শুক্রবার, ৭ মার্চ ২০২৫ | ২২ ফাল্গুন ১৪৩১
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক ভ্রমণ, পর্ব: ২

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা

পিরামিডের শহর বলতে কায়রো আর পিরামিডের দেশ বলতেই মিশরের যে ছবি চোখে ভেসে আসে সেখানে মরুভূমিতে তিনটি বিশাল আকৃতির পাথুরে ত্রিভূজের পটভূমিতে দাঁড়িয়ে থাকা গোটা কয়েক খেজুর গাছ আর চলমান উটের কাফেলা। অবশ্য মানসচক্ষুর আর দোষ কী! সেই দূর শৈশব থেকে বইয়ের পাতায় দেয়ালে ঝোলানো ক্যালেন্ডারে, এমন কি সিনেমার দৃশ্যপটেও দেখেছি সেই একই দৃশ্য। সারা দেশে বর্তমানে টিকে আছে একশ আঠারোটি পিরামিড, এর মধ্যে গিজার প্রাচীনতম ‘গ্রেট পিরামিড’, স্ফিংস এবং সাক্কারার অসমাপ্ত পিরামিডসহ পাঁচ সাতটা পিরামিডে ঘুরে নিজের চোখে দেখে ফেলতে পারলে পর্যটকের কায়রো ভ্রমণ অনেকটাই সম্পন্ন হয়ে যায়। বাকি শতাধিক পিরামিড খুঁজে বের করা গবেষকের কাজ। কিন্তু এই একশ আঠারোর বাইরে সুদানে যে নুবিয়ান সাম্রাজ্যের দুইশর বেশি পিরামিড আছে তা অনেকেরই জানা নেই। সেই কারণে গিজায় প্রতি বছর কোটি খানেক মানুষ পিরামিড দেখতে এলেও সুদানের পিরামিডগুলোতে বছরে পাঁচ লাখ পর্যটক আসে কিনা সন্দেহ!

দূরে থেকে পিরামিড। ছবি: লেখক

পরিকল্পনা ছিল ‘অবশ্য দর্শনীয় আকর্ষণ’ হিসাবে পরদিন সকালে প্রথমে সাক্কারা এবং পরে গিজায় পিরামিড দেখে বিকেলের মধ্যে কায়রো ফিরে আসবো। সকাল আটটায় আমাদের বেরিয়ে যাবার কথা। সময় সচেতন চালক তার বাহন নিয়ে নির্ধারিত সময়ের মিনিট পনের আগেই এসে হাজির। দেশের বাইরে কোথাও গেলে আমরা সাধারণত পূর্ব নির্ধারিত সময়-সূচি মেনে চলি। নিজের ঘরে শুয়ে বসে আলসেমি করে সময় কাটানো যায়, কিন্তু ডলার পাউন্ড ইওরো দিয়ে কেনা সময় অকারণে বয়ে যেতে দেয়ার কোনো মানে হয় না। বিভিন্ন সময়ে অনেক দেশেই ঝিরঝির করে ঝরে পড়া তুষারের তীব্র শীতে, ঠা ঠা রোদের দুপুরে কিংবা তুমুল বৃষ্টির দিনে যথা সময়ে বেরিয়ে যাবার রেকর্ড আমাদের আছে। কাজেই আগের দিন প্রায় মাঝ রাত পর্যন্ত আড্ডা দিয়ে পরদিন সকাল সাতটায় উঠে পড়াটা তেমন কঠিন কিছু নয়।

সৌরভ আগেই বলে রেখেছিল, প্রথম দিন সন্ধ্যায় দেশি বিদেশি মিলিয়ে কয়েকজন অতিথি আসবেন। আয়োজন ঘরে হলেও ঘুম ভাঙার পরে আমরা লিভিংরুমে এসে বসার আগেই চলে এসেছেন আন্তর্জাতিক রেডক্রস কর্মকর্তা সৈয়দ আজিজ এবং তার স্ত্রী মান্নি সৈয়দ। জাতিসংঘের স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মকর্তা কামরুল হাসানসহ আরও দুই একজন। প্রাথমিক আলাপ পরিচয়ের পরে দেখা গেল আগে কখনো দেখা সাক্ষাৎ না হলেও আমরা আসলে পরস্পরের অনেক কাছের মানুষ। সৈয়দ আজিজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন আবৃত্তি চর্চায় যুক্ত ছিলেন। কণ্ঠশীলন এবং সংস্কৃতি সংসদ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক জগতের অনেকের সাথেই তার ঘনিষ্ট যোগাযোগ এখনো থেকে গেছে। যখন যে দেশে থাকেন সেখানে থেকেই বাংলা ভাষার কবিতা ও নাটকের চর্চা এবং উৎকর্ষের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। মান্নি সৈয়দ আমাদের সিনেমা জাগতের খ্যাতিমান পরিচালক চাষী নজরুল ইসলামের কন্যা। ঢাকার সাম্প্রতিক চলচ্চিত্র, নাটক এবং টেলিভিশন নিয়ে কথার ফাঁকে অনিবার্যভাবেই ঢুকে পড়েছে রাজনীতি ও অর্থনীতি। সান্ধ্যকালীন আড্ডায় পর্যায়ক্রমে যোগ দিযেছেন বৈমানিক রাজিউল ইসলাম এবং তার সুইস স্ত্রী ভ্যালেরি। রাজি বাংলাদেশের সেনাবাহিনি থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন আর ভ্যালেরি কায়রোতে সুইস দূতাবাসের কর্মকর্তা। সার্বক্ষণিক তথ্য উপাত্ত যোগান দিয়ে আড্ডা জমিয়ে রেখেছেন রানা ভাই আর খাদ্য পানীয়ের ব্যবস্থাপনা তো গৃহকর্তার উপরেই বর্তায়।

পথ নির্শের সামনে সিলভিয়া ও হেনা। ছবি: লেখক

আজকাল বাসায় বন্ধু বান্ধব নিয়ে পার্টির আয়োজন করলে আমাদের দেশেই স্ত্রী, কন্যা, বোন বা ভাবিদের গলদঘর্ম হয়ে রোস্ট-রেজালা, বিরিয়ানি-পোলাও কিংবা ফিরনি-ফালুদা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়তে হয় না। ছোটখাটো ক্যাটারিং সার্ভিস ছাড়াও পান্ডা ষণ্ডা নামের হোম ডেলিভারিওয়ালারা মুখরোচক খাবার বাড়ির দোরগোড়ায় পৌছে দেবার জন্যে একপায়ে দাঁড়িয়ে। বিদেশে তো এ সব চালু হয়ে গেছে আরও বহু বছর আগেই। কাজেই খাদ্য যোগান দেয়া স্থানীয় পাণ্ডারা আমার জানা অজানা নানা রকম খাবার দিয়ে গেছে এবং সে সব রান্নাঘর হয়ে টেবিলেও চলে এসেছে। স্বাস্থ্যবান মিশরিয় মুরগির গ্রিল বাদ দিলে বাদবাকি খাবার সম্পর্কে কিছু ধারণা নেয়া যেতে পারে। ভাতের পরে রুটিই যেহেতু ভেতো বাঙালির প্রাধান খাবার, সেক্ষেত্রে প্রথম প্রসঙ্গ রুটি নিয়ে। মিশরের ‘আইশ বালাদি’ আমাদের তন্দুর রুটি এবং হাতে বানানো রুটির মাঝামাঝি একটা জিনিস। নির্ভেজাল আটার তৈরি । সেই ফারাওদের আমল থেকেই নাকি ধনী গরিব সকল মিশরিয় এই রুটি খেয়েই জীবন ধারণ করে আসছে। আইশ মানে জীবন অর্থাৎ আমাদের যেমন পানির অপর নাম জীবন, মিশরিয়দের রুটির আপর নাম জীবন। প্রবহমান নীল নদ বাদ দিলে মরুভূমিতে পানির বড় অভাব, সম্ভবত সেই কারণেই পানি নয়, রুটিই এখানে জীবন।

পরিচিত খাবারের মধ্যে ফালাফেলের সঙ্গে পরিচয় অনেক আগের। এবারে কাতার এয়ারওয়েজের খাদ্য তালিকাতেও ছিল এই বড়া জাতীয় জিনিস। তবে একে বড়া না বলে পাকোড়াও বলা যেতে পারে। সেই ছোলার ডাল, মটরশুটি, পেঁয়াজ কাঁচা মরিচ ধনেপাতা এবং প্রয়োজনীয় মশলা ব্যবহার করে তেলে ভাজা। উপকরণ প্রায় এক হলেও আমাদের কাছে মিশরিয়দের চেয়ে ভারতীয়দের পাকোড়া অনেক বেশি সুস্বাদু! এই কারণে ফালাফেলের চেয়ে কোশারি আমার বেশি পছন্দের খাবার।

আইশ বালাদি। ছবি: লেখক।

মিশরের জাতীয় খাবার কোশারি আসলে এক ধরনের খিচুড়ি বললে ভুল বলা যাবে না। বাঙালির খিচুড়ির মূল উপাদান চাল আর ডালের সাথে ইতালির ম্যকারুনি মিশিয়ে দেবার বুদ্ধিটা মিশরিয়রা কোথায় পেয়েছিল জানি না, কিন্তু কোশারি এতেই এক ধরনের নতুন রূপ লাভ করেছে। এতে মশলা হিসাবে সাধারণত পেঁয়াজ ধনিয়া জিরা রশুন এবং টমেটো ব্যবহার করা হলেও ইচ্ছে মতো হটসস বা ভিনিগার দেয়া যেতে পারে। কোশারিতে ডালের বদলে ছোলা কিংবা ম্যাকারুনির পরিবর্তে স্প্যাগাটি দিলে হয়তো চেহারা খানিকটা বদলায় কিন্তু তাতে কোশারির চরিত্র বদলায় না। স্ট্রিট ফুড হিসাবে এর জনপ্রিয়তা থেকে পরবর্তী সময়ে অভিজাত রেস্তোরাতেও নিজের জায়গা করে নিয়েছে মিশরিয় খিচুড়ি! পানাহার শেষ করে অতিথিদের বিদায় দিয়ে ঘুমাতে রাত সাড়ে বারোটা বাজলেও নির্ধারিত সময়ের মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই আমরা গাড়িতে উঠে পড়েছি। তরুণ চালক বাসাম মাআদি এলাকারই একটা দোকানের সামনে গাড়ি থামিয়ে আমাদের পথপ্রদর্শক সিলভিয়াকে তুলে নিয়েছে। কায়রোর হেলওয়ান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্যুরিজম এ্যান্ড হোটেল ম্যানেজমেন্টে গ্রাজুয়েশন করেছে সিলভিয়া নাবিল। গাড়িতে উঠে পরিচয় দেবার পরপরই সে তার জবরদস্ত একখানা সচিত্র কিতাব বের করে খ্রিস্টপূর্ব ছয় হাজার অব্দের ইতিহাস বর্ণণা শুরু করেছিল। রানাভাই তাকে একরকম থামিয়ে দিয়ে বললেন, ‘আসলে বিস্তারিত ইতিহাসের ব্যাপারে আমরা খুব বেশি আগ্রহী নই। তুমি বরং ফারাও রাজত্বকাল বা পিরামিড সম্পর্কে যে সব কথা ইতিহাসে নেই, তেমন কোনো গল্প থাকলে শোনাতে পারো।’

পিরামিডের সামনে উট। ছবি: লেখক।

মেয়েটি বোধহয় রানাভাইয়ের কথায় একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিল। বই পুস্তক গুটিয়ে একেবারে চুপচাপ হয়ে যাবার পরে রানা ভাই আবার বললেন, ‘ইতিহাস আমরা জানতে চাই না তা নয়। তবে তা চোখের দেখার সাথে মিলিয়ে জানতে পারলেই ভালো। পিরামিড দেখা শেষ হলে কোথাও চা কফি খেতে খেতে তোমার বিবরণ শোনা যাবে।’ যদিও কথা ছিল প্রথমে সাক্কারা এবং পরে গিজায় যাওয়া হবে, কিন্তু সিলভিয়ার পরামর্শ অনুসারে গিজা হয়ে সাক্কারা যাওয়াই স্থির হলো। আমরা যখন গিজার পথে কায়রো শহর পাড়ি দিচ্ছি, তখন রাস্তার দুপাশে আবার সেই ধূলি ধুসর অসমাপ্ত অর্ধসমাপ্ত ভবনের সারি। বসবাস উপযোগি ভবনগুলোর দেয়ালেও দীর্ঘ দিন তেল পানি বা রং বার্নিশ পড়েছে বলে মনে হয় না। সিলভিয়াকে প্রশ্ন করে এর কোনো যুৎসই উত্তর পাওয়া গেল না। রানাভাই বললেন, বৃষ্টিহীন শুকনো আবহাওয়ার কারণে এখানে কোনো রংই স্থায়ীত্ব পায় না, সেই কারণে দেয়ালে যে সব রং ব্যবহার করা হয়, সেই রংও এ রকম ধূসর। আমরা এই ধূসর শহর পেরিয়ে গিজার দিকে এগিয়ে যাবার পথে অনেক দূর থেকে হঠাৎ করেই দেখা হয়ে গেল প্রাচীন বিশ্বের সাতটি বিস্ময়ের অন্যতম মিশরের পিরামিড! এরপর যানবাহন এবং গাছপালার ফাঁকে মাঝে মাঝেই উঁকি দিয়ে যাচ্ছিল পৃথিবীতে টিকে থাকা সবচেয়ে উঁচু দুটি পিরামিডের চূড়া।

আমাদের চোখে দেখা পিরামিডগুলোর মধ্যে ফারাও সম্রাট খুফুর তৈরি পিরামিডের উচ্চতা সবচেয়ে বেশি, এটি তৈরিও হয়েছিল সবচেয়ে আগে। গবেষকেরা গবেষণা করে বের করেছেন খুফুর পিরামিডের নির্মাণকাল খ্রিস্টপূর্ব ৪৭০০ অব্দ। তার অর্থ হলো এখন থেকে ছয়হাজার সাতশ বছরেরও আগে। মহামহিম ফারাও সম্রাটেরা সে সময়ের যাবতীয় খাদ্য পানীয়, সুখ সাচ্ছ্যন্দ এবং আরাম আয়েশ উপভোগের পরেও মৃত্যুটা মেনে নিতে পারেননি। মৃত্যু পরবর্তী জীবনে কিংবা পুনরুত্থানকালে নতুন করে বিলাসবহুল জীবনের প্রত্যাশায় দেহকে মমি করে রাখা এবং তা অনড় অজর কোনো প্রকোষ্ঠে সংরক্ষণের ধারাবাহিকতায় বিপুল বিত্ত বৈভব ও জনশক্তি কাজে লাগিয়ে তৈরি হয়েছিল পিরামিডের মতো স্থাপনা। নিশ্চয়ই সে সময়ের ধাপ্পাবাজ পুরোহিত যাজক বা ধর্মগুরুদের কেউ এই অমরত্বের ধারণা দিয়েছিল এবং ক্ষমতাবান সম্রাটেরা তা বিশ্বাস করে কাজে লাগাতেও কার্পণ্য করেনি।

পরবর্তী কয়েক মিনিটের মধ্যে বাসাম তার বাহন নিয়ে এসে দাঁড়ালো গিজার পিরামিডের প্রবেশ পথের পার্কিং-এ। এখানে টিকেট ঘর এবং প্রক্ষালন কক্ষ ছাড়াও রয়েছে বিস্তৃত পিরামিড চত্বরের পথ নির্দেশিকা। প্রক্ষালন কক্ষ ব্যবহারের জন্যে দশ ইজিপশিয়ান পাউন্ড অর্থাৎ ষাট টাকা আমার কাছে খুব বেশি মনে হয়নি। ইওরোপের যে কোনো জায়গায় দিতে হতো এক ইওরো, যা একশ টাকার সমান। সবগুলো পিরামিড ঘুরে দেখতে দুশ ইজিপশিয়ান পাউন্ড আর পিরামিডের ভেতরে ঢুকতে চাইলে গিজার ‘গ্রেট পিরামিডে’ চারশ এবং ছোট দুটি পিরামিড খাফরা ও সেনকাওরায় একশ পাউন্ড করে অতিরিক্ত টিকেট কিনতে হবে। গত শতকের পঞ্চাশের দশকেই সৈয়দ মুজতবা আলীর দুই সফর সঙ্গী পিরামিডের ভেতরে প্রবেশ করলেও তিনি নিজে ভেতরে যেতে উৎসাহ বোধ করেননি। কারণ, তিনি জানতেন সেখানে আসলে কিছু নেই। ‘জলে ডাঙায়’ যারা পড়েছেন তারা কায়রো ভ্রমণে গেলে নিশ্চয়ই পিরামিডের ভেতরে ঢুকতে চাইবেন না, আর আমার নিজের ক্ষেত্রে চরণযুগলের অসহযোগিতার কারণে পিরামিডের গায়ে খাড়া পাথুরে পথ বেয়ে ওঠা এবং অপরিসর সুড়ঙ্গ পথে নাম দুটোই অসসম্ভব। অতএব পিরামিডে প্রবেশের চারশ পাউন্ড বাঁচিয়ে আমরা সিলভিয়াকে অনুসরণ করে এগিয়ে চললাম খুফুর পিরামিডের পথে।

পিরামিডের সামনে থেকে। ছবি: লেখক।

আমরা যখন পায়ে হেঁটে সামনে এগোচ্ছি বাসাম তখন তার লাল গাড়িটা নিয়ে মূল পার্কিংলটে চলে গেছে। সেখানে অসংখ্য বাস, মিনিবাস, ট্যুরিস্ট ভ্যান এবং ছোট ছোট গাড়ির ভিড়ে নিজেদের বাহন খুঁজে বের করাই কঠিন। যন্ত্রযানের পাশাপাশি এখানে ঘোড়ায় টানা টাঙ্গা এবং মরুর জাহাজ উটের আনাগোনা দেখে বোঝা যায় মিশরের পর্যটন ব্যবস্থা তাদের অতীত ঐতিহ্য টিকিয়ে রেখেছে। তবে ঘোড়ার গাড়ি পরিবহনের কাজে ব্যবহার করা হলেও এই এলাকায় উটের পিঠে চড়ে মরুভূমি পাড়ি দেয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। নেহায়েতই সৌখিন পর্যটক উটের পিঠে হেলেদুলে এক আধ কিলোমিটার ঘুরে এসে উটের কাফেলায় সামিল হবার অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফিরে যায়।

কাঠের পাটাতনে পায়ে চলার পথ ধরে পিরামিডের চড়াইতে উঠবার জন্যে যেখানে পাথরের খাঁজে খানিকটা পথ তৈরি করা হয়েছে আমরা যখন সেখানে এসে দাঁড়ালাম তখন অসংখ্য দর্শনার্থী বিশাল আকৃতির পাথর খণ্ডে পা রেখে উর্ধ্বলোকে যাত্রা করেছেন। আমার দুই সফর সঙ্গী উপরের দিকে উঠতে শুরু করলে পিরামিডের ছায়ায় আমাকে একা পেয়ে দাঁড়িয়ে সিলভিয়া আবার তার ইতিহাসের ঝাঁপি খুলে বসেছিল। এবারে অবশ্য বই পুস্তক থেকে নয়, তার আত্মস্থ করা বিবরণী থেকে জানা গেল খ্রিস্টপূর্ব ৪৬০০ অব্দে নির্মিত গিজার দ্বিতীয় পিরামিড খাফরার উচ্চতা চারশ একাত্তর ফুট আর ৪৫৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের সেনকাওয়ার উচ্চতা ২১০ ফুট। এক লক্ষ শ্রমিক কুড়ি বছর ধরে একটার উপরে আরেকটা পাথরের চাঁই সাজিয়ে নির্মাণ করেছে এই ‘গ্রেট পিরামিড অফ গিজা’!

ঘরোয়া আড্ডা  কায়রো। ছবি: লেখক।

আমি ভাবছিলাম অন্য কথা। এতোদিন দূরে থেকে যা ভেবেছিলাম পিরামিড আসলে তেমন সুক্ষ্ণ শিল্পকর্ম নয়। এখানে জ্যামিতি, ত্রিকোণোমিতি বা অংকের হিসাব নিকাশ আছে, দূর দূরান্ত থেকে পাথর বহন করে আনার ব্যয় ও ব্যবস্থাপনা আছে, রক্ত জল করা পরিশ্রমে নিয়োজিত লক্ষ লক্ষ শ্রমদাসের জীবন ধারণের বিপুল বিনিয়োগ আছে, সবচেয়ে বড় কথা সমকালীন সকল ক্ষমতার উৎস সম্রাটদের বিশ্বাস ও উচ্চাকাক্সক্ষার প্রতিফলন আছে, কিন্তু এখানে উঁচুমানের শিল্পের কোনো সুক্ষ্ণ কারুকাজ নেই। সিলভিয়ার কথা শুনতে শুনতে এবড়ো থেবড়ো পাথরের শরীর থেকে আমার দৃষ্টি চলে যায় পিরামিডের শীর্ষে।

(চলবে)

প্যাপিরাসের পুরোনো পাতা, পর্ব: ১

Header Ad
Header Ad

সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের রাষ্ট্রপতি পদকে ভূষিত হলেন সেনাপ্রধান

পদক গ্রহণ করছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনালের ওয়াকার-উজ-জামান। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের প্রেসিডেন্ট পদে ভূষিত করা হয়েছে। সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের জনগণের সার্বিক উন্নয়নে, বিশেষ করে চিকিৎসা খাতে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদানকে স্বীকৃতি প্রদান করেই তাকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানায় আইএসপিআর।

আইএসপিআর জানায়, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক সফর শেষে আজ বৃহস্পতিবার দেশে ফিরেছেন সেনাবাহিনী প্রধান। সফরকালে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত বাংলাদেশি কন্টিনজেন্টসমূহ ও বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে সেনাবাহিনী প্রধানকে অবহিত করা হয়। এ সময় তিনি তাঁর মূল্যবান দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। সেনাবাহিনী প্রধান স্পেশাল রিপ্রেজেনটেটিভ অব দ্য সেক্রেটারি জেনারেল ভ্যালেন্টাইন রুগাবিজা এবং ফোর্স কমান্ডার লে. জেনারেল হামফ্রে নায়নির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন।

ছবি: সংগৃহীত

সেনাবাহিনী প্রধান সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক্যান ফোর্স (এফএসিএ) এর প্রধান জেনারেল মামাদু জেফিরিনের সাথে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে সেনাবাহিনী প্রধান দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করেন। পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক এবং সেনাবাহিনী প্রধান বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক শান্তিরক্ষী মিশনের অধীনে বেসামরিক লোকদের সহায়তার অংশ হিসেবে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক এ নির্মিত তোয়াদেরা কমিউনিটি ক্লিনিকের উদ্বোধন করেন। এছাড়া সেনাবাহিনী প্রধান সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের প্রেসিডেন্ট ফসটিন আরচেঞ্জ তৌদেরার সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের জনগণের সার্বিক উন্নয়নের জন্য বিশেষ করে চিকিৎসা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রেসিডেন্ট সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেনাবাহিনী প্রধানকে সম্মানসূচক রাষ্ট্রপতি পদকে ভূষিত করেন।

এছাড়া সেনাবাহিনী প্রধান সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের বাংগি এলাকায় নিয়োজিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কন্টিনজেন্টসমূহ পরিদর্শন করেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধানের এ সফর সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদারের পাশাপাশি সেখানে অবস্থিত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের মনোবল বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে বলে আশা করা যায়।

উল্লেখ্য, সেনাবাহিনী প্রধান গত ৩ মার্চ সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক সফরে যান।

Header Ad
Header Ad

তৃতীয় বিয়ে করলেন অভিনেতা মিলন, পাত্রী কে?

অভিনেতা আনিসুর রহমান মিলন ও তার স্ত্রী শিপা। ছবি: সংগৃহীত

আবারও বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন ছোট ও বড়পর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা আনিসুর রহমান মিলন। প্রায় এক মাস আগেই ভালোবাসার মাস ফেব্রুয়ারিতে বিয়ে সারেন এ অভিনেতা।

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী। মিলন ও তার স্ত্রীকে দেখতে অভিনেতার বাড়ি থেকে ৫টি ছবি পোস্ট করেন তিনি।

পোস্ট করা ছবির ক্যাপশনে বিবাহিত জীবনের জন্য শুভকামনাও জানান চয়নিকা। শুধু যে চয়নিকা নব দম্পতিকে দেখতে গিয়েছিলেন এমন নয়। ছোট পর্দার অনেক অভিনয়শিল্পীই আজ মিলনের বাড়ি হাজির হন নতুন বউ দেখতে।

জানা যায়, মিলনের স্ত্রীর নাম শিপা। গত ৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগামে দুই পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে তাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।

উল্লেখ্য, অভিনেতার প্রথম স্ত্রীর নাম ছিল লুসি গোমেজ। ১৯৯৯ সালে তাদের বিয়ে হয়। ২০১৩ সালে তাদের দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনের সমাপ্তি ঘটে। এরপর দ্বিতীয় স্ত্রী পলির সঙ্গে মিলনের বিয়ে ও চার বছরের সংসার জীবনের গুঞ্জন শোনা গেলেও তা অস্বীকার করে আসছিলেন অভিনেতা।

তবে ২০১৩ সালের অক্টোবরে শ্রীলঙ্কায় স্ত্রী-পুত্র সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ছবি প্রকাশ করেন আনিসুর রহমান মিলন। সেই ছবি থেকে জানা যায়, তার স্ত্রীর নাম পলি আহমেদ এবং সন্তানের নাম মিহ্রান।

এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী পলি আহমেদকে বিয়ে করেন। যিনি ২০২২ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

Header Ad
Header Ad

ইউপি চেয়ারম্যানের অ্যাকাউন্টে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা লেনদেন, দুদকের মামলা

ব্রাহ্মন্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লাক মিয়া। ছবি: সংগৃহীত

সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেন ও প্রায় ৫৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার ব্রাহ্মন্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লাক মিয়া ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) দুপুরে দুদক কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে এদিন দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক সোহানুর রহমান বাদি হয়ে লাক মিয়ার নামে মামলা করেন।

মামলার এজহারে বলা হয়, লাক মিয়া চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নিজ ক্ষমতার অপব্যবহারপূর্বক ঘুস ও দুর্নীতির মাধ্যমে তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৫৫ কোটি ২৩ লক্ষ ৫২ হাজার ৯৫১ টাকা মূল্যের সম্পত্তির মালিকানা অর্জনপূর্বক দখলে রাখে।

তার নামে ৪৯টি ব্যাংক হিসাবে ১৪ হাজার ৩৭৬ কোটি ১৮ লক্ষ ৫২ হাজার ৫০১ টাকা অস্বাভাবিক লেনদেনের মাধ্যমে অপরাধলব্ধ অবৈধ অর্থ জ্ঞাতসারে হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করে। যার কারণে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২) ও ৪(৩) ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

এদিকে একই অভিযোগে লাক মিয়ার স্ত্রী মাহমুদা বেগমের বিরুদ্ধেও মামলা করেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আশিকুর রহমান।

মাহমুদা বেগমের বিরুদ্ধে করা মামলার এজহারে বলা হয়, স্বামীর সহায়তায় জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ১৪ কোটি ৫০ লক্ষ ২৩ হাজার ১৯৭ টাকা মূল্যের সম্পদের মালিকানা অসাধু উপায়ে অর্জনপূর্বক দখলে রেখে এবং ১৪টি ব্যাংক হিসাবে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ৪৬১ কোটি ১৬ লক্ষ ৮৬ হাজার ১৪৬ টাকা অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেনের মাধ্যমে অপরাধলব্ধ অবৈধ অর্থ জ্ঞাতসারে হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রুপান্তর করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা এবং দন্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের রাষ্ট্রপতি পদকে ভূষিত হলেন সেনাপ্রধান
তৃতীয় বিয়ে করলেন অভিনেতা মিলন, পাত্রী কে?
ইউপি চেয়ারম্যানের অ্যাকাউন্টে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা লেনদেন, দুদকের মামলা
লাইফ সাপোর্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক
যশোর সীমান্ত থেকে ৫ কোটি ১২ লাখ টাকার ভারতীয় মালামাল জব্দ
অনেক কো-আর্টিস্ট, ডিরেক্টর তখন আমার সঙ্গে কাজ করতে চাইতেন না: প্রভা
ভয়াবহ দাবানলের কবলে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া, ২০ স্থানে ছড়িয়েছে আগুন (ভিডিও)
নাগরিক পার্টি ছাড়লেন আবু হানিফ, ফিরে গেলেন গণ অধিকার পরিষদে
প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফরে চীন যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা
রোজায় বেড়েছে আনারসের চাহিদা, দ্রুত পাকাতে রাসায়নিক ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকি
সন্তানের জন্য ‘ডন থ্রি’ সিনেমা থেকে সরে দাঁড়ালেন কিয়ারা
অস্থিরতার কারণে এ বছর নির্বাচন কঠিন হবে: রয়টার্সকে নাহিদ ইসলাম
চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরলেন মির্জা ফখরুল
বিয়ে বাড়িতে প্রবেশের আগমুহূর্তে বরের মৃত্যু
মুশফিক অযু ছাড়া ব্যাট-বল স্পর্শ করতেন না: মুশফিকের স্ত্রী
বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচকে ভারত, পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও ভালো উন্নতি বাংলাদেশের
ছাত্র-জনতা কোথাও অভিযান চালাতে পারে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
ফ্রান্সে মুসলিম খেলোয়াড়দের রোজায় নিষেধাজ্ঞা
স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন আবরার ফাহাদসহ ৯ বিশিষ্ট ব্যক্তি
রাবিতে সভাপতি নিয়োগ নিয়ে দুই পক্ষের ধস্তাধস্তি