আজও ভালোবাসা দিবস
আজও ভালোবাসা দিবস। ছবি: সংগৃহীত
সময়টা পঞ্চম শতাব্দী। ঘটনাস্থল যুক্তরাজ্যের ওয়েলস। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, মধ্য ওয়েলসের ছোট্ট শহর ব্রেকন। তৎকালীন আইরিশ রাজা ব্রাইকানের নিবাস। রাজার ছিল ৩৬ কন্যা। তাঁদেরই একজন ডোয়াইনওয়েন।
অসম প্রেমের চিরায়ত সূত্র মেনেই কি না কে জানে, উত্তর ওয়েলসের এক অখ্যাত যুবকের প্রেম পড়লেন রাজকন্যা ডোয়াইনওয়েন। যুবকের নাম মেলন ডেফোড্রল। স্বাভাবিকভাবেই প্রেমে বাধা হয়ে দাঁড়ালেন রাজা। অন্যত্র মেয়ের বিয়ে ঠিক করলেন। বিয়ের সংবাদ পৌঁছে গেল মেলনের কাছে। প্রত্যাখ্যাত প্রেমিক ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠলেন। তাঁকে বিয়ে করার জন্য প্রেমিকা ডোয়াইনওয়েনকে চাপ দিতে লাগলেন, না হলে নির্যাতনের ভয়ও দেখালেন। প্রেমিকের এহেন আচরণে ভয় পেয়ে গেলেন ডোয়াইনওয়েন। বিমর্ষ, বেদনার্ত মানুষটা নিভৃতে একটু কাঁদার জন্য জঙ্গলে পালিয়ে গেলেন। ভগ্নহৃদয়ে ঈশ্বরকে ডাকতে লাগলেন।
হৃদয়-ভাঙা প্রেমিকার প্রার্থনায় ঈশ্বর কি সাড়া না দিয়ে পারেন! দেবদূত পাঠালেন ডোয়াইনওয়েনের কাছে। মেলন ডেফোড্রলকে একটা বরফখণ্ডে পরিণত করা হলো। ডোয়াইনওয়েনের অশান্ত হৃদয় শান্ত হলো। ডোয়াইনওয়েনকে আরও তিনটি ইচ্ছে পূরণের সুযোগ দিলেন দেবদূত। একে একে ইচ্ছেগুলো জানালেন ডোয়াইনওয়েন। প্রথমত, মেলনের কাছ থেকে মুক্তি। দ্বিতীয়ত, কখনো বিয়ে না করা। তৃতীয়ত, প্রেমে ব্যর্থ বিপর্যস্ত মানুষকে সাহায্য করার ক্ষমতা।
সব ইচ্ছাই পূরণ করা হলো। মেলন অদৃশ্য হয়ে গেলেন। চিরকুমারী হয়ে ল্যান্ডউইন গির্জায় সন্ন্যাসীনী হিসেবে বাস করতে লাগলেন ডোয়াইনওয়েন। জনমানসে তিনি হয়ে উঠলেন ভালোবাসার রক্ষাকর্ত্রী, মানুষের সমস্যার পরামর্শদানকারী ‘অ্যাগোনি আন্ট’।
ওয়েলসসহ গোটা যুক্তরাজ্যজুড়ে আজও ছড়িয়ে আছে এই জনশ্রুতি। যুক্তরাজ্যের লেখিকা শান লুইস তাঁর উপন্যাসে তুলে এনেছেন এই গল্প। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সে দেশের মানুষ ডোয়াইনওয়েনকে প্রেমের পবিত্র সাধ্বী হিসেবে শ্রদ্ধা করে আসছেন।
অসম প্রেম, বেদনা, ব্যর্থতা আর ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ওয়েলসে প্রতি বছর ২৫ জানুয়ারি পালিত হয় সেন্ট ডোয়াইনওয়েনস ডে। দিবসটি তাঁদের কাছে ভ্যালেন্টাইন দিবসের চেয়েও অধিক সমাদৃত। বলা যেতে পারে, এটিই সে দেশের ‘ভালোবাসা দিবস।'