বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-১৩

নেই দেশের নাগরিক

নবীর পিঠে বন্ধুত্বের হাত রাখে আতিফ। বিশ্বস্তের হাত। ভরসার হাত। পাশে থাকার হাত। সঙ্গে থাকার হাত। তারপর বলে, ‘কাঁদ কাঁদ নবী, কাঁদ, মানুষকে মাঝেমধ্যে কাঁদতে হয়। মানুষ নিজেকে যতই বলুক, আমি পাষাণ হয়ে গেছি, পুরোপুরি কখনো পাষাণ হতে পারে না রে। এই যে তোর চোখের পানি বলছে, তুই পুরোপুরি পাষাণ হতে পারিসনি। তুই পুরোপুরি পাষাণ হয়ে গেলে, তোর চোখে পানি ঝরত না। মাটির মানুষ পাথর হয়ে গেলে, সে কি আর মানুষ থাকে রে? থাকে না, সে তখন মূর্তি হয়ে যায়। যে মূর্তি কখনো কাঁদে না। কখনো হাসে না। আল্লাহর দেওয়া রুহু যতক্ষণ দেহে থাকবে, ততক্ষণ সে দেহ একটা জলজ্যান্ত মানুষ। সে মানুষ কাঁদে, সে মানুষ হাসে।’

বাইরে ঝমঝম করে বৃষ্টি নামল। প্রাকবর্ষার বৃষ্টি। আতিফ জানালাটার কাছে গিয়ে মুখ বাড়াল। পশমের মতো একটা হিমেল বাতাস গায়ে আদর করছে। পাহাড়ি অরণ্য ঝেঁপে নামছে বারিধারা। আনন্দে আহ্লাদে নেচে উঠছে বককন গাছের পাতা। কোমর দুলাচ্ছে জংলি ঝুমকালতা ফুল। মাথা চুবড়িয়ে ভিজছে কুরুক ফুল। হাতপা ছেড়ে দিয়ে বৃষ্টি ভেজা আকাশে উড়তে চায়ছে পরশপিপুল ফুল। এই বৃষ্টির ঝরনা আনন্দে আটখানা আরোহিলতা। আঁকড়ে ধরা গাছ থেকে ঝুলে পড়ছে শূন্যে। আতিফ বনশিমুল গাছগুলোর দিকে তাকিয়ে গুনগুন করে উঠল। জানালার হাওয়া দিয়ে ভেসে আসছে শ্বেতশুভ্র পাহাড়ি ভাঁট ফুলের গন্ধ। নাগবল্লি ফুলের সুবাস। বনশিমুল গাছের মগডালে বসা কালচে-নীল রঙের একটা পাহাড়ি নীলকণ্ঠ পাখি তার লাল ঠোঁট দিয়ে গা ঘষছে। গলার নীল আভাটা বৃষ্টিতে ভিজে আরও সতেজ লাগছে। পাশের ডালে ঝুপ মেরে ভিজছে খয়েরি রঙের একটা পাহাড়ি ধুমকল ঘুঘু। তার গোল চোখ জোড়া যেন মুক্তোর মতো জ্বলছে। আতিফের মনটাও এই মনোরম বৃষ্টিতে ভিজে ওঠে। মনের একতারা উদাসি সুরের ধ্বুন তোলে। নড়ে ওঠে ঠোঁট। হৃদয়ে বাসা বাঁধেন মির্জা গালিব।
‘কিস তরহ কাটে কোঈ
সাবহা-এ তার-এ বর্ষগাল
হ্যায় নজর খুকরদহ-এ
আখতার শুমারি, হায় হায়।’
তারপর নিজেই এর বাংলা অনুবাদ আওড়াতে থাকে আতিফ,
‘বর্ষা আঁধার রাত্রিগুলো
কাটবে বলো কোন আবেগে
তারা গোনার স্বভাব নিয়ে
দু চোখ আমার রয় যে জেগে।’

‘আতিফ কে?’ জিজ্ঞেস করলেন ইয়াসিন মাস্টার।
‘আমাদের ছোটভাই।’ বলল মতি।
‘ওহ, তা সে কোথায়? তাকেও কি বার্মাসেনারা ধরে নিয়ে গেছে?’
‘নাহ, সে কোথায় আমরা জানি না। তবে ও একদিন বলেছিল, ও নাকি দেশ স্বাধীনের কাজে গেছে।’ বুকের সিনা কিছুটা ফুলে উঠল মতির। শূন্যে চোখ খুলে তাকাল।
‘ওর সঙ্গে কি কন্টাক করা যাবে? ওর কি ফোন নম্বরটম্বর আছে?’
‘নাহ। যে ফোন থেকে ও ফোন করত, সে নম্বরে আর ফোন লাগছে না। বলছে, স্যুইচঅফ।’
‘কই, দেখি, নম্বরটা।’ উৎসুক হয়ে উঠলেন ইয়াসিন মাস্টার।
‘আমাদের মোবাইল তো বন্ধ। চার্জ নেই। অ তো অন করাও যাবে না।’ মতির কথা শেষ না হতেই, আরিফা আগ বাড়িয়ে ফট করে বলে উঠল, ‘আমার কাছে নম্বরটা লেখা আছে।’ বলেই সে টিনের বাক্সটা হড়াম করে খুলল। মতি যে আরিফাকে চোখের ইশারায় কিছু একটা বলবে তো আরিফা মতিকে খেয়ালই করল না। বাক্সের ওপরের টিনের পাতির ছোট একটা খুপরি থেকে একটা ভাঁজ করা সাদা কাগজ বের করল। মৃদু খসমস শব্দ হল। কাগজটার ভাঁজ খুলেই মতির হাতে দিল। মতি কাগজটা নিয়ে ইতস্তত করতে লাগল, আতিফ বলেছিল, ফোন নম্বরটা কাউকে দিও না। আমার বিপদ হতে পারে। মতিও জানে আজকাল কী সব যন্ত্রটন্ত্র আবিষ্কার হয়েছে, তাতে করে ফোনকল ট্র্যাক করে, যে ফোন করছে বা যে ফোন রিসিভ করছে, তাদের দুজনেরই লোকেশান ধরা যায়। কিন্তু এখন তো আর কিছু করার নেই। মাথামোটা আরিফা হুট করে নম্বরটা লোকটার সামনে বের করে দিল! এখন আর কী করে ‘না’ বলবে? অগত্যা মতি ইচ্ছে না থাকলেও নম্বরটা ইয়াসিন মাস্টারকে দিতে বাধ্য হল। তবুও দেওয়ার সময় হাত কচলে বলল, ‘এটা পুরোনো নম্বর, মনে হয় ফোন লাগবে না। এর আগে অনেকবার ফোন লাগেনি। ও তো ঘন ঘন নম্বর পাল্টায়।’ কাগজটা হাতে নিয়েই ইয়াসিন মাস্টার দেখলেন, নীল কালিতে লেখা বারো ডিজিটের একটা নম্বর। নম্বরটার কোড বাংলাদেশের। অর্থাৎ ছেলেটি বাংলাদেশে থাকে হয়ত। ইয়াসিন মাস্টারও জানে, আর জে এফ অর্থাৎ ‘রোহিঙ্গা জেহাদি ফৌজ’এর বেশ কয়েকটা প্রশিক্ষণ শিবির রয়েছে বাংলাদেশে। সেখান থেকে নাফ নদী পেরিয়ে আর জে এফ-এর সদস্যরা মায়ানমারে ঢুকে চোরাগুপ্তা হামলা চালায়। স্যুইসাইট অ্যাটাক করে। এদের হামলায় বার্মাসেনা মারা যাওয়ার খবর শুনে, মনে আনন্দ হলেও, মন থেকে সম্পূর্ণভাবে খুনখারাপি মেনে নিতে পারেন না ইয়াসিন মাস্টার। তিনি এখনো মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, অহিংসাই শ্রেষ্ঠ পথ। অহিংস পথেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান সম্ভব। রক্ত দিয়ে শুধু রক্ত ঝরানোই যায়, শত্রু কখনো আপন হয় না। ঘা ঘা’কে বাড়ায়, উপশম দিতে পারে না। এখন তো আর দুর্যোধনের পৃথিবী নেই? ইমাম হাসান হোসেনের পৃথিবীও নেই। এখন পৃথিবীটা তিলের দানার মতো ছোট্ট হয়ে গেছে। পৃথিবীর একপ্রান্তের মানুষরা করলে অন্যপ্রান্তের মানুষ শুনতে পায়। দেখতে পায়। সুতরাং আলোচনার মাধ্যমেই যেকোনো সমস্যার সমাধান করা যায়। যুদ্ধ কখনো সমাধান হতে পারে না। প্রথম প্রথম ইয়াসিন মাস্টার স্কুলের অন্যসব কিছু মাস্টারের পাল্লায় পড়ে, গোপনে আর জে এফ-এর ফান্ডে টাকা পাঠাতেন। গোপনে আসা তাদের লিফলেট, প্রচারপত্র, বইপত্তর পড়তেন। দু একবার গোপন মিটিং-এও গেছিলেন। কিন্তু মন মেনে নিতে পারেনি। তিনি ভেবেছিলেন, এভাবে বিচ্ছিন্নভাবে হামলা চালিয়ে কখনই স্বাধীন রাখাইন গড়ে উঠবে না। সেসবের জন্যে চাই গণআন্দোলন, চাই সত্যিকারের জননেতা।

প্যান্টের পকেট থেকে একটা রঙচটা সাদা-কালো মোবাইল বের করে, নম্বরটা টিপতে লাগলেন ইয়াসিন মাস্টার। এই ধরনের মোবাইলে বেশিক্ষণ চার্জ ধরে রাখে। মোবাইলের কিবোর্ডের নম্বর ‘টি’ ‘টি’ করে শব্দ করে উঠছে। মোবাইলটা কানে ধরে, নৌকার একধারে গিয়ে খাড়া হয়ে দাঁড়ালেন ইয়াসিন মাস্টার। সবার চোখ ইয়াসিন মাস্টারের দিকে। মতি একবার ভাবছে, ফোনটা যেন না লাগে। ফোন লাগলেই আতিফ বিপদে পড়তে পারে। তার নম্বর তো সব ট্র্যাক করা থাকে। আবার একবার ভাবছে, ফোনটা লাগুক, কথা বলা যাবে, বহুতদিন কথা বলা হয়নি। নুহু তো মুখ বাড়িয়েই আছে, ইয়াসিন মাস্টার ‘হ্যালো’ বলে উঠলেই সে ফোনটার কাছে কান লাগিয়ে দেবে। আরিফা মনে মনে অভিমানের সলতে পাকাচ্ছে, ফোনটা লাগুক, দেওরটাকে জাত করে বলব, অ্যা কী এমন বিপ্লবী হয়ে গেছ গ, বুড়ো বাপ-মা’র খবরটাও নেও না।

হালেমা ঘোরের মধ্যে আছেন। ঘোমটার আড়ালে জড়ানো চোখ দুটো ঘুলঘুল করছে। কোলের ছেলেটা কি আর বেঁচে আছে! ও বেঁচে থাকলে, নিশ্চয় ফোনটোন করত, মরণাপন্ন বাপটার খোঁজখবর নিত? আল্লাহ এত নিষ্ঠুর কেন হন? বুড়ো বাপ-মা বেঁচে থাকতে জোয়ান ছেলেকে তুলে নেন! কিছুক্ষণ কানে ফোনটা ধরার পর, আবারও রিডায়াল করলেন ইয়াসিন মাস্টার। ‘নাহ! ফোন ঢুকছে না! শুধু কু কু করছে!’ বিড়বিড় করলেন ইয়াসিন মাস্টার। যেহেতু স্যুইচঅফ বলছে না, শুধু কু কু করছে, তাই ইয়াসিন মাস্টার ভাবলেন, হয়ত নেটওয়ার্ক প্রবলেম। আবার ডায়াল করলেন। নাহ, ফোন ঢুকছেই না। ইয়াসিন মাস্টারকে বারবার ফোন লাগাতে দেখে, নুহু ফট করে জিজ্ঞেস করল, ‘ফোনে টাকা আছে তো?’
‘আরে হ্যাঁ হ্যাঁ, এখনো প্রচুর ব্যালেন্স। এই তো গত পরশু পাঁচশ তেত্রিশ টাকা মেরেছি। এস টি ডি, আই এস ডি সব ফোন করা যাবে।’
‘দেখি, আরেকবার কী বলে’ বলে ইয়াসিন মাস্টার আরও একবার ডায়াল করলেন। কু কু করতে করতে ফোনটা এবার দুম করে কথা বলে উঠল, ‘যে নম্বরে আপনি কল করছেন, সেটি এখন বন্ধ করা আছে!’
‘স্যুইচঅফ!’ আফসোস করলেন ইয়াসিন মাস্টার।
‘আমি বললাম না, ওটা পুরনো নম্বর। ফোন না লাগতেও পারে।’ ধড়মড়িয়ে বলল মতি। যেন তার ভেতর থেকে একটা চাপা ধুকপুক বেরিয়ে গেল। নুহু, আরিফাদের মুখ ভাড়। হালেমা ছইয়ের ভেতর থেকে বললেন, ‘ছোট খোকাকে ফোনে পাওয়া গেল?’
‘নাহ মা, মোবাইল বন্ধ করা আছে।’ কথা উঁচিয়ে বলল মতি।
‘আমি বলেছিলাম না, ও আর বেঁচে নেই। শয়তান সেনারা ওকে মেরে ফেলেছে। ওকি ওদের সঙ্গে পেরে ওঠে রে? ওদের হাতেই তো ক্ষমতা। অস্ত্র। গোলাবারুদ। আর আমার একটা পুঁচকে ছেলে ওদের কী বারোটা বাজাবে? তবে এটা তো ভালো হল, ও বীরের মতো যুদ্ধ করে মরেছে, আর আমরা? আমরা না খেয়ে শুকিয়ে শুকিয়ে শকুনের পেটে যাব। শকুনের খাবার হব। পারলে, তোরাও যুদ্ধ করতে যা, এই নদীর বুকে পোকামাকড়ের মতো না মরে, মানুষের মতো মর। আমরা বুড়া বুড়ি এই রক্তগঙ্গা বওয়া নদীর পানি খেয়েই থাকি। তারপর আল্লাহর হুকুম হয়ে গেলে, হয় শকুনের পেটে নয়তো কুমিরের পেটে ঠিক চলে যাব। আল্লাহ তো সেটাই চেয়েছে না? আল্লাহর ইচ্ছের ষোলকলা পূর্ণ হোক।’ ঘোমটার ভেতর থেকে ফ্যাচ ফ্যাচ করে অভিমানি শব্দগুলো ভেসে এল। ভেজা গলায় কথা জড়িয়ে গেল। হালেমা আল্লাহকে দুষলেন। নদীর বুকে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকা অন্ধকার হাত পা গুটোতে শুরু করেছে। ভোরের আলোতে টলমল করছে নাফ নদী। ভাগ্যিস নদীতে জল আছে, নদী মাটি হয়ে গেলেই আর ভিটেছাড়া রোহিঙ্গাদের বেঁচে থাকা যেত না। দেশছাড়া রোহিঙ্গাদের দেশ হয়ে উঠত না নদী। দূরে একটা মাছরাঙা ছো মেরে মাছ ধরল। সেটা খেয়াল করল মতি। ভাবল, এভাবেই তো একজন আরেকজনের শিকার হয়ে ওঠে। একজন আরেকজনের হয়ে ওঠে পেটের খোরাক। দূরে বঙ্গোপসাগরের দিকে অনেকগুলো নৌকা ভেসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। ভোরের মায়াবি আলোতে সেগুলোকে মনে হচ্ছে কাগজের নৌকা। আকাশ থেকে একে একে সারারাত পাহারা দেওয়া ফুটন্ত তারাগুলো মিট মিট করে মিশে যাচ্ছে গহিনে। পুবদিগন্ত একটু একটু করে হয়ে উঠছে লাল। কপালে হলুদ রেখার টান। নয়াপাড়া থেকে মিহি করে ভেসে আসছে ফজরের আযান। মতি বলল, ‘মা, নামাজ পড়ে নাও। আযান হচ্ছে।’

চলবে…

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১১

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১০

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৯

 

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৮

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৬

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৫

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১

আরএ/

Header Ad

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’

ছবি: সংগৃহীত

দেশের জনপ্রিয় নির্মাতা আশফাক নিপুন। কাজের পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমেও বেশ সরব তিনি। কথা বলেন নানা ইস্যু নিয়ে। সেই ধারাবাহিকতায় সরকার পতনের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনেও বিভিন্ন সময় নিজের আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যেও বিভিন্ন বার্তা দিয়েছেন। এবার এমনি একটি বার্তায় দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জনগনের আস্থার বিষয়ে আক্ষেপ জানালেন এই নির্মাতা।

বুধবার (২০ নভেম্বর) আশফাক নিপুন তার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে লেখেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সর্বস্তরের ছাত্র এবং সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল, বাসায় বসে বসে দোয়া করেছিল, যার যা সামর্থ্য দিয়ে সহায়তা করেছিল। কারণ, তারা দেখেছিল লড়াইটা আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শাসক বনাম সাধারণ ছাত্র-জনতার। এটাও অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই যে এই আন্দোলন বেগবান করতে বিরোধী সকল দলের কর্মীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাদের সংগ্রামও গত দেড় দশকের। কিন্তু এটা যদি শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার লড়াই হতো তাহলে সাধারণ মানুষ এই লড়াই থেকে দূরে থাকত। সেই প্রমাণ বিগত ১৫ বছরে আছে।

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ এখনো দেশের কোনো রাজনৈতিক দলকেই পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারে না। এটাই বাস্তবতা। এই বাস্তবতা মেনে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত কীভাবে সাধারণ জনগণের ভেতর নিজের দলের প্রতি আস্থা তৈরি করা যায় সেই বিষয়ে নিরলস কাজ করা। এই আস্থা ক্ষমতায় গিয়ে অর্জন করা সম্ভব না। কারণ, সাধারণ মানুষ আজীবন এস্টাবলিশমেন্টের বিপক্ষে। এই আস্থা অর্জন করতে হয় ক্ষমতা বলয়ের বাইরে থেকেই।

নিপুন আরও লিখেন, অরাজনৈতিক সরকার দিয়ে দীর্ঘদিন দেশ চালানো যেমন কাজের কথা না ঠিক তেমনি রাজনৈতিক সরকার হতে চাওয়া সকল রাজনৈতিক দলগুলোর বোঝা উচিত মুক্তিযুদ্ধের পরে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে সকল প্রকার পূর্বানুমান (যেমন- বর্ষাকালে আন্দোলন হয় না, নির্বাচনের আগেই কেবল জোরেশোরে আন্দোলন হয়, ঘোষণা দিয়ে বিরোধী সকল পক্ষ আন্দোলনে শামিল না হলে সফল হয় না) অগ্রাহ্য করেই। সেটা সম্ভব হয়েছে সাধারণ মানুষের ন্যায্যতার আকাঙ্ক্ষা থেকেই।

সবশেষ এই নির্মাতা লিখেছেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষার দুই পয়সার দাম দেন নাই। সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছা আর দেশপ্রেমকে পুঁজি করে অরাজনৈতিক এবং রাজনৈতিক যারাই রাজনীতি রাজনীতি খেলতে চাইবে, তাদের দশাও কোন একসময় যেন পলাতক শেখ হাসিনার মতো না হয়, সেই বিষয় নিশ্চিত করতে হবে তাদেরকেই।

Header Ad

‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা

ফাইল ছবি

জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, জুলাই-আগস্ট ছাত্র জনতার বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করেছি। এ নতুন দেশে আমাদের দায়িত্ব সকল মানুষকে এক বৃহত্তর পরিবারের বন্ধনে আবদ্ধ করা। কেউ কারো উপরে না, আবার কেউ কারো নিচেও না, এই ধারণা আমরা আমাদের জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।

তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ ছাত্র-জনতার সাহস ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে সম্প্রতি আমরা অর্জন করেছি, সেটাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যৎ গড়তে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ, আহত এবং জীবিত ছাত্র-জনতার কাছে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে চাই। যে সুযোগ তারা আমাদের দিয়েছে, তার মাধ্যমে আমাদের দেশকে পৃথিবীর সামনে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী দেশে পরিণত করতে আমরা শপথ নিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, ছাত্র আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করে যারা দেশ গঠনের সুযোগ করে দিয়েছে জাতি তাদের সারা জীবন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।

বক্তব্য শেষে সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা। পরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

Header Ad

নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু

ছবি: সংগৃহীত

নওগাঁ শহরে যানযট নিরসন ও শৃঙ্খলা ফেরাতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, পৌর কর্তৃপক্ষ ও রিকশা মালিক-শ্রমিকদের যৌথ উদ্যোগে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। এতে শহরে শৃঙ্খলা ফিরবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) অভিযানের উদ্বোধন করেন নওগাঁ পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকারের উপ পরিচালক টি.এম.এ মমিন। এ সময় নওগাঁ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জিয়া উদ্দিন, নওগাঁ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন, নওগাঁ জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আফজাল হোসেন ও অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

অভিযান শুরুর পর থেকেই শহরের বরুনকান্দি, মশরপুর, তাজের মোড় ও কালীতলাসহ মোট ৮ টি প্রবেশদ্বারে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। চেক পোষ্টগুলোতে ২ জন পুলিশ সদস্য, ২ জন ছাত্র সমন্বয়ক, ৪ জন রোভার স্কাউট সদস্য ও ২ জন রিকশা মালিক শ্রমিক প্রতিনিধিসহ মোট ১২ জন করে কাজ করছেন।

পৌর প্রশাসক জানান, নওগাঁ শহরে বৈধ যানবাহনের সংখ্যা ৪ হাজার। কিন্তু প্রতিদিন পার্শবতী বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ১০ হাজার রিকশা, ব্যাটারী চালিত অটো রিকশা ও ইজিবাইক শহরে প্রবেশ করে। এতে তীব্র যানযট ও জন মানুষের ভোগান্তি তৈরী হয়। এই দূর্ভোগ লাঘোবে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল ও পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিনের দিক নির্দেশনায় যানবাহন নিয়ন্ত্রনসহ বিশেষ অভিযানের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। বৈধ চালকদের চিহ্নিত করতে তাদের মাঝে পরিধেয় বিশেষ ধরনের জ্যাকেট প্রদান করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

নওগাঁর পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিন বলেন, নওগাঁ শহরের যানযট দীর্ঘদিনের সমস্যা। পরিকল্পিত ভাবে এই সমস্যা দূর করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের উদ্যোগে পৌর কর্তৃপক্ষ ও রিকশা মালিক শ্রমিক নেতৃবৃন্দদের সমন্বয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে স্থানীয় বাসিন্দা ও বিভিন্ন ষ্টেক হোল্ডারদের পরামর্শ নিয়ে একটি কর্ম পরিকল্পনা গ্রহক করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, অভিযান সফল ভাবে বাস্তবায়ন হলে শহরে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। জনগন এর সুফল পাবেন। সকলকে এই কার্যক্রমে সহযোগিতা প্রদানের আহবান জানান তিনি।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’
‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা
নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু
২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচন হতে পারে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত
সেনাকুঞ্জে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে খালেদা জিয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ৫ জনকে রোবটিক হাত উপহার
সেনাকুঞ্জের পথে খালেদা জিয়া
সুযোগ পেলে শেখ হাসিনার পক্ষে মামলায় লড়ব: জেড আই খান পান্না
নির্বাচন কমিশন গঠন, সিইসি হলেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব নাসির উদ্দীন
ডিএনএ টেস্টের ফলাফল: ভিনিসিয়ুসের পূর্বপুরুষ ছিলেন ক্যামেরুনের
জামিন পেলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান
বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে আসা সেই শাহজাহান ওমর গ্রেপ্তার
মিরপুর ও মহাখালীতে অটোরিকশা চালকদের সেনাবাহিনীর ধাওয়া
‘শেখ হাসিনা এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’, এমন কথা বলেননি ট্রাম্প
লেবাননে ৮ শতাধিক ইসরায়েলি সেনা নিহত
ভারতে সাজাভোগ শেষে দেশে ফিরল ২৪ বাংলাদেশি কিশোর-কিশোরী
ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে অবরোধ করে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের বিক্ষোভ
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ৮৮ ফিলিস্তিনি নিহত
সাবেক এমপি শাহজাহান ওমরের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর
১২ বছর পর সেনাকুঞ্জে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া