শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-১২

নেই দেশের নাগরিক

“আলবাত ঠিক বলেছেন, হুজুর। আমি ওকে অনেক করে বোঝাচ্ছি, ও বুঝতেই চায়ছে না। এই ক-দিন তো আমার সাথে ‘বালুখালী চৌকি’ অ্যাটাকে যাবে বলে বায়না ধরেছে। ঘ্যানর ঘ্যানর করেই যাচ্ছে। ওর নাকি ‘বালুখালী চৌকি’ মাটিতে মিশিয়ে দেওয়াটা এজন্মের অন্যতম ফরজ কাজ। ওর নাকি প্রেস্টিজ ব্যাপার। ওকে নাকি প্রতিশোধ নিতেই হবে। তা নাহলে ওর নাকি গায়ের জ্বালা মিটবে না। ‘বালুখালী চৌকি নাকি ওকে সবসময় সূচের মতো বিঁধে। কুটুস কুটুস করে কাটে। হুজুর, ওর কি বোঝা উচিৎ নয়, আবেগ আর বুদ্ধি এক জিনিস নয়? আবেগে কাজ করলে, সেই কাজ কখনই ফলপ্রসূ হয় না। আবেগ দিয়ে কখনও যুদ্ধ জয় করা যায় না। আরে যে আবেগ দিয়ে সামান্য একটা মেয়ের মনই জয় করা যায় না, তো একটা জাতির যুদ্ধ কীভাবে জয় করা যাবে! হুজুর, ওর বোঝা উচিৎ, আবেগ দিয়ে কবিতা হয়, গান হয়, কিন্তু বিপ্লব হয় না। তার জন্যে লাগে ব্রেন আর রক্ত।“ ফড়ফড় করে গেল নবী। চোখমুখ টগবগ করে উঠছে, যেন মনের মণিকোঠায় জমানো গাড়ি গাড়ি কথা ফড়ফড় করে বেরিয়ে আসতে চায়ছে। সে জানে, যে কথাগুলো বললে বন্ধু আতিফ একবারও শুনবে না, গা’ই করবে না, সেকথাগুলো খাঁ সাহেবের কানে তুলি, যাতে করে খাঁ সাহেব তাকে বোঝাতে পারেন। তার আবেগে বেড়ি পড়াতে পারেন। আরে মরতে তো হবেই। মুজাহিদ যখন হয়েছি, শহীদ তো হবই। তা বলে ইঁদুর বিড়ালের মতো মরে যাব? মরলে, শত্রুর গণ্ডা গণ্ডা ক্ষতি করেই মরব। এক ক্ষতিতেই যেন তাদের একটা ভিত ভেঙে পড়ে। পাছার কাপড় উদেম হয়ে যায়। বাপ বাপ করে রোহিঙ্গাদের পেছনে লাগা ছাড়ে। রোহিঙ্গাদের গায়ে একবার হাত দিতে যেন দুবার ভাবে। আমি তো অন্য পাঁচটা দশটা সাধারণ মানুষের মরা মরতে চাই না। আমি মরতে চাই, নাফরমানিদের ওপর আল্লাহর গজবের মতো করে। আমার মৃত্যু যেন কাফের মিয়ানমার সরকারের ওপর আল্লাহর গজব হয়ে নামে। মুনাফেক মিয়ানমার সেনাদের যেন কোনো চিহ্ন আর এই দুনিয়াই না টিকে থাকে।
“তুই থামবি?” ধমকাল আতিফ।
“থামব কেন? কেন থামব?” ফোঁস করে উঠল নবী।
“ও তো ঠিকই বলছে, আতিফ। আমাদের একটা মৃত্যু মানে, পোকামাকড়ের মৃত্যু নয়? আমাদের মৃত্যু হলো দ্বীনের জন্যে শহীদ। আল্লাহর হুকুমের গজবও বলতে পার। মৃত্যুটা যেন সেরকম হয়, যে মৃত্যু স্বপ্নকে বাস্তব করে যাবে। যাদের জন্যে মৃত্যুকে ফুলের মালার মতো বরণ করে নেওয়া, তাদের জন্যে পায়ের তলার নিজের মাটি দিয়ে যাবে, একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ দিয়ে যাবে। একটা নিজের দেশ, নিজের মাযহাব।“ উঠে দাঁড়ালেন গাফফার খাঁ। জোব্বার পকেট থেকে একটা জর্দার ডিব্বা বার করে, আঙুলের চাপে চিপে কিছুটা জর্দা মুখে পুরে দিলেন। ফালি হলদে দাঁতগুলো কড়মড় করে উঠল। জানালার বাইরে মুখ বাড়িয়ে, থু করে যেই মুখের থুথুটা ফেললেন, অমনি ‘গ’ করে বেজে উঠল আন্ড্রেয়েড মুঠোফোনটা। আজানের রিংটোন সুর করে বাজছে।
“আসলামু ওয়া আলাইকুম, ভাইজান। কবে? কোথায়?” হাসি মুখটা আচানক বদলে গেল। ভ্রূ খাড়া হয়ে উঠল গাফফার খাঁ’র। কপালে দুশ্চিন্তার চওড়া ভাঁজ।
“কিন্তু………।“ আটকে গেলেন। কথাটা বলতে গিয়ে ওপারের কথার চাপে থেমে গেলেন খাঁ সাহেব। মিনিট খানেক চোখ থির করে কান খাড়া করে কথা শুনতে লাগলেন। খাঁ সাহেবকে এমন ভাব করতে দেখে, আতিফ নবীরাও পলক ফেলা বন্ধ করে দিয়েছে। আতিফ নবীর দিকে তাকিয়ে থির চোখ নড়াল। নবী চোখে চোখেই বলল, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। দু একবার ‘হ্যাঁ’ ‘হু’ দিয়ে টানা দুমিনিট পর খাঁ সাহেব চোখ পাকিয়ে উঠলেন, “এর বদলা আমরা নেবই নেব ইনশাল্লাহ।“ কথার সুর শুনে আতিফরা ভাবল, নিশ্চয় কোনো বিপদ ঘটেছে। বড়সড় কোনো আঘাত। ভারী চোখে দুজন দুজনের দিকে তাকাল। চোখের মণি বেয়ে একটু একটু করে নেমে আসছে আতঙ্কের ছায়া। শিরদাঁড়া দিয়ে নেমে যাচ্ছে একটা অজানা ভয়ের কালহা স্রোত।
“এটা কি শয়তান লুন সানের বাহিনী ঘটিয়েছে?” খ্যাড়খেড়ে গলাটা আরও একটু তেজ দিয়ে উঠল।“ এ কাজ যে ওই খবিশটার, তা বুঝতেই পেরেছি। নৌকাটা এখন কোথায়? সেটাকেও কি, পানিতে পুঁতে দিয়েছে?” এবার কয়েক মুহূর্ত ফোনের ওপারের কথা শোনার পর তিড়িংবিড়িং করে উঠলেন গাফফার খাঁ, “ওর গদ্দান না কাটা পর্যন্ত আমার দোম নেই।“ কানের লতি লাল হয়ে উঠছে খাঁ সাহেবের। পিলপিল করে কাঁপছে ঠোঁট। নৌকা! নৌকার ওপর আক্রমণ! হাই আল্লাহ! আমাদের বাড়ির লোকজনও তো নৌকাতেই আছে! তবে কী তারাও… । মনের কথা মনের খাঁজে আটকে গেল আতিফের। মন ঠেলে উঠে আসতে লাগল কষ্টের দলা। দলায় দলায় টক্কর ঠোক্কর লেগে গলে যেতে লাগল চোখ। ছলছল করে উঠল মণি। মুখে কোনো কথা নেই। থির পাথুরে মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আতিফ। যেন রক্ত-মাংসের শরীর নয়, কষ্টের একটা আস্ত দলা। এক টোকাতেই হুড়মুড় করে ভেঙে পড়বে।
“এরকম হলে তো এবার থেকে আমাদের নাফ নদীতেই আস্তানা গাড়তে হবে। এখন যে নাফ নদী আর নদী নেই, রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী দেশ হয়ে উঠেছে। তুমি, ওখানেই ওত পেতে থাকো, আমি একটা টিম পাঠাচ্ছি। এর পাল্টা জবাব দিতেই হবে।“ রাগে ফোঁস ফোঁস করছেন গাফফার খাঁ। চোখকে বারুদের গোলা করে বলে উঠলেন, “যে লিঙ্গ দিয়ে এই পাপ কাজ করেছে শয়তানগুলো, সেই লিঙ্গগুলো না ছেড়া পর্যন্ত আমার নাওয়া খাওয়া বন্ধ। ওকে, খোদাহাফেজ।“
“কী হয়েছে হুজুর?“ খাঁ সাহেব যেই ফোনটা রেখেছেন, অমনি হুমড়ি খেয়ে পড়ল আতিফ। চোখেমুখে আতঙ্কের আবেশ।
“খবিশ বার্মা সেনারা একটা জঘন্য কাজ করেছে। ছি ! আস্তাগফেরুল্লা ! ওদের নাম বলতেও মুখে থুথু উঠছে।“ চোখ ফেড়ে কান খাড়া করে দাঁড়িয়ে থাকে আতিফ। যেন সে গাফফার খাঁ’র কথা শুধু শুনছে না, গিলছে। খাঁ সাহেব রাগে গদগদ করে বলতে থাকেন, “নাফ নদীর মোহনায় শাহপরীর দ্বীপের কাছে একটা নৌকা ভাসছিল। তাতে একটা পরিবারের মোট ছ-জন ছিলেন।“
ছ-জন! ভাইরাও তো সব মিলে ছ-জন! আব্বা, মা, বড়ভাই………। মনে মনে বাড়ির লোক সংখ্যা গুণতে থাকে আতিফ। খাঁ সাহেব বলতে থাকেন, “সেখানে অতর্কিতে আক্রমণ করে মায়ানমার সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। লুন সানের দলবল। নৌকাটিতে দুজন মহিলাও ছিলেন।“ দুজন মহিলা! মা আর আরিফা ভাবি! অঙ্ক মিলে যাচ্ছে আতিফের।
“একজন মাঝবয়সী আর ………।“ নিশ্চয় আরেকজন বৃদ্ধা! চোখ কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো আতিফের। খাঁ সাহেব বলেই গেলেন, “আরেকজন, ন-বছরের বালিকা। শয়তান বার্মা সেনা, পুরুষগুলোকে নৌকার খুটিতে বেঁধে রেখে, তাদের সামনেই ওই ভদ্রমহিলা আর তার ন-বছরের নাবালিকা মেয়েকে……… উঃ, নাউজবিল্লাহ! ও কুকথা আর মুখে আনতে পারছি না।“ ‘তওবা’ পড়ে একটা জোরে নিশ্বাস ফেললেন গাফফার সাহেব। ন-বছরের নাবালিকা বালিকার কথা শুনেই আতিফও একটা জোরে স্বস্তির শ্বাস ফেলল, নাহ, এটা আব্বাদের নৌকা নয়। আমাদের বাড়িতে তো ওই বয়সের কোনো মেয়ে নেই। এটা অন্য কোনো নৌকা হবে। দুশ্চিন্তার জট-মেঘ এতক্ষণে একটু একটু করে কাটতে শুরু করেছে তার মুখ থেকে। একেবারে জমাট কালো ঘুটঘুটে মেঘ ফেড়ে যেমন অতিব কষ্টের সঙ্গে আঁকিবুঁকি পাকিয়ে বিদ্যুৎলতা ছিটকে বের হয়ে আসে, ঠিক তেমনি, মনে মনে একটু একটু করে মিলাতে থাকা অঙ্কটা শেষ পর্যন্ত আর না মেলাই, একটা চোরা হাসি ঠোঁটে ধেই করে নেচে উঠল আতিফের। পিটপিট করে পড়ল চোখের পলক। মনে মনে ভাবল, জীবনে কত রকমের অঙ্কই না আছে। কোনো অঙ্ক না মিললে, ‘গোল্লা’, আবার কোনো অঙ্ক না মিললে ‘ফুলমার্কস’! জীবনের সিঁড়ি ভাঙা অঙ্কগুলো কখন যে সিঁড়ি ভাঙে আর কখন যে সিঁড়ি গড়ে, তা সময়ই জানে। জানে জীবনের ঘড়ি।
“হুজুর আমরা কি যাব শাহপরীর দ্বীপ? আপনি হুকুম করুন, নরকের কীটদের গুলি মেরে ঝাঁঝরা করে দিয়ে আসি।“ উত্তেজিত হয়ে ওঠে নবী। “নাহ, ওখানে তোমরা যাবে না। জাবেরকে বলে দিচ্ছি, সেন্ট মার্টিনস দ্বীপ থেকে তিনজনের একটা আত্মঘাতী টিম পাঠাবে। জাবের ওখানকার এরিয়া কমান্ডার। বাঘের মতো সাহস। গিরগিটির মতো রঙ বদলে যেকোনো মানুষের সাথে হুট করে মিশতে পারে। ওখান থেকে জায়গাটা কাছেও হবে। ওরা সরাসরি নদী পথে বার্মাসেনার টহলদার নৌকা লক্ষ্য করে হামলা চালাবে। ইটের জবাব পাটকেলে।“ গাফফার খাঁ হামলার নীল-নকশা বুনলেন।
“ইটের জবাব পাটকেলে না বলে বলুন, গালির জবাব থাপ্পড়ে।“ বলল আতিফ।
“থাপ্পড়ের জবাব লাথিতে।“ দাঁত চিবিয়ে বলে উঠল নবী।
“লাথির জবাব মৃত্যুতে।“ জোরে জিকির তোলার মতো বলে উঠলেন গাফফার খাঁ। তারপর পরনের জুব্বাটা ঝেড়েঝুড়ে বললেন, “আতিফ তুমি আপাতত কায়রাপরীর টংকীর আনাগোনাটা নজরে রাখ। ওখানে যাদের লাগিয়ে রেখেছ, তাদের বার্তা পাঠাও, খুব সতর্কতার সঙ্গে যেন কাজ করে, যেকোন সময় এমএসএস-এর গুপ্তচরদের নজরে পড়ে যেতে পারে।“
“জী হুজুর।“ ঘাড় হেলাল আতিফ।
“আর নবী, তুমি বালুখালী চৌকির প্ল্যানটা আরও একবার ঝালিয়ে নাও। কোনো ফাঁকফোকর থেকে গেল কি না, দেখে নাও।“
“জী হুজুর।“ মাথা ঝাঁকাল নবী।
“সামনের সপ্তাহে কাঠমান্ডু থেকে ফিরেই, ‘স্মাইলিং ইব্রাহিম’ অপারেশনটা নিয়ে বসতে হবে। তার আগে আমি আই এস আই এর ইস্টার্ন কমান্ডারের সঙ্গে একবার বসে নিই। সেরকম হলে, তোমাদের সরাসরি কাঠমান্ডু থেকেই উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে রেঙ্গুন। সমস্ত দিকের জন্যই প্রস্তুত থেকো।“
“জী হুজুর।“ একসঙ্গে বলে উঠল নবী আতিফ। দুজনের কণ্ঠই হাড় ইস্পাত হয়ে উঠল। ‘আমিন’ বলে উঠলেন গাফফার খাঁ। গডগড করে বেরিয়ে গেলেন। সিঁড়ির নিচ পর্যন্ত এগিয়ে দিল আতিফ। সিঁড়ির উপরে দাঁড়িয়ে থাকল নবী। গাফফার খাঁ বেরিয়ে গেলে, সিঁড়ি দিয়ে থপথপ করে উপরে উঠতে উঠতে আতিফ গুনগুন করে বলে উঠল একটা উর্দু শায়েরির বাংলা অনুবাদ, “হৃদয়ের কাছে বুদ্ধির বাস ভালো কথা। কিন্তু মাঝে মাঝে হৃদয়ের ওপর থেকে বুদ্ধির শাসন তুলে দিতে হয়, হৃদয়কে স্বাধীন করে দিতে হয়, মুক্ত করে দিতে হয়। স্বাধীন মুক্ত হৃদয়ের ধর্মকে সবসময় বুদ্ধি দিয়ে বিচার করতে নেই।“
“আমাকে ঠেস মেরে এসব বলছিস?” সিঁড়ির উপর থেকে কথা ছুড়ল নবী।
“তোকে আর কী ঠেস মেরে বলব, নবী, তোর তো আর হৃদয় বলেই কিছু নেই। ঠুকে ঠুকে পাথরের চাঁই বানিয়ে ফেলেছিস। সে পাথরে আর পানি বের হয় না, শুধু আগুন বের হয়, আগুন। হিংসার আগুন, প্রতিহিংসার আগুন, বদলার আগুন, বদলের আগুন। সে আগুনের ভাপে তাপে তোর হৃদয় পাষাণ হয়ে গেছে।“
“সেসব কী আর সাধে হয়েছি, হতে বাধ্য হতে হয়েছে। আমার চোখের সামনে আমার মা’কে ওরা উলঙ্গ করে কুকুরের মতো ছিঁড়ে খেল, আমার পঙ্গু বাপটার দুই পা ফাঁক করে ধরে ফড়ফড় করে ফেঁড়ে ফেলল, রক্তে ভেসে গেলাম আমি, এক কলেজ ফেরত বালক। আমার মুখে একের পর এক পড়ল বুটের লাথি। আমি অজ্ঞান হয়ে গেলাম। ভাগ্যিস আমি অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম। ওরা ভেবেছিল, আমি মরে গেছি। আমার এক পা আর এক হাত ধরে টেনে নদীতে ফেলে দিয়েছিল। ভাগ্যিস একটা নৌকার খোলে গিয়ে পড়েছিলাম। পানিতে পড়লে এজন্মের ইতি ওখানেই হয়ে যেত। তারপর যখন কুতুপালং ক্যাম্পে আমার জ্ঞান ফিরল, তখন আমার শরীর থেকে চারপোয়ার মধ্যে তিনপোয়া রক্তই পড়ে গেছিল! যখন পেছনের রাতের সব ঘটনা মনে পড়ল, তখন হাউমাউ করে উঠলাম, আল্লাহকে বললাম, এই একপোয়া রক্ত আর কেনই বা শরীরে রেখেছ? তখন মনে হচ্ছিল, এই বাকি রক্তটুকু আমি নিজেই শুষে শুষে খেয়ে নিই। যে কুতুপালংগামী নৌকার লোকেরা আমাকে নৌকার খোল থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে বাঁচিয়ে ছিল, তাদের যাচ্ছেতাই গালমন্দ করেছিলাম, কেন আমাকে বাঁচিয়েছেন? আমার তো সবই শেষ হয়ে গেছে। বাপ গেছে, মা গেছে, দেশও গেছে, আর কী নিয়ে বাঁচব? ওরা কোনো উত্তর দিতে পারেনি, শুধু ডুকরে কেঁদেছিলেন। সেসময় কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে দেখেছিলাম, শুধু চোখের পানি আর চোখের পানি! কান্না ছাড়া যেন কোনো ভাষা নেই। যেন একটা কান্নার দ্বীপ। সেদিন বুঝেছিলাম, চোখের পানি এই চোখের পানির সমাধান নয়, কান্না এই কান্নার সমাধান নয়, এর সমাধান আগুন, এর সমাধান গোলা, এর সমাধান বারুদ। আমাকে আগুন হতে হবে। আমাকে গোলা হতে হবে। আমাকে হতে হবে বারুদ। গুলি আর ধ্বংসের ইবলিশ।“ চোখ ছলছল করে ওঠে নবীর। আতিফ, নবীর কপালের কাটা দাগটা খুঁটে দেখে, এই সেই দাগ, বার্মা সেনারা যখন তাকে ছুড়ে নৌকার খোলে ফেলে দিয়েছিল, তখন একটা কাঠের টুকরো এখানে ফুঁড়ে ঢুকে গেছিল! আতিফ জানে, এই দাগের কথা মনে পড়লেই, নবী ছ্যান করে ওঠে। তার গা হাত পা রাগে কটমট করে। এমন করে তিড়বিড় করে ওঠে, যেন তার হাতে ক্ষমতার রিমোট থাকলে, বোতামের এক টিপনেই ধুলিস্যাৎ করে দেবে সমস্ত বার্মা সেনাছাউনি।

চলবে…

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১১

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১০

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৯

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৮

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৬

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৫

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১

এসএন 

Header Ad

গাজীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু

ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরের শ্রীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের উদয়খালী গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

মৃত তিন শিক্ষার্থী হলেন- মোজাম্মেল হোসেন নাঈম (২৪), মোস্তাকিম রহমান মাহিন (২২) ও জোবায়ের আলম সাকিব (২২)।

জানা গেছে, শনিবার সকালে গাজীপুর মহানগরের বোর্ড বাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের প্রায় ৪৬০ জন শিক্ষার্থী বিআরটিসির ৬টি ডাবল ডেকার বাস ও ৩টি মাইক্রোবাসে করে উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের উত্তর পেলাইদ গ্রামের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামীণ আঞ্চলিক সড়ক ধরে রিসোর্টের উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় উত্তর পেলাইদ গ্রামের উদয়খালী বাজারে পৌঁছালে বিআরটিসির ডাবল ডেকার একটি বাস পল্লী বিদ্যুতের তারের স্পর্শে আসে। এ সময় বাসটি বিদ্যুতায়িত হলে কয়েকজন শিক্ষার্থী বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। তাদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক জাকিউল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, তিনজনকেই মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। আহত সংখ্যা এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি। আমরা জরুরি বিভাগে যাচ্ছি।

Header Ad

কবে বিয়ে করবেন জানালেন তামান্না ভাটিয়া

ছবি: সংগৃহীত

মিল্ক বিউটিখ্যাত দক্ষিনি অভিনেত্রী তামান্না ভাটিয়া নতুন বছরে তার জীবনের একটি বিশেষ অধ্যায়ে পা রাখতে যাচ্ছেন। খলচরিত্র করে আলোড়ন তোলা অভিনেতা বিজয় ভার্মার সঙ্গে তার প্রেমের গুঞ্জন চলছিল অনেক দিন ধরেই। তবে এ নিয়ে কেউই মুখ খোলেননি। এবার তাদের সম্পর্ক নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন তামান্না। এমনকি ২০২৫ সালে সাতপাকে বাঁধা পড়ার সম্ভাবনা আছে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন।

সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যমের এক প্রোমোশনাল ইন্টারভিউতে তামান্না তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে জানান, প্রেমের সম্পর্কের জন্য জীবনে দুবার হৃদয় ভেঙেছে তার। সেই সময়টা তামান্নার জন্য খুবই ভয়াবহ ছিল।

তিনি আরও জানান, তিনি খুব কম বয়সে একজন ছেলের সঙ্গে প্রথম ভালোবাসায় জড়িয়েছিলেন এবং তার দ্বিতীয় সম্পর্কটি ছিল তার অভিনয় ক্যারিয়ারের শিখরে থাকা অবস্থায়। তবে সে সময় তিনি অনুভব করেন যে, সেই ছেলে তার সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের জন্য সঠিক ব্যক্তি নয়।

তবে এত কিছুর পরও বাহুবলিখ্যাত তামান্না প্রেমিকের নাম প্রকাশ করেননি। এর আগে গুঞ্জন ছিল যে, তিনি ভারতীয় অভিনেতা বিজয় ভার্মার সঙ্গে ডেট করছেন। পাপারাজ্জিদের ক্যামেরায় বহুবার ফ্রেমবন্দি হয়েছেন তারা। যদিও নিজেদের এ সম্পর্ক আড়ালে রাখতে বদ্ধপরিকর দুজনই। এখন দেখার অপেক্ষা তামান্না জীবনসঙ্গী হিসেবে কাকে বেছে নেন।

সবশেষ তামান্না ভাটিয়াকে আইটেম গার্ল হিসেবে দেখা যায় অমর কৌশিক পরিচালিত ‘স্ত্রী ২’ সিনেমায়। এ সিনেমায় আরও অভিনয় করেন রাজকুমার রাও, শ্রদ্ধা কাপুর, পঙ্ক ত্রিপাঠিসহ আরও অনেকে।

Header Ad

পঞ্চগড়ে ৫০০ টাকায় সন্তান বিক্রি, অতঃপর যা ঘটল...

ছবি: সংগৃহীত

পঞ্চগড়ে ৫০০ টাকার বিনিময়ে নয় মাসের শিশু সন্তানকে দত্তক দেন শরীফা খাতুন নামে মানসিক ভারস্যমহীন এক মা। বিষয়টি জানতে পেরে গতকাল শুক্রবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ওই নবজাতককে উদ্ধার করে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছেন সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশের সহায়তায় ওই শিশুটিকে তার মায়ের কোলে ফেরত দেন।
মানসিক ভারসাম্যহীন নারী শরীফা খাতুন বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়নের জেমজুট মুসলিমবাগ এলাকায় তিন সন্তানকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকেন। তিনি ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালান।

প্রতিবেশী ও পরিবারের সদস্যরা জানান, গত এক বছর আগে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় শরীফা খাতুনের। এর পর সন্তানদের নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে চলত তার পরিবার।

গত মঙ্গলবার নিজের ৯ মাসের কন্যা সন্তানকে পঞ্চগড় পৌরসভার দক্ষিণ তেলিপাড়া এলাকায় একটি হলুদ খেতে রেখে ভিক্ষা করতে যান শরীফা খাতুন। এ সময় শিশুটিকে দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে স্থানীয় রুনা আক্তার নামে এক নারী; একইসঙ্গে শরীফাকেও নিজ বাড়িতে নেন তিনি। রুনা নামে ওই নারীর নিজ সন্তান না থাকায় শিশুটিকে দত্তক নিতে চাইলে, ৫০০ টাকার বিনিময়ে রেখে চলে যান শরীফা।

এরপর চার দিন পর অবশেষে পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় নিজ পরিবারের কাছে ফিরেছে শিশুটি। বর্তমানে শিশুটিকে দেখভাল করছেন মানসিক ভারসামহীন শরীফার ১৬ বছরের বড় ছেলে নয়ন।

এ বিষয়ে শরীফার ছেলে নয়ন ইসলাম বলেন, গত চার দিন আগে মা বোনকে নিয়ে হঠাৎ পঞ্চগড়ে যান। পরে একসময় বাড়িতে একাই এসে ঘরে তালা লাগিয়ে বন্দি অবস্থায় থাকতে শুরু করেন। বোন কোথায় তা জানতে চাইলে কোনো কিছুই জানাচ্ছিলেন না।

পরে অনেক কৈশলে বোনের অবস্থান জানতে পারি। এরপর সেই বাড়িতে গিয়ে বোনকে ফেরত চাইলে তারা দিতে অস্বীকার করেন। আরও জানতে পারি মা বোনকে নেবেন না বললে তারা ৫০০ টাকা মাকে খেতে দিয়ে একটা কাগজে স্বাক্ষর করে নেন। শুক্রবার সাংবাদিক ও পুলিশ এসে তদন্ত করে আমার বোনকে আনতে নির্দেশ দিলে মাকে সঙ্গে নিয়ে বোনকে বাড়িতে নিয়ে আসি।

স্থানীয় মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অনেক আগে থেকে ওই নারীকে দেখছি। তিনি ভিক্ষাবৃত্তি করে পরিবার চালান। তবে কয়েকদিন আগে নিজের সন্তানকে মানুষের কাছে দিয়ে প্রায় পাগল হয়ে বেড়াচ্ছিলেন।

কাজলা নামে স্থানীয় এক নারী বলেন, সকালে শরিফা আমার কাছে এসে আমার পা জড়িয়ে ধরেছেন আর বলেছেন আপু যেভাবেই পারো আমার মেয়েকে এনে দাও।

প্রতিবেশীরা বলেন, স্বামী না থাকায় পরিবারটা চালাতে শরীফা খাতুন ভিক্ষা করতেন। এর মাঝে এমন কাণ্ড ঘটে তিনি পাগল হয়ে গেছেন। তার তিনটা সন্তান। একটা ছেলে ও দুটি মেয়ে। এদের কি হবে আমরা জানি না। তবে সরকারি সহায়তা পেলে তাদের গতি হতো।

এ বিষয়ে পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, আগের বিষয়টি আমাদের কেউ জানায়নি। খবর পাওয়ার পর পঞ্চগড় সদর থানার ওসিকে জানানো হয়। বিষয়টি পুলিশের হস্তক্ষেপে সুষ্ঠু সমাধান করে ভারসাম্যহীন নারীর কাছে তার বাচ্চা ফেরত দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, যেহেতু ওই নারীর বাড়ি বোদা উপজেলায়, সেখানকার ইউএনওকে জানিয়ে সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

গাজীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু
কবে বিয়ে করবেন জানালেন তামান্না ভাটিয়া
পঞ্চগড়ে ৫০০ টাকায় সন্তান বিক্রি, অতঃপর যা ঘটল...
অ্যান্টিগায় প্রথম দিন শেষে স্বস্তিতে টাইগাররা
সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন পরীমণির প্রথম স্বামী
বিচারের আগে আ.লীগের মাঠে থাকার সুযোগ নেই: উপদেষ্টা নাহিদ
মাকে হত্যার পর থানায় হাজির ছেলে
৮ ক্রিকেটারসহ ৯ জনকে নিষিদ্ধ করলো বিসিবি
উপদেষ্টাদের যাচ্ছেতাই কর্মকাণ্ড মেনে নেওয়া হবে না: রিজভী
ভিসা কবে উন্মুক্ত করবে সেটা ভারতের নিজস্ব ব্যাপার: হাসান আরিফ
জুরাইন রেলক্রসিং ছাড়লেন রিকশাচালকরা, ৪ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল শুরু
পাঁচ দেশে যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশিদের জন্য সতর্কতা
সাফজয়ী নারী ফুটবলার আইরিনকে নওগাঁয় সংবর্ধনা
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ দেবে পাকিস্তান
বেনাপোলে সীমান্ত থেকে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল উদ্ধার
পুলিশ-অটোরিকশা চালক সংঘর্ষ, ঢাকা-পদ্মা সেতু ট্রেন চলাচল বন্ধ
ভারতীয় সাবমেরিনের সঙ্গে মাছ ধরা নৌকার সংঘর্ষ, নিখোঁজ ২
সংসার ভাঙার দুদিন পরই সুখবর দিলেন এ আর রহমান
ঢাকায় পৌঁছেছেন বাইডেনের বিশেষ প্রতিনিধি
আ.লীগকে নির্বাচনের সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে যা বললেন হাসনাত আব্দুল্লাহ