলে বিকেলে অন্য দেশে খেলতে যেতাম। আমার পালকে লেগে থাকত নানান দেশের জল-মাটি। আমি গান গাইতে গাইতে পেরিয়ে যেতাম নাফ নদী। কক্সবাজারের শিমুল গাছ থেকে শুয়োপোকা ধরে এনে দংখালীর তেঁতুল গাছে বাঁধা বাসায় কিচিরমিচির করতে থাকা শাবকছানাকে খাইয়ে দিতাম। তারপর সবাই মিলে ডানা মেলে ঘুরতে যেতাম অন্য কোনো দেশ।
মতি প্রথম রাকাতের সিজদা দিয়ে আবার খাড়া হয়ে দাঁড়াল। মিনমিন করে সুরা ‘ফাতেহা’ আউড়াচ্ছেন। মাথার ফেজ টুপিটা চুলের সাথে এঁটে আছে। চাপ দাড়িটা মুখটাকে আরও পরহেজগার ইনসান বানিয়ে দিচ্ছে। হালেমা ছইয়ের ভেতর শীতলপাটির জায়নামাজ বিছিয়ে বসে বসে নামাজ আদায় করছেন। কোমরে ব্যাথা। উঠতে গেলেই ‘কট’ করে ওঠে। মাজায়, হাঁটুতে, বাত। রাতদিন কনকন করে। খাড়া হয়ে নামাজ পড়তে পারেন না।
এসব দেখে, জাফর আলি বলেন, তোমারও সময় হয়ে এসেছে হালেমা, হাড়ের নাটবোল্ট ঢিলা হতে লেগেছে, দেখবে, হুট করে একদিন আজরাইল এসে ঠং করে বাড়ি দিয়ে জানটা নিয়ে চলে যাবে! আরিফা সাকিবের কপালে হাত ঠেকিয়ে দেখল, গা’টা গরম আছে কি না। নাহ, জ্বরটা ঢেরটুকু কমেছে। গতরাতে তো হাত ঠেকানোই যাচ্ছিল না, একেবারে ছ্যাঁক করে উঠছিল। গা’টা অত গরম না থাকলেও, আরিফা আরও একবার জলপট্টি দিল। ঘুমে মুদে থাকা চোখ আলতো করে খুলল সাকিব। মৃদু নড়ে উঠল ঠোঁট, “মা”। আরিফা ছেলের মাথাটাকে বুকের মধ্যে পুরে নিয়ে বলল, “কোন ভয় নেই বাপ, কোন ভয় নেই, এই তো জ্বর কমে গেছে, সকাল হলেই একেবারে ভালো হয়ে যাবি।“ সাকিব তার জ্বরমুখো মাথাটা মায়ের কোলে রেখে ফুঁপিয়ে ওঠে, “মা, আমি বাড়ি যাব। তুমি আমাকে বাড়ি নিয়ে চলো।“
‘বাড়ি!’ কথাটা শুনে প্রথমে খেয়ালি হয়ে ওঠে আরিফা। তারপর ভাবে, সে কী আর এজন্মে ফেরা হবে রে বাপ? আদৌ কী আর কোনো বাড়ি কপালে জুটবে? আল্লাহ কী আর আমাদের কপালে কোনো ঠিকানা লিখে রেখেছেন? সাকিব আঁচল মুখে গুঁজে রীতিমত বায়না ধরে, “মা, আমি বাড়ি যাব, আমাকে বাড়ি নিয়ে চলো, এই নৌকা আমার আর ভাল্লাগছে না।“
“যাব বাপ, সকাল হলেই যাব। তুই আর একটু ঘুমিয়ে নে। জ্বরে সারারাত ভালো করে ঘুম হয়নি।“
“তুমিও তো সারারাত ঘুমোওনি মা, তুমিও ঘুমিয়ে নাও।“
হ্যাঁ, ঘুমোব, একটু সবুর কর, আমি একা কেন, আমরা সবাই ঘুমোব। এমন ঘুম ঘুমোব, এজন্মে আর চেতন পাব না। যাকে বলে, শেষ ঘুম। বার্মা সেনারা এসে আমাদের ঠিক সে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে যাবে। আনমনা হয়ে উঠল আরিফা।
“মা, কী হলো? তুমি ঘুমোও। তুমি না ঘুমোলে আমিও ঘুমোব না।“ জেদ ধরে ন-বছরের সাকিব। ছেলের আবদারে ঘোর ভাঙল আরিফার, “অমন করতে হয় না, বাপ, বড়দের কথা শুনতে হয়, আমার এখন ঘুমোলে হয়? কত্ত কাজ পড়ে রয়েছে।“
“নৌকাতে আবার তোমার কী কাজ মা, এটা কী বাড়ি যে ঘুম থেকে উঠে উঠেই তোমাকে হুটপাট করে কাজে লেগে পড়তে হবে?” পাক্কা বুড়োর মতো কথা বলল সাকিব। তাই তো? এটা তো নৌকা! আমাদের দংখালীর আটপৌরে বাড়িটা তো নয়? মাথা ঠক করল আরিফার। আসলে অভ্যাসের বসে কথাগুলো মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেছে আরিফার। দংখালীর বাড়িতে ফজরের আজান দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে বিছানা থেকে উঠে পড়তে হয়। ওঠার সময় কানে আসে মোরগের ‘ক-ক ক-ক’ ডাক। সূর্য ওঠার আগেই ঘর-দোর, উঠোন-বারান্দা ঝাড়পুছ দেয়। বাড়ির সম্মুখের রাস্তাটাও ঝাড় দিয়ে সাফসুতরো করে। ধুলোর ওপর লেগে থাকে ঝাঁটার খিলের সরু সরু দাগ। খিলেনের আঁকিবুঁকি। তাতে রোদ এসে কিতকিত খেলে। মুরগির খাঁচার টিনের মুখটা খুলে দিতেই পকপক করে বেরিয়ে আসে মুরগির পাল। তারপর মতি গোয়াল ঘর থেকে গাই গরুটাকে টেনে বের করে এনে নানেরপাড়ের খুঁটিতে বেঁধে দিলে, আরিফা মুত-গোবর পরিষ্কার করে। গোবরগুলো ছেনে ছেনে পেছনের দেওয়ালে ঘুঁটো দেয়। পাটকাঠির ওপরে দলা দলা গোবর চেপে বানায় লুদা। তারপর হাতমুখ ধুয়ে এঁটো বাসনপত্তর নিয়ে বসে পড়ে কলপাড়ে। মতি পান্তা ভাত খেয়ে ঘাড়ে গামছা নিয়ে বেরিয়ে যায় মাঠে। আরিফা নুন-মরিচ, আনাচপাতি, হাঁড়িকুঁড়ি নিয়ে পিঁড়ি নিয়ে বসে আখারপাড়ে। পাঠকাঠির জ্বালান ঠেসে পুরে দিয়ে ধরিয়ে দেয় আগুন। মাথায় খিজিবিজি লেগে যায়, কত্ত কাজ! সাকিব ঘুম থেকে উঠলে, হাগা-মুতা করিয়ে দিতে হয়, শাশুড়িটার পায়ে বাতের ওষুধ ডলে দিতে হয়, শ্বশুরটাকে খাইয়ে দিতে হয় চার রকমের ওষুধ। তারপর তিন বিহেনের ধাড়ি ছাগলটা ‘ভ্যা’ করে উঠলেই, আঁচল গুছিয়ে দৌড়াতে হয়। কুরবানির খাসিটাও সারাদিন খুইখুই করে বেড়ায়। কাজ যেন ফুরোতেই চায় না, আঁঠার মতো আঁচলে লেগে থাকে।
“পাকা পাকা কথা শিখেছিস? ঘুমোও, সূর্য উঠলেই বাড়ি চলে যাব।“ মাথার চুলে আদরের ছোঁয়া লাগাল আরিফা। চুলে বিলি কাটল। আঁচল দিয়ে হাওয়া করতে করতে বলল, “ঠিক আছে, আমার কোলেই ঘুমোও। বিছানায় আর ঘুমোতে হবে না।“ ছইয়ের বাঁকানো দেওয়ালে পিঠ রেখে, পাদুটো ছড়িয়ে বসল আরিফা। ধকলের ক্লান্তি চুলের সিঁথি দিয়ে হেঁটে আসতে লাগল সারা শরীরে। সাকিবের মাথাটাকে কোলের উপর শুইয়ে দিয়ে, আঁচলের হাওয়া দিতে লাগল। ঘুম চাদরের মতো বিছিয়ে গেল সাকিবের শরীরে। তার চোখ বুঁজে এলে, আরিফা মনে মনে বলে উঠল, হ্যাঁ, সূর্য উঠলেই বাড়ি ফিরে যাব। হ্যাঁ, সূর্য, নতুন সূর্য। আতিফ একদিন বলেছিল, দেখো, ভাবি, একদিন আমরা স্বাধীন দেশ পাব, আমাদের দেশ, আমাদের নিজস্ব দেশ, সেখানে অন্য কোন দেশ নাক গলাতে পারবে না। যে দেশে থেকে কখনই মনে হবে না, আমরা পর, আমরা ভিনদেশি। সে দেশে উঠবে নতুন সূর্য। স্বাধীনতার সূর্য। আমরা সেদিন সারাদিন ধরে নাচব, গাইব আর আহ্লাদে আটখানা হয়ে উঠব। গায়ে মাখব স্বাধীনতার রঙ। মনে লাগাব স্বাধীন দেশের আবির। তোমরা পরবে নতুন শাড়ি। পায়ে আলতা, হাতে মেহদি। খোঁপায় রজনীগন্ধা গুঁজে গায়বে স্বাধীনতার গান। মায়েরা পড়বেন কোরআন। আব্বারা দাঁড়াবেন নামাজের কাতারে। রাস্তায় রাস্তায় বেরোবে শোভাযাত্রা। ছাদে ছাদে পতপত করে উড়বে স্বাধীনতার পতাকা। ভাবি, তুমি দেখো, আমরা সেই নতুন সূর্য একদিন না একদিন আনবোই, ইনশাল্লাহ। তুমি দোয়া করো।
চোখ ছলছল করে ওঠে আরিফার। মাথাটাকে ছইয়ের দেওয়ালে হেলান দিয়ে দেয়। চোখ চুইয়ে গালে নামে অশ্রু। পানপাতার মতো মুখের তামাটে গালদুটো নদীর ভাঙা পাড় হয়ে ওঠে। চোখের জলের তোড়ে একটু একটু করে ধসে পড়ে সৌন্দর্যের লাবন্য। মুখ বড় অভাগী হয়ে ওঠে। দুঃখ আর যন্ত্রণা ঠাসাঠাসি করে লেগে থাকে এ গালে ও গালে।

চলবে...

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব ১৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১১

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১০

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৯

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৬

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৫

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১

এসএন 

 

Header Ad
Header Ad

অবশেষে সরিয়ে দেওয়া হলো মাউশির বিতর্কিত ডিজিকে

অধ্যাপক ড. এহতেসাম উল হক ও মাউশির লোগো। ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষক নেতাদের আন্দোলন ও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক (ডিজি) পদ থেকে অধ্যাপক ড. এহতেসাম উল হককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি শিক্ষা ক্যাডারের ১৪তম বিসিএসের কর্মকর্তা এবং পটুয়াখালী সরকারি কলেজের অধ্যাপক ছিলেন।

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি তার বিতর্কিত কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করে মাউশিতে সংযুক্ত করা হয়েছে। এদিকে, নতুন মহাপরিচালক হিসেবে অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খানকে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব মো. মাহবুব আলম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খানের এই দায়িত্ব কেবল সাময়িক, যা পদোন্নতি হিসেবে গণ্য হবে না। পরবর্তীতে নিয়মিত নিয়োগের মাধ্যমে মহাপরিচালক নিয়োগ হলে এই চলতি দায়িত্ব বাতিল হয়ে যাবে।

অধ্যাপক এহতেসাম উল হকের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এর আগে তিনি বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ থাকাকালীন শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়ন চালানোর অভিযোগে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। অভিযোগ রয়েছে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তথ্য তিনি পুলিশের কাছে সরবরাহ করেছিলেন।

২০২৩ সালের ৫ আগস্ট তার অপসারণের দাবিতে কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার অপসারণের দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ২০২১ সালের জুন মাসে বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে যোগদানের পর থেকে তিনি নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে যান। তিনি বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয় সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

অভিযোগ রয়েছে, অধ্যক্ষ থাকাকালীন তিনি শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন এবং আন্দোলনে অসহযোগিতা করতেন। এমনকি কলেজের গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতেন, যা তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনও ব্যবহার করতেন। তিনি কলেজের বিদ্যুৎ ব্যবহার করে নিজের বাসায় গ্রিল নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ করিয়েছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে চাকরি খেয়ে ফেলার হুমকি দিতেন এবং বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) খারাপ করে দেওয়ার ভয় দেখাতেন। এছাড়া, চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন না দিয়ে বিদায় করে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ডিজি পদ থেকে এহতেসাম উল হককে অপসারণের খবরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, একজন বিতর্কিত ব্যক্তি শিক্ষাখাতের এত বড় দায়িত্বে থাকতে পারেন না। তার অপসারণের মাধ্যমে প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রতি সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে।

Header Ad
Header Ad

২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ৩৩ ডিসি ওএসডি

ছবি: সংগৃহীত

২০১৮ সালের বিতর্কিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ৩৩ জন জেলা প্রশাসককে (ডিসি) বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত ছয়টি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিতর্কিত নির্বাচনে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের কারণে এই কর্মকর্তাদের ওএসডি করা হয়েছে। এর আগে একই কারণে আরও ১২ জন কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছিল।

ওএসডি হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের পরিচালক (যুগ্মসচিব) কবীর মাহমুদ, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. মাহমুদুল আলম, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. আবুল ফজল মীর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের সদস্য-পরিচালক (যুগ্মসচিব) মঈনউল ইসলাম, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য (যুগ্মসচিব) মো. ওয়াহিদুজ্জামান, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (সংযুক্ত) এ কে এম মামুনুর রশিদ এবং বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বাপবিবো) সদস্য (যুগ্মসচিব) ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম।

এছাড়া তালিকায় রয়েছেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব কাজী আবু তাহের, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সদস্য (যুগ্মসচিব) মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব (সংযুক্ত) আনার কলি মাহবুব, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য (যুগ্মসচিব) সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী, কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব সাবিনা ইয়াসমিন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আতাউল গনি এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (সংযুক্ত) আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন।

এছাড়া, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব এ জেড এম নুরুল হক, বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের পরিচালক (যুগ্ম-সচিব) এস এম আজিয়র রহমান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সচিব (যুগ্ম-সচিব) মো. মাসুদ আলম সিদ্দিক এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম-সচিব গোপাল চন্দ্র দাশসহ আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা রয়েছেন।

প্রসঙ্গত, বিতর্কিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই ওই সময়ের রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এবার সেই নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের পর্যায়ক্রমে ওএসডি করা হচ্ছে বলে মনে করছেন প্রশাসনিক বিশ্লেষকরা।

Header Ad
Header Ad

ট্রাম্পের বিস্ফোরক দাবি: চলমান যুদ্ধের সূচনা ইউক্রেনই করেছিল

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য ইউক্রেনকেই দায়ী করে নতুন বিতর্ক উসকে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন রাজনীতিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে পরিচিত ট্রাম্প এবার ইউক্রেনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, চলমান যুদ্ধের সূচনা ইউক্রেনই করেছিল।

মঙ্গলবার (স্থানীয় সময়) ফ্লোরিডার মার-আ-লাগোতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রতি কঠোর মনোভাব প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ইউক্রেনে একটি নতুন নির্বাচন হওয়া উচিত। বিশ্লেষকদের মতে, এটি জেলেনস্কিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনারই ইঙ্গিত।

ট্রাম্প আরও বলেন, ইউক্রেনে দীর্ঘদিন ধরে কোনো নির্বাচন হয়নি এবং সেখানে সামরিক আইন চলছে। তার দাবি, জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা মাত্র চার শতাংশে নেমে গেছে, আর দেশটি ধ্বংসের পথে। যদিও যুদ্ধকালীন সময়ে নির্ভরযোগ্য জনমত জরিপ পাওয়া কঠিন, তবে বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা ট্রাম্পের দাবির মতো এতটা কমেনি।

এছাড়া, ইউক্রেনের নির্বাচন প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, "তারা কি জনগণের মতামত নিয়েছে? তারা আলোচনার টেবিলে বসতে চায়, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সেখানে কোনো নির্বাচন হয়নি।"

প্রসঙ্গত, ইউক্রেনে ২০২৪ সালের এপ্রিলে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও দেশটির সংবিধান অনুযায়ী, যুদ্ধকালীন সময়ে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই মন্তব্য কৌতুকপূর্ণ, কারণ তিনি নিজেই ২০২০ সালের মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।

ট্রাম্প আরও দাবি করেন, ইউক্রেন চাইলে যুদ্ধ বন্ধ করতে পারতো এবং তাদের উচিত ছিল রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতায় যাওয়া। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এর অর্থ হলো—ইউক্রেনকে হয় রাশিয়ার মিত্র সরকার গঠনের প্রস্তাবে রাজি হতে হতো, নয়তো প্রতিরোধ ছেড়ে দিয়ে আত্মসমর্পণ করতে হতো।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক অবস্থান ইঙ্গিত দেয় যে, তিনি পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ইউক্রেনকে সমর্থন না দিয়ে বরং রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি বিতর্কিত শান্তিচুক্তির দিকে এগোতে পারেন, যা পুতিনের জন্য বড় ধরনের কূটনৈতিক জয় হিসেবে বিবেচিত হবে।

সূত্র: সিএনএন

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

অবশেষে সরিয়ে দেওয়া হলো মাউশির বিতর্কিত ডিজিকে
২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ৩৩ ডিসি ওএসডি
ট্রাম্পের বিস্ফোরক দাবি: চলমান যুদ্ধের সূচনা ইউক্রেনই করেছিল
ডিবির সাবেক প্রধান হারুনের ১০০ বিঘা জমি, ৫ ভবন ও ২ ফ্ল্যাট ক্রোকের নির্দেশ
দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন রেখা গুপ্তা, বিজেপির সিদ্ধান্তে চমক
একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতির শহীদ মিনারে না যাওয়ার আহ্বান
নামাজি জীবনসঙ্গী খুঁজছেন আইশা খান
গাইবান্ধায় গাঁজাসহ আটক এএসআইকে কারাগারে প্রেরণ
উপদেষ্টাদের মিটিংয়ে কোন প্রটোকলে গিয়েছিলেন হাসনাত-পাটোয়ারী: ছাত্রদল সেক্রেটারি
সরকারে থেকে ‘নতুন দল’ গঠন করলে মেনে নেওয়া হবে না: মির্জা ফখরুল
হোস্টিং সামিট ২০২৫ অনুষ্ঠিত
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচে পাকিস্তানকে ৩২১ রানের বড় লক্ষ্য দিলো নিউজিল্যান্ড
বৈষম্যবিরোধী নামধারী শীর্ষ নেতার নির্দেশে কুয়েটে ছাত্রদলের ওপর হামলা: রাকিব
যান্ত্রিক ত্রুটিতে আবারও বন্ধ বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র
কুবিতে ছাত্র সংসদের দাবিতে মানববন্ধন ও সন্ত্রাসবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল
২২০ জনকে নিয়োগ দেবে সমরাস্ত্র কারখানা, এসএসসি পাসেও আবেদন
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে ২ দিনব্যাপি খামারি প্রশিক্ষণ
সবার সাত দিন কারাগারে থাকা উচিত: আদালতে পলক
বিপ্লবী সরকারের ডাক থেকে সরে এলেন কাফি  
নাঈম ভাই হেনা কোথায়?: ‘তুই অনেক দেরি করে ফেলেছিস বাপ্পা’