মঙ্গলবার, ৪ মার্চ ২০২৫ | ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক ভ্রমণ, পর্ব : ১

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা

পর্ব: ১

কায়রো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের মধ্যবয়েসী ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা ঢুলু ঢুলু চোখে পাসপোর্টের পাতা উল্টিয়ে একটিও শব্দ উচ্চারণ না করে ভিসার উপরেই একটা সিল দিয়ে ছেড়ে দিলেন। মাস্ক খুলতে বলা তো দূরের কথা আমার চেহারার দিকে একবার তাকিয়েও দেখলেন না। আমার আগে একই কাউন্টার দিয়ে বেরিয়ে গেছেন অগ্রজ সহযাত্রী আনিসুর রহমান রানা ভাই এবং আমার স্ত্রী মাহবুবা বেগম হেনা। আমিই ছিলাম কাউন্টারের শেষ যাত্রী, আমার দিকে পাসপোর্টটা ঠেলে দিয়ে ইমিগ্রেশন অফিসার সম্ভবত আবার ঘুমিয়ে পড়লেন। আসলে তো ঘুমাবার কথা আমাদের। রাত এগারোটায় ঢাকা থেকে উড়ে দোহায় ঘণ্টা দেড়েকের যাত্রা বিরতি দিয়ে স্থানীয় সময় সকাল আটটায় নেমেছি কায়রো। দোহার বিরতিটাও আসলে ছিল বিরতিহীন। সিকিউরিটি চেকিংয়ের পরে ছুটতে ছুটতে ভিন্ন টার্মিনালের গেট পর্যন্ত পৌঁছাবার আগেই বোর্ডিং শুরু হয়ে গেছে। চলতি পথে কখনোই ঘুমাতে পারি না, বিমানে তো একেবারেই নয়।

এক মিনিটে ইমিগ্রেশন পার হয়ে যাবার ফলে ভেবেছিলাম যাত্রাটা খুব সহজ হয়ে গেছে। কিন্তু দেশ থেকে দেশান্তরে যাবার পথে কোভিড-১৯ টেস্ট নামে নতুন যে যন্ত্রণা যাত্রীদের জীবনে যুক্ত হয়েছে ঢাকা এয়ারপোর্টর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা তা ভুলে গেলেও কায়রোর কর্তৃপক্ষ মনে হলো মক্কেল ধরার একটা ফাঁদ পেতে রেখেছে। ফলে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হলো। গুটি গুটি পায়ে সামনে এগোবার পরে দেখা গেল ইজিপশিয়ানরা হাতে হাতে পাসপোর্ট ফেরৎ নিয়ে ডানদিক দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে আর বাঁ দিকে জমে উঠছে পাসপোর্টের স্তূপ! হিজাবধারী মহিলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নাকি পুলিশের লোক বুঝলাম না, আমাদের পাসপোর্ট রেখে দিয়ে একপাশে দাঁড়াতে বললেন। এক এক করে সকল ভিনদেশির পাসপোর্ট জমা নেবার পরে কর্মকর্তা গোছের একজন সেই পাসপোর্টের পাহাড় দুই হাতে তুলে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কোথায় চলে গেলেন কেউ জানে না।

একদল পোলিশ তরুণ তরুণী হৈ চৈ করতে করতে সামনে এগিয়ে একটা বসার জায়গা আবিষ্কার করার পরে আমরাও তাদের অনুসরণ করে ছোট একটা হল রুমের মতো ঘরে এসে ঠাঁই নিলাম। একটা বাংলাদেশি পরিবারসহ আরো দুচারজন যাত্রী কোভিড টেস্ট শেষ করে বেরিয়ে গেছেন। দীর্ঘক্ষণ বসে আছি তো আছিই। পোলিশদের কোনো চিন্তা ভাবনা নেই। দল ধরে ঘুরতে বেরিয়েছে, সঙ্গে একজন ট্যুর লিডার বা ট্রাভ্রেল এজেন্ট তাদের হয়ে ছোটাছুটি করছে। আমাদের হয়ে ছোটাছুটি করার কোনো ট্যুর অপারেটর নেই। অগত্যা রানা ভাই নিজেই খোঁজ নিতে গেলেন এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই কোভিড টেস্টের ব্যবস্থা করে ফিরে এলেন।


জনপ্রতি এক হাজার ইজিপশিয়ান পাউন্ড অর্থাৎ প্রায় ছয় হাজার টাকা হাতে নিয়ে একে একে সবার নাকে লম্বা কাঠি দিয়ে জোরেসোরে একটা করে গুতা দিয়ে স্প্যাম্পল কালেকশন শেষ হবার পরে আবার অপেক্ষার পালা। এবারে দুটি ভিন্ন চিন্তা এসে মাথায় ভর করল। প্রথমত: যদি আমাদের তিনজনের মধ্যে কোনো কারণে পরীক্ষায় কারও করোনা পজিটিভ চলে আসে তাহলে কী হবে! দ্বিতীয়ত: আমাদের ফলাফল আমাদের অনুকূলে থাকলেও তা পেতে কতো দেরি হবে এবং সেক্ষেত্রে এয়ারপোর্টের বাইরে আমাদের স্থানীয় অভিভাবক রানা ভাইয়ের পুত্র সৌরভ আমাদের জন্য কতোক্ষণ কোথায় অপেক্ষা করবে! সৌরভ জাতিসংঘের একটি সংস্থায় কাজ করে, আফিস থেকে হয়তো আধাবেলা ছুটি নিয়ে আমাদের নিতে এসেছে। কিন্তু ওর সাথে যোগাযোগের কোনো ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। আমাদের ভাগ্য ভালো নাকি কায়রো এয়ারপোর্টে কোভিড পরীক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত স্বাস্থা কর্মকর্তাদের বাণিজ্য বুদ্ধি ভালো, বলা মুশকিল! আমাদের অবাক করে দিয়ে মিনিট পনের পরে রানাভাই হাসতে হাসতে তিনটি পাসপোর্ট হাতে এসে বললেন, ‘রিপোর্ট নিগেটিভ! এবারে বাইরে বেরিয়ে যাওয়া যায়।’
আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘রিপোর্টের কাগজ কই?’
‘কাজপত্র কিছুই দেয়নি, পাসপোর্ট হাতে দিয়ে বলল, তোমরা এবার যেতে পারো। আর কাগজ বলতে আরবি লেখা কিছু একটা দিয়েছে, সেখানে কারও নাম বা টাকার অংক এমনকি পজিটিভ নিগেটিভ কিছুই লেখা নেই।’

সারা দুনিয়াজুড়ে করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ার ফলে যে কোভিড টেস্ট বাণিজ্য শুরু হয়েছে, বুঝতে পারলাম, এটিও তারই একটি অংশ। ঢাকা এয়ারপোর্টে ল্যাবরোটারি টেস্টের রিপোর্ট দেখে সিল মেরে দেয়া ছাড়া আর কোথাও কেউ কিছু দেখতে চায়নি। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ঘোষণাপত্র এবং এয়ারলাইন্সের ডিক্লারেশন ফর্ম নামের যে দুটি দীর্ঘ ছককাটা কাগজ যথেষ্ট সময় নিয়ে পুরণ করতে হয়েছিল, তার কোনো দরকার হয়নি। কাগজ দুটো আমার ফাইলেই পড়ে আছে। আমাদের লাগেজ একেবারেই সামান্য, তারপরেও চাকা গড়িয়ে টেনে নেয়ার চেয়ে ট্রলি নিঃসন্দেহে ভালো। ঢাকা বিমান বন্দরের মতো দুর্লভ ট্রলির জন্য অপেক্ষা করতে বা ট্রলি খুঁজে বের করতে হলো না। একটা আধুনিক এয়ারপোর্টে হাত বাড়ালেই ট্রলি। আমরা দুটি ট্রলি নিয়ে সবুজ দরজা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যাবার সময় আমার ট্রলিটা বারবারই ঘুরে এয়াপোর্টের ভেতরে ঢুকে যেতে চায়। এই ঘাড় বাঁকা ট্রলি কোনো রকমে ধাক্কা দিয়ে এয়ারপোর্টের বাইরে বেরোতেই দেখা হয়ে গেল সৌরভের সাথে। এক গাল হেসে কুশল জিজ্ঞাসার সাথে সাথেইআমার হাত থেকে ট্রলি নিজের হাতে নিয়ে নিল সৌরভ। পার্কিং জোনে ওর গাড়িটা যেখানে আছে সে পর্যন্ত ট্রলি ঠেলে হেঁটে যেতে হবে। রাস্তা পেরিয়ে অনেকটা নিচের দিকে পার্কিং লটে পৌঁছাতে ওর যে যথেষ্ট কষ্ট হবে তা বুঝতে পারছিলাম। তারপরেও সেই ট্রলি ঠেলে পিতা-পুত্র এসে পৗঁছালে আমরা গাড়িতে উঠে বসলাম। রানা ভাই পার্কিংয়ের কোনায় একটা কিয়স্ক থেকে কফির গ্লাস হাতে নিয়ে সিগারেট ধরালেন। আসলে কফি পানের চেয়ে ধূমপানটা তার জন্যে জরুরি হয়ে পড়েছিল, বুঝতে পারি। আমাদের যেহেতু ধূমপানের ঝামেলা নেই, তাই কফি পানেরও তাগিদ অনুভব করি না।

রানা ভাইয়ের সিগারেট শেষ হলে সৌরভ উঠে বসে ড্রাইভিং সিটে। এয়ারপোর্ট থেকে কায়রোর অভিজাত মাআদি এলাকায় সৌরভের বাসার পঁয়ত্রিশ কিলোমিটারের মতো দূরত্ব পঞ্চাশ মিনিটে পৌঁছে যাওয়া যায়। রাস্তায় দুই এক জায়গায় গাড়ির গতি শ্লথ হলেও তেমন কোনো যানজট নেই। পথে পথে উড়াল সেতু, বিভাজিত সড়ক দ্বীপে এবং দু পাশের ফুটপাথের ওপারে কিছু গাছপালা, বিশেষ করে মৃতপ্রায় খেজুর গাছের সারি চোখে পড়ে। যে কোনো আধুনিক শহরের মতোই দেয়াল দিয়ে ঘেরাবিশাল এলাকা জুড়ে সরকারি বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান, বহুতল বাণিজ্যিক ভবন এবং বিস্তৃত আবাসিক এ্যাপার্টমেন্ট দেখতে দেখতে আমরা এগোতে থাকি। পথের পাশে নির্মাণ কাজের দক্ষযজ্ঞ এবং আবর্জনার স্তূপও দেখা যায়। সবকিছু মিলিয়ে প্রথম দর্শনে কেন যেন এই শহরকে বড় বেশি পুরোনো, ভীষণ ধূলি মলিন, ভাঙাচোরা আর অগোছালো মনে হয়।

আমরা প্রায় কুড়ি পঁচিশ মিনিটের পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি। ইউরোপের বেশিরভাগ দেশের মতো গাড়ি চলে ডান দিকের লেন ধরে। প্রথম দিকে অনভ্যস্ত চোখে মনে হতো রং সাইড দিয়ে যাচ্ছি, যে কোনো মুহূর্তে উল্টো দিক থেকে গাড়ি এসে মুখোমুখি সংঘর্ষ বাধবে। আজকাল আর সে ভয় নেই, তাছাড়া সৌরভ ড্রাইভ করে চমৎকার। মাঝে মাঝে পথের ডাইনে বাঁয়ে উল্লেখযোগ্য স্থাপনা বা দর্শনীয় কোনো কিছুর দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিল। আল নাসের সড়কের ডান দিকে সিটাডেল, কায়রো শহরের মধ্যযুগীয় প্রতিরক্ষা দুর্গ। সৌরভ বলল, ‘আমরা এখন সিটি অফ দ্য ডেড এর পাশে দিয়ে যাচ্ছি। ডান দিকের পুরো এলাকাটাই সমাধিক্ষেত্র।’

মুসলিম বিশ্বে যার পরিচিতি গাজী সালাহউদ্দিন নামে সেই সালা-আলদিন-আল-আইয়ুবীর দুর্গের উত্তরে দক্ষিণে বিস্তৃত কায়রোর কবরস্থান। ইসলামি শাসনামলে মোকাদ্দাম পাহাড়ের পায়ে ঐতিহাসিক নগর দেয়ালের বাইরে মৃতদেহ সমাহিত করার এই কবরস্থান এখন সিটাডেলের উত্তরে দক্ষিণে প্রায় চার কিলোমিটার বিস্তৃত! শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে কায়রোর শাসক সম্প্রদায় এবং অভিজাত নাগরিকের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মৃতদেহ কবরস্থ করার দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে গড়ে উঠেছিল যে সমাধিক্ষেত্র, সেটির পরিচিতি কেন মৃত মানুষের নগরী!সমাধিক্ষেত্র বা সিমেস্ট্রি বলতে যেমন শান্ত সমাহিত, নীরব নির্জন একটি এলাকা বোঝায়, সিটি অফ ডেড তেমন কোনো গোরস্তান নয়। এখানে কেউ যদি নিজেকে ‘কবরবাসী’ বলে পরিচয় দেয়, তাহলে তাকে মৃত ভাবার কোনো কারণ নেই। কায়রো শহরের দুই কোটি মানুষের মধ্যে অন্তত পাঁচ লাখ মানুষের বসবাস এই মৃতপুরীতে।



কোনো একটি শহর নগর বা জনপদ সম্পর্কে বই পড়ে, ছবি দেখে অথবা অন্য কারও অভিজ্ঞতার আলোকে আসলে কিছুই যে জানা হয় না, আমার আরও একবার সে কথা মনে হলো। কায়রোর একেবারে নগর কেন্দ্রে বিস্তৃত এলাকায় একটি অস্বাভাবিক বসতির অস্তিত্বের কথা এই শহরে না এলে হয়তো কখনো জানাই হতো না। ষোড়শ শতক থেকেই কবরস্থানের ভেতরে মৃতদের সঙ্গে জীবিতদের বসবাস শুরু হলেও সে সময় এখানে গোরখোদক, ফলক লিপিকার এবং ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার সঙ্গে যুক্তরাই কেবল বসতবাড়ি গড়ে তুলেছিলেন।

ঊনবিংশ শতকের শেষ দিকে কায়রোর আবাসন সংকট বাড়তে থাকলে সমাধিক্ষেত্রেও জনসংখ্যা বাড়তে থাকে। স্থানীয়দের কাছে ‘আল আরাফা’ নামের এই গোরস্তানে কবরের ফাঁকে ফাঁকে শুরু হয় ছোট ছোট ঘর তুলে বসবাস। কোথাও বিশিষ্টজনদের সমাধিই হয়ে যায় রূপান্তরিত ভবন। সড়কের পাশে দিয়ে চলতে চলতেই দেখা যায় গোরস্তানের সীমানা দেয়ালের ভেতরে দিব্যি সংসার পেতে বসেছে অসংখ্য মানুষ। এখানে দুটি কবরের দেয়ালের সাথে উঠে গেছে ঘরের দেয়াল, কবরের সাথে চুলা জ্বালিয়ে চলছে রান্না বান্না, কবরের সিমেন্টর খুঁটিতে দড়ি টানিয়ে শুকানো হচ্ছে নিত্যদিনের জামা কাপড়। কবরে হেলান দিয়ে তাস পিটানো কিংবা দুই কবরকে দুটি গোলপোস্ট বানিয়ে ছোটদের ফুটবল খেলার দৃশ্যও বিরল নয়। ব্যাপক সমালোচনার মুখে বর্তমানে নতুন করে এখানে বসবাসের উদ্যোগ নেয়া নিষিদ্ধ হলেও থেমে নেই কবরবাসীদের গৃহ নির্মাণ প্রকল্প। সুফি দরবেশ বুজর্গ ব্যক্তির কবর ঘিরে গড়ে ওঠা সমাধি ক্ষেত্র বসবাস উপযোগী করে নিয়ে আজও চলছে জীবিত ও মৃতের শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থান।

আমরা একটি অভাবনীয় জনপদ অতিক্রম করে এগিয়ে যাই শহরের আরও দক্ষিণে। নীল নদের পূর্ব তীরে অভিজাত আবাসিক এলাকা মাআদিতে প্রবেশের পরপরই দৃশ্যপট বদলে যেতে থাকে। সবুজ গাছপালায় ঢাকা, পরিচ্ছন্ন রাস্তাঘাট, সুদৃশ্য আবাসিক ভবন ও ঝকঝকে শপিংমল এবং দোকানপাট দেখে একই শহরের ভেতরে ভিন্ন ভিন্ন নাগরিক সুযোগ-সুবিধা এবং তার স্পষ্ট প্রতিফলন দৃষ্টি এড়ায় না। এখানে রেস্টুরেন্ট, বার এবং পথের মোড়ে কিয়স্ক বা কফিশপ এবং প্রায় প্রতিটি বাড়ির সামনে থেমে থাকা ঝকঝকে গাড়ি দেখেও এখানকার লোকজনের অবস্থা ও অবস্থান অনুমান করা যায়। সৌরভের বাসা একটা এ্যাপার্টমেন্ট ভবন। একটু পুরোনো আদলে তৈরি হলেও ঠিক আমাদের বহুতল ভবনের এ্যাপার্টমেন্টের মতো মনে হয় না। একটা একক বাড়ি, চারিদিক খোলামেলা। কয়েক ধাপ সিঁড়ি এবং দীর্ঘ করিডোর পেরিয়ে কোলাপসিবল গেট লাগানো ছোট একটা লিফটে চারতলায় উঠে গেলাম। আমাদের দিন কয়েকের জন্য নির্ধারিত ঘরে এসে বারন্দার দরজা খুলতেই চোখে পড়লো একটা মসজিদের মিনার। আসার পথে রাস্তায় চোখে পড়েছে অসংখ্য মসজিদ এবং বেশ কয়েকটা গির্জা। মাআদি এলাকাও তার ব্যতিক্রম নয়। অভিজাত এলাকায় মসজিদের সংখ্যা একটু বেশিই হবে এবং সেটাই স্বাভাবিক।

সকাল আটটায় এয়ারপোর্টে নেমে প্রায় ঘণ্টা চারেক পরেক ঘরে এসে ভীষণ ঘুম পাচ্ছিল। সৌরভের অফিসে যাবার তাড়া ছিল। দিনে দুপুরে খাবার অভ্যাস ও অনেক দিন আগেই বাদ দিয়েছে। তবে নিজে লাঞ্চ না করলেও আমাদের জন্যে রান্না করে টেবিলে খাবার সাজিয়ে রেখে গেছে। বাঙালি ঘরানার খাবার দিয়ে কায়রোর প্রথম লাঞ্চ শেষ করে বিছানায় পড়ার সাথে সাথে ঘুমের অতলে তলিয়ে গিয়েছিলাম। যখন ঘুম ভাঙল তখন পাশের মসজিদ থেকে ভেসে আসছে মাগরিবের আজান।

(চলবে)

Header Ad
Header Ad

যাত্রীদের নিরাপত্তায় মেট্রোরেলের ভেতরে পুলিশ মোতায়েন

যাত্রীদের নিরাপত্তায় মেট্রোরেলের ভেতরে পুলিশ মোতায়েন। ছবি: সংগৃহীত

মেট্রোরেলের ভেতরে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আজ থেকে এমআরটি পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন শুরু করেছে। মেট্রোরেলের প্রতিটি ট্রেনে দুইজন পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। যারা যাত্রীদের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা নিয়ন্ত্রণ, অতিরিক্ত নিরাপত্তা প্রদান ও বিভিন্ন ধরনের সহায়তা করবেন।

ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দপ্তর মঙ্গলবার (৪ মার্চ) দুপুরে গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এমআরটি পুলিশ সদস্যরা মেট্রোরেলের কোচগুলোতে টহলে থাকবেন এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা ও অন্যান্য সমস্যা সমাধানে কাজ করবেন।

প্রতিটি ৬ কোচ বিশিষ্ট ট্রেনে দুইজন পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে। তাই বর্তমানে চলমান ১০টি ট্রেনে মোট ২০জন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। তারা সকাল থেকে দুপুর এবং দুপুর থেকে রাত—এই দুটি শিফটে কাজ করবেন। পাশাপাশি স্টেশনগুলোতে যারা দায়িত্ব পালন করছেন, তারা তাদের নির্ধারিত দায়িত্বে থাকবেন।

এমআরটি পুলিশ সদস্যরা যাত্রীদের বাচ্চা, বৃদ্ধ অথবা হারানো মালামাল খুঁজে বের করা, চুরি-ছিনতাই প্রতিরোধ এবং যাত্রীদের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা শান্ত করার মতো নানা সমস্যা সমাধান করবে।

মেট্রোরেল ও স্টেশনের নিরাপত্তার জন্য ২০২৩ সালের নভেম্বরে ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) পুলিশ কার্যক্রম শুরু করে।

Header Ad
Header Ad

ভারতের কারাগারে বন্দি ১০৬৭ বাংলাদেশি এবং পুলিশ লাইনে বন্দিশালার খোঁজ পেয়েছে গুম কমিশন

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ১০৬৭ বাংলাদেশির তালিকা ও পুলিশ লাইনে গোপন বন্দিশালার খোঁজ পেয়েছে গুম কমিশন গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি।

কমিশনের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত বিচারক মইনুল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতের বিভিন্ন কারাগারে গত দুই-আড়াই বছরে আটক হওয়া বাংলাদেশিদের নাম ও ঠিকানাসহ একটি তালিকা পাওয়া গেছে। বর্তমানে কমিশন যাচাই করছে—এই তালিকায় গুম হওয়া কোনো ব্যক্তি রয়েছে কিনা।

কমিশন জানায়, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা পুলিশের সুপার ও বিজিবি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ভারত থেকে পুশইন হওয়া ব্যক্তিদের তথ্য চাওয়া হলে ১৪০ জনের একটি তালিকা পাওয়া গেছে। তবে এই তালিকায় গুম হওয়া ব্যক্তিদের নাম এখনও পাওয়া যায়নি।

এছাড়া, গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ১,৭৫২টি অভিযোগ জমা পড়েছে, যার মধ্যে প্রায় ১,০০০টি অভিযোগ যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। গুমের শিকার হয়ে ফিরে না আসা ৩৩০ জনের বর্তমান অবস্থাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

কমিশনের প্রধান মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, "গুমের ঘটনায় বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য জড়িত থাকলেও পুরো বাহিনীকে দায়ী করা উচিত নয়। অপরাধীদের ব্যক্তিগত দায় নির্ধারণ করা হবে।"

গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন জানিয়েছে, পুলিশের গোপন বন্দিশালা পাওয়ার তথ্য মিলেছে। কমিশনের সদস্য নূর খান জানান, বগুড়া পুলিশ লাইনে এ ধরনের একটি বন্দিশালা পাওয়া গেছে, যেখানে বিভিন্ন স্থান থেকে বন্দিদের জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন করা হতো।

তিনি বলেন, "পুলিশ লাইনের ভেতরে গোপন বন্দিশালা তৈরি করা হয়েছিল, যা একেবারে অবৈধ ছিল। আমাদের ধারণা, এ ধরনের বন্দিশালা আরো থাকতে পারে।" গুম কমিশনের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে যে, এই ধরনের বন্দিশালা গত ১৫ বছরের মধ্যে নির্মিত হয়েছিল এবং গত ১০-১২ বছরে এমন স্থাপনা বেশি তৈরি হয়েছে। এখানে বন্দিদের নিয়ে আসা হতো, জিজ্ঞাসাবাদ ও নির্যাতন চলত, এবং কিছু ক্ষেত্রে বন্দিরা মৃত্যুবরণও করেছে।

এ বিষয়ে গুম কমিশন জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে এসব গোপন বন্দিশালার আরও সন্ধান পাওয়া যেতে পারে।

প্রসঙ্গ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গিয়ে ‘বিশেষ’ স্থানে রাখা হতো, যা পরবর্তীতে ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিতি পায়। সুইডেনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নেত্র নিউজে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে এসব স্থান সম্পর্কে জনসাধারণ জানতে পারে। গুম হওয়া ব্যক্তিদের অনেকেই শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর আয়নাঘর থেকে ফিরে আসেন এবং তাদের বয়ানে উঠে আসে আয়নাঘরের ভয়াবহতার চিত্র।

Header Ad
Header Ad

জনকল্যাণে কাজ করাই বিএনপির মূল লক্ষ্য: আমিনুল হক

বিএনপির কেন্দ্রীয় ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হক। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীতে পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে গরিব ও অসহায় মানুষের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক।

মঙ্গলবার (০৪ মার্চ) সকালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে রাজধানীর পল্লবী ও রূপনগর থানার ৮টি ওয়ার্ডের অসহায়দের মাঝে এসব বিতরণ করা হয়।

এসময় আমিনুল হক বলেন, ‘জনকল্যাণে কাজ করাই বিএনপির মূল লক্ষ্য। গত ১৭ বছরে পতিত স্বৈরাচার সরকার জনগণের পাশে ছিল না। জনগণকে বঞ্চিত করে নিজেদের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছিল তারা।’

তিনি আরও বলেন, ‘ফ্যাসিষ্ট সরকারের নির্যাতন নিপীড়ন সহ্য করেও গত ১৭ বছরে বিএনপি জনগণের পাশে ছিল এবং এখনো বিএনপি জনগণের পাশে থেকে কাজ করছে। দেশে যখনই কোনো মহামারী দুর্যোগ বন্যা ও করোনাকালীন কঠিন সময় এসেছে। সেই কঠিন সময়েও বিএনপির নেতাকর্মীরা জনগণের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। কারণ বিএনপি জনগণের দল।’

ইফতার সামগ্রী বিতরণের সময় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

যাত্রীদের নিরাপত্তায় মেট্রোরেলের ভেতরে পুলিশ মোতায়েন
ভারতের কারাগারে বন্দি ১০৬৭ বাংলাদেশি এবং পুলিশ লাইনে বন্দিশালার খোঁজ পেয়েছে গুম কমিশন
জনকল্যাণে কাজ করাই বিএনপির মূল লক্ষ্য: আমিনুল হক
মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান ও শেখ হাসিনার বৈঠক, যা জানা গেল
৯১ দিনে কোরআনের হাফেজ ৬ বছরের আব্দুর রহমান
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে বাধ্যতামূলক ডোপ টেস্ট
উপদেষ্টা হচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম
নতুন দলের বেশিরভাগ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হবে: এম এ আজিজ
রোজাদারকে ইফতার করানোর বিশেষ পুরস্কার
প্রধান উপদেষ্টার আপত্তিতেই ‘ডেভিল হান্ট’ নাম বদলের সিদ্ধান্ত
ভারতের প্রতিশোধ নাকি আবার অস্ট্রেলিয়া?
শ্রীমঙ্গলে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই চা শ্রমিক নিহত, আহত ১৮
নির্বাচনে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে: হাসনাত আব্দুল্লাহ
মার্কিন অনুদান বন্ধে ভারতে ট্রান্সজেন্ডার হাসপাতালগুলোর কার্যক্রম স্থগিত
পদত্যাগ করেছেন ইরানের ভাইস-প্রেসিডেন্ট জাভেদ জারিফ
পুরোনো সংবিধান রেখে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব নয় : নাহিদ ইসলাম
খালেদা জিয়ার শারী‌রিক অবস্থা স্থি‌তিশীল: ডা. জা‌হিদ  
রাবির তথ্য অফিসার পদে নিয়োগ পেলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা
বধ্যভূমিতে জুলাই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাল এনসিপি  
অনিয়মের অভিযোগে কুবির রেজিস্ট্রারকে বাধ্যতামূলক ছুটি