বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ৬ ফাল্গুন ১৪৩১
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-৭

নেই দেশের নাগরিক

‘আর বাড়ি! দেশই নেই তো বাড়ি! আল্লাহ কি আমাদের কপালে কোনো বাড়ি লিখে পাঠিয়েছেন?’ কোঁকড়ানো চুলের লোকটির গলা মুষড়ে পড়ল। চোখের সোনালী ফ্রেমের চশমাটা খুলে চোখ মুছল। যেন এতক্ষণ ফদফদ করে বকার সময় কষ্টের যন্ত্রণার যেসব দলাগুলোকে পেটের মধ্যে জোর করে ঠেসে পুরে রেখেছিল, সেসব যেন এবার কণ্ঠে এসে ধাক্কা দিল। আর কতক্ষণ! মানুষ যে কষ্টকে বেশিক্ষণ চেপে রাখতে পারে না। একটা সময় ঠিকই মেঘভাঙার মতো দুদ্দাড় করে ভেঙে পড়ে। তখন মানুষটা যে পাথরের নয়, কাদামাটির, তা বোঝা যায়।

লোকটিকে দেখে মনে হচ্ছে শিক্ষিত লোক। পরনের বেশভুষা আর কথাবার্তার ধরণ দেখে সেটাই বলছে। লোকটি চোখে আবার চশমাটা এঁটে ভেজা গলায় বলতে লাগল, ‘মংডুর ফাতাংজায় আমাদের বাড়ি ছিল। পাকা দালানের দোতলা বাড়ি। চারপাশে দশ ইঞ্চি ইটের পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। ফাতাংজার ডিহি মাঠে আমাদের এক দাগে চোদ্দ বিঘে আবাদে জমি। ভুঁইগুলো খুবই উর্বর। বছরে তিন তিনটে ফসল হয়। তবুও মাটি বুড়ো হয় না। একের পর এক ফসল বিহিয়েই যায়। আমরা তিনভাই। এত ঠুকুরমুকুর হলেও কোনোদিন ভিনো হইনি। গোটা গায়ে একমাত্র আমাদেরই যৌথপরিবার। উঠোনের উত্তর কোণে দুটো ধানের গোলা রয়েছে। বছরে যা ধান পেতাম তাতেই আমাদের সংসার স্বচ্ছলভাবে চলে যেত। বাড়িতে এক গোহাল ছাগল-গরু। সব ছেড়ে ছুড়ে চলে আসতে হল জানের বেগাত্তায়!’ হাউমাউ করে উঠল লোকটা। লোকটার কথা শুনতে শুনতে মতির মনও ফুড়ুৎ করে উড়ে গেল তাদের দংখালীর বাড়িটায়। আটচালার মাটির ঘর। দক্ষিণ দুয়ারি লম্বা শিতেনের বারান্দা। পাশেই নীমগাছটাকে আড়াল করে দুচালার টালির ঘর তুলছিল নুহু। দুটো ঘরে সবার ঘেঁষাঘেঁষি হচ্ছিল। নুহু কেবলই ইটের দেওয়াল তুলে মাথায় বাঁশের ফ্রেম বসাচ্ছিল। জাবের চাচা ভালো ঘরামী। তার হাতেই পুরোনো আটচালা ঘরটা বছর ঘুরতেই নতুন করে ঝাড়া হয়। পাকা বাঁশের খাঁচা, চাছা বাতা, নারকেলের ছোবড়ার দড়ি, পেরেক আর নতুন খড় দিয়ে ছাওয়া হয় চালা, ডাপ, কোঠা। মতি মাথায় টালি দেব, টালি দেব করলেও বাপ আলি জাফর দিতে দেননি। তিনি বলেন, খড়ের ঘরের মতন কি আর মজা আছে রে। চৈত্রের রৌদ্রেও ঘর কেমন কালহা থাকে, দেখতে পাস নে? আমি মরে গেলে ওসব টালিফালি লাগাস। এখন খড়ই থাক। বড় বাড়িটার খড়ের চালাটা এখনো আকাশের দিকে মুখ তুলে আছে, না জল্লাদরা এসে সব আগুন ধরিয়ে দিয়েছে? মনে পাক দিয়ে উঠল মতির। এই বাড়িটা তাদের বাপ-দাদোর আমলের। দাওয়ায় এক গড়া দিলে, এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে যেতে যেতে মা’র দুটো রুটি স্যাকা হয়ে যেত। দাওয়াটা এতই বড়! এতক্ষণে নিশ্চয় এই দাওয়ায় খড়ের ছাইগুলো ঝরে ঝরে পড়েছে? হুড়মুড় করে খসে পড়েছে বাঁশের পোড়া বাতা। ডাপে গোঁজা রফিকের কাজললতাটাও নিশ্চয় আগুনে পুড়ে লাল হয়ে গেছে। মা’র পানের বাটাটাও ছাইয়ের মধ্যে পড়ে হয়ত এতক্ষণে ছাই! যাঁতিটায় কতদিন সুপারি কেটে দিয়েছি মাকে। মা গোটা পানপাতাটায় গোল করে চুন ডলত। তাতে সুপারি কুচি, জর্দার গুড়ো আর একটা এলাচ দিয়ে কচমচ করে মুখে এক খিলি পান পুরে দিত। গালটা বেলুনের মতো ফুলে উঠত। মা যখন মুখে পান পুরে দিত, তখন যেন মনে হত মা’র থেকে সুখি মনে হয় এই পৃথিবীতে আর কেউ নেই। মা তখন আশমোড়া দিয়ে বসে পুরোনো দিনের কথা বলত। দেশের কথা, দশের কথা, ধম্মের কথা, জাতিতে জাতিতে মিলমিশের কথা। কত্ত গালগল্প। সে কথায় যে দরদপনা থাকত, তা আর কোত্থাও পাওয়া যাবে না।
‘আপনাদের ফাতাংজা কি একেবারে সুনসান? না এখনও কেউ কেউ আছেন?’ বৈঠাটাকে জল থেকে নৌকাতে তুলতে তুলতে জিজ্ঞেস করল নুহু। জলে মিহি করে একটা ছলাৎ শব্দ হল।
‘না, আর মনে হয় সেরকম কেউ বাকি নেই। যারা ছিল, তাদেরকে মনে হয় হত্যা করে বাড়িঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে! আমরাই তো আর কটাদিন দেখি দেখি করে লেট করে ফেলেছিলাম। গত পরশু রাতে না পালিয়ে আসতে পারলেই আর রেহাই থাকত না! ওদের হাতে জবেহ হয়ে যেতাম। আমরা যেই ঘাটে নৌকা ভিড়িয়েছি অমনি একটা বিশাল সংখ্যক সেনার দল গ্রামে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়েছিল। মিনিট দশেকের ফারাকে কোনোক্রমে জানে বেঁচে গেছি।’
‘সবই আল্লাহর কুদরত।’ লোকটা এবার কাঁপছে। আতঙ্ক তার শরীরকে হালিয়ে দিচ্ছে। ভ্যাদভ্যাদে গরমে লোকটা শীতের মতো হালছে! আসলে মানুষের মনেরও যে শীত-গ্রীষ্ম থাকে। আর সে সব বাইরের রোদ ঝড় বৃষ্টিতে ঠাণ্ডা বা গরম হয় না। সেসব ঘামে বা হালে জীবনের ঘটনা দুর্ঘটনার উপর। আপদ-বিপদের ছোবলে কামড়ে। সে মনে যেমন মোষের মতো মেঘ ওঠে, ফণী হয়ে তেড়ে আসে মারণঝড়, ঝেঁপে নামে বৃষ্টি, ঠিক তেমনি খিলখিল করে ওঠে সোনালি রোদ।
‘কার সাথে অত কথা বলছিস নুহু? আমাদের গাঁয়ের কি কারও দেখাটেখা পেলি নাকি?’ ছইয়ের ভেতর থেকে জানতে চাইলেন হালেমা।
‘না, মা, আমাদের দংখালীর না। এদের বাড়ি ফাতাংজা।’ গলা নামিয়ে বলল নুহু। তারপর গলাটা কিছুটা তুলে কোঁকড়ানো চুলের লোকটাকে জিজ্ঞেস করল, ‘দুটো নৌকা কি একসাথে জুড়ে দেব?’
‘তা করলে তো ভালোয় হয়।’ লোকটি বলল।
‘তুমি কী বলছ, মতিভাই। নৌকাদুটো কি একসাথে জুড়ে দেব?’ মতির দিকে ঘাড় ঘোরালো নুহু। মতি তখনও বুঁদ হয়ে আছে তাদের ফেলে আসা দংখালীতে। ঘোরে মুদে আছে। নুহু একটু গলা চড়াল, ‘মতিভাই, এই মতিভাই?’ নুহুর উচ্চ ডাকে ঘোর ভাঙল মতির, ‘হু, কী বলছিস?’
‘বলছি, দুটো নৌকা কি একসাথে জুড়ে দেব? ওদের আপত্তি নেই। ওরাও চায়ছেন, একসাথে যেতে।’
‘সে তো ভালো কথা। দল ভারী হবে। তা ছাড়া জোড়নৌকা পানির তোড়ও ঠেকাতে পারবে।’ ঘাড়ের গামছাটা দিয়ে মুখ মুছল মতি। নুহু নারকেলের ছোবড়ার দড়িগুলোকে বগলে পাজা করে ধরে খাড়া হয়ে দাঁড়াল। অপর নৌকাটা থেকে একজন বেঁটেখাট গাট্টাগোট্টা লোক একটা ফোলা টিউবে কোমর ঢুকিয়ে ঝপাং করে জলে লাফ মারল। নদীর নীল জল জ্যান্ত মানুষের ছোঁয়া পেয়ে মিহি করে কোমর দুলিয়ে উঠল। ‘উরি বাব্বা, কি ঠাণ্ডা গো!’ জলের উপর মুখ তুলে নুহুকে বলল, ‘আপনি রশি ফেলুন, আমি তলার আংটার সাথে বেঁধে দিচ্ছি।’ ঝপাং করে রশির বান্ডিলটা বগল থেকে ছিটকে জলে ফেলল নুহু। জলে থাকা লোকটি মিহি স্বরে বলল, ‘লোহার আংটাটা দেন, রশিটাকে টাইট দিতে হবে।’ মতি হাত বাড়িয়ে লোহার আংটাটা লোকটাকে দিল। নুহু একবার এ নৌকা একবার ও নৌকা করে করে রশির বাঁধন দিল। এভাবে তল থেকে মাথা পর্যন্ত দুটো নৌকা রশির বাঁধনে পড়ে একটা বড় নৌকায় পরিণত হয়ে গেল। বাঁধা সম্পূর্ণ হয়ে গেলে নৌকার কাণা ধরে বেঁটে লোকটা উপরে উঠে এল। নুহু যেই বৈঠার একটা ঠেলা মারল, অমনি কচমচ করে গড়তে শুরু করল জোড় বাঁধা দুটো নৌকা। যেন দুটো নৌকা নয়, দুটো বাড়ি, দুটো পাশাপাশি গাঁ, দুটো জোড় বাঁধা দেশ। আরিফা কুপিটা আবার ধরাল। দুটো নৌকায় জ্বলছে দুটো কুপি। অন্ধকারে কুপি দুটোর শিখাকে দেখে মনে হচ্ছে, যেন নদী জ্বলছে! নদীর মুখ দিয়ে বের হচ্ছে আগুনের লেলিহান শিখা। তার অন্তর পুড়ে যেন যন্ত্রণার জিভ ললকাচ্ছে!

টিমটিম করে এগোতে থাকল নৌকা। নুহু পা ছড়িয়ে টান মারল বৈঠা। রাত মধ্যগগন থেকে তার লম্বা ছায়া ফেলতে শুরু করেছে। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে বিজিবির সীমান্ত চৌকির টিমটিমে আলো। পাড় লাগোয়া বসতির এলেবেলে আলোর বিন্দু। পুবে আকিয়াবের উপকূল সেভাবে চোখে পড়ছে না। অন্ধকারের চাদরে মুড়ে আছে চরাচর। এভাবেই সীমান্তের অন্ধকার, নেইদেশের অন্ধকার মতি নুহুদেরকে জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। মনের মধ্যে বেড়ে উঠছে অন্ধকারের ভয়। ফণা তুলে বসে থাকা অন্ধকার যেকোনো সময় ছোবল মারতে পারে। খুবলে তুলে নিতে পারে চোখ।

‘যেখানে যুগযুগ ধরে বাপ-দাদো চৌদ্দ পুরুষ বাস করে আসছে, আর শয়তান সেনারা বলছে কি না যে আমরা নাকি ভিনদেশের লোক!’ নৌকার খোলে পা ঝুলিয়ে বসে কোঁকড়ানো চুলের লোকটি বিড়বিড় করে উঠল।
‘ডাহা মিথ্যে কথা।’ গামছাটাকে মাথায় ফেট্টি বাঁধতে বাঁধতে ফুঁসে উঠল মতি। তারপর চোখ টেরিয়ে বলল, ‘যদি তাইই হবে, তবে এতদিন আমাদেরকে ওরা থাকতেই বা দিল কেন?’
‘অথচ ইতিহাস কিন্তু অন্য কথা বলছে। এই রাখাইন অর্থাৎ পূর্বের আরাকান একসময় পূর্ব ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। আমরা একসময় সবাই হিন্দু ছিলাম।’

‘এই বার্মিজরাও নাকি বাইরে থেকে এখানে এসেছিল?’ মনের খটকাটা প্রকাশ করল মতি। মতিও কিছু কিছু ইতিহাস জানে। সে অত হাদাভোদা মূর্খ নয়। বোর্ডের পরীক্ষা না দিলেও, আটক্লাস পর্যন্ত পড়েছে। তা ছাড়া সে অনেক চেপে রাখা ইতিহাসও নাড়াঘাটা করেছে। সে জানে, সত্যিকারের ইতিহাস তাদের স্কুলের সিলেবাসে ছিল না। সেখানেই অনেক কিছুই বিকৃত করে উপস্থাপন করা হয়েছে। শাসকের অঙ্গুলি হিলনে সাতকে পাঁচ পাঁচকে সাত করা হয়েছে।
‘হ্যাঁ, সেটা দশম শতক। মঙ্গোলীয় ও তিব্বতি বার্মিজরা এখানে আসে।’
‘ইসলাম ধর্মের বিস্তার কবে হয়?’
‘বারশ তিন সালে মুসলমান শাসক ও বণিকদের সংস্পর্শে এই অঞ্চলে ইসলামের বিস্তার ঘটে। চতুর্দশ ও পঞ্চদশ শতকে আরাকান স্বাধীন মুসলিম রাজ্য ছিল। তবে সেসময় মুসলমান ও বৌদ্ধদের মধ্যে ব্যাপক সম্প্রীতি ছিল।’ কথাটা বলেই লোকটি ছড়ানো পাদুটো জড়ো করে, চশমাটা খুলে পাশে রেখে, হাঁটুর ওপর মাথা রেখে বললেন, ‘১৭৮৪ সালে বার্মিজ রাজা বোদাওপায়া এই এলাকা দখল করেন। এবং বার্মার অধীনে করদ রাজ্যে পরিণত করেন। শুনলে অবাক হবেন, আরাকান রাজ্যের রাজা বৌদ্ধ হলেও তিনি মুসলমান উপাধি গ্রহণ করতেন। এবং আরও তাজ্জব ব্যাপার, তার মুদ্রাতে ফারসি ভাষায় লেখা থাকত কালেমা। একপাশে থাকত বার্মি বর্ণ অন্য পাশে ফার্সি বর্ণ।’
‘একেই বলে সম্প্রীতির মেলবন্ধন। ধর্মে ধর্মে মিল-মহব্বত। কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে বাস করা। মুসলমান বৌদ্ধ ভাই ভাই।’
‘রোহিঙ্গা’ নামটি এসেছে আরাকানের রাজধানীর নাম ‘ম্রোহং’ থেকে। ‘ম্রোহংরোহাংরোয়াইঙ্গিয়ারোহিঙ্গা’। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে আরাকানকে ডাকা হত ‘রোসাং’ বলে।’
‘তাহলে এটা তো ঠিক, আমরা বানের পানিতে ভেসে আসিনি?’
‘একদমই না। বরং আমরাই আদি।’ দাঁত এঁটে বললেন ভদ্রলোক। মতির চোখে উৎফুল্লতার দ্যুতি। গামছা দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে মতি বলল, ‘আচ্ছা, আপনি এত ইতিহাস জানেন, আপনি কি ইতিহাসের লোক?’
‘হ্যাঁ ভাই, আমার নাম ইয়াসিন আলি, এলাকায় সবাই ‘ইয়াসিন মাস্টার’ বলে ডাকে। আমি ফাতাংজা হাইস্কুলের ইতিহাসের শিক্ষক। তা ছাড়া ইতিহাস নিয়ে টুকটাক গবেষণাধর্মী কাজও করি। ওটা আমার নেশা বলতে পারেন।’ লোকটির ঠোঁটে আলতো হাসি। দুশ্চিন্তার কালো মেঘ জমে থাকা মুখে এইটুকু হাসি যেন জান কবজের ফিরিস্তা আজরাইলকেও হাসিয়ে দিল। মতিও যেন হাসিটার কিছুটা ধার করে নিয়ে নিজের মুখে মেখে নিল।

‘আচ্ছা ভাবুন তো, শত শত বছর আগে কে কোথা থেকে এসেছে, এই ভেবে যদি মানুষকে বহিরাগত চিহ্নিত করা হয়, তাহলে তো দেখতে গেলে দুনিয়ার সবাইই বহিরাগত? কোনো মসজিদের তলায় মন্দির ছিল, কোন মন্দিরের নিচে মঠ ছিল, এসব খুঁড়তে গেলে তো পৃথিবীর কোথাও কোনো মানবসভ্যতায়ই থাকবে না! না থাকবে দেশ, না থাকবে ধর্ম। এসব মুর্খামি নয়?’
‘আসলে এরা নিজের পায়ে নিজেই কুড়ুল মারছে।’ গলার কাশিটাকে আলুথালু করে ঝেড়ে বলল নুহু।

চলবে...

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৬

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৫

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১

আরএ

Header Ad
Header Ad

অবশেষে সরিয়ে দেওয়া হলো মাউশির বিতর্কিত ডিজিকে

অধ্যাপক ড. এহতেসাম উল হক ও মাউশির লোগো। ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষক নেতাদের আন্দোলন ও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক (ডিজি) পদ থেকে অধ্যাপক ড. এহতেসাম উল হককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি শিক্ষা ক্যাডারের ১৪তম বিসিএসের কর্মকর্তা এবং পটুয়াখালী সরকারি কলেজের অধ্যাপক ছিলেন।

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি তার বিতর্কিত কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর তাকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করে মাউশিতে সংযুক্ত করা হয়েছে। এদিকে, নতুন মহাপরিচালক হিসেবে অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খানকে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব মো. মাহবুব আলম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, অধ্যাপক মুহাম্মদ আজাদ খানের এই দায়িত্ব কেবল সাময়িক, যা পদোন্নতি হিসেবে গণ্য হবে না। পরবর্তীতে নিয়মিত নিয়োগের মাধ্যমে মহাপরিচালক নিয়োগ হলে এই চলতি দায়িত্ব বাতিল হয়ে যাবে।

অধ্যাপক এহতেসাম উল হকের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এর আগে তিনি বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ থাকাকালীন শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়ন চালানোর অভিযোগে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। অভিযোগ রয়েছে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তথ্য তিনি পুলিশের কাছে সরবরাহ করেছিলেন।

২০২৩ সালের ৫ আগস্ট তার অপসারণের দাবিতে কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার অপসারণের দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ২০২১ সালের জুন মাসে বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে যোগদানের পর থেকে তিনি নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে যান। তিনি বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয় সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

অভিযোগ রয়েছে, অধ্যক্ষ থাকাকালীন তিনি শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন এবং আন্দোলনে অসহযোগিতা করতেন। এমনকি কলেজের গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতেন, যা তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনও ব্যবহার করতেন। তিনি কলেজের বিদ্যুৎ ব্যবহার করে নিজের বাসায় গ্রিল নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ করিয়েছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে চাকরি খেয়ে ফেলার হুমকি দিতেন এবং বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) খারাপ করে দেওয়ার ভয় দেখাতেন। এছাড়া, চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন না দিয়ে বিদায় করে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ডিজি পদ থেকে এহতেসাম উল হককে অপসারণের খবরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, একজন বিতর্কিত ব্যক্তি শিক্ষাখাতের এত বড় দায়িত্বে থাকতে পারেন না। তার অপসারণের মাধ্যমে প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রতি সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে।

Header Ad
Header Ad

২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ৩৩ ডিসি ওএসডি

ছবি: সংগৃহীত

২০১৮ সালের বিতর্কিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ৩৩ জন জেলা প্রশাসককে (ডিসি) বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত ছয়টি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিতর্কিত নির্বাচনে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের কারণে এই কর্মকর্তাদের ওএসডি করা হয়েছে। এর আগে একই কারণে আরও ১২ জন কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছিল।

ওএসডি হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের পরিচালক (যুগ্মসচিব) কবীর মাহমুদ, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. মাহমুদুল আলম, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. আবুল ফজল মীর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের সদস্য-পরিচালক (যুগ্মসচিব) মঈনউল ইসলাম, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য (যুগ্মসচিব) মো. ওয়াহিদুজ্জামান, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (সংযুক্ত) এ কে এম মামুনুর রশিদ এবং বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বাপবিবো) সদস্য (যুগ্মসচিব) ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম।

এছাড়া তালিকায় রয়েছেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব কাজী আবু তাহের, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সদস্য (যুগ্মসচিব) মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব (সংযুক্ত) আনার কলি মাহবুব, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য (যুগ্মসচিব) সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী, কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব সাবিনা ইয়াসমিন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আতাউল গনি এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (সংযুক্ত) আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন।

এছাড়া, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব এ জেড এম নুরুল হক, বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের পরিচালক (যুগ্ম-সচিব) এস এম আজিয়র রহমান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সচিব (যুগ্ম-সচিব) মো. মাসুদ আলম সিদ্দিক এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম-সচিব গোপাল চন্দ্র দাশসহ আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা রয়েছেন।

প্রসঙ্গত, বিতর্কিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই ওই সময়ের রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এবার সেই নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের পর্যায়ক্রমে ওএসডি করা হচ্ছে বলে মনে করছেন প্রশাসনিক বিশ্লেষকরা।

Header Ad
Header Ad

ট্রাম্পের বিস্ফোরক দাবি: চলমান যুদ্ধের সূচনা ইউক্রেনই করেছিল

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য ইউক্রেনকেই দায়ী করে নতুন বিতর্ক উসকে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন রাজনীতিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে পরিচিত ট্রাম্প এবার ইউক্রেনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, চলমান যুদ্ধের সূচনা ইউক্রেনই করেছিল।

মঙ্গলবার (স্থানীয় সময়) ফ্লোরিডার মার-আ-লাগোতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রতি কঠোর মনোভাব প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ইউক্রেনে একটি নতুন নির্বাচন হওয়া উচিত। বিশ্লেষকদের মতে, এটি জেলেনস্কিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনারই ইঙ্গিত।

ট্রাম্প আরও বলেন, ইউক্রেনে দীর্ঘদিন ধরে কোনো নির্বাচন হয়নি এবং সেখানে সামরিক আইন চলছে। তার দাবি, জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা মাত্র চার শতাংশে নেমে গেছে, আর দেশটি ধ্বংসের পথে। যদিও যুদ্ধকালীন সময়ে নির্ভরযোগ্য জনমত জরিপ পাওয়া কঠিন, তবে বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা ট্রাম্পের দাবির মতো এতটা কমেনি।

এছাড়া, ইউক্রেনের নির্বাচন প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, "তারা কি জনগণের মতামত নিয়েছে? তারা আলোচনার টেবিলে বসতে চায়, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সেখানে কোনো নির্বাচন হয়নি।"

প্রসঙ্গত, ইউক্রেনে ২০২৪ সালের এপ্রিলে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও দেশটির সংবিধান অনুযায়ী, যুদ্ধকালীন সময়ে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই মন্তব্য কৌতুকপূর্ণ, কারণ তিনি নিজেই ২০২০ সালের মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।

ট্রাম্প আরও দাবি করেন, ইউক্রেন চাইলে যুদ্ধ বন্ধ করতে পারতো এবং তাদের উচিত ছিল রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতায় যাওয়া। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এর অর্থ হলো—ইউক্রেনকে হয় রাশিয়ার মিত্র সরকার গঠনের প্রস্তাবে রাজি হতে হতো, নয়তো প্রতিরোধ ছেড়ে দিয়ে আত্মসমর্পণ করতে হতো।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক অবস্থান ইঙ্গিত দেয় যে, তিনি পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ইউক্রেনকে সমর্থন না দিয়ে বরং রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি বিতর্কিত শান্তিচুক্তির দিকে এগোতে পারেন, যা পুতিনের জন্য বড় ধরনের কূটনৈতিক জয় হিসেবে বিবেচিত হবে।

সূত্র: সিএনএন

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

অবশেষে সরিয়ে দেওয়া হলো মাউশির বিতর্কিত ডিজিকে
২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ৩৩ ডিসি ওএসডি
ট্রাম্পের বিস্ফোরক দাবি: চলমান যুদ্ধের সূচনা ইউক্রেনই করেছিল
ডিবির সাবেক প্রধান হারুনের ১০০ বিঘা জমি, ৫ ভবন ও ২ ফ্ল্যাট ক্রোকের নির্দেশ
দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন রেখা গুপ্তা, বিজেপির সিদ্ধান্তে চমক
একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতির শহীদ মিনারে না যাওয়ার আহ্বান
নামাজি জীবনসঙ্গী খুঁজছেন আইশা খান
গাইবান্ধায় গাঁজাসহ আটক এএসআইকে কারাগারে প্রেরণ
উপদেষ্টাদের মিটিংয়ে কোন প্রটোকলে গিয়েছিলেন হাসনাত-পাটোয়ারী: ছাত্রদল সেক্রেটারি
সরকারে থেকে ‘নতুন দল’ গঠন করলে মেনে নেওয়া হবে না: মির্জা ফখরুল
হোস্টিং সামিট ২০২৫ অনুষ্ঠিত
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচে পাকিস্তানকে ৩২১ রানের বড় লক্ষ্য দিলো নিউজিল্যান্ড
বৈষম্যবিরোধী নামধারী শীর্ষ নেতার নির্দেশে কুয়েটে ছাত্রদলের ওপর হামলা: রাকিব
যান্ত্রিক ত্রুটিতে আবারও বন্ধ বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র
কুবিতে ছাত্র সংসদের দাবিতে মানববন্ধন ও সন্ত্রাসবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল
২২০ জনকে নিয়োগ দেবে সমরাস্ত্র কারখানা, এসএসসি পাসেও আবেদন
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে ২ দিনব্যাপি খামারি প্রশিক্ষণ
সবার সাত দিন কারাগারে থাকা উচিত: আদালতে পলক
বিপ্লবী সরকারের ডাক থেকে সরে এলেন কাফি  
নাঈম ভাই হেনা কোথায়?: ‘তুই অনেক দেরি করে ফেলেছিস বাপ্পা’