শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | ৬ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-১২

নেই দেশের নাগরিক

“আলবাত ঠিক বলেছেন, হুজুর। আমি ওকে অনেক করে বোঝাচ্ছি, ও বুঝতেই চায়ছে না। এই ক-দিন তো আমার সাথে ‘বালুখালী চৌকি’ অ্যাটাকে যাবে বলে বায়না ধরেছে। ঘ্যানর ঘ্যানর করেই যাচ্ছে। ওর নাকি ‘বালুখালী চৌকি’ মাটিতে মিশিয়ে দেওয়াটা এজন্মের অন্যতম ফরজ কাজ। ওর নাকি প্রেস্টিজ ব্যাপার। ওকে নাকি প্রতিশোধ নিতেই হবে। তা নাহলে ওর নাকি গায়ের জ্বালা মিটবে না। ‘বালুখালী চৌকি নাকি ওকে সবসময় সূচের মতো বিঁধে। কুটুস কুটুস করে কাটে। হুজুর, ওর কি বোঝা উচিৎ নয়, আবেগ আর বুদ্ধি এক জিনিস নয়? আবেগে কাজ করলে, সেই কাজ কখনই ফলপ্রসূ হয় না। আবেগ দিয়ে কখনও যুদ্ধ জয় করা যায় না। আরে যে আবেগ দিয়ে সামান্য একটা মেয়ের মনই জয় করা যায় না, তো একটা জাতির যুদ্ধ কীভাবে জয় করা যাবে! হুজুর, ওর বোঝা উচিৎ, আবেগ দিয়ে কবিতা হয়, গান হয়, কিন্তু বিপ্লব হয় না। তার জন্যে লাগে ব্রেন আর রক্ত।“ ফড়ফড় করে গেল নবী। চোখমুখ টগবগ করে উঠছে, যেন মনের মণিকোঠায় জমানো গাড়ি গাড়ি কথা ফড়ফড় করে বেরিয়ে আসতে চায়ছে। সে জানে, যে কথাগুলো বললে বন্ধু আতিফ একবারও শুনবে না, গা’ই করবে না, সেকথাগুলো খাঁ সাহেবের কানে তুলি, যাতে করে খাঁ সাহেব তাকে বোঝাতে পারেন। তার আবেগে বেড়ি পড়াতে পারেন। আরে মরতে তো হবেই। মুজাহিদ যখন হয়েছি, শহীদ তো হবই। তা বলে ইঁদুর বিড়ালের মতো মরে যাব? মরলে, শত্রুর গণ্ডা গণ্ডা ক্ষতি করেই মরব। এক ক্ষতিতেই যেন তাদের একটা ভিত ভেঙে পড়ে। পাছার কাপড় উদেম হয়ে যায়। বাপ বাপ করে রোহিঙ্গাদের পেছনে লাগা ছাড়ে। রোহিঙ্গাদের গায়ে একবার হাত দিতে যেন দুবার ভাবে। আমি তো অন্য পাঁচটা দশটা সাধারণ মানুষের মরা মরতে চাই না। আমি মরতে চাই, নাফরমানিদের ওপর আল্লাহর গজবের মতো করে। আমার মৃত্যু যেন কাফের মিয়ানমার সরকারের ওপর আল্লাহর গজব হয়ে নামে। মুনাফেক মিয়ানমার সেনাদের যেন কোনো চিহ্ন আর এই দুনিয়াই না টিকে থাকে।
“তুই থামবি?” ধমকাল আতিফ।
“থামব কেন? কেন থামব?” ফোঁস করে উঠল নবী।
“ও তো ঠিকই বলছে, আতিফ। আমাদের একটা মৃত্যু মানে, পোকামাকড়ের মৃত্যু নয়? আমাদের মৃত্যু হলো দ্বীনের জন্যে শহীদ। আল্লাহর হুকুমের গজবও বলতে পার। মৃত্যুটা যেন সেরকম হয়, যে মৃত্যু স্বপ্নকে বাস্তব করে যাবে। যাদের জন্যে মৃত্যুকে ফুলের মালার মতো বরণ করে নেওয়া, তাদের জন্যে পায়ের তলার নিজের মাটি দিয়ে যাবে, একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ দিয়ে যাবে। একটা নিজের দেশ, নিজের মাযহাব।“ উঠে দাঁড়ালেন গাফফার খাঁ। জোব্বার পকেট থেকে একটা জর্দার ডিব্বা বার করে, আঙুলের চাপে চিপে কিছুটা জর্দা মুখে পুরে দিলেন। ফালি হলদে দাঁতগুলো কড়মড় করে উঠল। জানালার বাইরে মুখ বাড়িয়ে, থু করে যেই মুখের থুথুটা ফেললেন, অমনি ‘গ’ করে বেজে উঠল আন্ড্রেয়েড মুঠোফোনটা। আজানের রিংটোন সুর করে বাজছে।
“আসলামু ওয়া আলাইকুম, ভাইজান। কবে? কোথায়?” হাসি মুখটা আচানক বদলে গেল। ভ্রূ খাড়া হয়ে উঠল গাফফার খাঁ’র। কপালে দুশ্চিন্তার চওড়া ভাঁজ।
“কিন্তু………।“ আটকে গেলেন। কথাটা বলতে গিয়ে ওপারের কথার চাপে থেমে গেলেন খাঁ সাহেব। মিনিট খানেক চোখ থির করে কান খাড়া করে কথা শুনতে লাগলেন। খাঁ সাহেবকে এমন ভাব করতে দেখে, আতিফ নবীরাও পলক ফেলা বন্ধ করে দিয়েছে। আতিফ নবীর দিকে তাকিয়ে থির চোখ নড়াল। নবী চোখে চোখেই বলল, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। দু একবার ‘হ্যাঁ’ ‘হু’ দিয়ে টানা দুমিনিট পর খাঁ সাহেব চোখ পাকিয়ে উঠলেন, “এর বদলা আমরা নেবই নেব ইনশাল্লাহ।“ কথার সুর শুনে আতিফরা ভাবল, নিশ্চয় কোনো বিপদ ঘটেছে। বড়সড় কোনো আঘাত। ভারী চোখে দুজন দুজনের দিকে তাকাল। চোখের মণি বেয়ে একটু একটু করে নেমে আসছে আতঙ্কের ছায়া। শিরদাঁড়া দিয়ে নেমে যাচ্ছে একটা অজানা ভয়ের কালহা স্রোত।
“এটা কি শয়তান লুন সানের বাহিনী ঘটিয়েছে?” খ্যাড়খেড়ে গলাটা আরও একটু তেজ দিয়ে উঠল।“ এ কাজ যে ওই খবিশটার, তা বুঝতেই পেরেছি। নৌকাটা এখন কোথায়? সেটাকেও কি, পানিতে পুঁতে দিয়েছে?” এবার কয়েক মুহূর্ত ফোনের ওপারের কথা শোনার পর তিড়িংবিড়িং করে উঠলেন গাফফার খাঁ, “ওর গদ্দান না কাটা পর্যন্ত আমার দোম নেই।“ কানের লতি লাল হয়ে উঠছে খাঁ সাহেবের। পিলপিল করে কাঁপছে ঠোঁট। নৌকা! নৌকার ওপর আক্রমণ! হাই আল্লাহ! আমাদের বাড়ির লোকজনও তো নৌকাতেই আছে! তবে কী তারাও… । মনের কথা মনের খাঁজে আটকে গেল আতিফের। মন ঠেলে উঠে আসতে লাগল কষ্টের দলা। দলায় দলায় টক্কর ঠোক্কর লেগে গলে যেতে লাগল চোখ। ছলছল করে উঠল মণি। মুখে কোনো কথা নেই। থির পাথুরে মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আতিফ। যেন রক্ত-মাংসের শরীর নয়, কষ্টের একটা আস্ত দলা। এক টোকাতেই হুড়মুড় করে ভেঙে পড়বে।
“এরকম হলে তো এবার থেকে আমাদের নাফ নদীতেই আস্তানা গাড়তে হবে। এখন যে নাফ নদী আর নদী নেই, রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী দেশ হয়ে উঠেছে। তুমি, ওখানেই ওত পেতে থাকো, আমি একটা টিম পাঠাচ্ছি। এর পাল্টা জবাব দিতেই হবে।“ রাগে ফোঁস ফোঁস করছেন গাফফার খাঁ। চোখকে বারুদের গোলা করে বলে উঠলেন, “যে লিঙ্গ দিয়ে এই পাপ কাজ করেছে শয়তানগুলো, সেই লিঙ্গগুলো না ছেড়া পর্যন্ত আমার নাওয়া খাওয়া বন্ধ। ওকে, খোদাহাফেজ।“
“কী হয়েছে হুজুর?“ খাঁ সাহেব যেই ফোনটা রেখেছেন, অমনি হুমড়ি খেয়ে পড়ল আতিফ। চোখেমুখে আতঙ্কের আবেশ।
“খবিশ বার্মা সেনারা একটা জঘন্য কাজ করেছে। ছি ! আস্তাগফেরুল্লা ! ওদের নাম বলতেও মুখে থুথু উঠছে।“ চোখ ফেড়ে কান খাড়া করে দাঁড়িয়ে থাকে আতিফ। যেন সে গাফফার খাঁ’র কথা শুধু শুনছে না, গিলছে। খাঁ সাহেব রাগে গদগদ করে বলতে থাকেন, “নাফ নদীর মোহনায় শাহপরীর দ্বীপের কাছে একটা নৌকা ভাসছিল। তাতে একটা পরিবারের মোট ছ-জন ছিলেন।“
ছ-জন! ভাইরাও তো সব মিলে ছ-জন! আব্বা, মা, বড়ভাই………। মনে মনে বাড়ির লোক সংখ্যা গুণতে থাকে আতিফ। খাঁ সাহেব বলতে থাকেন, “সেখানে অতর্কিতে আক্রমণ করে মায়ানমার সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। লুন সানের দলবল। নৌকাটিতে দুজন মহিলাও ছিলেন।“ দুজন মহিলা! মা আর আরিফা ভাবি! অঙ্ক মিলে যাচ্ছে আতিফের।
“একজন মাঝবয়সী আর ………।“ নিশ্চয় আরেকজন বৃদ্ধা! চোখ কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো আতিফের। খাঁ সাহেব বলেই গেলেন, “আরেকজন, ন-বছরের বালিকা। শয়তান বার্মা সেনা, পুরুষগুলোকে নৌকার খুটিতে বেঁধে রেখে, তাদের সামনেই ওই ভদ্রমহিলা আর তার ন-বছরের নাবালিকা মেয়েকে……… উঃ, নাউজবিল্লাহ! ও কুকথা আর মুখে আনতে পারছি না।“ ‘তওবা’ পড়ে একটা জোরে নিশ্বাস ফেললেন গাফফার সাহেব। ন-বছরের নাবালিকা বালিকার কথা শুনেই আতিফও একটা জোরে স্বস্তির শ্বাস ফেলল, নাহ, এটা আব্বাদের নৌকা নয়। আমাদের বাড়িতে তো ওই বয়সের কোনো মেয়ে নেই। এটা অন্য কোনো নৌকা হবে। দুশ্চিন্তার জট-মেঘ এতক্ষণে একটু একটু করে কাটতে শুরু করেছে তার মুখ থেকে। একেবারে জমাট কালো ঘুটঘুটে মেঘ ফেড়ে যেমন অতিব কষ্টের সঙ্গে আঁকিবুঁকি পাকিয়ে বিদ্যুৎলতা ছিটকে বের হয়ে আসে, ঠিক তেমনি, মনে মনে একটু একটু করে মিলাতে থাকা অঙ্কটা শেষ পর্যন্ত আর না মেলাই, একটা চোরা হাসি ঠোঁটে ধেই করে নেচে উঠল আতিফের। পিটপিট করে পড়ল চোখের পলক। মনে মনে ভাবল, জীবনে কত রকমের অঙ্কই না আছে। কোনো অঙ্ক না মিললে, ‘গোল্লা’, আবার কোনো অঙ্ক না মিললে ‘ফুলমার্কস’! জীবনের সিঁড়ি ভাঙা অঙ্কগুলো কখন যে সিঁড়ি ভাঙে আর কখন যে সিঁড়ি গড়ে, তা সময়ই জানে। জানে জীবনের ঘড়ি।
“হুজুর আমরা কি যাব শাহপরীর দ্বীপ? আপনি হুকুম করুন, নরকের কীটদের গুলি মেরে ঝাঁঝরা করে দিয়ে আসি।“ উত্তেজিত হয়ে ওঠে নবী। “নাহ, ওখানে তোমরা যাবে না। জাবেরকে বলে দিচ্ছি, সেন্ট মার্টিনস দ্বীপ থেকে তিনজনের একটা আত্মঘাতী টিম পাঠাবে। জাবের ওখানকার এরিয়া কমান্ডার। বাঘের মতো সাহস। গিরগিটির মতো রঙ বদলে যেকোনো মানুষের সাথে হুট করে মিশতে পারে। ওখান থেকে জায়গাটা কাছেও হবে। ওরা সরাসরি নদী পথে বার্মাসেনার টহলদার নৌকা লক্ষ্য করে হামলা চালাবে। ইটের জবাব পাটকেলে।“ গাফফার খাঁ হামলার নীল-নকশা বুনলেন।
“ইটের জবাব পাটকেলে না বলে বলুন, গালির জবাব থাপ্পড়ে।“ বলল আতিফ।
“থাপ্পড়ের জবাব লাথিতে।“ দাঁত চিবিয়ে বলে উঠল নবী।
“লাথির জবাব মৃত্যুতে।“ জোরে জিকির তোলার মতো বলে উঠলেন গাফফার খাঁ। তারপর পরনের জুব্বাটা ঝেড়েঝুড়ে বললেন, “আতিফ তুমি আপাতত কায়রাপরীর টংকীর আনাগোনাটা নজরে রাখ। ওখানে যাদের লাগিয়ে রেখেছ, তাদের বার্তা পাঠাও, খুব সতর্কতার সঙ্গে যেন কাজ করে, যেকোন সময় এমএসএস-এর গুপ্তচরদের নজরে পড়ে যেতে পারে।“
“জী হুজুর।“ ঘাড় হেলাল আতিফ।
“আর নবী, তুমি বালুখালী চৌকির প্ল্যানটা আরও একবার ঝালিয়ে নাও। কোনো ফাঁকফোকর থেকে গেল কি না, দেখে নাও।“
“জী হুজুর।“ মাথা ঝাঁকাল নবী।
“সামনের সপ্তাহে কাঠমান্ডু থেকে ফিরেই, ‘স্মাইলিং ইব্রাহিম’ অপারেশনটা নিয়ে বসতে হবে। তার আগে আমি আই এস আই এর ইস্টার্ন কমান্ডারের সঙ্গে একবার বসে নিই। সেরকম হলে, তোমাদের সরাসরি কাঠমান্ডু থেকেই উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে রেঙ্গুন। সমস্ত দিকের জন্যই প্রস্তুত থেকো।“
“জী হুজুর।“ একসঙ্গে বলে উঠল নবী আতিফ। দুজনের কণ্ঠই হাড় ইস্পাত হয়ে উঠল। ‘আমিন’ বলে উঠলেন গাফফার খাঁ। গডগড করে বেরিয়ে গেলেন। সিঁড়ির নিচ পর্যন্ত এগিয়ে দিল আতিফ। সিঁড়ির উপরে দাঁড়িয়ে থাকল নবী। গাফফার খাঁ বেরিয়ে গেলে, সিঁড়ি দিয়ে থপথপ করে উপরে উঠতে উঠতে আতিফ গুনগুন করে বলে উঠল একটা উর্দু শায়েরির বাংলা অনুবাদ, “হৃদয়ের কাছে বুদ্ধির বাস ভালো কথা। কিন্তু মাঝে মাঝে হৃদয়ের ওপর থেকে বুদ্ধির শাসন তুলে দিতে হয়, হৃদয়কে স্বাধীন করে দিতে হয়, মুক্ত করে দিতে হয়। স্বাধীন মুক্ত হৃদয়ের ধর্মকে সবসময় বুদ্ধি দিয়ে বিচার করতে নেই।“
“আমাকে ঠেস মেরে এসব বলছিস?” সিঁড়ির উপর থেকে কথা ছুড়ল নবী।
“তোকে আর কী ঠেস মেরে বলব, নবী, তোর তো আর হৃদয় বলেই কিছু নেই। ঠুকে ঠুকে পাথরের চাঁই বানিয়ে ফেলেছিস। সে পাথরে আর পানি বের হয় না, শুধু আগুন বের হয়, আগুন। হিংসার আগুন, প্রতিহিংসার আগুন, বদলার আগুন, বদলের আগুন। সে আগুনের ভাপে তাপে তোর হৃদয় পাষাণ হয়ে গেছে।“
“সেসব কী আর সাধে হয়েছি, হতে বাধ্য হতে হয়েছে। আমার চোখের সামনে আমার মা’কে ওরা উলঙ্গ করে কুকুরের মতো ছিঁড়ে খেল, আমার পঙ্গু বাপটার দুই পা ফাঁক করে ধরে ফড়ফড় করে ফেঁড়ে ফেলল, রক্তে ভেসে গেলাম আমি, এক কলেজ ফেরত বালক। আমার মুখে একের পর এক পড়ল বুটের লাথি। আমি অজ্ঞান হয়ে গেলাম। ভাগ্যিস আমি অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম। ওরা ভেবেছিল, আমি মরে গেছি। আমার এক পা আর এক হাত ধরে টেনে নদীতে ফেলে দিয়েছিল। ভাগ্যিস একটা নৌকার খোলে গিয়ে পড়েছিলাম। পানিতে পড়লে এজন্মের ইতি ওখানেই হয়ে যেত। তারপর যখন কুতুপালং ক্যাম্পে আমার জ্ঞান ফিরল, তখন আমার শরীর থেকে চারপোয়ার মধ্যে তিনপোয়া রক্তই পড়ে গেছিল! যখন পেছনের রাতের সব ঘটনা মনে পড়ল, তখন হাউমাউ করে উঠলাম, আল্লাহকে বললাম, এই একপোয়া রক্ত আর কেনই বা শরীরে রেখেছ? তখন মনে হচ্ছিল, এই বাকি রক্তটুকু আমি নিজেই শুষে শুষে খেয়ে নিই। যে কুতুপালংগামী নৌকার লোকেরা আমাকে নৌকার খোল থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে বাঁচিয়ে ছিল, তাদের যাচ্ছেতাই গালমন্দ করেছিলাম, কেন আমাকে বাঁচিয়েছেন? আমার তো সবই শেষ হয়ে গেছে। বাপ গেছে, মা গেছে, দেশও গেছে, আর কী নিয়ে বাঁচব? ওরা কোনো উত্তর দিতে পারেনি, শুধু ডুকরে কেঁদেছিলেন। সেসময় কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে দেখেছিলাম, শুধু চোখের পানি আর চোখের পানি! কান্না ছাড়া যেন কোনো ভাষা নেই। যেন একটা কান্নার দ্বীপ। সেদিন বুঝেছিলাম, চোখের পানি এই চোখের পানির সমাধান নয়, কান্না এই কান্নার সমাধান নয়, এর সমাধান আগুন, এর সমাধান গোলা, এর সমাধান বারুদ। আমাকে আগুন হতে হবে। আমাকে গোলা হতে হবে। আমাকে হতে হবে বারুদ। গুলি আর ধ্বংসের ইবলিশ।“ চোখ ছলছল করে ওঠে নবীর। আতিফ, নবীর কপালের কাটা দাগটা খুঁটে দেখে, এই সেই দাগ, বার্মা সেনারা যখন তাকে ছুড়ে নৌকার খোলে ফেলে দিয়েছিল, তখন একটা কাঠের টুকরো এখানে ফুঁড়ে ঢুকে গেছিল! আতিফ জানে, এই দাগের কথা মনে পড়লেই, নবী ছ্যান করে ওঠে। তার গা হাত পা রাগে কটমট করে। এমন করে তিড়বিড় করে ওঠে, যেন তার হাতে ক্ষমতার রিমোট থাকলে, বোতামের এক টিপনেই ধুলিস্যাৎ করে দেবে সমস্ত বার্মা সেনাছাউনি।

চলবে…

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১১

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১০

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৯

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৮

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৬

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৫

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১

এসএন 

Header Ad
Header Ad

দিনাজপুরের বিরামপুর থানায় ওপেন হাউস ডে অনুষ্ঠিত

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

"শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা, প্রগতি"—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে দিনাজপুরের বিরামপুর থানায় অনুষ্ঠিত হয়েছে ওপেন হাউস ডে।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিরামপুর থানা চত্বরে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মমতাজুল হক। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন দিনাজপুর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফত হুসাইন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুজহাত তাসনিম আওন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম, ড. মুহাদ্দিস এনামুল হক, বিএনপির বিরামপুর উপজেলা শাখার সভাপতি মিঞা শফিকুল ইসলাম মামুন, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজু, উপজেলা আমির হাফিজুল ইসলাম, যুবদলের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শিরণ আলম, ইঞ্জিনিয়ার শাহিনুর ইসলামসহ বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য, স্থানীয় শিক্ষক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।

পুলিশ সুপার মারুফত হুসাইন তার বক্তব্যে বলেন, “প্রথমে আমি আমার পুলিশকে ঠিক করেছি। এখন আমাদের সামনের দিনগুলো ভালো প্রত্যাশা চাই। আমরা আমাদের সমাজে আর কোনো অপরাধ করতে দেব না এবং এই জেলাকে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও মাদকমুক্ত করব ইনশাল্লাহ।”

তিনি আরও বলেন, পুলিশের সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা এবং সহযোগিতাই পারে সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূল করতে। তাই সবাইকে আরও সচেতন ও সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

Header Ad
Header Ad

পাকিস্তানের বিপক্ষে বড় হার, শঙ্কায় বাংলাদেশের নারী বিশ্বকাপ স্বপ্ন

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের শুরুতে দুর্বল প্রতিপক্ষদের বিপক্ষে টানা তিন জয়ে শীর্ষে ছিল নিগার সুলতানা জ্যোতির নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। তবে শক্ত প্রতিপক্ষের মুখে পড়ে একের পর এক হারে এখন অনিশ্চয়তায় পড়েছে তাদের বিশ্বকাপ স্বপ্ন। প্রথমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৩ উইকেটে হারের পর শনিবার (১৯ এপ্রিল) লাহোরে পাকিস্তানের কাছে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরে বসেছে বাংলাদেশ।

টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। মাত্র ২১ রানের মধ্যেই ফিরেছেন তিন ব্যাটার—ফারজানা হক (০), দিলারা আক্তার (১৩) ও অধিনায়ক নিগার সুলতানা (১)। এরপর শারমিন আক্তার ও রিতু মনির ৪৪ রানের জুটি এবং রিতু ও নাহিদা আক্তারের ৪৭ রানের জুটি কিছুটা স্থিতি আনলেও তা বড় সংগ্রহ গড়তে পারেনি। রিতু মনি করেন ৪৭ রান, আর ফাহিমা খাতুন অপরাজিত থাকেন ৪৪ রানে। ৫০ ওভারে বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ৯ উইকেটে ১৭৮ রান। পাকিস্তানের সাদিয়া ইকবাল ২৮ রানে ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ ধসিয়ে দেন।

 

ছবি: সংগৃহীত

জবাবে পাকিস্তানও শুরুতেই শাওয়াল জুলফিকারকে হারায়, যাকে এলবিডব্লিউ করেন মারুফা আক্তার। তবে এরপর সিদরা আমিন (৩৭), মুনিবা আলি (৬৯), আলিয়া রিয়াজ (৪৮*) এবং নাতালিয়া পারভেজ (১৩*) মিলে ৩৯.৪ ওভারে জয় তুলে নেয় পাকিস্তান।

এই হারের ফলে বাংলাদেশের নেট রানরেট নেমে এসেছে +০.৬৪-এ। অন্যদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের নেট রানরেট এখন -০.২৮। ফলে এখন বাংলাদেশকে তাকিয়ে থাকতে হবে থাইল্যান্ড বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের দিকে। ক্যারিবিয়ানরা যদি বড় ব্যবধানে না জেতে, তবেই কেবল বিশ্বকাপে জায়গা করে নেওয়ার সম্ভাবনা থাকবে বাংলাদেশের।

শক্ত প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ব্যর্থতা, ব্যাটিং দুর্বলতা এবং ধারাবাহিকতা না থাকায় কঠিন হয়ে উঠেছে টাইগ্রেসদের বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করা। এখন সব কিছু নির্ভর করছে অন্য দলের পারফরম্যান্সের ওপর, যা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ নারী দলের জন্য উদ্বেগের বিষয়।

Header Ad
Header Ad

ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ জানানো যাবে দুই মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে

ছবি: সংগৃহীত

ঘুষ, দুর্নীতি বা হয়রানির শিকার হলে এখন সরাসরি ই-মেইলে অভিযোগ জানানো যাবে স্থানীয় সরকার ও যুব ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে। অভিযোগকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে এবং যথাযথ প্রমাণসহ অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ঘুষ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরি এবং ব্যবস্থা গ্রহণের অংশ হিসেবে সরাসরি অভিযোগ জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) এক ফেসবুক পোস্টে তিনি জানান, দুই মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ যেকোনো সংস্থা বা দফতরে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ঘুষ চাওয়া, দুর্নীতি, অনিয়ম কিংবা সেবা নিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হলে তা ই-মেইলে জানাতে পারবেন সেবা গ্রহীতারা।

অভিযোগ পাঠানোর ঠিকানা:
advisorasifofficial1@gmail.com

পোস্টে বলা হয়, অভিযোগের সঙ্গে যথাযথ তথ্য ও প্রমাণ সংযুক্ত করলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেকোনো অভিযোগ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হবে এবং অভিযোগকারীর পরিচয় সম্পূর্ণরূপে গোপন রাখা হবে।

"জনস্বার্থে এই উদ্যোগ। ঘুষ, অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়তে সক্রিয় নাগরিক অংশগ্রহণ আমাদের সবচেয়ে বড় প্রেরণা।"

এ উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অনেকে। তারা মনে করছেন, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘব এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এটি একটি সাহসী পদক্ষেপ।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

দিনাজপুরের বিরামপুর থানায় ওপেন হাউস ডে অনুষ্ঠিত
পাকিস্তানের বিপক্ষে বড় হার, শঙ্কায় বাংলাদেশের নারী বিশ্বকাপ স্বপ্ন
ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ জানানো যাবে দুই মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে
টঙ্গীতে দুই শিশুকে বঁটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা, মায়ের স্বীকারোক্তি
টানা ৫ দিন দেশজুড়ে বৃষ্টি, তাপমাত্রা বাড়ার পূর্বাভাস
বাফুফের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা সরফরাজের পদত্যাগ
ভর্তুকি মূল্যে পাটের তৈরি বাজারের ব্যাগ সরবরাহ করা হবে : পরিবেশ উপদেষ্টা
রবিবার সারা দেশে মহাসমাবেশের ঘোষণা পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের
দেশের ইতিহাসে এবারের নির্বাচন সর্বোত্তম হবে: প্রধান উপদেষ্টা
বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে ভারত: রিজভী
ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালই যেন নিজেই অসুস্থ!
জাতীয় পার্টি কোনো সুবিধাবাদী দল নয়: জিএম কাদের
প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে আইসিইউতে পরিচালক সৃজিত মুখার্জি
জুলাই গণঅভ্যুত্থান যেন কোনোভাবেই ব্যর্থ না হয় : নাহিদ ইসলাম
আ.লীগের মিছিল ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নির্দেশ
হাসিনা-কাদেরসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে ‘রেড নোটিশ’ জারির আবেদন
নিখোঁজের ১৪ ঘণ্টা পর সেই শিশু সেহেরিশের লাশ উদ্ধার
আগামী ঈদের আগেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কাজ করছে সরকার
লাল কাপড়ে ঢাকা হবে দেশের সব পলিটেকনিকের ফটক
৬০ বছর বয়সে বিয়ে করলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ