হাসান হাফিজের
একগুচ্ছ কবিতা
সায়াহ্ন সমীপে পৌঁছে
আপন ভাবছো কাকে? তরঙ্গিত এ সাগর
তোমার স্বজন নয়, তোমার শোকার্ত চোখ
মুছিয়ে দেবে না কেউ, ত্রিভুবনে মিত্র কেউ নাই।
চারিদিকে জাগরূক নৃত্যশীলা পিপাসা রয়েছে,
পরম্পরা আছে তার, ব্রহ্মতেজও আছে,
সে আগুনে পুড়ে তুমি হতে পারবে আরো নিঃস্ব
আরো একলা মুঠো মুঠো ছাই,
ছাইয়ের সঙ্গেও কারো শত্রুতা হয়
এমন দৃষ্টান্ত খুঁজে
কোথাও না পাই।
একাকিত্ব করো উদযাপন
বলো মনকে এই সন্ধিক্ষণ
দীর্ঘায়িত হবে আরো,বৃদ্ধি পাবে ঋণ
খুব দ্রæত মুক্তি নাই, সম্ভাবনা একেবারে ক্ষীণ
পথ চলছো নির্বান্ধব, মানুষেরা এরকমই একা
নিজের ভিতরবাগে ভাঙচুর নিত্যদিন নিয়তি যা লেখা
বিরুদ্ধে কী করে যাবে,আয়ু আর প্রকৃতই কতটুকু আছে?
ঋণ বাড়ছে তিলে তিলে পৌঁছে গেলে সায়াহ্নের কাছে
রাত্রিদিন একাকার,সমাজ সংসার ঝাপসা সময় ফুরায়
আপন ঘরের সংজ্ঞা উপলব্ধি ভোঁতা করে ধুলোয় গড়ায়।
নির্বাণের ঠিকানা সন্ধান
গাছকে দুঃখের কথা যদি বলো,
সহমর্মী বন্ধু হয়ে বুঝতে পারবে গাছ
সবুজ পত্রালি সেই দুঃখ শুষে নেবে
দুঃখ তো বিষাক্ত দাগ,কার্বনেরই
অন্যবিধ নাম
তাই সব দুঃখরাশি উজাড় উপুড় করে
অপাত্রেই সব ঢাললাম,
এইবার বৃক্ষলতা তরু তোমরা
শুরু করো কাজ
আমি চাইছি
নির্বাণের ঠিকানা সাকিন
বড়ো হচ্ছে কপালের ভাঁজ,
ক্ষতি যা-ই হলো হোক
পরোয়া করি না
গাছপালা তোমাদের অস্তিত্ব সুরভি
নৈকট্যের সঙ্গসুধা দিলে
দুঃখজয় কঠিন কিছু তো নয়
স্বীকার করবে ওরা অনিবার্য ক্ষতি পরাজয়।
স্বাধীনতা জীবন তুমি
স্বাধীনতা কোথায় বসতি করো কতোদূর কোন্ গ্রহচূড়ে?
অনেক দূরত্বে থাকি অনেক উঁচুতে উষ্ণ মেঘস্তরে
রক্তনদী পার হলে পেতে পারো ঠিকানা উদ্দিশ।
স্বাধীনতা তোমার কেমন রূপ চেহারা ও বৈশিষ্ট্য প্রকৃতি?
মৃত্যুর পেয়ালা যদি পান করে স্বস্থ হতে পারো
চিরঞ্জীব তিয়াসাকে বুকে গাঁথো রক্তস্রোতে ক্ষরণে মায়ায়
উপলব্ধি তখনই সম্ভব আমি কতো উচ্চ কতোটা গভীর।
স্বাধীনতা, কেন তুমি এতো বেশি তৃষাতুর ঊষর জটিল?
চারিত্র্যে দৃঢ়তা চাই পতাকায় রক্তলাল চিহ্নফোঁটা চাই
নাহলে পিপাসা ক্ষুধা থেকে যায় অনিবৃত্ত আর্ত বিষাদিত।
স্বাধীনতা, কেন তুমি সহজে প্রাপ্য নও দূরে দূরে থাকো?
রক্তের ফোঁটার ঋণ কোনোমতে সুলভ শস্তা যে নয়
তার মূল্য ভালো জানি,আত্মায় ধারণ করি প্রণম্যও সে
প্রাণের উৎসবে জাগে মৃত্যুর পরাস্ত ছবি, জীবনেরই
সে অর্জন,ত্যাগের প্রজ্ঞায় জ্বলে ভাঙে সে জিঞ্জির!
সর্বহারার আহাজারি!
চিনব কারে এই পাথারে
নিজকে চিনাই হইল না
গিয়াছে সব মিছা উৎসব
সেই কথা আর বইলো না।
কে অচেনা কে বা চেনা
চুকলো না সেই লেনা দেনা
অভিমানী মুখ ফিরাইল
কোনো কথাই কইল না
আমি নিঃস্ব মধুর বিশ্ব
তোমরা মজায় দেখছ দৃশ্য
সয় সম্পত্তি বলতে আমার
একটি কণাও রইল না।
হায় আফসোস!
ধিক পোড়া মন,
সুখের লাঞ্ছন
শুনতে পাইয়া শ্যামের বাঁশি
আউলা হইল মন
কপালে কী জুটবে আমার
বন্ধুর দরশন?
লাগাম ছাড়া উড়তাছে মন
বিরহমেঘ ঢাইকা ফেলছে
সাধের বৃন্দাাবন
মন কেন গো হইল এমন
লাগামছাড়া আউলা উচাটন?
তারে পাইতে মন কেন চায়
বিচ্ছেদে নীল বিষ পিপাসায়
কিসের কি কারণ?
হায় গো শ্যামের মরণ বাঁশি
কাইড়া নিলা ওষ্ঠের হাসি
মরার পরে দিয়ো তোমার একটু পবশন
এতেই খুশি দগ্ধ ফসিল
দুঃখতাপা আমার পোড়া মন।