বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ৬ ফাল্গুন ১৪৩১
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-১৩

নেই দেশের নাগরিক

নবীর পিঠে বন্ধুত্বের হাত রাখে আতিফ। বিশ্বস্তের হাত। ভরসার হাত। পাশে থাকার হাত। সঙ্গে থাকার হাত। তারপর বলে, ‘কাঁদ কাঁদ নবী, কাঁদ, মানুষকে মাঝেমধ্যে কাঁদতে হয়। মানুষ নিজেকে যতই বলুক, আমি পাষাণ হয়ে গেছি, পুরোপুরি কখনো পাষাণ হতে পারে না রে। এই যে তোর চোখের পানি বলছে, তুই পুরোপুরি পাষাণ হতে পারিসনি। তুই পুরোপুরি পাষাণ হয়ে গেলে, তোর চোখে পানি ঝরত না। মাটির মানুষ পাথর হয়ে গেলে, সে কি আর মানুষ থাকে রে? থাকে না, সে তখন মূর্তি হয়ে যায়। যে মূর্তি কখনো কাঁদে না। কখনো হাসে না। আল্লাহর দেওয়া রুহু যতক্ষণ দেহে থাকবে, ততক্ষণ সে দেহ একটা জলজ্যান্ত মানুষ। সে মানুষ কাঁদে, সে মানুষ হাসে।’

বাইরে ঝমঝম করে বৃষ্টি নামল। প্রাকবর্ষার বৃষ্টি। আতিফ জানালাটার কাছে গিয়ে মুখ বাড়াল। পশমের মতো একটা হিমেল বাতাস গায়ে আদর করছে। পাহাড়ি অরণ্য ঝেঁপে নামছে বারিধারা। আনন্দে আহ্লাদে নেচে উঠছে বককন গাছের পাতা। কোমর দুলাচ্ছে জংলি ঝুমকালতা ফুল। মাথা চুবড়িয়ে ভিজছে কুরুক ফুল। হাতপা ছেড়ে দিয়ে বৃষ্টি ভেজা আকাশে উড়তে চায়ছে পরশপিপুল ফুল। এই বৃষ্টির ঝরনা আনন্দে আটখানা আরোহিলতা। আঁকড়ে ধরা গাছ থেকে ঝুলে পড়ছে শূন্যে। আতিফ বনশিমুল গাছগুলোর দিকে তাকিয়ে গুনগুন করে উঠল। জানালার হাওয়া দিয়ে ভেসে আসছে শ্বেতশুভ্র পাহাড়ি ভাঁট ফুলের গন্ধ। নাগবল্লি ফুলের সুবাস। বনশিমুল গাছের মগডালে বসা কালচে-নীল রঙের একটা পাহাড়ি নীলকণ্ঠ পাখি তার লাল ঠোঁট দিয়ে গা ঘষছে। গলার নীল আভাটা বৃষ্টিতে ভিজে আরও সতেজ লাগছে। পাশের ডালে ঝুপ মেরে ভিজছে খয়েরি রঙের একটা পাহাড়ি ধুমকল ঘুঘু। তার গোল চোখ জোড়া যেন মুক্তোর মতো জ্বলছে। আতিফের মনটাও এই মনোরম বৃষ্টিতে ভিজে ওঠে। মনের একতারা উদাসি সুরের ধ্বুন তোলে। নড়ে ওঠে ঠোঁট। হৃদয়ে বাসা বাঁধেন মির্জা গালিব।
‘কিস তরহ কাটে কোঈ
সাবহা-এ তার-এ বর্ষগাল
হ্যায় নজর খুকরদহ-এ
আখতার শুমারি, হায় হায়।’
তারপর নিজেই এর বাংলা অনুবাদ আওড়াতে থাকে আতিফ,
‘বর্ষা আঁধার রাত্রিগুলো
কাটবে বলো কোন আবেগে
তারা গোনার স্বভাব নিয়ে
দু চোখ আমার রয় যে জেগে।’

‘আতিফ কে?’ জিজ্ঞেস করলেন ইয়াসিন মাস্টার।
‘আমাদের ছোটভাই।’ বলল মতি।
‘ওহ, তা সে কোথায়? তাকেও কি বার্মাসেনারা ধরে নিয়ে গেছে?’
‘নাহ, সে কোথায় আমরা জানি না। তবে ও একদিন বলেছিল, ও নাকি দেশ স্বাধীনের কাজে গেছে।’ বুকের সিনা কিছুটা ফুলে উঠল মতির। শূন্যে চোখ খুলে তাকাল।
‘ওর সঙ্গে কি কন্টাক করা যাবে? ওর কি ফোন নম্বরটম্বর আছে?’
‘নাহ। যে ফোন থেকে ও ফোন করত, সে নম্বরে আর ফোন লাগছে না। বলছে, স্যুইচঅফ।’
‘কই, দেখি, নম্বরটা।’ উৎসুক হয়ে উঠলেন ইয়াসিন মাস্টার।
‘আমাদের মোবাইল তো বন্ধ। চার্জ নেই। অ তো অন করাও যাবে না।’ মতির কথা শেষ না হতেই, আরিফা আগ বাড়িয়ে ফট করে বলে উঠল, ‘আমার কাছে নম্বরটা লেখা আছে।’ বলেই সে টিনের বাক্সটা হড়াম করে খুলল। মতি যে আরিফাকে চোখের ইশারায় কিছু একটা বলবে তো আরিফা মতিকে খেয়ালই করল না। বাক্সের ওপরের টিনের পাতির ছোট একটা খুপরি থেকে একটা ভাঁজ করা সাদা কাগজ বের করল। মৃদু খসমস শব্দ হল। কাগজটার ভাঁজ খুলেই মতির হাতে দিল। মতি কাগজটা নিয়ে ইতস্তত করতে লাগল, আতিফ বলেছিল, ফোন নম্বরটা কাউকে দিও না। আমার বিপদ হতে পারে। মতিও জানে আজকাল কী সব যন্ত্রটন্ত্র আবিষ্কার হয়েছে, তাতে করে ফোনকল ট্র্যাক করে, যে ফোন করছে বা যে ফোন রিসিভ করছে, তাদের দুজনেরই লোকেশান ধরা যায়। কিন্তু এখন তো আর কিছু করার নেই। মাথামোটা আরিফা হুট করে নম্বরটা লোকটার সামনে বের করে দিল! এখন আর কী করে ‘না’ বলবে? অগত্যা মতি ইচ্ছে না থাকলেও নম্বরটা ইয়াসিন মাস্টারকে দিতে বাধ্য হল। তবুও দেওয়ার সময় হাত কচলে বলল, ‘এটা পুরোনো নম্বর, মনে হয় ফোন লাগবে না। এর আগে অনেকবার ফোন লাগেনি। ও তো ঘন ঘন নম্বর পাল্টায়।’ কাগজটা হাতে নিয়েই ইয়াসিন মাস্টার দেখলেন, নীল কালিতে লেখা বারো ডিজিটের একটা নম্বর। নম্বরটার কোড বাংলাদেশের। অর্থাৎ ছেলেটি বাংলাদেশে থাকে হয়ত। ইয়াসিন মাস্টারও জানে, আর জে এফ অর্থাৎ ‘রোহিঙ্গা জেহাদি ফৌজ’এর বেশ কয়েকটা প্রশিক্ষণ শিবির রয়েছে বাংলাদেশে। সেখান থেকে নাফ নদী পেরিয়ে আর জে এফ-এর সদস্যরা মায়ানমারে ঢুকে চোরাগুপ্তা হামলা চালায়। স্যুইসাইট অ্যাটাক করে। এদের হামলায় বার্মাসেনা মারা যাওয়ার খবর শুনে, মনে আনন্দ হলেও, মন থেকে সম্পূর্ণভাবে খুনখারাপি মেনে নিতে পারেন না ইয়াসিন মাস্টার। তিনি এখনো মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, অহিংসাই শ্রেষ্ঠ পথ। অহিংস পথেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান সম্ভব। রক্ত দিয়ে শুধু রক্ত ঝরানোই যায়, শত্রু কখনো আপন হয় না। ঘা ঘা’কে বাড়ায়, উপশম দিতে পারে না। এখন তো আর দুর্যোধনের পৃথিবী নেই? ইমাম হাসান হোসেনের পৃথিবীও নেই। এখন পৃথিবীটা তিলের দানার মতো ছোট্ট হয়ে গেছে। পৃথিবীর একপ্রান্তের মানুষরা করলে অন্যপ্রান্তের মানুষ শুনতে পায়। দেখতে পায়। সুতরাং আলোচনার মাধ্যমেই যেকোনো সমস্যার সমাধান করা যায়। যুদ্ধ কখনো সমাধান হতে পারে না। প্রথম প্রথম ইয়াসিন মাস্টার স্কুলের অন্যসব কিছু মাস্টারের পাল্লায় পড়ে, গোপনে আর জে এফ-এর ফান্ডে টাকা পাঠাতেন। গোপনে আসা তাদের লিফলেট, প্রচারপত্র, বইপত্তর পড়তেন। দু একবার গোপন মিটিং-এও গেছিলেন। কিন্তু মন মেনে নিতে পারেনি। তিনি ভেবেছিলেন, এভাবে বিচ্ছিন্নভাবে হামলা চালিয়ে কখনই স্বাধীন রাখাইন গড়ে উঠবে না। সেসবের জন্যে চাই গণআন্দোলন, চাই সত্যিকারের জননেতা।

প্যান্টের পকেট থেকে একটা রঙচটা সাদা-কালো মোবাইল বের করে, নম্বরটা টিপতে লাগলেন ইয়াসিন মাস্টার। এই ধরনের মোবাইলে বেশিক্ষণ চার্জ ধরে রাখে। মোবাইলের কিবোর্ডের নম্বর ‘টি’ ‘টি’ করে শব্দ করে উঠছে। মোবাইলটা কানে ধরে, নৌকার একধারে গিয়ে খাড়া হয়ে দাঁড়ালেন ইয়াসিন মাস্টার। সবার চোখ ইয়াসিন মাস্টারের দিকে। মতি একবার ভাবছে, ফোনটা যেন না লাগে। ফোন লাগলেই আতিফ বিপদে পড়তে পারে। তার নম্বর তো সব ট্র্যাক করা থাকে। আবার একবার ভাবছে, ফোনটা লাগুক, কথা বলা যাবে, বহুতদিন কথা বলা হয়নি। নুহু তো মুখ বাড়িয়েই আছে, ইয়াসিন মাস্টার ‘হ্যালো’ বলে উঠলেই সে ফোনটার কাছে কান লাগিয়ে দেবে। আরিফা মনে মনে অভিমানের সলতে পাকাচ্ছে, ফোনটা লাগুক, দেওরটাকে জাত করে বলব, অ্যা কী এমন বিপ্লবী হয়ে গেছ গ, বুড়ো বাপ-মা’র খবরটাও নেও না।

হালেমা ঘোরের মধ্যে আছেন। ঘোমটার আড়ালে জড়ানো চোখ দুটো ঘুলঘুল করছে। কোলের ছেলেটা কি আর বেঁচে আছে! ও বেঁচে থাকলে, নিশ্চয় ফোনটোন করত, মরণাপন্ন বাপটার খোঁজখবর নিত? আল্লাহ এত নিষ্ঠুর কেন হন? বুড়ো বাপ-মা বেঁচে থাকতে জোয়ান ছেলেকে তুলে নেন! কিছুক্ষণ কানে ফোনটা ধরার পর, আবারও রিডায়াল করলেন ইয়াসিন মাস্টার। ‘নাহ! ফোন ঢুকছে না! শুধু কু কু করছে!’ বিড়বিড় করলেন ইয়াসিন মাস্টার। যেহেতু স্যুইচঅফ বলছে না, শুধু কু কু করছে, তাই ইয়াসিন মাস্টার ভাবলেন, হয়ত নেটওয়ার্ক প্রবলেম। আবার ডায়াল করলেন। নাহ, ফোন ঢুকছেই না। ইয়াসিন মাস্টারকে বারবার ফোন লাগাতে দেখে, নুহু ফট করে জিজ্ঞেস করল, ‘ফোনে টাকা আছে তো?’
‘আরে হ্যাঁ হ্যাঁ, এখনো প্রচুর ব্যালেন্স। এই তো গত পরশু পাঁচশ তেত্রিশ টাকা মেরেছি। এস টি ডি, আই এস ডি সব ফোন করা যাবে।’
‘দেখি, আরেকবার কী বলে’ বলে ইয়াসিন মাস্টার আরও একবার ডায়াল করলেন। কু কু করতে করতে ফোনটা এবার দুম করে কথা বলে উঠল, ‘যে নম্বরে আপনি কল করছেন, সেটি এখন বন্ধ করা আছে!’
‘স্যুইচঅফ!’ আফসোস করলেন ইয়াসিন মাস্টার।
‘আমি বললাম না, ওটা পুরনো নম্বর। ফোন না লাগতেও পারে।’ ধড়মড়িয়ে বলল মতি। যেন তার ভেতর থেকে একটা চাপা ধুকপুক বেরিয়ে গেল। নুহু, আরিফাদের মুখ ভাড়। হালেমা ছইয়ের ভেতর থেকে বললেন, ‘ছোট খোকাকে ফোনে পাওয়া গেল?’
‘নাহ মা, মোবাইল বন্ধ করা আছে।’ কথা উঁচিয়ে বলল মতি।
‘আমি বলেছিলাম না, ও আর বেঁচে নেই। শয়তান সেনারা ওকে মেরে ফেলেছে। ওকি ওদের সঙ্গে পেরে ওঠে রে? ওদের হাতেই তো ক্ষমতা। অস্ত্র। গোলাবারুদ। আর আমার একটা পুঁচকে ছেলে ওদের কী বারোটা বাজাবে? তবে এটা তো ভালো হল, ও বীরের মতো যুদ্ধ করে মরেছে, আর আমরা? আমরা না খেয়ে শুকিয়ে শুকিয়ে শকুনের পেটে যাব। শকুনের খাবার হব। পারলে, তোরাও যুদ্ধ করতে যা, এই নদীর বুকে পোকামাকড়ের মতো না মরে, মানুষের মতো মর। আমরা বুড়া বুড়ি এই রক্তগঙ্গা বওয়া নদীর পানি খেয়েই থাকি। তারপর আল্লাহর হুকুম হয়ে গেলে, হয় শকুনের পেটে নয়তো কুমিরের পেটে ঠিক চলে যাব। আল্লাহ তো সেটাই চেয়েছে না? আল্লাহর ইচ্ছের ষোলকলা পূর্ণ হোক।’ ঘোমটার ভেতর থেকে ফ্যাচ ফ্যাচ করে অভিমানি শব্দগুলো ভেসে এল। ভেজা গলায় কথা জড়িয়ে গেল। হালেমা আল্লাহকে দুষলেন। নদীর বুকে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকা অন্ধকার হাত পা গুটোতে শুরু করেছে। ভোরের আলোতে টলমল করছে নাফ নদী। ভাগ্যিস নদীতে জল আছে, নদী মাটি হয়ে গেলেই আর ভিটেছাড়া রোহিঙ্গাদের বেঁচে থাকা যেত না। দেশছাড়া রোহিঙ্গাদের দেশ হয়ে উঠত না নদী। দূরে একটা মাছরাঙা ছো মেরে মাছ ধরল। সেটা খেয়াল করল মতি। ভাবল, এভাবেই তো একজন আরেকজনের শিকার হয়ে ওঠে। একজন আরেকজনের হয়ে ওঠে পেটের খোরাক। দূরে বঙ্গোপসাগরের দিকে অনেকগুলো নৌকা ভেসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। ভোরের মায়াবি আলোতে সেগুলোকে মনে হচ্ছে কাগজের নৌকা। আকাশ থেকে একে একে সারারাত পাহারা দেওয়া ফুটন্ত তারাগুলো মিট মিট করে মিশে যাচ্ছে গহিনে। পুবদিগন্ত একটু একটু করে হয়ে উঠছে লাল। কপালে হলুদ রেখার টান। নয়াপাড়া থেকে মিহি করে ভেসে আসছে ফজরের আযান। মতি বলল, ‘মা, নামাজ পড়ে নাও। আযান হচ্ছে।’

চলবে…

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১১

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১০

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৯

 

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৮

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৬

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৫

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১

আরএ/

Header Ad
Header Ad

অবশেষে সরিয়ে দেওয়া হলো মাউশির বিতর্কিত ডিজিকে

অধ্যাপক ড. এহতেসাম উল হক ও মাউশির লোগো। ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষক নেতাদের আন্দোলন ও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক (ডিজি) পদ থেকে অধ্যাপক ড. এহতেসাম উল হককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি শিক্ষা ক্যাডারের ১৪তম বিসিএসের কর্মকর্তা এবং পটুয়াখালী সরকারি কলেজের অধ্যাপক ছিলেন।

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি তার বিতর্কিত কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করে মাউশিতে সংযুক্ত করা হয়েছে। এদিকে, নতুন মহাপরিচালক হিসেবে অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খানকে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব মো. মাহবুব আলম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খানের এই দায়িত্ব কেবল সাময়িক, যা পদোন্নতি হিসেবে গণ্য হবে না। পরবর্তীতে নিয়মিত নিয়োগের মাধ্যমে মহাপরিচালক নিয়োগ হলে এই চলতি দায়িত্ব বাতিল হয়ে যাবে।

অধ্যাপক এহতেসাম উল হকের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এর আগে তিনি বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ থাকাকালীন শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়ন চালানোর অভিযোগে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। অভিযোগ রয়েছে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তথ্য তিনি পুলিশের কাছে সরবরাহ করেছিলেন।

২০২৩ সালের ৫ আগস্ট তার অপসারণের দাবিতে কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার অপসারণের দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ২০২১ সালের জুন মাসে বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে যোগদানের পর থেকে তিনি নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে যান। তিনি বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয় সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

অভিযোগ রয়েছে, অধ্যক্ষ থাকাকালীন তিনি শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন এবং আন্দোলনে অসহযোগিতা করতেন। এমনকি কলেজের গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতেন, যা তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনও ব্যবহার করতেন। তিনি কলেজের বিদ্যুৎ ব্যবহার করে নিজের বাসায় গ্রিল নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ করিয়েছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে চাকরি খেয়ে ফেলার হুমকি দিতেন এবং বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) খারাপ করে দেওয়ার ভয় দেখাতেন। এছাড়া, চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন না দিয়ে বিদায় করে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ডিজি পদ থেকে এহতেসাম উল হককে অপসারণের খবরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, একজন বিতর্কিত ব্যক্তি শিক্ষাখাতের এত বড় দায়িত্বে থাকতে পারেন না। তার অপসারণের মাধ্যমে প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রতি সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে।

Header Ad
Header Ad

২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ৩৩ ডিসি ওএসডি

ছবি: সংগৃহীত

২০১৮ সালের বিতর্কিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ৩৩ জন জেলা প্রশাসককে (ডিসি) বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত ছয়টি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিতর্কিত নির্বাচনে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের কারণে এই কর্মকর্তাদের ওএসডি করা হয়েছে। এর আগে একই কারণে আরও ১২ জন কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছিল।

ওএসডি হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের পরিচালক (যুগ্মসচিব) কবীর মাহমুদ, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. মাহমুদুল আলম, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. আবুল ফজল মীর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের সদস্য-পরিচালক (যুগ্মসচিব) মঈনউল ইসলাম, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য (যুগ্মসচিব) মো. ওয়াহিদুজ্জামান, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (সংযুক্ত) এ কে এম মামুনুর রশিদ এবং বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বাপবিবো) সদস্য (যুগ্মসচিব) ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম।

এছাড়া তালিকায় রয়েছেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব কাজী আবু তাহের, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সদস্য (যুগ্মসচিব) মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব (সংযুক্ত) আনার কলি মাহবুব, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য (যুগ্মসচিব) সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী, কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব সাবিনা ইয়াসমিন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আতাউল গনি এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (সংযুক্ত) আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন।

এছাড়া, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব এ জেড এম নুরুল হক, বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের পরিচালক (যুগ্ম-সচিব) এস এম আজিয়র রহমান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সচিব (যুগ্ম-সচিব) মো. মাসুদ আলম সিদ্দিক এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম-সচিব গোপাল চন্দ্র দাশসহ আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা রয়েছেন।

প্রসঙ্গত, বিতর্কিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই ওই সময়ের রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এবার সেই নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের পর্যায়ক্রমে ওএসডি করা হচ্ছে বলে মনে করছেন প্রশাসনিক বিশ্লেষকরা।

Header Ad
Header Ad

ট্রাম্পের বিস্ফোরক দাবি: চলমান যুদ্ধের সূচনা ইউক্রেনই করেছিল

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য ইউক্রেনকেই দায়ী করে নতুন বিতর্ক উসকে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন রাজনীতিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে পরিচিত ট্রাম্প এবার ইউক্রেনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, চলমান যুদ্ধের সূচনা ইউক্রেনই করেছিল।

মঙ্গলবার (স্থানীয় সময়) ফ্লোরিডার মার-আ-লাগোতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রতি কঠোর মনোভাব প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ইউক্রেনে একটি নতুন নির্বাচন হওয়া উচিত। বিশ্লেষকদের মতে, এটি জেলেনস্কিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনারই ইঙ্গিত।

ট্রাম্প আরও বলেন, ইউক্রেনে দীর্ঘদিন ধরে কোনো নির্বাচন হয়নি এবং সেখানে সামরিক আইন চলছে। তার দাবি, জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা মাত্র চার শতাংশে নেমে গেছে, আর দেশটি ধ্বংসের পথে। যদিও যুদ্ধকালীন সময়ে নির্ভরযোগ্য জনমত জরিপ পাওয়া কঠিন, তবে বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা ট্রাম্পের দাবির মতো এতটা কমেনি।

এছাড়া, ইউক্রেনের নির্বাচন প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, "তারা কি জনগণের মতামত নিয়েছে? তারা আলোচনার টেবিলে বসতে চায়, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সেখানে কোনো নির্বাচন হয়নি।"

প্রসঙ্গত, ইউক্রেনে ২০২৪ সালের এপ্রিলে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও দেশটির সংবিধান অনুযায়ী, যুদ্ধকালীন সময়ে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই মন্তব্য কৌতুকপূর্ণ, কারণ তিনি নিজেই ২০২০ সালের মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।

ট্রাম্প আরও দাবি করেন, ইউক্রেন চাইলে যুদ্ধ বন্ধ করতে পারতো এবং তাদের উচিত ছিল রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতায় যাওয়া। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এর অর্থ হলো—ইউক্রেনকে হয় রাশিয়ার মিত্র সরকার গঠনের প্রস্তাবে রাজি হতে হতো, নয়তো প্রতিরোধ ছেড়ে দিয়ে আত্মসমর্পণ করতে হতো।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক অবস্থান ইঙ্গিত দেয় যে, তিনি পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ইউক্রেনকে সমর্থন না দিয়ে বরং রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি বিতর্কিত শান্তিচুক্তির দিকে এগোতে পারেন, যা পুতিনের জন্য বড় ধরনের কূটনৈতিক জয় হিসেবে বিবেচিত হবে।

সূত্র: সিএনএন

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

অবশেষে সরিয়ে দেওয়া হলো মাউশির বিতর্কিত ডিজিকে
২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ৩৩ ডিসি ওএসডি
ট্রাম্পের বিস্ফোরক দাবি: চলমান যুদ্ধের সূচনা ইউক্রেনই করেছিল
ডিবির সাবেক প্রধান হারুনের ১০০ বিঘা জমি, ৫ ভবন ও ২ ফ্ল্যাট ক্রোকের নির্দেশ
দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন রেখা গুপ্তা, বিজেপির সিদ্ধান্তে চমক
একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতির শহীদ মিনারে না যাওয়ার আহ্বান
নামাজি জীবনসঙ্গী খুঁজছেন আইশা খান
গাইবান্ধায় গাঁজাসহ আটক এএসআইকে কারাগারে প্রেরণ
উপদেষ্টাদের মিটিংয়ে কোন প্রটোকলে গিয়েছিলেন হাসনাত-পাটোয়ারী: ছাত্রদল সেক্রেটারি
সরকারে থেকে ‘নতুন দল’ গঠন করলে মেনে নেওয়া হবে না: মির্জা ফখরুল
হোস্টিং সামিট ২০২৫ অনুষ্ঠিত
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচে পাকিস্তানকে ৩২১ রানের বড় লক্ষ্য দিলো নিউজিল্যান্ড
বৈষম্যবিরোধী নামধারী শীর্ষ নেতার নির্দেশে কুয়েটে ছাত্রদলের ওপর হামলা: রাকিব
যান্ত্রিক ত্রুটিতে আবারও বন্ধ বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র
কুবিতে ছাত্র সংসদের দাবিতে মানববন্ধন ও সন্ত্রাসবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল
২২০ জনকে নিয়োগ দেবে সমরাস্ত্র কারখানা, এসএসসি পাসেও আবেদন
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে ২ দিনব্যাপি খামারি প্রশিক্ষণ
সবার সাত দিন কারাগারে থাকা উচিত: আদালতে পলক
বিপ্লবী সরকারের ডাক থেকে সরে এলেন কাফি  
নাঈম ভাই হেনা কোথায়?: ‘তুই অনেক দেরি করে ফেলেছিস বাপ্পা’