বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

ধারাবাহিক উপন্যাস, পর্ব: ১

অঘ্রানের অন্ধকারে

পর্ব: ১

প্রায় একঘণ্টার কাছাকাছি সময় গাড়ি থেমে আছে। তার আগে একঘণ্টা গাড়ি চলেছে থেমে থেমে টুকটুক করে। গাজীপুর চৌরাস্তার আগে এসে পুরোপুরো থেমে গেছে। কতক্ষণ এভাবে থেমে থাকবে সে ব্যাপারে কেউ কিছু বলতে পারছে না। রাস্তার ওপর গাড়ির বিশাল সারি। স্টার্ট বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। কারও ভেতর তেমন কোনো উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে না। ব্যাপারটা নিয়ে কাউকে চিন্তিতও মনে হচ্ছে না। গাজীপুর চৌরাস্তায় গাড়ির জ্যাম নৈমিত্তিক ঘটনা। তা নিয়ে অস্থির হওয়ার কিছু নেই। মানুষজনের ভেতর ঢিলেঢালা ভাব। আরামে চোখ বন্ধ করে কাঠি দিয়ে কান খোঁচানোর মতো ব্যাপার। কেউ কেউ গাড়িতে বসে দাঁত খোঁচাচ্ছে। স্টিয়ারিং হুইল ছেড়ে দিয়ে কয়েকজন গাড়ির বাইরে হাঁটাহাঁটি করছে। যেন তাদের হাতে অনন্ত সময়। দিনের শুরু থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এখানে বসে থাকতে পারবে।

আমাকে যেতে হবে ময়মনসিংহ। সকাল ছয়টায় রওনা হয়েছি ঢাকা থেকে। ১১৫ কিলোমিটার পথ। তিন ঘন্টার বেশি লাগার কথা না। দশটায় সেখানে সাহিত্য সম্মেলন শুরু হবে। তারা আমাকে প্রধান অতিথি হিসেবে সাহিত্য সম্মেলনে থাকতে বলেছে। অনুরোধে ঢেঁকি গেলা আমার অভ্যাস। সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করার দায় লেখকের আছে বলে মনে করি। একজন লেখক হিসেবে সে দায় এড়িয়ে যাই না। তা ছাড়া সাহিত্যে একুশে পদক পাওয়ার সম্ভাবনা যখন প্রতিবছর উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হচ্ছে। সেই কবে, কতদিন আগে কথাসাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছি এখন আর মনেও পড়ে না। অন্যান্য পুরস্কারগুলো দিয়ে আমাকে সম্মানীত করার কথা বলে আয়োজকরা নিজেকে সম্মানীত করেছে।

নোমানের আসার কথা ছিল আমার সঙ্গে। নোমান আহমদ। শিশুসাহিত্যে সে বেশ নাম করেছে। বছর আট আগে অগ্রণী ব্যাংক-শিশু একাডেমি শিশুসাহিত্য পুরষ্কার পেয়েছে। এখন বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়ার জন্য নিয়মিত তদবির করে যাচ্ছে। শিগরি সে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়ে যাবে বলে আশা করছি। গতরাতে বাসায় এসেছিল নোমান। বললাম, ‘মৈমনসিং যাবি?’
‘মন্ডা খেতে?’
‘খাওয়া ছাড়া কিছু বুঝিস না?’
নোমান কাশল। টিস্যু নিয়ে এসে ওয়েস্ট বিনে ফেলে দিয়ে বলল, ‘বিয়ে বাড়িতে গিয়ে কয়জন মানুষ বর-বউ দেখে বলেন তো? তারা খেয়েদেয়ে চলে আসে। জীবনের মূলে আছে পেট আর...’
নোমান কথা শেষ করল না। আবার কাশল।
জিগ্যেস করলাম, ‘তোর ঠান্ডা লেগেছে?’
‘ঢাকা শহরের ধুলো আর বাতাসের দূষণের কাছে মাস্ক হচ্ছে ত্যানা। নাকেমুখের ভেতর আড়াই কেজি ধুলো ঢুকেছে। আপনার বাড়ির রাস্তায় কনস্ট্রাকশন হচ্ছে। আওয়াজে বোঝেন না? যাওয়া-আসা তো করেন গাড়িতে।’
কথা না বাড়িয়ে বললাম, ‘ময়মনসিংহে সাহিত্য সম্মেলন হচ্ছে দুদিনের। আগামীকাল উদ্বোধন। তুই চল আমার সাথে।’
নোমান রাজি হলো। রাত সোয়া একটার সময় ফোন করে বলে, ‘ভাই প্রবল জ্বরে কাতর হয়ে গেছি। মুক্তাগাছার মন্ডা আমার ভাগ্যে নেই।’
একা এতটা পথ যাওয়া বিরক্তিকর। নিজের ওপর রাগ হচ্ছে। গতরাতেই আমার বোঝা উচিত ছিল নোমানের শরীর খারাপ। মামুনকে বললে সে আসত। দরকার হলে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে আসত।
‘আনিস কয়টা বাজে?’
যে ছেলেটি আমার গাড়ি চালাচ্ছে তার নাম আনিস। ২৮ বছর বয়স। অতিরিক্ত শুকনো শরীর। তার চেহারায় ভয় পাওয়া ভাব আছে। সে কি শুধু আমাকেই ভয় পায় নাকি সবাইকে ভয় পায় জানি না। অন্যদের ভয় পায় বলে মনে হয় না। কয়েক দিন দেখেছি আনিস গাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়ে অন্যগাড়ির ড্রাইভার কিংবা অটোরিকশা চালকের সঙ্গে ঝগড়া করছে,
‘ওই মিয়া চাপ দিলেন ক্যান?’
‘ডাইনে পিক-আপ ছিল।’
‘ডাইনে পিক-আপ দেখেন বামে গাড়ি দেখেন না? গাড়ি টান দেন। সামনে গিয়ে দাঁড়ান। গাড়ির সাথে গাড়ি লাগাই রাখবেন না।’

আনিস হম্বিতম্বি করতে থাকে। দেখে মনে হয় কিছুক্ষণের ভেতর ঘোসাঘুসি শুরু হবে। আর সেই মারামারি শুরু করবে আনিস। সে আমাকে না জানিয়ে গাড়ির ডিকির কালো ম্যাটের নিচে গজারির ডাল রেখে দিয়েছে। মনে হয় মারামারির প্রস্তুতি। আমাকে কেন সে ভয় পায় তার কোনো কারণ আবিষ্কার করতে পারিনি। আমার ঘড়ি হাতে দেওয়ার অভ্যাস নেই। পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে সময় দেখতে আলসেমি লাগছে।
আনিস ঢোক গিলল। খাঁকারি দিয়ে গলা পরিষ্কার করল। কথা শুরুর আগে সবসময় সে খাঁকারি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে নেয়। আনিস চুপ করে আছে। সে কিছু বলল না।
ঘাড় উঁচু করে খেয়াল করলাম আনিসের হাতে ঘড়ি নেই। সেও আমার মতো ঘড়ি হাতে দেয় না। তাতে অসুবিধা নেই। গাড়িতে ঘড়ি আছে। আমার কথা হয়তো শুনতে পায়নি। মাথা সামনে ঝুঁকিয়ে বললাম, ‘আনিস, কয়টা বাজে দেখো তো।’
আনিস আবার খাঁকারি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে নিল। গাড়ির ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অতি নিচু আওয়াজে বলল, ‘স্যার, ছয়টা বাজে।’
চমকে উঠেছি। ফাজলামি করে নাকি এই ছেলে! কথা বলে সব সময় নিচু স্বরে। তার ফাজলামি করার সাহস থাকার কথা নয়। খানিকটা রাগ করে বললাম, ‘কয়টা বাজে বললে?’
‘গাড়ির ঘড়ি বন্ধ হয়ে আছে। ঠিক করতে হবে।’
‘ঠিক করো।’
‘চেষ্টা করেছিলাম। হয়নি। মেকানিকের কাছে নিতে হবে।’
গাড়ির ঘড়ি অনেকগুলো ফাংশনের সঙ্গে জড়িত। সেটা আলাদাভাবে বন্ধ হতে পারে বলে আমার ধারণা ছিল না। গাড়ির কিছু হলে ওয়ার্কশপে নিয়ে যাওয়ার ঝোঁক এদের থেকেই যায়।
বললাম, ‘মোবাইলে দেখো কয়টা বাজে।’
‘স্যার, মোবাইলে চার্জ নেই। মোবাইল বন্ধ।’
‘গাড়ি থেকে চার্জ দাও।’
‘চার্জারের পিন ভেঙে গেছে।’
‘তাহলে আর তুমি আছ কেন, আনিস? নেমে হাঁটা দাও। যেদিকে দুচোখ যায় চলে যাও।’
পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখি নয়টা বাজে। বিরক্তি মেজাজ খারাপে রূপ নিয়েছে। কার ওপর রাগ হচ্ছে বুঝতে পারছি না। নিজের ওপর রাগ করব নাকি সরকারের ওপর! রাস্তাতেই যদি কর্মঘণ্টা সব শেষ হয়ে যায় তাহলে দেশ উন্নত হবে কীভাবে? যানজটের ব্যাপারে সরকারের পরিকল্পনাহীনতা আর উদাসীনতা নোবেল পুরস্কার পাওয়ার যোগ্যতা রাখে।
আনিস গাড়ি থেকে নেমে গেল। সে কি সত্যি সত্যি যেদিকে দুচোখ যায় সেদিকে রওনা হয়ে যাবে নাকি! আমাকে ড্রাইভ করে ময়মনসিংহ যেতে হবে! ফিরতেও হবে ড্রাইভ করে!
‘স্যার, ডাব খান। শ্রীপুরের কচি ডাব। পানি বেশি আর মিষ্টি।’
আনিস ডাব কিনে এনেছে। শ্রীপুরের কাঁঠাল ভালো হয় জানি, এখানকার ডাব ভালো হয় এমন তথ্য আমার কাছে ছিল না।
ডাব মোটেও ভালো না। পানির স্বাদ নোনতা। স্ট্র ছিল বলে কিছুক্ষণ খাওয়া গেছে। ডাবে মুখ লাগিয়ে খেলে দুই ঢোকে পানি শেষ হয়ে যেত।
ডাবের খোলা ফেরত দিতে দিতে বললাম, ‘তুমি ডাব খেয়েছ, আনিস?’
‘জি স্যার।’
‘ডাব কত করে?’
‘৮০ টাকা চায়। ৬০ টাকা করে দিয়েছি।’
ডাবের পানি নোনতা হলেও ভালো লাগছে। কোনো অদ্ভুত কারণে আমার ভেতর কিছুক্ষণের আগের রাগ বা বিরক্ত ভাব নেই। টেনশন করার কোনো কারণ দেখছি না। রাস্তার এমন জটিল অবস্থায় আমার কিছু করার নেই। বাসা থেকে সময়মতো বের হয়েছি। সকাল ৬টায় বেরুলে ৯টার ভেতর পৌঁছে যেতে পারব একথা তারাই বলেছে। যারা সম্মেলন আয়োজন করেছে। তারা একজনকে সঙ্গে দিতে চেয়েছিল। রাজি হইনি। অপরিচিত কারও সঙ্গে জার্নি করতে পছন্দ করি না। তারা বলেছে, ময়মনসিংহ গিয়ে নাস্তা করব। স্থানীয় কয়েকজন বিশিষ্ট লেখক আসবেন কথা বলতে। তাদের সময় দিয়ে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করতে যাব।

গাড়ির সিট পকেটে কালো কাপড় দিয়ে বাঁধানো ডায়েরি। কালো কাপড়ে সাদা সুতোর সেলাই। ইচ্ছে হলে পথে পড়ব বলে সঙ্গে নিয়ে এসেছি। গতকাল অফিসে এক মেয়ে এসেছিল। ও আচ্ছা বলে নিই, আমি একটা জাতীয় দৈনিকে কাজ করি। ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। বেশ নামি পত্রিকা। সরকারের সমালোচনা করে পত্রিকার কাটতি বেড়েছে। মালিক অবশ্য নিয়মিত সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে খাতির রেখে চলেন। এতে সরকারের সমালোচনা করেও পত্রিকা চালাতে সমস্যা হয় না।
গাড়ির সিট পকেট থেকে ডায়েরিটা বের করে হাতে নিলাম। গতকাল অফিসে তুরি এসেছিল। সে ছবি আঁকে। চারুকলা ইন্সটিটিউট থেকে পাশ করেছে। এখন ছেলেমেয়েদের আর্ট শেখানোর ইশকুল চালায়। শিশুদের জন্য দুটো বই লিখেছি। সেই বইয়ের অলংকরণ করেছে তুরি। প্রকাশক তার আঁকা ছবিগুলো দেখে দিতে বলেছেন।
তুরিকে দেখে খানিকটা অন্যরকম মনে হয়েছে। আর দশজনের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলার মতো না। তার পরনে ছিল রঙিন প্রিন্টের ধুতি সালোয়ার আর ফতুয়া। বেশ রঙচঙা ওড়না পেঁচানো ছিল গলায়। কাঁধে লম্বা ফিতায় ঝোলানো কাপড়ের ব্যাগ। প্রখর বুদ্ধিদীপ্ত চোখ জোড়া বেশ গভীর আর বড়ো বড়ো। চোখের মণি গাঢ় আর ভরাট কালো কুচকুচে। চোখে মোটা করে কাজল দিয়েছে। কিসের যেন আকর্ষণ আছে মেয়েটির ভেতর। কিসের আকর্ষণ সেটা চট করে ধরতে পারিনি।
তুরির শরীরের গড়ন অনেকটা বেতের মতো ছিপছিপে। গায়ের রং ফরসা। শুধু ফরসা না। সবরি কলার মতো নমনীয় দীপ্তি আছে। যেমন কলাগাছের মাঝখানের পাতার থাকে। তুরিকে দেখে মনে হয়েছিল দিনেদুপুরে ঘরে জোছনার আলো ঢুকে পড়েছে।
বললাম, ‘তুরি, বসো।’
তুরি বসল। চোখ ঘুরিয়ে পুরো ঘর দেখল। ছিমছাম সাজানো গোছানো সম্পাদকের ঘর। চোখ দেখে বুঝলাম তুরির ভালো লেগেছে। সেখানে প্রশান্তি ছেয়ে আছে। অনেকগুলো বই আর পত্রিকা রাখা আছে টেবিলের ওপর। সেগুলো সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা হয়েছে। কাগজ, বইপত্র গুছিয়ে রাখতে পছন্দ করি।
জানতে চাইলাম, ‘ছবি এনেছ?’
‘জি।’
তুরি গলার আওয়াজ সুন্দর। মোলায়েম। শুনতে আরাম লাগে। সে ব্যাগ থেকে ছবি বের করে টেবিলে রাখল।
বললাম, ‘তুমি করে বলছি। বয়স হয়েছে। তোমাদের বয়সের ছেলেমেয়েদের আপনি বলতে ইচ্ছে করে না ’
‘আমি অনেক ছোটো। তুমি করেই বলবেন।’
ছবিগুলো দেখলাম। তুরি সুন্দর এঁকেছে। শুধু সুন্দর বললে কৃপণতা করা হবে। যথেষ্ট সুন্দর এঁকেছে। মুগ্ধ হওয়ার মতো। তুরির আঁকা ছবি দেখে মুগ্ধ হলাম। বললাম, ‘শিশুদের জন্য ছবি আঁকা ব্যাপারটা খুব সহজ নয়। এখানে এক্সপ্রেশন বড়ো ফ্যাক্টর। পাখির চোখ কথা বলবে। কিংবা ধরো হাতি বা বানরের অ্যাকশন।’
তুরি মনে হয় বুঝতে পারছে না তার আঁকা ছবিগুলো ঠিক হয়েছে কিনা। বলল, ‘শিশুরা যখন গল্প পড়ে তখন সে নিজের মতো করে কল্পনা করে। সেই কল্পনার সঙ্গে গল্পের ছবি মেলায়। শিশুদের বইয়ের অলংকরণের জন্য শিশু-মন বুঝতে পারা জরুরি।’
তুরি বলল, ‘আমি চেষ্টা করেছি।’
‘তোমার আঁকা ছবিগুলো হয়েছে অসাধারণ। অসম্ভব সুন্দর। তুমি কি মাইন্ড রিড করতে পারো? লেখার সময় যেমন ভেবেছিলাম একদম সেভাবেই এঁকেছ। কেমন করে বুঝলে তুমি, যে আমি ঠিক এটাই ভেবেছি?’
‘আপনার লেখা পড়লে মনে হয় ঘটনা সামনে ঘটছে। সবকিছু জীবন্ত। ছবিগুলো দেখতে পাচ্ছিলাম।’
‘খুব খুশি হয়েছি। এসো আমরা আমাদের এই আনন্দ সেলিব্রেট করি। তোমাকে স্পেশাল কফি খাওয়াই। দ্য মোস্ট এক্সপেন্সিভ কফি ইন দ্য ওয়ার্ল্ড। কোপি লুয়াক। এই কফির পেছনে ঘটনা আছে। সেই ঘটনা তোমাকে আরেকদিন বলব।’
ইউসুফকে ডেকে স্পেশাল কফির কথা বললাম। ইউসুফ সম্পাদকের পিয়ন। চা-কফি বানায়। কাগজপত্র আনানেওয়া, ফটোকপি করা ইত্যাদি কাজ ইউসুফ করে।
তুরি বলল, ‘ছবি আঁকা এখন আমার পেশা বলতে পারেন। টুকটাক লেখার চেষ্টা করি। সেটা নেশা।’
আগ্রহ বোধ করলাম। জিগ্যেস করলাম, ‘তুমি লেখো?’
‘একটা লেখা শুরু করেছি। অনেকটা নিজেকে নিয়ে। বলতে পারেন একেবারে আমার নিজের কথা।’
‘বাড়িতে কে কে আছেন?’
‘শ্বশুরবাড়িতে থাকি। বেশিদিন হয়নি আমার বিয়ে হয়েছে। আমি, আমার বর আর শাশুড়ি।’
‘তোমার হাজবেন্ড কী করে?’
‘সে হাউজ হাজবেন্ড। শাশুড়ির বাড়ি আছে। সেটার ভাড়া দিয়ে সংসার চলে।’
কিছু ভাবছিলাম হয়তো। চুপ করে ছিলাম। তুরি বলল, ‘আমার লেখা নোটবুক রেখে যাচ্ছি। আপনি পড়বেন। আমার জীবনকথা দিয়ে কীভাবে উপন্যাস লেখা যেতে পারে পড়ে বলবেন।’
‘দেখো মেয়ে, তোমার ভাবনা অন্যকেউ স্পর্শ করতে পারবে না। তুমি লিখলে যতটা জীবন্ত হবে, অন্য কেউ লিখলে সেটা হবে প্রাণহীন, কথার পিঠে কথা সাজানো।’
‘আমাকে শুধু বলবেন লেখাটা সাজাব কেমন করে। শুরুটা কীভাবে করব আর শেষ কোথায় হবে। শেষের কথা আগেই ভাবব কিনা। যদি ভাবি তাহলে সেখানে পৌঁছানোর জন্য কী করতে হবে—এসব।’
অন্যের লেখা পাণ্ডুলিপি কিংবা এমন ভাবনা পড়তে পছন্দ করি না। তবে তুরিকে উপেক্ষা করতে পারলাম না। নোটবুক রেখে দিলাম।

গাড়ির হর্ন বাজছে। তীব্র হর্ন। সবগুলো গাড়ি একসঙ্গে হর্ন দিচ্ছে। আনিস উঠে এসেছে গাড়িতে। গাড়ি ধীরলয়ে চলতে শুরু করেছে।
তীব্র হর্নের আওয়াজ কমে এসেছে। তবে কে কার আগে যেতে পারে এমন অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। তাতে বিশেষ সুবিধা হচ্ছে না। গাড়ি যাচ্ছে এক লেনে। ওভারটেক করার উপায় নেই।
একসময় গাড়ির হর্নের আওয়াজ থেমে এলো। গাড়ি স্বাভাবিক গতি পেয়েছে। এগিয়ে যাচ্ছে। নিজের ভেতরের অস্থিরতা চলে গেছে। প্রশান্তি বোধ হচ্ছে।
তুরির নোটবুক খুললাম। প্রথম পাতায় পাঁচ লাইনের কবিতা লেখা।

বেতের ফলের মতো নীলাভ ব্যথিত তোমার দুই চোখ
খুঁজেছি নক্ষত্রে আমি—কুয়াশার পাখনায়—
সন্ধ্যার নদীর জলে নামে যে আলোক
জোনাকির দেহ হতে—খুঁজেছি তোমারে সেইখানে
ধূসর পেঁচার মতো ডানা মেলে অঘ্রানের অন্ধকারে

পরপর দুবার পড়লাম কবিতাটা। জীবনানন্দ দাশের লেখা। কবিতা নিয়ে কিছু লেখা নেই। তুরি নোটবুকের শুরুতে কেন এই কবিতা লিখল বুঝতে পারছি না।
রাস্তা প্রায় ফাঁকা হয়ে এসেছে। গাড়ির চাপ একদম নেই। দুপাশে শালবন। শালগাছ কেটে বন উজাড় করে ফেলেছে। তবু মাঝেমাঝে ঘন হয়ে আসছে বন। মাথার ভেতর উচ্চারিত হচ্ছে প্রথম লাইন দুটো—

বেতের ফলের মতো নীলাভ ব্যথিত তোমার দুই চোখ
খুঁজেছি নক্ষত্রে আমি—কুয়াশার পাখনায়—

ঘুরেফিরে মাথার ভেতর অনুরণিত হয়ে যাচ্ছে। আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে। চোখের পাতা ভারী হয়ে এসেছে। সিটের পেছন দিকে মাথা হেলিয়ে দিলাম। আমিও বুঝি খুঁজে ফিরছি বেতের ফলের মতো নীলাভ ব্যথিত দুই চোখ! যেমন খুঁজে ফিরেছিলেন জীবনানন্দ দাশ। হয়তো তুরিও একইভাবে খুঁজে ফিরছে। কবির মতো খুঁজেছি নক্ষত্রে আমি—কুয়াশার পাখনায়—। তবে কি তুরিও!
সবকিছু ছাপিয়ে দুটো শব্দ আটকে গেল মাথায়—অঘ্রানের অন্ধকারে! যেখানে থমকে গেছি আমি। হতে পারে তুরিও থেমে আছে আমার মতো অঘ্রানের অন্ধকারে।
আলতোভাবে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। রুশিয়ার কথা মনে পড়ছে। আমার কিশোর বেলার প্রেম।

(চলবে)

Header Ad

‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা

ফাইল ছবি

জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, জুলাই-আগস্ট ছাত্র জনতার বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করেছি। এ নতুন দেশে আমাদের দায়িত্ব সকল মানুষকে এক বৃহত্তর পরিবারের বন্ধনে আবদ্ধ করা। কেউ কারো উপরে না, আবার কেউ কারো নিচেও না, এই ধারণা আমরা আমাদের জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।

তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ ছাত্র-জনতার সাহস ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে সম্প্রতি আমরা অর্জন করেছি, সেটাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যৎ গড়তে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ, আহত এবং জীবিত ছাত্র-জনতার কাছে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে চাই। যে সুযোগ তারা আমাদের দিয়েছে, তার মাধ্যমে আমাদের দেশকে পৃথিবীর সামনে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী দেশে পরিণত করতে আমরা শপথ নিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, ছাত্র আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করে যারা দেশ গঠনের সুযোগ করে দিয়েছে জাতি তাদের সারা জীবন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।

বক্তব্য শেষে সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা। পরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

Header Ad

নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু

ছবি: সংগৃহীত

নওগাঁ শহরে যানযট নিরসন ও শৃঙ্খলা ফেরাতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, পৌর কর্তৃপক্ষ ও রিকশা মালিক-শ্রমিকদের যৌথ উদ্যোগে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। এতে শহরে শৃঙ্খলা ফিরবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) অভিযানের উদ্বোধন করেন নওগাঁ পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকারের উপ পরিচালক টি.এম.এ মমিন। এ সময় নওগাঁ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জিয়া উদ্দিন, নওগাঁ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন, নওগাঁ জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আফজাল হোসেন ও অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

অভিযান শুরুর পর থেকেই শহরের বরুনকান্দি, মশরপুর, তাজের মোড় ও কালীতলাসহ মোট ৮ টি প্রবেশদ্বারে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। চেক পোষ্টগুলোতে ২ জন পুলিশ সদস্য, ২ জন ছাত্র সমন্বয়ক, ৪ জন রোভার স্কাউট সদস্য ও ২ জন রিকশা মালিক শ্রমিক প্রতিনিধিসহ মোট ১২ জন করে কাজ করছেন।

পৌর প্রশাসক জানান, নওগাঁ শহরে বৈধ যানবাহনের সংখ্যা ৪ হাজার। কিন্তু প্রতিদিন পার্শবতী বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ১০ হাজার রিকশা, ব্যাটারী চালিত অটো রিকশা ও ইজিবাইক শহরে প্রবেশ করে। এতে তীব্র যানযট ও জন মানুষের ভোগান্তি তৈরী হয়। এই দূর্ভোগ লাঘোবে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল ও পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিনের দিক নির্দেশনায় যানবাহন নিয়ন্ত্রনসহ বিশেষ অভিযানের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। বৈধ চালকদের চিহ্নিত করতে তাদের মাঝে পরিধেয় বিশেষ ধরনের জ্যাকেট প্রদান করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

নওগাঁর পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিন বলেন, নওগাঁ শহরের যানযট দীর্ঘদিনের সমস্যা। পরিকল্পিত ভাবে এই সমস্যা দূর করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের উদ্যোগে পৌর কর্তৃপক্ষ ও রিকশা মালিক শ্রমিক নেতৃবৃন্দদের সমন্বয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে স্থানীয় বাসিন্দা ও বিভিন্ন ষ্টেক হোল্ডারদের পরামর্শ নিয়ে একটি কর্ম পরিকল্পনা গ্রহক করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, অভিযান সফল ভাবে বাস্তবায়ন হলে শহরে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। জনগন এর সুফল পাবেন। সকলকে এই কার্যক্রমে সহযোগিতা প্রদানের আহবান জানান তিনি।

Header Ad

২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচন হতে পারে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত

বক্তব্য রাখছেন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে ২০২৬ সালের মাঝামাঝি নির্বাচন হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ অন্তর্বর্তী সরকারের নৌ পরিবহন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ডক্টর এম সাখাওয়াত হোসেন।

সম্প্রতি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব লর্ডসে মানবাধিকার সংগঠন ‘ভয়েস ফর বাংলাদেশ’ আয়োজিত সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

‘ডিসকাশন অন ডেমোক্রেটিক কলাপ্স অ্যান্ড রিবিল্ডিং অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই সম্মেলনে হাউস অব লর্ডসের সিনিয়র সদস্য আলেক্সান্ডার চার্লস কার্লাইল কিউসি সভাপতিত্ব করেন। ভয়েস ফর বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্রডকাস্টার আতাউল্লাহ ফারুকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এম সাখাওয়াত হোসেন।

সম্মেলেনে সাবেক ব্রিটিশ মন্ত্রী পল স্কালি বলেন, বাংলাদেশে যে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে, তার সঠিক তদন্ত শেষে যথাযথ বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে করে এ ধরনের ঘটনার পুররাবৃত্তি না হয়।

লর্ড হোসাইন বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সব সংস্কার এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে সব ধরনের সহায়তা পাবে।

সম্মেলনে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান লেবার দলীয় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি রুপা হক।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা
নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু
২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচন হতে পারে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত
সেনাকুঞ্জে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে খালেদা জিয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ৫ জনকে রোবটিক হাত উপহার
সেনাকুঞ্জের পথে খালেদা জিয়া
সুযোগ পেলে শেখ হাসিনার পক্ষে মামলায় লড়ব: জেড আই খান পান্না
নির্বাচন কমিশন গঠন, সিইসি হলেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব নাসির উদ্দীন
ডিএনএ টেস্টের ফলাফল: ভিনিসিয়ুসের পূর্বপুরুষ ছিলেন ক্যামেরুনের
জামিন পেলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান
বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে আসা সেই শাহজাহান ওমর গ্রেপ্তার
মিরপুর ও মহাখালীতে অটোরিকশা চালকদের সেনাবাহিনীর ধাওয়া
‘শেখ হাসিনা এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’, এমন কথা বলেননি ট্রাম্প
লেবাননে ৮ শতাধিক ইসরায়েলি সেনা নিহত
ভারতে সাজাভোগ শেষে দেশে ফিরল ২৪ বাংলাদেশি কিশোর-কিশোরী
ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে অবরোধ করে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের বিক্ষোভ
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ৮৮ ফিলিস্তিনি নিহত
সাবেক এমপি শাহজাহান ওমরের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর
১২ বছর পর সেনাকুঞ্জে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া
ধামরাইয়ে শ্রমিকবাহী বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ৪