মুহম্মদ নূরুল হুদার
একগুচ্ছ কবিতা
স্বাধীনতা স্বমুক্ত স্বয়ং
জন্মমাত্র মুক্ত তুমি,
নেই অধীনতা;
সপ্রাণ চেতনা তুমি,
জন্মে জন্মে স্বোপার্জিত
অনন্ত জন্মের স্বাধীনতা।
জল, মাটি, বায়ু, অগ্নি
কিংবা আকাশের
অঙ্গে যার অধিবাস,
সেই প্রাণ চিরমুক্ত,
চরাচরে নয় কারো
মৌন ক্রীতদাস।
জন্ম আছে মৃত্যু নেই,
প্রাণজন্মে প্রাণীর তো
অন্য কোনো অধীনতা নেই।
দেশজাতিধর্মবর্ণ সম্প্রদায়
সকলের প্রতি আছে
সকলের দায়,
সদাশয় সাম্যাচার
চিরজন্মে মুক্তির উপায়।
যে যাকে করেছে বন্দি
সে বন্দি স্বয়ং;
স্বাধীনতা আত্মমুক্তি,
অহিংস অহং।
দেশে বিশ্বে মহাবিশ্বে
জন্ম পরিচয়,
প্রাণের মুক্তির সূত্র,
আর কিছু নয়।
অহিংস অহং তুমি
সতত স্বাধীন
প্রাণবিশ্ব মহাপ্রাণ
নয় পরাধীন।
জয় হোক জয় হোক
অহিংস অহং,
প্রাণ থেকে সর্বপ্রাণ
স্বমুক্ত স্বয়ং।
২৬ মার্চ ২০২২
পথ
হাঁটতে হাঁটতে আমি তোমাকে এঁকেছি।
হাঁটতে হাঁটতে আমি তোমাকে দেখেছি।
তোমাকে আঁকার আগে ছিলে ভিন্নরূপ;
তোমাকে আঁকার পরে পেলে আত্মরূপ
যেন মুহূর্তেই; উড়ে আসে প্রজাপতি
হাজার বরন; কে যে পতি কে যে সতী
সহজে যায় না বোঝা; বুঝে কার লাভ!
তোমার খোয়াব জুড়ে আমার খোয়াব।
যে পথে এসেছি হেঁটে সে পথ তোমার;
পথের শুরুতে, শেষে জ্বলে তারাবাতি;
যে পথে হাঁটোনি তুমি, সে পথ আমার;
চরাচরে মোড়ে মোড়ে শুধু অমারাতি;
এক পথ দুই মুখে রয়েছে দাঁড়িয়ে-
পথ আসে পথ যায় পথেই হারিয়ে।
নোঙরের ঢেউ
সময় ভ্রমণ শেষে
অতীতে ও ভবিষ্যতে
বন্দরের পাটাতনে
বর্তমান ডাকে আয়,
সব পথ পার হয়ে
চরে ফিরে এলে
মুহূর্তেই ডানা মেলে
চর উড়ে যায়;
পৃথিবী কি
অবাক তাকায়?
তাকায় না কেউ;
কেবল ডোবে ও ভাসে
নোঙরের ঢেউ।
২০ মার্চ ২০২২
পূর্ণিমায় বদলবাড়ি
আকাশ যখন
জলসরোবর,
পূর্ণিমা-মা চাঁদ;
নীলাম্বরীর
ভাঁজে ভাঁজে
জোছনা পরমাদ;
কেউ জানে না
কোথায় কখন
পাতা আছে ফাঁদ!
যে যাবে যাক ফাঁদে,
পুনর্বাসন চাঁদে;
পরিযায়ী মানুষপাখি
নীড়ের শোকে কাঁদে।
ঝরে যত পালক,
উড়তে উড়ত ঘুরতে ঘুরতে
কুড়ায় অবোধ বালক।
বালক, তোমার নাম?
পড়লো এসে ট্রাম?
ওঠাও নেই নামাও নেই
ছুটছো অবিরাম?
যাবে যদি যাও,
বদলবাড়ির ঠিকানাটা দাও।
ফুরোলে সব ঘাম,
নাম জানতে ধাম জানতে
করবো টেলিগ্রাম।
পূর্ণিমায় বদলবাড়ি
আকাশ যখন
জলসরোবর,
পূর্ণিমা-মা চাঁদ;
নীলাম্বরীর
ভাঁজে ভাঁজে
জোছনা পরমাদ;
কেউ জানে না
কোথায় কখন
পাতা আছে ফাঁদ!
যে যাবে যাক ফাঁদে,
পুনর্বাসন চাঁদে;
পরিযায়ী মানুষপাখি
নীড়ের শোকে কাঁদে।
ঝরে যত পালক,
উড়তে উড়ত ঘুরতে ঘুরতে
কুড়ায় অবোধ বালক।
বালক, তোমার নাম?
পড়লো এসে ট্রাম?
ওঠাও নেই নামাও নেই
ছুটছো অবিরাম?
যাবে যদি যাও,
বদলবাড়ির ঠিকানাটা দাও।
ফুরোলে সব ঘাম,
নাম জানতে ধাম জানতে
করবো টেলিগ্রাম।
পথ ও পর্বত
ফিরে গেলে
ফিরে আসবে বলে,
তোমার ফেরার পথে
পেতে আছি পথ ;
পথহীন পথে আমি রথ;
কে কার
বাহন, বলো, --
পথে পথে
কে কার পর্বত!
মৃণালদার চলচ্ছবি
অবিশ্বাস্য, তবু সত্য
তুমি আর মরলোকে নেই।
আছো,
যেখানে সবাই থাকে
শুধু সেখানেই।
সেখানেই ছিলে তুমি,
ফিরেছো যেখানে;
সকল প্রাণীর যাত্রা
অশেষ যেখানে।
কাল থেকে মহাকালে
পাল্কি চলে যায়,
অবিশ্বাসে মর্ত্যবাসী
অবাক তাকায়।
তাকায় না সর্বদর্শী কবি;
মানুষ কেবল দেখে
সেই চলচ্ছবি।
ভালো থাকো ভালো
আপন অনলে কবি
আপনাকে জ্বালো।
এইবার ঘরে ঘরে ঘর,
এই ঘর অমরা বাসর।
সব তর্ক
এতো তর্ক জনে জনে
তবু আমি তর্কাতীতে যাই;
তুমিই আমার তর্ক,
আমার তো অন্য তর্ক নাই।
মুখোমুখি যখন দুজন,
আমরাই আমাদের
অভিন্ন দর্পণ,
প্রতিবিম্বে প্রতিবিম্বে
পরস্পর সত্তা সমর্পণ।
অনন্ত বিরহ শেষে
অনলাঙ্গে অনঙ্গ মিলন।
তৃণে তৃণে
তারায় তারায়
আমাদের সব তর্ক
আলোয় হারায়।
যদি ভালোবাসি
বেজে ওঠে অনন্তের বাঁশি।
এসএ/