সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক ভ্রমণ, পর্ব: ২

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা

পিরামিডের শহর বলতে কায়রো আর পিরামিডের দেশ বলতেই মিশরের যে ছবি চোখে ভেসে আসে সেখানে মরুভূমিতে তিনটি বিশাল আকৃতির পাথুরে ত্রিভূজের পটভূমিতে দাঁড়িয়ে থাকা গোটা কয়েক খেজুর গাছ আর চলমান উটের কাফেলা। অবশ্য মানসচক্ষুর আর দোষ কী! সেই দূর শৈশব থেকে বইয়ের পাতায় দেয়ালে ঝোলানো ক্যালেন্ডারে, এমন কি সিনেমার দৃশ্যপটেও দেখেছি সেই একই দৃশ্য। সারা দেশে বর্তমানে টিকে আছে একশ আঠারোটি পিরামিড, এর মধ্যে গিজার প্রাচীনতম ‘গ্রেট পিরামিড’, স্ফিংস এবং সাক্কারার অসমাপ্ত পিরামিডসহ পাঁচ সাতটা পিরামিডে ঘুরে নিজের চোখে দেখে ফেলতে পারলে পর্যটকের কায়রো ভ্রমণ অনেকটাই সম্পন্ন হয়ে যায়। বাকি শতাধিক পিরামিড খুঁজে বের করা গবেষকের কাজ। কিন্তু এই একশ আঠারোর বাইরে সুদানে যে নুবিয়ান সাম্রাজ্যের দুইশর বেশি পিরামিড আছে তা অনেকেরই জানা নেই। সেই কারণে গিজায় প্রতি বছর কোটি খানেক মানুষ পিরামিড দেখতে এলেও সুদানের পিরামিডগুলোতে বছরে পাঁচ লাখ পর্যটক আসে কিনা সন্দেহ!

দূরে থেকে পিরামিড। ছবি: লেখক

পরিকল্পনা ছিল ‘অবশ্য দর্শনীয় আকর্ষণ’ হিসাবে পরদিন সকালে প্রথমে সাক্কারা এবং পরে গিজায় পিরামিড দেখে বিকেলের মধ্যে কায়রো ফিরে আসবো। সকাল আটটায় আমাদের বেরিয়ে যাবার কথা। সময় সচেতন চালক তার বাহন নিয়ে নির্ধারিত সময়ের মিনিট পনের আগেই এসে হাজির। দেশের বাইরে কোথাও গেলে আমরা সাধারণত পূর্ব নির্ধারিত সময়-সূচি মেনে চলি। নিজের ঘরে শুয়ে বসে আলসেমি করে সময় কাটানো যায়, কিন্তু ডলার পাউন্ড ইওরো দিয়ে কেনা সময় অকারণে বয়ে যেতে দেয়ার কোনো মানে হয় না। বিভিন্ন সময়ে অনেক দেশেই ঝিরঝির করে ঝরে পড়া তুষারের তীব্র শীতে, ঠা ঠা রোদের দুপুরে কিংবা তুমুল বৃষ্টির দিনে যথা সময়ে বেরিয়ে যাবার রেকর্ড আমাদের আছে। কাজেই আগের দিন প্রায় মাঝ রাত পর্যন্ত আড্ডা দিয়ে পরদিন সকাল সাতটায় উঠে পড়াটা তেমন কঠিন কিছু নয়।

সৌরভ আগেই বলে রেখেছিল, প্রথম দিন সন্ধ্যায় দেশি বিদেশি মিলিয়ে কয়েকজন অতিথি আসবেন। আয়োজন ঘরে হলেও ঘুম ভাঙার পরে আমরা লিভিংরুমে এসে বসার আগেই চলে এসেছেন আন্তর্জাতিক রেডক্রস কর্মকর্তা সৈয়দ আজিজ এবং তার স্ত্রী মান্নি সৈয়দ। জাতিসংঘের স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মকর্তা কামরুল হাসানসহ আরও দুই একজন। প্রাথমিক আলাপ পরিচয়ের পরে দেখা গেল আগে কখনো দেখা সাক্ষাৎ না হলেও আমরা আসলে পরস্পরের অনেক কাছের মানুষ। সৈয়দ আজিজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন আবৃত্তি চর্চায় যুক্ত ছিলেন। কণ্ঠশীলন এবং সংস্কৃতি সংসদ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক জগতের অনেকের সাথেই তার ঘনিষ্ট যোগাযোগ এখনো থেকে গেছে। যখন যে দেশে থাকেন সেখানে থেকেই বাংলা ভাষার কবিতা ও নাটকের চর্চা এবং উৎকর্ষের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। মান্নি সৈয়দ আমাদের সিনেমা জাগতের খ্যাতিমান পরিচালক চাষী নজরুল ইসলামের কন্যা। ঢাকার সাম্প্রতিক চলচ্চিত্র, নাটক এবং টেলিভিশন নিয়ে কথার ফাঁকে অনিবার্যভাবেই ঢুকে পড়েছে রাজনীতি ও অর্থনীতি। সান্ধ্যকালীন আড্ডায় পর্যায়ক্রমে যোগ দিযেছেন বৈমানিক রাজিউল ইসলাম এবং তার সুইস স্ত্রী ভ্যালেরি। রাজি বাংলাদেশের সেনাবাহিনি থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন আর ভ্যালেরি কায়রোতে সুইস দূতাবাসের কর্মকর্তা। সার্বক্ষণিক তথ্য উপাত্ত যোগান দিয়ে আড্ডা জমিয়ে রেখেছেন রানা ভাই আর খাদ্য পানীয়ের ব্যবস্থাপনা তো গৃহকর্তার উপরেই বর্তায়।

পথ নির্শের সামনে সিলভিয়া ও হেনা। ছবি: লেখক

আজকাল বাসায় বন্ধু বান্ধব নিয়ে পার্টির আয়োজন করলে আমাদের দেশেই স্ত্রী, কন্যা, বোন বা ভাবিদের গলদঘর্ম হয়ে রোস্ট-রেজালা, বিরিয়ানি-পোলাও কিংবা ফিরনি-ফালুদা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়তে হয় না। ছোটখাটো ক্যাটারিং সার্ভিস ছাড়াও পান্ডা ষণ্ডা নামের হোম ডেলিভারিওয়ালারা মুখরোচক খাবার বাড়ির দোরগোড়ায় পৌছে দেবার জন্যে একপায়ে দাঁড়িয়ে। বিদেশে তো এ সব চালু হয়ে গেছে আরও বহু বছর আগেই। কাজেই খাদ্য যোগান দেয়া স্থানীয় পাণ্ডারা আমার জানা অজানা নানা রকম খাবার দিয়ে গেছে এবং সে সব রান্নাঘর হয়ে টেবিলেও চলে এসেছে। স্বাস্থ্যবান মিশরিয় মুরগির গ্রিল বাদ দিলে বাদবাকি খাবার সম্পর্কে কিছু ধারণা নেয়া যেতে পারে। ভাতের পরে রুটিই যেহেতু ভেতো বাঙালির প্রাধান খাবার, সেক্ষেত্রে প্রথম প্রসঙ্গ রুটি নিয়ে। মিশরের ‘আইশ বালাদি’ আমাদের তন্দুর রুটি এবং হাতে বানানো রুটির মাঝামাঝি একটা জিনিস। নির্ভেজাল আটার তৈরি । সেই ফারাওদের আমল থেকেই নাকি ধনী গরিব সকল মিশরিয় এই রুটি খেয়েই জীবন ধারণ করে আসছে। আইশ মানে জীবন অর্থাৎ আমাদের যেমন পানির অপর নাম জীবন, মিশরিয়দের রুটির আপর নাম জীবন। প্রবহমান নীল নদ বাদ দিলে মরুভূমিতে পানির বড় অভাব, সম্ভবত সেই কারণেই পানি নয়, রুটিই এখানে জীবন।

পরিচিত খাবারের মধ্যে ফালাফেলের সঙ্গে পরিচয় অনেক আগের। এবারে কাতার এয়ারওয়েজের খাদ্য তালিকাতেও ছিল এই বড়া জাতীয় জিনিস। তবে একে বড়া না বলে পাকোড়াও বলা যেতে পারে। সেই ছোলার ডাল, মটরশুটি, পেঁয়াজ কাঁচা মরিচ ধনেপাতা এবং প্রয়োজনীয় মশলা ব্যবহার করে তেলে ভাজা। উপকরণ প্রায় এক হলেও আমাদের কাছে মিশরিয়দের চেয়ে ভারতীয়দের পাকোড়া অনেক বেশি সুস্বাদু! এই কারণে ফালাফেলের চেয়ে কোশারি আমার বেশি পছন্দের খাবার।

আইশ বালাদি। ছবি: লেখক।

মিশরের জাতীয় খাবার কোশারি আসলে এক ধরনের খিচুড়ি বললে ভুল বলা যাবে না। বাঙালির খিচুড়ির মূল উপাদান চাল আর ডালের সাথে ইতালির ম্যকারুনি মিশিয়ে দেবার বুদ্ধিটা মিশরিয়রা কোথায় পেয়েছিল জানি না, কিন্তু কোশারি এতেই এক ধরনের নতুন রূপ লাভ করেছে। এতে মশলা হিসাবে সাধারণত পেঁয়াজ ধনিয়া জিরা রশুন এবং টমেটো ব্যবহার করা হলেও ইচ্ছে মতো হটসস বা ভিনিগার দেয়া যেতে পারে। কোশারিতে ডালের বদলে ছোলা কিংবা ম্যাকারুনির পরিবর্তে স্প্যাগাটি দিলে হয়তো চেহারা খানিকটা বদলায় কিন্তু তাতে কোশারির চরিত্র বদলায় না। স্ট্রিট ফুড হিসাবে এর জনপ্রিয়তা থেকে পরবর্তী সময়ে অভিজাত রেস্তোরাতেও নিজের জায়গা করে নিয়েছে মিশরিয় খিচুড়ি! পানাহার শেষ করে অতিথিদের বিদায় দিয়ে ঘুমাতে রাত সাড়ে বারোটা বাজলেও নির্ধারিত সময়ের মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই আমরা গাড়িতে উঠে পড়েছি। তরুণ চালক বাসাম মাআদি এলাকারই একটা দোকানের সামনে গাড়ি থামিয়ে আমাদের পথপ্রদর্শক সিলভিয়াকে তুলে নিয়েছে। কায়রোর হেলওয়ান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্যুরিজম এ্যান্ড হোটেল ম্যানেজমেন্টে গ্রাজুয়েশন করেছে সিলভিয়া নাবিল। গাড়িতে উঠে পরিচয় দেবার পরপরই সে তার জবরদস্ত একখানা সচিত্র কিতাব বের করে খ্রিস্টপূর্ব ছয় হাজার অব্দের ইতিহাস বর্ণণা শুরু করেছিল। রানাভাই তাকে একরকম থামিয়ে দিয়ে বললেন, ‘আসলে বিস্তারিত ইতিহাসের ব্যাপারে আমরা খুব বেশি আগ্রহী নই। তুমি বরং ফারাও রাজত্বকাল বা পিরামিড সম্পর্কে যে সব কথা ইতিহাসে নেই, তেমন কোনো গল্প থাকলে শোনাতে পারো।’

পিরামিডের সামনে উট। ছবি: লেখক।

মেয়েটি বোধহয় রানাভাইয়ের কথায় একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিল। বই পুস্তক গুটিয়ে একেবারে চুপচাপ হয়ে যাবার পরে রানা ভাই আবার বললেন, ‘ইতিহাস আমরা জানতে চাই না তা নয়। তবে তা চোখের দেখার সাথে মিলিয়ে জানতে পারলেই ভালো। পিরামিড দেখা শেষ হলে কোথাও চা কফি খেতে খেতে তোমার বিবরণ শোনা যাবে।’ যদিও কথা ছিল প্রথমে সাক্কারা এবং পরে গিজায় যাওয়া হবে, কিন্তু সিলভিয়ার পরামর্শ অনুসারে গিজা হয়ে সাক্কারা যাওয়াই স্থির হলো। আমরা যখন গিজার পথে কায়রো শহর পাড়ি দিচ্ছি, তখন রাস্তার দুপাশে আবার সেই ধূলি ধুসর অসমাপ্ত অর্ধসমাপ্ত ভবনের সারি। বসবাস উপযোগি ভবনগুলোর দেয়ালেও দীর্ঘ দিন তেল পানি বা রং বার্নিশ পড়েছে বলে মনে হয় না। সিলভিয়াকে প্রশ্ন করে এর কোনো যুৎসই উত্তর পাওয়া গেল না। রানাভাই বললেন, বৃষ্টিহীন শুকনো আবহাওয়ার কারণে এখানে কোনো রংই স্থায়ীত্ব পায় না, সেই কারণে দেয়ালে যে সব রং ব্যবহার করা হয়, সেই রংও এ রকম ধূসর। আমরা এই ধূসর শহর পেরিয়ে গিজার দিকে এগিয়ে যাবার পথে অনেক দূর থেকে হঠাৎ করেই দেখা হয়ে গেল প্রাচীন বিশ্বের সাতটি বিস্ময়ের অন্যতম মিশরের পিরামিড! এরপর যানবাহন এবং গাছপালার ফাঁকে মাঝে মাঝেই উঁকি দিয়ে যাচ্ছিল পৃথিবীতে টিকে থাকা সবচেয়ে উঁচু দুটি পিরামিডের চূড়া।

আমাদের চোখে দেখা পিরামিডগুলোর মধ্যে ফারাও সম্রাট খুফুর তৈরি পিরামিডের উচ্চতা সবচেয়ে বেশি, এটি তৈরিও হয়েছিল সবচেয়ে আগে। গবেষকেরা গবেষণা করে বের করেছেন খুফুর পিরামিডের নির্মাণকাল খ্রিস্টপূর্ব ৪৭০০ অব্দ। তার অর্থ হলো এখন থেকে ছয়হাজার সাতশ বছরেরও আগে। মহামহিম ফারাও সম্রাটেরা সে সময়ের যাবতীয় খাদ্য পানীয়, সুখ সাচ্ছ্যন্দ এবং আরাম আয়েশ উপভোগের পরেও মৃত্যুটা মেনে নিতে পারেননি। মৃত্যু পরবর্তী জীবনে কিংবা পুনরুত্থানকালে নতুন করে বিলাসবহুল জীবনের প্রত্যাশায় দেহকে মমি করে রাখা এবং তা অনড় অজর কোনো প্রকোষ্ঠে সংরক্ষণের ধারাবাহিকতায় বিপুল বিত্ত বৈভব ও জনশক্তি কাজে লাগিয়ে তৈরি হয়েছিল পিরামিডের মতো স্থাপনা। নিশ্চয়ই সে সময়ের ধাপ্পাবাজ পুরোহিত যাজক বা ধর্মগুরুদের কেউ এই অমরত্বের ধারণা দিয়েছিল এবং ক্ষমতাবান সম্রাটেরা তা বিশ্বাস করে কাজে লাগাতেও কার্পণ্য করেনি।

পরবর্তী কয়েক মিনিটের মধ্যে বাসাম তার বাহন নিয়ে এসে দাঁড়ালো গিজার পিরামিডের প্রবেশ পথের পার্কিং-এ। এখানে টিকেট ঘর এবং প্রক্ষালন কক্ষ ছাড়াও রয়েছে বিস্তৃত পিরামিড চত্বরের পথ নির্দেশিকা। প্রক্ষালন কক্ষ ব্যবহারের জন্যে দশ ইজিপশিয়ান পাউন্ড অর্থাৎ ষাট টাকা আমার কাছে খুব বেশি মনে হয়নি। ইওরোপের যে কোনো জায়গায় দিতে হতো এক ইওরো, যা একশ টাকার সমান। সবগুলো পিরামিড ঘুরে দেখতে দুশ ইজিপশিয়ান পাউন্ড আর পিরামিডের ভেতরে ঢুকতে চাইলে গিজার ‘গ্রেট পিরামিডে’ চারশ এবং ছোট দুটি পিরামিড খাফরা ও সেনকাওরায় একশ পাউন্ড করে অতিরিক্ত টিকেট কিনতে হবে। গত শতকের পঞ্চাশের দশকেই সৈয়দ মুজতবা আলীর দুই সফর সঙ্গী পিরামিডের ভেতরে প্রবেশ করলেও তিনি নিজে ভেতরে যেতে উৎসাহ বোধ করেননি। কারণ, তিনি জানতেন সেখানে আসলে কিছু নেই। ‘জলে ডাঙায়’ যারা পড়েছেন তারা কায়রো ভ্রমণে গেলে নিশ্চয়ই পিরামিডের ভেতরে ঢুকতে চাইবেন না, আর আমার নিজের ক্ষেত্রে চরণযুগলের অসহযোগিতার কারণে পিরামিডের গায়ে খাড়া পাথুরে পথ বেয়ে ওঠা এবং অপরিসর সুড়ঙ্গ পথে নাম দুটোই অসসম্ভব। অতএব পিরামিডে প্রবেশের চারশ পাউন্ড বাঁচিয়ে আমরা সিলভিয়াকে অনুসরণ করে এগিয়ে চললাম খুফুর পিরামিডের পথে।

পিরামিডের সামনে থেকে। ছবি: লেখক।

আমরা যখন পায়ে হেঁটে সামনে এগোচ্ছি বাসাম তখন তার লাল গাড়িটা নিয়ে মূল পার্কিংলটে চলে গেছে। সেখানে অসংখ্য বাস, মিনিবাস, ট্যুরিস্ট ভ্যান এবং ছোট ছোট গাড়ির ভিড়ে নিজেদের বাহন খুঁজে বের করাই কঠিন। যন্ত্রযানের পাশাপাশি এখানে ঘোড়ায় টানা টাঙ্গা এবং মরুর জাহাজ উটের আনাগোনা দেখে বোঝা যায় মিশরের পর্যটন ব্যবস্থা তাদের অতীত ঐতিহ্য টিকিয়ে রেখেছে। তবে ঘোড়ার গাড়ি পরিবহনের কাজে ব্যবহার করা হলেও এই এলাকায় উটের পিঠে চড়ে মরুভূমি পাড়ি দেয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। নেহায়েতই সৌখিন পর্যটক উটের পিঠে হেলেদুলে এক আধ কিলোমিটার ঘুরে এসে উটের কাফেলায় সামিল হবার অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফিরে যায়।

কাঠের পাটাতনে পায়ে চলার পথ ধরে পিরামিডের চড়াইতে উঠবার জন্যে যেখানে পাথরের খাঁজে খানিকটা পথ তৈরি করা হয়েছে আমরা যখন সেখানে এসে দাঁড়ালাম তখন অসংখ্য দর্শনার্থী বিশাল আকৃতির পাথর খণ্ডে পা রেখে উর্ধ্বলোকে যাত্রা করেছেন। আমার দুই সফর সঙ্গী উপরের দিকে উঠতে শুরু করলে পিরামিডের ছায়ায় আমাকে একা পেয়ে দাঁড়িয়ে সিলভিয়া আবার তার ইতিহাসের ঝাঁপি খুলে বসেছিল। এবারে অবশ্য বই পুস্তক থেকে নয়, তার আত্মস্থ করা বিবরণী থেকে জানা গেল খ্রিস্টপূর্ব ৪৬০০ অব্দে নির্মিত গিজার দ্বিতীয় পিরামিড খাফরার উচ্চতা চারশ একাত্তর ফুট আর ৪৫৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের সেনকাওয়ার উচ্চতা ২১০ ফুট। এক লক্ষ শ্রমিক কুড়ি বছর ধরে একটার উপরে আরেকটা পাথরের চাঁই সাজিয়ে নির্মাণ করেছে এই ‘গ্রেট পিরামিড অফ গিজা’!

ঘরোয়া আড্ডা  কায়রো। ছবি: লেখক।

আমি ভাবছিলাম অন্য কথা। এতোদিন দূরে থেকে যা ভেবেছিলাম পিরামিড আসলে তেমন সুক্ষ্ণ শিল্পকর্ম নয়। এখানে জ্যামিতি, ত্রিকোণোমিতি বা অংকের হিসাব নিকাশ আছে, দূর দূরান্ত থেকে পাথর বহন করে আনার ব্যয় ও ব্যবস্থাপনা আছে, রক্ত জল করা পরিশ্রমে নিয়োজিত লক্ষ লক্ষ শ্রমদাসের জীবন ধারণের বিপুল বিনিয়োগ আছে, সবচেয়ে বড় কথা সমকালীন সকল ক্ষমতার উৎস সম্রাটদের বিশ্বাস ও উচ্চাকাক্সক্ষার প্রতিফলন আছে, কিন্তু এখানে উঁচুমানের শিল্পের কোনো সুক্ষ্ণ কারুকাজ নেই। সিলভিয়ার কথা শুনতে শুনতে এবড়ো থেবড়ো পাথরের শরীর থেকে আমার দৃষ্টি চলে যায় পিরামিডের শীর্ষে।

(চলবে)

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১

Header Ad
Header Ad

নাহিদ ইসলামকে বাংলাদেশের আগামীর প্রধানমন্ত্রী বললেন হাসনাত আব্দুল্লাহ

নাহিদ ইসলামকে বাংলাদেশের আগামীর প্রধানমন্ত্রী বললেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে বাংলাদেশের আগামীর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উল্লেখ করেছেন এনসিপির মূখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে নাহিদ ইসলামের জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ফেসবুক পোস্টে হাসনাত আব্দুল্লাহ লেখেন, "শুভ জন্মদিন। বাংলাদেশের আগামীর প্রধানমন্ত্রী নাহিদ ইসলাম।" তার এই মন্তব্য সামাজিক মাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

 

Header Ad
Header Ad

কিছু লোডশেডিং না হলে ভর্তুকি বেড়ে যাবে: বিদ্যুৎ উপদেষ্টা

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। ছবি: সংগৃহীত

বিশেষজ্ঞদের সুপারিশের ভিত্তিতে দেশে কিছু লোডশেডিং চালু রাখার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, কিছু লোডশেডিং না দিলে ভর্তুকির পরিমাণ বেড়ে যাবে। তবে লোডশেডিং যাতে সহনীয় পর্যায়ে থাকে, সে চেষ্টা করা হবে। তিনি জানান, শহর ও গ্রামে সমানভাবে লোডশেডিং কার্যকর করা হবে।

সচিবালয়ে গ্রিড বিপর্যয় নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। উপদেষ্টা জানান, বর্তমানে দেশে সাড়ে ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। গরমের কারণে আগামী দিনে বিদ্যুতের চাহিদা ১৮ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। তখন চাহিদা মেটাতে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন আরও বাড়ানো হবে। তিনি আরও বলেন, যে হারে এসি স্থাপন করা হচ্ছে, সে হারে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয়নি। অনেকে অকারণে লাইট, ফ্যান ও এসি চালু রাখায় বিদ্যুৎচাহিদা বেড়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও জানান, দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল ও খুলনায় ২৬ এপ্রিল যে গ্রিড বিপর্যয় ঘটে, তার তদন্তে আট সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির প্রধান করা হয়েছে বুয়েটের উপ-উপাচার্য আবদুল হাসিব চৌধুরীকে। কমিটি সাত কর্মদিবসের মধ্যে গ্রিড বিপর্যয়ের কারণ, দায়ী ব্যক্তিদের ভূমিকা ও ভবিষ্যতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে সুপারিশ করবে।

মেট্রোরেল এক ঘণ্টার জন্য বন্ধ থাকার কারণও তদন্তে নেওয়া হয়েছে। বুয়েটের অধ্যাপক শামসুল হককে প্রধান করে একটি আলাদা কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপদেষ্টা বলেন, মেট্রোরেল বন্ধ থাকার মূল কারণ ছিল বিদ্যুৎ সংকট।

এ সময় মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমে যাচ্ছে এবং এলএনজি আমদানির আর্থিক সামর্থ্যও কমে গেছে। ফলে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।

পিজিসিবি ও পিডিবি জানায়, আমিনবাজার-গোপালগঞ্জ সার্কিট লাইনের ৪০০ কিলোভোল্টের দুটি তার কাছাকাছি আসায় শর্ট সার্কিট হয় এবং সমস্যার সৃষ্টি হয়। এর ফলে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের ১৫টি জেলা—খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, ভোলা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী—প্রায় ১৫ মিনিট থেকে ৯৬ মিনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল। তবে সন্ধ্যার পর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে এবং রাত সাড়ে আটটার পর পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়।

Header Ad
Header Ad

গণপিটুনির পর কারাগারে ইমামের মৃত্যু, গাজীপুরের পূবাইলে চাঞ্চল্য

ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরের পূবাইলের হায়দরাবাদ এলাকায় একাধিক শিশু-কিশোরকে বলাৎকারের অভিযোগে এক মসজিদের ইমাম গণপিটুনির শিকার হয়ে পরে কারাগারে মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত ইমামের নাম রহিজ উদ্দিন (৩৫), তিনি চাঁদপুর জেলার মতলব থানার বাদশা মিয়ার ছেলে এবং হায়দরাবাদ আখলাদুল জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

রোববার (২৭ এপ্রিল) সকালে গাজীপুর মহানগরীর হায়দরাবাদ এলাকায় এক কিশোরকে বলাৎকারের অভিযোগ ওঠে রহিজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে। এতে উত্তেজিত এলাকাবাসী তাকে গাছে বেঁধে ব্যাপক মারধর করে, এমনকি তার গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে এবং নির্যাতিত এক কিশোরের বাবার দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়।

পরে আদালতের মাধ্যমে তাকে গাজীপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। একই রাতের (২৭ এপ্রিল) দিবাগত ৩টার দিকে রহিজ উদ্দিন কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েন। দ্রুত শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

জেলা কারাগারের জেল সুপার রফিকুল কাদের জানান, মৃত ইমামের শরীরে গণপিটুনির চিহ্ন ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, গণপিটুনিতে গুরুতর আহত হওয়ার ফলেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং মৃত্যুবরণ করেন।

পূবাইল থানার ওসি এসএম আমিরুল ইসলাম বলেন, রহিজ উদ্দিন স্থানীয় স্কুল-কলেজপড়ুয়া ছেলেদের নিজের থাকার কক্ষে এনে কম্পিউটার গেমস ও মোবাইল গেম খেলার সুযোগ দিতেন এবং কোমল পানীয় খাওয়াতেন। ওই পানীয় সেবনের পর অচেতন হয়ে পড়লে তিনি তাদের বলৎকার করতেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এক কলেজছাত্রের কাছ থেকে বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকাবাসী উত্তেজিত হয়ে তাকে গণধোলাই দেয়।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

নাহিদ ইসলামকে বাংলাদেশের আগামীর প্রধানমন্ত্রী বললেন হাসনাত আব্দুল্লাহ
কিছু লোডশেডিং না হলে ভর্তুকি বেড়ে যাবে: বিদ্যুৎ উপদেষ্টা
গণপিটুনির পর কারাগারে ইমামের মৃত্যু, গাজীপুরের পূবাইলে চাঞ্চল্য
ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ না পড়াতে লিগ্যাল নোটিশ
পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়ে ৭টি অস্ত্রবাহী বিমান পাঠালো তুরস্ক
বিএনপির ৩ সংগঠনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা
পাঁচ জেলায় বজ্রপাতে ১১ জনের মৃত্যু
জামিন পেলেন মডেল মেঘনা আলম
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর গঠন করলো সরকার
নিরীহ কাউকে মামলা দিয়ে হয়রানি করা যাবে না: আইজিপি
পাকিস্তানে সামরিক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত: নিউইয়র্ক টাইমস
ঢাকায় অটোরিকশা ও চার্জিং স্টেশন বন্ধে ডিএনসিসির অভিযান শুরু হতে যাচ্ছে
চাঁদা না দিলে রেলের কমান্ড্যান্টকে বদলির হুমকির অভিযোগ দুই ছাত্র প্রতিনিধির বিরুদ্ধে (ভিডিও)
বলিউডে সেনারা হিরো, বাস্তবে কেন জিরো ভারতীয় বাহিনী!
কুমিল্লায় বজ্রপাতে স্কুলছাত্রসহ নিহত ৪
মে মাসে শেখ হাসিনার বিচার শুরু হচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টা
ঢাকাসহ সারাদেশে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে
সবাই মিলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাই লক্ষ্য: আলী রীয়াজ
ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ
কাশ্মীর সীমান্তে ভারত-পাকিস্তানের ফের গোলাগুলি