বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ৬ ফাল্গুন ১৪৩১
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-১১

নেই দেশের নাগরিক

“তোমরা শুনলে অবাক হবে, আল্লাহ মুজাহিদকে কত বড় সম্মান দিয়েছেন! মুজাহিদ মৃত্যুবরণ করার সাথে সাথেই জান্নাতের নেয়ামত ভোগ করতে থাকেন! সুরা বাকারা-আয়াত ১৫৩-তে উল্লেখ আছে, কোরআন বলছে, ‘আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের মৃত বল না। বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বুঝ না।‘ অন্য একটি আয়াত, সূরা নিসা, আয়াত-৭৪ এ লেখা রয়েছে, ‘যারা আল্লাহর রাহে লড়াই করে এবং অতঃপর মৃত্যুবরণ করে কিংবা বিজয় অর্জন করে, আমি তাদের মহাপুণ্য দান করব।‘ সুতরাং তোমরা আল্লাহকে শুকরিয়া আদায় কর যে, তোমরা মুজাহিদ হতে পেরেছ। জিহাদকে মনের মধ্যে আঁকড়ে নিয়েছ।“ গড়গড় করে বলে গেলেন গাফফার খাঁ।
তাঁর বলার ভঙ্গিমা আর সুর শুনে মনেই হচ্ছে, তিনি জালসা-মজলিসে ভালোই বক্তৃতা করেন। ফতোয়া দেন। হাদিস-কোরআনের মসলা ব্যাখা করেন। প্রায় পৌনে ছ-ফুট লম্বা গাফফার খাঁ আদতে বাংলাদেশের সিলেটের বাসিন্দা। প্রথম দিকে ‘হুজি’র সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেখান থেকে পাঠ গুটিয়ে আইএস-এ ঢুকে পড়া। এখানে টাকাও বেশি, আবার কাজ করার ক্ষেত্রও বড়। মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে তাঁর নিবিড় যোগাযোগ। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার মধ্যপ্রাচ্য ঘুরে এসেছেন। স্বচক্ষে দেখেছেন, আই এস-এর কার্যকলাপ। আর একটু একটু করে নিজেকে আইএস-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করে নিয়েছেন। আইএস-এর স্বপ্নকে তার নিজের স্বপ্ন মনে হয়েছে। আফ্রিকা-এশিয়া-ইউরোপ জুড়ে স্বপ্নের ‘ইসলামিক স্টেট’ বানানো। শরিয়তি আইন প্রতিষ্ঠা করা। এসব ভাবলে, গর্বে তাঁর বুক ফুলে ওঠে।
আতিফ খেয়াল করল, গাফফার খাঁ যখন কোরআন-হাদিসের আয়াত সুর করে তেলাওয়াত করছেন, তখন তাঁর চোখমুখ আসমানি হয়ে উঠছে, ইহকালের কোনো কিছুর সঙ্গেই তাঁর সম্পর্ক নেই, যেন আসমান, নূর, ওহি, ফেরেশতা, জান্নাত তাঁর চোখে এসে ভর করছে! গাফফার খাঁ ধ্যানের মতো আউলিয়ে যাচ্ছেন। আতিফের মনে পড়ছে, তার মা হালেমাও যখন মাথায় ঘোমটা দিয়ে রেহেলে কোরআন রেখে, এভাবে তার চোখের সামনে সুর করে কোরআন তেলাওয়াত করতেন, তখন তিনিও কেমন একটা ঘোরে ডুবে যেতেন। মাকে জিজ্ঞেস করলে, মা বলতেন, একেই তো বলে, ফেরেশতা ভর করা। ঈমান শক্ত হলে, এমনটা হয়।‘
“একটা জিনিস মনে রেখো, আল্লাহর এবাদত করার জন্যেই আমাদের জন্ম হয়েছে। আল্লাহর দ্বীনকে মজবুত করে যাওয়ার জন্যেই, আমাদের এই পথে আসা। একটা আলাদা দেশ, যেখানে আল্লাহর শাসন কায়েম হবে, আল্লাহর কোরআন আর নবী রসুলের হাদিস অনুযায়ী শাসন পরিচালিত হবে, এ কী চাট্টেখানি নেকির কাজ! আলহামদুলিল্লাহ!” ভক্তিভরে আল্লাহর নাম নিলেন গাফফার খাঁ। জেহাদই হোক আর নিজে মুজাহিদই হই, ওসবের জন্যে তো আর আমি এপথে আসিনি। আমি এসেছি, আমার একটা নিজস্ব দেশ পাওয়ার জন্যে। আমার মতো ভিটেমাটি ছাড়া কোটি কোটি রোহিঙ্গাদের এই পৃথিবী নামক গ্রহে একটা দেশ পাওয়ার জন্যে। একটা মানুষের কোনো দেশ থাকবে না? সাড়ে তিন হাত মাটি থাকবে না? যে শিশু এক রোহিঙ্গা মায়ের পেটে বড় হচ্ছে, তার জন্যে একটা দেশ। যে মা তার সন্তানকে দশ মাস দশ দিন পেটে ধরে, এই পৃথিবীকে একটা মানুষ উপহার দিচ্ছেন, সে মায়ের জন্যে একটা দেশ। আমি সেই দেশ পাওয়ার জন্যেই লড়তে এসেছি। জীবনকে বাজি রেখেছি। জান্নাত-বেহেশত, হুরী, নেকি, নূর এসবের জন্যে আমি মুজাহিদ হইনি। আমি মুজাহিদ হয়েছি, সেই পিতার মৃতদেহ দাফনের সাড়ে তিন হাত মাটির জন্যে, যিনি আমাকে জন্ম দিয়েছেন। আমি শহীদ হতে চাই, সেই মায়ের জন্যে, যিনি বুক ফুলিয়ে বলতে পারবেন, আমি যেমন তোকে পেটে ধরেছি, তেমনি দেশও দিতে পেরেছি। মনকে মন দিয়ে খুঁটতে থাকে আতিফ। নিজের আকাশে নিজেই ওড়ায় ঘুড়ি। কাঁধ থেকে এ কে ফরটিসেভেন রাইফেলটা টেবিলের ওপর আলতো করে নামিয়ে রাখল। কাঁধটা অনেকটা হাল্কা হলো। বন্দুকের ভারে কাত হয়ে গেছিল। কোমর ভাঁজ করে পাশের কাঠের চেয়ারটায় ঠেসে বসল। মাথা থেকে জলপাই রঙের উর্দি টুপিটা খুলে রাখল লম্বা টুলটায়। কপালের ছোপ ঘামে লেপ্টে আছে সামনের চুলগুলো। ঘাড়ের কাছে সন সন করে বইছে ব্যাটারিচালিত টেবিল ফ্যান। ফ্যানের উড়ো হাওয়াতে তার চেপে বসে থাকা চুলগুলো ফিনফিন করে উড়তে লাগল। কাঠের দোতলা কুঠুরি ঘর। নিচের তলা ফাঁকা। কাঠের থাম-খুঁটি। তক্তার সিঁড়িটা সাপের মতো এঁকেবেঁকে ওপরে উঠে গেছে। দক্ষিণ দিকে হাট করে খোলা সেগুন কাঠের জানালা। জানালার তক্তাগুলো দুপাশে সমান করে গোটানো। ঝিরঝির করে ঢুকছে বরফ মাখা বাতাস। জানালার ভিউ দিয়ে দেখা যাচ্ছে, চট্টগ্রামের আকাশ। নীল মাখা আকাশের গায়ে ইতস্তত সাদা মেঘের উড়ুঝুড়ু। কে যেন একমুঠো শিমুল তুলো ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে। চায়ের ট্রেটা ‘ঠক’ করে চেয়ারের সামনের ডাইনিং টেবিলটায় রাখল নবী। লাল চা। গোলমুখো চিনামাটির দুটো সাদা আর একটা অ্যাশ কালারের কাপ। কাপগুলোর গায়ে একটা করে পদ্মকলি আঁকা। হাতলগুলো সরু করে প্যাঁচানো। কাপগুলোর মুখ থেকে গরম চায়ের সাদা ভাপ কুণ্ডলি পাকিয়ে উড়ছে। একটা প্লেটে গোটা ছয়েক ক্রিমকেকার বিস্কুট। নবী ট্রেটা রেখেই বলল, “হুজুর চা”।
“চিনি ছাড়া কোনটা?” জিজ্ঞেস করলেন গাফফার খাঁ।
“অ্যাশ কালারেরটা হুজুর।“ বলল নবী। কাপটা হাতে তুলে নিয়েই গাফফার খাঁ বললেন, “পরের সপ্তাহেই তোমাদের নেপাল যেতে হবে।“
“জি, হুজুর।“ ঘাড় নড়াল আতিফ।
“সেখানে আমাদের লোকজন থাকবে। তোমরা কাঠমান্ডু পৌঁছলেই, আমাদের লোকজন তোমাদের নিয়ে যাবে। কোনো অসুবিধা হবে না।“
“আমাদের কি আর সিরিয়া যাওয়ার দরকার আছে?” জানতে চায়ল আতিফ।
“নাহ, আপাতত নেই। তবে প্রয়োজন পড়লে যেতে হতেও পারে। এ সপ্তাহেই সিরিয়া থেকে একটা টিম এখানে আসবে।“ তারপর হুট করে গাফফার খাঁ বললেন, “কায়রাপরীর টংকীর কী খবর আতিফ?”
“আপনি যা ভেবেছিলেন তাই।“
“আমি তো আর এমনি এমনি ভাবিনি আতিফ, গোপন সূত্র থেকে খবরটা এসেছিল। ওখানেও আমাদের লোকজন লাগানো রয়েছে।“
“আমারও সন্দেহটা ছিল, এত বড় হত্যাযজ্ঞের পেছনে, নিশ্চয় বড় কোনো শক্তির হাত রয়েছে।“
“সবই ধর্ম, বুঝলে? জাতে জাতে টান।“
“আমি তো অবাক! পুরো ছড়িটাই ঘোরাচ্ছে ওরা!“
“শুধু কী তাই? অস্ত্র সরবরাহ, সেনাপ্রশিক্ষণ, টাকা জোগান সবই করছে ওরা।“
“ওদের আসল উদ্দেশ্যটা কী বলে আপনি মনে করেন।“
“দখল। উপনিবেশও বলতে পার। ছলে বলে কৌশলে পুরো দেশটাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া। দেখছ না, তিব্বতটা কীভাবে ক্যাপচার করে নিল।“
“এতে তো মায়ানমারের নিজস্ব সংস্কৃতি ধ্বংস হয়ে যাবে! ওরা তো ওদের সংস্কৃতি জোর করে চাপিয়ে দেবে!”
“সে তো দেবেই। আলবাত দেবে। এভাবেই তো ওরা পুরো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াটা নিজের অধীনে আনার চেষ্টা করছে।“
“আমার মনে হয়, ওদের আসল টার্গেট, ভারতকে তাবে রাখা।“
“একদম ঠিক। ওই জন্যেই ওরা ইন্ডিয়ার চারধারে সেনা ক্যাম্প গড়ে তুলছে। ইন্ডিয়ার শত্রু দেশগুলোর সঙ্গে দোস্তি বানাচ্ছে। ওইসব দেশগুলোকে নানাভাবে সহযোগিতা করছে। আর এই পরিকল্পনারই একটা পার্ট হলো, মায়ানমারকে কব্জায় রাখা। নিজেদের ইচ্ছের সরকার বসানো। যে তাদের বশে থাকবে। দেখো, ভৌগলিক কারণেই, ইন্ডিয়াকে তাবে রাখতে হলে, মায়ানমারকে চাই। মায়ানমার নিজেদের কব্জায় থাকলে, খুব সহজেই ইন্ডিয়াকে আক্রমণ করা যাবে। আক্রমণের বেসক্যাম্প বানানো যাবে। অস্ত্র এনে মজুদ করে রাখা যাবে।“
“আচ্ছা, ইন্ডিয়াকে চীনের অত হিংসা কেন? আমরা তো একসময় শুনেছি, ‘ইন্দো-চীনি ভাই ভাই’। তাহলে চীনের এই পুরো একশ আশি ডিগ্রি ঘুরে, ডিগবাজি মারা কেন?”
“দেখো, আতিফ, এ তো সহজ অঙ্ক। অর্থনীতি, বুঝলে অর্থনীতি। চীন জানে, বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে, ইন্ডিয়াকে বশে রাখতে হবে, কোনভাবেই ইন্ডিয়াকে উঠতে দেওয়া যাবে না। চতুর চীনারা জানে, ইন্ডিয়ার অর্থনীতি যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে চীনকে টেক্কা দিতে পারে। সুতরাং এখন থেকেই চারধার ঘিরে ফোঁসফাঁস কর। আরে এখন তো আর জমির জন্যে বিশ্বযুদ্ধ হবে না, বিশ্বযুদ্ধ হবে অর্থনীতির জন্যে। যে যত অর্থনীতিতে বলিয়ান সে তত বিশ্বের দাদা। বিশ্বের নিয়ন্ত্রক।“
“আমার তো মনে হচ্ছে, মায়ানমারের জান্তা সরকার যেদিকে এগোচ্ছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে মায়ানমার চীনের একটা অঙ্গরাজ্য না হয়ে যায়!” আশঙ্কা প্রকাশ করল নবী।
“সেদিকেই তো এগোচ্ছে। একদম ঠিক ধরেছ। তারা প্রথমে মায়ানমার সেনা দিয়ে দেশ থেকে সমস্ত মুসলমান মাযহাবকে বিতাড়িত করে একটা বুদ্ধিস্ট উপনিবেশ বানাবে, তারপর আরও কিছু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ছোটখাট দেশকে গিলে, একটা পূর্ণাঙ্গ বৌদ্ধস্টেট। এককথায় ‘মহাচীন’ বানাবে।“ চায়ের শেষ চুমুকটা দিলেন গাফফার খাঁ। সুড়ুৎ করে টান মেরে বললেন, “চীনের গুপ্তচর সংস্থা এমএসএস অর্থাৎ মিনিস্ট্রি অব স্টেট সিকিউরিটি, যা চীনের নিজস্ব ভাষায় ‘গওজিয়া অ্যাংকেন বু’, দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা। এরা গুপ্তহত্যা আর কাউন্টার টেররিজম এ সিদ্ধ হস্ত। গোটা মায়ানমার জুড়ে এরা বহুত নিজস্ব লোক সংগ্রহ আর নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। এদের থেকে খুউব সাবধানে থাকতে হবে। এদের ভোল বোঝা খুবই মুশকিল। বিশেষ করে রাখাইনে এরা মাকড়সার মতো জাল বিছিয়ে রেখেছে। মায়ানমার সেনা এদের অঙ্গুলিহেলনেই উঠবস করছে।“
“এখন তো যুদ্ধের গতিপ্রকৃতির ব্যাপক বদল এসেছে। সম্মুখ সমরে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ কমই হয়। এখন শুধু বুদ্ধির যুদ্ধ। টেকনলেজির যুদ্ধ। মাউসের যুদ্ধ।“ কপালের কাছে ঝুলে থাকা চুলটা সরালো আতিফ।
“চাণক্যর একটা কথা আছে, ‘যা বল প্রয়োগে অর্জন সম্ভব নয় তা ধোঁকা দিয়ে সিদ্ধ করা যায়, বিষাক্ত গোখরো সাপও কাক আর সোনার হারের ফাঁদে পরাজিত হয়।’ সুতরাং যেখানে সোজা আঙ্গুলেই ঘি উঠে যাবে, সেখানে খামোখা আঙুল বাঁকাতে যাবে কেন? শুধু টোপ ফেলে রাখো, শিকার ঠিক আসবেই।“ চায়ের কাপটা টি-টেবিলে আলতো করে রাখলেন গাফফার খাঁ।
“হুজুর, একটা কথা ছিল।“ মাথা চুলকোয় আতিফ।
“কী কথা, আতিফ, বলে ফেলো, মাগরিবের সময় হয়ে এলো।“ দেওয়ালে টাঙ্গানো নকশাটানা ঢাউস ঘড়িটার দিকে চোখ ফেললেন গাফফার খাঁ।
“কায়রাপরীর টংকীর অপারেশনটা আমি নিজে হাতে করতে চাই।“ চোখ লাল করে উঠল আতিফ। তার বুকের সিনা ফুলে উঠল।
“অত উতলা হওয়ার এখনই কিছু হয়নি, আতিফ। এখনও ঢের সময় পড়ে। সামনে বহুত কাজ বাকি। তুমি আমাদের একটা অ্যাসেট। তুমি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া ছেলে। টেকনলজিতে তোমার দক্ষ হাত। তোমাকে ব্রেনের যুদ্ধ করতে হবে আতিফ। ওই যে বলে না, যেখানে মাউসের ক্লিকেই কাজ ফিনিশ, সেখানে বারুদের কী প্রয়োজন। তোমার ব্রেন আমাদের এই জেহাদে একটা শক্তিশালী সম্বল। সেটা হেলাফেলায় এত দ্রুত আমরা হারাতে চাই না, আতিফ। একটা ক্ষুরধার ব্রেন হাজার বন্দুকের থেকেও শক্তিশালী। তুমি আমাদের ‘ব্রেনমিসাইল’, আতিফ।“

চলবে…

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১০

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৯

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৮

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৬

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৫

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১

এসএন 

Header Ad
Header Ad

অবশেষে সরিয়ে দেওয়া হলো মাউশির বিতর্কিত ডিজিকে

অধ্যাপক ড. এহতেসাম উল হক ও মাউশির লোগো। ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষক নেতাদের আন্দোলন ও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক (ডিজি) পদ থেকে অধ্যাপক ড. এহতেসাম উল হককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি শিক্ষা ক্যাডারের ১৪তম বিসিএসের কর্মকর্তা এবং পটুয়াখালী সরকারি কলেজের অধ্যাপক ছিলেন।

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি তার বিতর্কিত কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করে মাউশিতে সংযুক্ত করা হয়েছে। এদিকে, নতুন মহাপরিচালক হিসেবে অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খানকে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব মো. মাহবুব আলম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খানের এই দায়িত্ব কেবল সাময়িক, যা পদোন্নতি হিসেবে গণ্য হবে না। পরবর্তীতে নিয়মিত নিয়োগের মাধ্যমে মহাপরিচালক নিয়োগ হলে এই চলতি দায়িত্ব বাতিল হয়ে যাবে।

অধ্যাপক এহতেসাম উল হকের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এর আগে তিনি বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ থাকাকালীন শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়ন চালানোর অভিযোগে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। অভিযোগ রয়েছে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তথ্য তিনি পুলিশের কাছে সরবরাহ করেছিলেন।

২০২৩ সালের ৫ আগস্ট তার অপসারণের দাবিতে কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার অপসারণের দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ২০২১ সালের জুন মাসে বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে যোগদানের পর থেকে তিনি নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে যান। তিনি বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয় সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

অভিযোগ রয়েছে, অধ্যক্ষ থাকাকালীন তিনি শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন এবং আন্দোলনে অসহযোগিতা করতেন। এমনকি কলেজের গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতেন, যা তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনও ব্যবহার করতেন। তিনি কলেজের বিদ্যুৎ ব্যবহার করে নিজের বাসায় গ্রিল নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ করিয়েছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে চাকরি খেয়ে ফেলার হুমকি দিতেন এবং বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) খারাপ করে দেওয়ার ভয় দেখাতেন। এছাড়া, চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন না দিয়ে বিদায় করে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ডিজি পদ থেকে এহতেসাম উল হককে অপসারণের খবরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, একজন বিতর্কিত ব্যক্তি শিক্ষাখাতের এত বড় দায়িত্বে থাকতে পারেন না। তার অপসারণের মাধ্যমে প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রতি সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে।

Header Ad
Header Ad

২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ৩৩ ডিসি ওএসডি

ছবি: সংগৃহীত

২০১৮ সালের বিতর্কিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ৩৩ জন জেলা প্রশাসককে (ডিসি) বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত ছয়টি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিতর্কিত নির্বাচনে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের কারণে এই কর্মকর্তাদের ওএসডি করা হয়েছে। এর আগে একই কারণে আরও ১২ জন কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছিল।

ওএসডি হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের পরিচালক (যুগ্মসচিব) কবীর মাহমুদ, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. মাহমুদুল আলম, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. আবুল ফজল মীর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের সদস্য-পরিচালক (যুগ্মসচিব) মঈনউল ইসলাম, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য (যুগ্মসচিব) মো. ওয়াহিদুজ্জামান, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (সংযুক্ত) এ কে এম মামুনুর রশিদ এবং বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বাপবিবো) সদস্য (যুগ্মসচিব) ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম।

এছাড়া তালিকায় রয়েছেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব কাজী আবু তাহের, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সদস্য (যুগ্মসচিব) মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব (সংযুক্ত) আনার কলি মাহবুব, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য (যুগ্মসচিব) সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী, কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব সাবিনা ইয়াসমিন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আতাউল গনি এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (সংযুক্ত) আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন।

এছাড়া, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব এ জেড এম নুরুল হক, বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের পরিচালক (যুগ্ম-সচিব) এস এম আজিয়র রহমান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সচিব (যুগ্ম-সচিব) মো. মাসুদ আলম সিদ্দিক এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম-সচিব গোপাল চন্দ্র দাশসহ আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা রয়েছেন।

প্রসঙ্গত, বিতর্কিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই ওই সময়ের রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এবার সেই নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের পর্যায়ক্রমে ওএসডি করা হচ্ছে বলে মনে করছেন প্রশাসনিক বিশ্লেষকরা।

Header Ad
Header Ad

ট্রাম্পের বিস্ফোরক দাবি: চলমান যুদ্ধের সূচনা ইউক্রেনই করেছিল

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য ইউক্রেনকেই দায়ী করে নতুন বিতর্ক উসকে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন রাজনীতিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে পরিচিত ট্রাম্প এবার ইউক্রেনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, চলমান যুদ্ধের সূচনা ইউক্রেনই করেছিল।

মঙ্গলবার (স্থানীয় সময়) ফ্লোরিডার মার-আ-লাগোতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রতি কঠোর মনোভাব প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ইউক্রেনে একটি নতুন নির্বাচন হওয়া উচিত। বিশ্লেষকদের মতে, এটি জেলেনস্কিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনারই ইঙ্গিত।

ট্রাম্প আরও বলেন, ইউক্রেনে দীর্ঘদিন ধরে কোনো নির্বাচন হয়নি এবং সেখানে সামরিক আইন চলছে। তার দাবি, জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা মাত্র চার শতাংশে নেমে গেছে, আর দেশটি ধ্বংসের পথে। যদিও যুদ্ধকালীন সময়ে নির্ভরযোগ্য জনমত জরিপ পাওয়া কঠিন, তবে বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা ট্রাম্পের দাবির মতো এতটা কমেনি।

এছাড়া, ইউক্রেনের নির্বাচন প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, "তারা কি জনগণের মতামত নিয়েছে? তারা আলোচনার টেবিলে বসতে চায়, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সেখানে কোনো নির্বাচন হয়নি।"

প্রসঙ্গত, ইউক্রেনে ২০২৪ সালের এপ্রিলে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও দেশটির সংবিধান অনুযায়ী, যুদ্ধকালীন সময়ে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই মন্তব্য কৌতুকপূর্ণ, কারণ তিনি নিজেই ২০২০ সালের মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।

ট্রাম্প আরও দাবি করেন, ইউক্রেন চাইলে যুদ্ধ বন্ধ করতে পারতো এবং তাদের উচিত ছিল রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতায় যাওয়া। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এর অর্থ হলো—ইউক্রেনকে হয় রাশিয়ার মিত্র সরকার গঠনের প্রস্তাবে রাজি হতে হতো, নয়তো প্রতিরোধ ছেড়ে দিয়ে আত্মসমর্পণ করতে হতো।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক অবস্থান ইঙ্গিত দেয় যে, তিনি পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ইউক্রেনকে সমর্থন না দিয়ে বরং রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি বিতর্কিত শান্তিচুক্তির দিকে এগোতে পারেন, যা পুতিনের জন্য বড় ধরনের কূটনৈতিক জয় হিসেবে বিবেচিত হবে।

সূত্র: সিএনএন

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

অবশেষে সরিয়ে দেওয়া হলো মাউশির বিতর্কিত ডিজিকে
২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ৩৩ ডিসি ওএসডি
ট্রাম্পের বিস্ফোরক দাবি: চলমান যুদ্ধের সূচনা ইউক্রেনই করেছিল
ডিবির সাবেক প্রধান হারুনের ১০০ বিঘা জমি, ৫ ভবন ও ২ ফ্ল্যাট ক্রোকের নির্দেশ
দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন রেখা গুপ্তা, বিজেপির সিদ্ধান্তে চমক
একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতির শহীদ মিনারে না যাওয়ার আহ্বান
নামাজি জীবনসঙ্গী খুঁজছেন আইশা খান
গাইবান্ধায় গাঁজাসহ আটক এএসআইকে কারাগারে প্রেরণ
উপদেষ্টাদের মিটিংয়ে কোন প্রটোকলে গিয়েছিলেন হাসনাত-পাটোয়ারী: ছাত্রদল সেক্রেটারি
সরকারে থেকে ‘নতুন দল’ গঠন করলে মেনে নেওয়া হবে না: মির্জা ফখরুল
হোস্টিং সামিট ২০২৫ অনুষ্ঠিত
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচে পাকিস্তানকে ৩২১ রানের বড় লক্ষ্য দিলো নিউজিল্যান্ড
বৈষম্যবিরোধী নামধারী শীর্ষ নেতার নির্দেশে কুয়েটে ছাত্রদলের ওপর হামলা: রাকিব
যান্ত্রিক ত্রুটিতে আবারও বন্ধ বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র
কুবিতে ছাত্র সংসদের দাবিতে মানববন্ধন ও সন্ত্রাসবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল
২২০ জনকে নিয়োগ দেবে সমরাস্ত্র কারখানা, এসএসসি পাসেও আবেদন
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে ২ দিনব্যাপি খামারি প্রশিক্ষণ
সবার সাত দিন কারাগারে থাকা উচিত: আদালতে পলক
বিপ্লবী সরকারের ডাক থেকে সরে এলেন কাফি  
নাঈম ভাই হেনা কোথায়?: ‘তুই অনেক দেরি করে ফেলেছিস বাপ্পা’