ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-৫
নেই দেশের নাগরিক
‘কী যে আজেবাজে বকিস! তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?’ চোখ গরম করল মতি। নুহু মনে মনে বলল, মতিভাই যতই চোখ গরম করুক, সে তো আর জানে না, আমি কেন নদীটাকে শুকোনোর কথা বলছি। মানুষ তো আর পারবে না, এ নদী শুকোতে হলে আল্লাহর ফুঁই লাগবে। তারপর সেই শুকনো নদীর চটানে ঠিকই খুঁজে পাব আমার রফিক আর তার মা লতিফাকে। তখন কোথায় লুকোবে? কোত্থাও এতটুকুনও জল থাকবে না। চারদিক খাঁ খাঁ করবে।
রফিক, লতিফাদের কথা মনে পড়লে নুহুর মাথা এভাবেই মাঝেমধ্যে বিগড়ে যায়। জিনে ধরার মতো ভুল বকতে শুরু করে। আবোল তাবোল গাইতে থাকে। বিড়বিড় করে। সে ইহজগত ছেড়ে কখনো পরজগতে তো কখনো পোকামাকড়ের জগতে চলে যায়। নুহু হল বৌর ছায়া না ছাড়া মরদ। লতিফাকে চোখের আড়াল হতে দেখলেই তার মন ছটফট করত। বিড়বিড় করে উঠত, ‘মেয়েটা না বলে, কোথায় যে যায়!’ এত অভাব-অনটনের মধ্যেও সে কোনো দিন বৌর গায়ে হাত তোলেনি। কোনো কিছু নিয়ে ঠুকমুক হলে, চুপ হয়ে যেত। মুখ দিয়ে একটা রাও করত না। লতিফা তখন গালে মিহি টোল ফেলে বুঝতে পারত, মানুষটা তার ওপর রাগ করেছে। সে তখন ঠোঁটে দুষ্টু হাসি লাগিয়ে বলত, ‘কী গো, রফিকের আব্বা, আমার মাথায় একটু তেল দিয়ে দিবে না?’ লতিফার কথায় তখন নুহুর চোখ-মুখ থেকে সড়সড় করে রাগ ঝরে যেত। ঠোঁটে একটা মিস্টি হাসি মাখিয়ে নুহু বলত, ‘তা বলবে তো? আমি তো কখন থেকে এমনি এমনি বসে আছি।’ বউ’র চুলে তেল দেওয়ার জন্যে তাকে কত ঠাট্টাই না শুনতে হয়েছে, তবুও নুহু সে কাজ থেকে কোনোদিন বিরত হয়নি। অনেকেই মশকরা করেছে, ‘তুই আবার কেমন মরদ মানুষ রে, মাগি মানুষের মতন মেয়েদের চুলে তেল দিস!’ আবার কেউ কেউ হিস মেরেছে, ‘যত্তসব ঢং, কাজ নেই তো চল মাগের চুলে তেল দিই।’
কৌশা নৌকাটা সাঁ সাঁ করে ছুটে চলেছে। দুই ভাইয়ের শক্তিভর গায়ের জোরে, নৌকাটা ইঞ্জিনের বেগে ছুটছে। যেন অদৃশ্য কোনো ফেরেশতা ফুঁ দিচ্ছে! দরদর করে ঘাম ঝড়ছে নুহুর কপালে। তামাটে রঙের উদেম গা। ঘাড়ে এলিয়ে রয়েছে লালরঙের একটা পুরোনো গামছা। হাড়গিলে গায়ে গামছাটা চেপ্টে লেগে গেছে। চামটা পেটের ওপরে উঁকি দিচ্ছে বুকের জিরজিরে হাড়। বুকের খাঁচাটা থেকে যেন বিত্তির খিলের মতো হাড়গুলো ছিটকে বেরিয়ে আসছে। ঢেরক্ষুণ হল, পেটে কিচ্ছু পড়েনি। সেই ভর সন্ধ্যায় বাড়ি ছাড়ার সময় ‘হাতে দিই না মুখে দিই’ বলে দুগাল ভাত মুখে দিয়েছিল। সেইই শেষ খাওয়া। মাঝে একবার আরিফা বলেছিল, ‘দেওরজী, জানে দুটে দানাপানি দাও, গায়ের বল যে পানি হয়ে গেল।’ নুহু ‘এখন বৈঠা টানছি’ বলে ফিরিয়ে দিয়েছিল। আরিফা জোরাজুরি করলে, নুহু বিরক্ত হয়েছিল, ‘এখন রাখো তো, খিদে নেই’। আসলে খিদে ঠিকই ছিল। খিদেতে পেট চুঁ চুঁ করছিল, কিন্তু মন যেন টানছিল না। ইচ্ছে করলে, নুহু গামছার কোছাতে মুড়ি বেঁধে বৈঠা টানতে টানতে দিব্যিসুন্দর চিবোতে পারত। এরকম করে কতদিনই তো সে খেয়েছে। গরিবের কি আর ওত ফুরসত আছে, যে আয়েশ করে চিবিয়ে চিবিয়ে খাবে? পালিয়ে আসার পর থেকেই নুহু যেন কেমন মনমরা হয়ে গেছে। এই শরীর-দেহের প্রতি তার যেন আর কোনো ভক্তি নেই। মরে গেছে দরদ। যত্ন-আতির। আজ না হয় কাল ধরা ঠিকই পড়ব। তখন এই দেহটাই হবে যত যন্ত্রণার কারণ। কষ্টের কারণ। যে শরীর নিয়েই এই মানুষ, সে মানুষটার গতি হবে ভয়ঙ্কর। তাকে জান খুঁচে খুঁচে মারা হবে। লতিফা রফিকদের হারানোর পর থেকে নুহুর ধর থেকে যেন জানটা উড়ে গেছে। চিন্তায় চিন্তায় তার চোখের নিচে পড়ে গেছে কালসিটে দাগ। যেন দুটো আলকাতরা মাখানো ডিঙি নৌকা তার দুই চোখের নিচে চেপ্টে লেগে আছে। কণ্ঠার হাড় বাড়তে বাড়তে কানের লতিকে ছুঁয়ে ফেলল বলে। গামছা দিয়ে আবড়াসাবড়া করে কপালের গাম মুছল নুহু। অত গরম তো নেই? পুবালি বাতাস ভালোই ঝটকা দিচ্ছে। তাহলেও কেন এত ঘামছে নুহু! এ ঘাম বাতাসের নয়। এ ঘাম আর্দ্রতার নয়। এ ঘাম মনের। এ ঘাম, শরীরের ভেতরে হৃদয় নামক যে যন্ত্র আছে, সেই হৃদয়ের। এ ঘাম মোছার নয়, এ ঘাম ঘোচারও নয়। এ ঘামের যে কোনো দেশ নেই! ঘাম মুছে গামছাটাকে ঘাড়ে ফেলে দিয়ে নুহু বলল, ‘ভাই, একটা বিড়ি দাও না। জানে একটুখানি ধোঁয়া দিই।’
‘তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? বুদ্ধিসুদ্ধি কি লোপ পেয়ে গেল?’ তেড়ে উঠল মতি। মতির চোখ রাঙানিতে নুহু লজ্জাবতির পাতার মতো গুটিয়ে গেলে, মতি বিড়বিড় করে উঠল, ‘তোর কি হুঁশ নেই? বিড়ি ধরালে, বিড়ির আগুন দূর থেকে দেখা যাবে। আগুনের জ্বলনকে তো আর আটকাতে পারবি নে? তখন এই আগুনই আমাদের কাল হবে। তখন এ জন্মের মতো বিড়ি ফুঁকা বাপ বাপ করে ভুলবি।’
কিচ্ছু বলল না নুহু। আনমনা খেয়ালে বৈঠা টানতে লাগল। ছলাৎ ছলাৎ করে শব্দ করে উঠছে নদী। আসলে নুহু ভেবেছিল, বিড়িটা টানলে হয়ত মন থেকে দুশ্চিন্তাটা একটু হলেও কেটে যাবে। সেই তখন থেকে মনটা শুধু রফিক আর লতিফা, লতিফা আর রফিক গাহাচ্ছে। কোনোভাবেই এই দুশ্চিন্তা থেকে বের হতে পারছি নে। হৃদয়টাকে একেবারে কুরে কুরে খেয়ে নিচ্ছে। নুহুর হাড় মাংস কাটলেও বলে উঠবে, রফিক লতিফা, লতিফা রফিক। অথচ নুহু ভালই জানে, মরতে একদিন সবাইকেই হবে। হয় আজ না হয় কাল। কেউ একদিন আগে, কেউ একদিন পরে। তবুও সে মানুষ তো। সে তো আর বনের পশু নয়। আপনজন চলে গেলে, মানুষ বড় একলা হয়ে পড়ে। তার হৃদয় ভেঙে যায়। বুক থাবড়ে কাঁদে। যেন ‘মৃত্যু’ নামক চিরসত্যটাকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারে না। ‘মৃত্যু’ তখন তার চোখে এ জন্মের একমাত্র ভিলেন। নুহু আগে বিড়ি খেত না। লতিফারা মারা যাওয়ার পর থেকে সে বিড়ি খাওয়া ধরেছে। জেলেপাড়ার সুং তান তাকে সবসময় মাথা ধরে ঝিমোতে দেখে, একদিন একটা বিড়ি এগিয়ে দিয়ে বলেছিল, ‘বিড়ি খা, মনে সকুন পাবি। সব চিন্তা ধোঁয়াতে ধুয়ে যাবে।’ নুহু আর দুবার ভাবেনি। ‘খপ’ করে বিড়িটা ধরে নিয়ে ঠোঁটে গুঁজে দিয়েছিল। তারপর ঠোঁট মোটা মুখটা বাড়িয়ে সুং তানের মুখে লাগানো জ্বলন্ত বিড়িটা থেকে আগুন নিয়ে ‘গব’ করে ধোঁয়া ছেড়ে বলেছিল, ‘ধরে তো জানই নেই, তো শান্তি কোত্থেকে আসবে, সুংদা?’
‘আরে... আরে... লেগে গেল! লেগে গেল! ডানে ঘোরা ডানে ঘোরা।’ আচমকা তিড়বিড় করে উঠল মতি। হাতের কব্জিটাকে বাঁকিয়ে ভ্রূ কুঁচকালো নুহু, ‘অন্ধকারে তো দেখতেই পাওয়া যায়নি!’
‘গালে হাত দিয়ে সবসময় ঝিমো, তাহলেই দেখতে পাবি।’ ঠেস মারল মতি।
‘তুমিও তো বলতে পারতে? এছমুই তো মুখ করে আছ?’ চোখ নাচাল নুহু। খ্যাঁক করে উঠল মতি, ‘তোর মতো কি আমি নদীতে মুখ গুঁজে বসে আছি? একহাতে দাঁড় ধরে অন্য হাতে মা’র বাতের ওষুধ ছেঁচছি, দেখতে পাচ্ছিস ন্যা?’
‘আমিও কি চোখে দূরবীন লাগিয়ে বসে আছি? একনাগাড়ে বৈঠা টানছি।’ পাল্টা তেতে উঠল নুহু।
‘তাহলেও চোখ-কান খোলা রেখে চলতে হয়। রাতের ব্যাপার।’ দাঁত খিটমিট করল মতি। নুহু বলতে যাচ্ছিল, ‘চোখ-কান কি আমার একার আছে? তোমার নেই? তুমি কি কানা-বোবা নাকি?’ কিন্তু কথাটা আর গলা ঠেলে বেরোল না। নিজেই গিলে খেল। ছইয়ের ভেতর থেকে আরিফা ঝেঝিয়ে উঠল, ‘আরে দয়া করে তোমরা থামবে? এই ঘোর আপদে দুই ভাইয়ে কি যুদ্ধ লাগালে!’
হ্যাঁ, যুদ্ধ, যুদ্ধই তো করছে দুই ভাইয়ে। সাম্রাজ্য না হলেও ভিটে ফিরে পাওয়ার যুদ্ধ করছে। সে যুদ্ধ যেমন জলে করছে, নদীতে করছে, মনেও করছে। তাতে ভাইয়ে ভাইয়ে কথা কাটাকাটি হচ্ছে। চিন্তাভাবনার মিল অমিলে হচ্ছে। তা হলেও লক্ষ্য তো দুজনেরই এক। সেই এক চিলতে ভিটে পাওয়ার খোঁজ। নিজেদের একটা দেশ ফিরে পাওয়ার খোঁজ। নৌকার যে প্রান্তে নুহু বসে আছে, সেই প্রান্তটা একেবারে ঘেঁষে পাশ কাটল এক দলা অন্ধকারের অবয়বের মতো নৌকাটা। অন্ধকারে অত বোঝা যাচ্ছে না, তবে নক্ষত্রের চিকন আলোয় যেটুকু আবছা বোঝা যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে নৌকাটা মাঝারি মাপের। ছই কালো কুচকুচে রঙের। যেন অন্ধকারেই লুকিয়ে আছে অন্ধকার। ওই নৌকাটাতেও কোনো আলো জ্বলছে না! অন্ধকার নৌকার পাটাতনে হাঁটু গেড়ে বসে আছে। শুধু ছলাৎ ছলাৎ শব্দ হামলে উঠছে চারপাশ। কিছুক্ষণ পর সে শব্দও চুপ মেরে গেল! নুহুরাও ঘাপটি মেরে গেছে। কেউ কোনো সাড়া শব্দ করছে না। নুহুরা ভাবছে, মনে হয় লুন সানের চর-নৌকা! তারা গল্প শুনেছে, লুন সানের ভয়ঙ্কর জলদস্যু চররা আচমকা নদীর বুকে ভুস করে ভেসে ওঠে। তারপর মেরে ধরে ছিনতাই করে নিয়ে পালায়। এরা নাকি সাহস আর চতুরতায় ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর সব জলজন্তুকেও হার মানায়! একেবারে গা লাগালাগি করে লাগানো ওই নৌকাটাতেও কোনো শব্দ নেই! আগন্তুক নৌকাটিও থ মেরে আছে। যেন রাতের নাফ নদীর বুকে একজন আরেকজনের পাশে যমদূত হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। হঠাৎ পিন পতনের নিস্তব্ধতা ভেঙে ‘খক’ করে উঠলেন আলি জাফর। খ্যাঁক করে উঠলেন হালেমা, ‘হ্যাঁ, ডাকো, ডাকো, আজরাইলকে ডাকো, জানগুলেন সব কবজ করে নিয়ে যাক। আর এটুকু সর্বনাশ করাই তো তোমার বাকি ছিল!’
‘মা, আল্লাহর দোহায়, চুপ করুন।’ ফিসফিস করল আরিফা। আরিফা এমন করছে পারলে কাঁথা, চাদর যা হাতের কাছে আছে তাই দিয়ে শাশুড়ির মুখটা বন্ধ করে দেয়।
‘দেখছ না? তোমার শ্বশুরটা চিল্লিয়ে কেমন করে মরণ ডেকে আনছে?’ স্বামীর ওপর তিক্তবিরক্ত হয়ে উঠলেন হালেমা। আরিফা আর কোনো উপায় না দেখে, হাতের তালু দিয়ে শাশুড়ির মুখটা বন্ধ করে ফিসফিস করল, ‘মা, চুপ করুন, শ্ত্রুরা কথা শুনতে পাবে!’ কিছুক্ষণ এভাবে দোম মেরে থাকার পর মতি কিছু একটা বলতে যাবে এমন সময় আগুন্তুক নৌকাটা থেকে মিহি করে একটা মানুষের কণ্ঠস্বর ভেসে এল, ‘কে গো তোমরা? কোত্থেকে আসছ?’
মতি কথার স্বর আর ভঙ্গি দেখে আন্দাজ করল, এ তো রাখাইনের লোক। সেনাটেনা নয়। ওরাও বুঝি আমাদের মতো পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তবুও মতি কোনো রা করল না। ভাবল, এ তো লুন সানের চরদের নতুন কোনো ফন্দিও হতে পারে। ওরা ভেকধারী শয়তান। কখন কি ভেক ধরে তা কেউ বলতে পারে না। হয়ত রাখাইনের লোকেদের মতো কথা বলে, আমাদের মুখ থেকে কথা নিতে চায়ছে। ওদের তো কোনোকিছুতেই বিশ্বাস নেই। মতিদের নৌকা থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে, কণ্ঠটা আবারও বেজে উঠল। এবার একটু জোরে। যেন ভয়ের মেঘ ফুঁড়ে ঠিকরে বের হওয়া রোদ। মতি কিছু না বললেও, নুহু মুখ খুলল, ‘আপনারা কারা? আপনারাই বা কোত্থেকে আসছেন?’
পাল্টা প্রশ্নতে আগুন্তুক নৌকার লোকটি গিরগিটির মতো ঝিম মেরে গেল। আর কোনো কথা নেই। দুই নৌকাতেই তখন নিঝুম শূন্যতা। নৈশব্দ ঝুপ মেরে আছে। তবে কি ভয় খেয়ে গেল। হয়ত ভাবছে, কে রে বেটা, কথার উত্তর না দিয়েই পাল্টা প্রশ্ন করছে!
আবারও কিছুক্ষণ পিন পতনের নিস্তব্ধতা। নুহুর এভাবে চুপ মেরে থাকাতে দম বন্ধ হয়ে আসছে। আপুরফুপুর লেগে যাওয়ার দশা। সে আকুলিবিকুলি করছে, ধুর, পাশনি বের করে দাঁড়িয়ে পড়ি, কতক্ষণ আর ইঁদুরের মতো ঘাপটি মেরে থাকা যায়? সে রাগের বশে ছলাৎ করে বৈঠাটাকে ঠেলল। মতি অন্ধকার চিবিয়ে বলল, ‘আরে গাধা, অ কী করছিস?’ নুহু মনে মনে চিড়বিড়িয়ে বলল, ‘ঘোড়ার ডিম করছি। যতসব ভিতুর ডিম।’ কিন্তু বাইরে কোনো রা করল না। শুধু চোখ দুটো ঘোলা করে তাকাল। বৈঠার ঠেলা জল আলতো করে একটা ঢেউ তুলল। সে ঢেউ গিয়ে লাগল আগন্তুক নৌকাটির খোলে। নৌকাটি আলতো করে দুলে উঠল। নৌকার সঙ্গে সঙ্গে দুলে উঠল নদীর বুকে চিৎ হয়ে পড়া নৌকাটির আলো-আঁধারি ছায়া। নুহু চোখ ঢেলা পাকিয়ে দেখল, সে ছায়ায় কোনো অস্ত্রধারী মানুষ আছে কি না? কতজন মানুষ নৌকাটিতে দাঁড়িয়ে আছে? নৌকার গায়ে কোনো পতাকা-টতাকা লাগানো আছে কি না? নাহ, সেসব কিচ্ছু নেই। নৌকাটাকে চোখ ফেড়ে জরিপ করল। তারপর আচমকা তার ভেতরটা ধেই করে নেচে উঠল, আরে এ তো আমাদের মতো একটা ‘ঘাটবাড়ি কৌশা’ নৌকা! মনের মধ্যে একটা খুশির ঝলক খেলে উঠল। এ নৌকায় লুন সানের বাহিনীরা থাকতেই পারে না। আমাদের মতই হয়ত দেশ ছাড়া শিকড়হীন মানুষজন আছেন। তারাও হয়ত আমাদের মতো নতুন কোনো দেশ খুঁজে বেড়াচ্ছেন। একটু মাথা গোঁজার ঠাই। এক চিলতে ভিটে। এক ছটাক উঠোন। নুহু গলা ঠেলে কিছু একটা বলতে যাবে, অমন সময় অন্ধকার ফুঁড়ে এবার একটা ঝ্যানঝেনে গলা ভেসে এল, ‘তোমরা কি রোহিঙ্গা?’
চলবে…
আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>
আরএ