শীতে ত্বক সুস্থ রাখতে যেসব খাবারের বিষয়ে খেয়াল রাখবেন
ছবি সংগৃহিত
ত্বকের সুস্থতা শুধু ত্বকের যত্নে নয় প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসের ওপরও নির্ভর করে। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে বাড়িয়ে তোলা ছাড়াও ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করে। কিছু খাবার এতোটাই স্বাস্থ্যকর যা ত্বকের স্বাস্থ্যের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। এসব খাবার বলিরেখা কমিয়ে ত্বক মসৃণ করে। আর শীত মৌসুমে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলাটা বেশি দরকার। কারণ শীতে ত্বক ফ্যাকাশে ও শুষ্ক হয়ে যায়। এমনকি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের পরেও শুষ্ক দেখায়।
হিমেল হাওয়া বইছে, আসছে শীত। তাই আগাম প্রস্তুতি দরকার ত্বকের জন্য। আমাদের ত্বক অত্যন্ত সংবেদনশীল। আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে ত্বকে বিভিন্ন পরিবর্তন দেখা যায়। এ ধরনের পরিবর্তন কোনো রোগের জন্য নয়, বরং আমাদের শরীরকে আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সাহায্য করে। শীতকালে শরীরকে উষ্ণ রাখার জন্য ত্বক খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলে যাঁদের ত্বক শীতল আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেন না, তাঁদের ত্বকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।
১. বেশি বেশি পানি খান
আমাদের প্রতিদিনের খাবারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পানি। পানি আমাদের শরীর এবং ত্বকে হাইড্রেশনের প্রধান উৎস। পর্যাপ্ত পানি পান করলে ত্বক নরম, মসৃণ এবং কোমল থাকে। কিন্তু, পর্যাপ্ত পানি পানের অভাবে ত্বকে শুষ্কতা, বলিরেখা এবং দাগের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি কম পানি পান শরীর ও ত্বককে ডিহাইড্রেটেড করে তোলে। যার ফলে ক্লান্তি বাড়ে এবং যে কাউকে বয়স্ক দেখাতে পারে।
২. গাজর
গাজর বিটা-ক্যারোটিন এবং লাইকোপেন সমৃদ্ধ। যা ত্বককে ইউভি রশ্মির ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। যদিও শীতকালে সূর্যের আলো খুব প্রখর থাকে না। তবুও আমাদের চারপাশে ইউভি রশ্মির বিভিন্ন উৎস থাকে। গাজরের ভিটামিন এ, পটাসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শুষ্ক ত্বক এবং অমসৃণ ত্বকের টোন সমস্যা দূর করে।
৩. ত্বকের আর্দ্রতায় লোশন বা তেল
শীতের শুরুতে ত্বক শুষ্ক হয়ে ফেটে যায়, ঠোঁট ফেটে যায়, হাত ও পা ফেটে যেতে পারে, ফলে চুলকানিও হতে পারে। তাই ত্বক শুষ্ক হলে পেট্রোলিয়াম জেলি, অলিভ অয়েল, বডি লোশন ব্যবহার করা যায়। তবে সবচেয়ে উপকারী হলো প্রাকৃতিক অলিভ অয়েল, এতে কোনো ধরনের রাসায়নিক উপাদান মিশ্রিত থাকে না। গোসলের পর অলিভ অয়েল ব্যবহার করা ভালো। তবে শর্ষের তেল ব্যবহার করা যাবে না। চাইলে অনেক সময় বিশুদ্ধ নারকেল তেল ব্যবহার করা যায়। শীতকালে যেহেতু পানি কম ব্যবহার করা হয়, সে কারণে খোসপাঁচড়া বা চুলকানির প্রকোপ বাড়ে, যা অত্যন্ত ছোঁয়াচে। দীর্ঘদিন চুলকানি থাকলে ত্বকে বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ হয় এবং জীবাণু সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই এ ধরনের চুলকানি হলে দেরি না করে চর্মরোগ–বিশেষজ্ঞের চিকিৎসা নেওয়া দরকার, যাতে কোনো ধরনের জটিলতা না হয়।
৪. ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড
আখরোট, স্যামন এবং ম্যাকরেলের মতো মাছে পাওয়া ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বককে পুষ্ট রাখতে সহায়তা করে। এর পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ত্বকের প্রাকৃতিক তেল উৎপাদনে সহায়তা করে। যা ত্বক হাইড্রেটেড রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৫. সাইট্রাস ফল
শীতকালে প্রচুর পরিমাণে তাজা রসালো এবং সতেজ সাইট্রাস ফল যেমন- কমলা, মাল্টা, আঙ্গুর পাওয়া যায়। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এসব ফল শীতের জন্য সুপারফুড হতে পারে। এগুলোর কিছু সাধারণ সুবিধা হলো- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং এর ফাইবার হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
৬. মিষ্টি আলু
শীত মৌসুমে বাজারে মিষ্টি আলু পাওয়া যায়। মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। এতে থাকা উচ্চ বিটা-ক্যারোটিন কেবল ত্বককে পুষ্টিই দেয় না বরং ত্বককে ভিতর থেকে উজ্জ্বল করে তোলে। মিষ্টি আলু রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। এছাড়া, কিছু কিছু অসুস্থতা থেকে শরীরকে রক্ষা করতে মিষ্টি আলু অপরিহার্য।
৭. সবুজ শাক- সবজি
শীতে নানা ধরনের সবুজ শাক পাওয়া যায়। এর মধ্যে মেথি শাক, পালং শাক, সরিষা শাক উল্লেখযোগ্য। এসব শাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরী উপাদান থাকে। এসব শাকে ভিটামিন সিয়ের মতো থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সেল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া রোধ করে। সেই সঙ্গে ত্বক মলিন হয়ে যাওয়া ও ত্বকের বলিরেখা দূর করে। এছাড়া ভিটামিন সি ত্বকের উপকারী কোলাজেন তৈরিতেও ভূমিকা রাখে।
যা পরিহার করবেন
১. অতিরিক্ত চিনি দেওয়া খাবার বা মিষ্টি খাবার শরীরের মেদ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ত্বক শুষ্ক করে তোলে। এর ফলে কপালে, চোখের কোনায় বলিরেখা দেখা দিতে পারে।
২. অতিরিক্ত মাত্রায় লবণ খেলে মুখ ফোলা দেখাতে পারে, থুতনির নিচে মেদ বাড়তে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ন্যাশনাল হার্ট, লাং অ্যান্ড ব্লাড অ্যাসোসিয়েশনের গবেষকদের মতে, প্রতিদিন ৫০০ মিলিগ্রামের বেশি লবণ খেলে ফুলে যেতে পারে চোখের কোল। ফলে মুখ ফোলা দেখাতে পারে।
৩. দুগ্ধজাত খাবার অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে চোখের কোণ ফুলে উঠতে পারে, বাড়তে পারে থুতনির নিচে মেদ। এ ছাড়া ব্ল্যাকহেডসের সমস্যা বাড়তে পারে যা ত্বকের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
৪. গ্লুটেন সমৃদ্ধ খাবারদাবার (যেমন পাউরুটি) অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে ত্বকের প্রকৃতি বদলে যেতে পারে। গালে, কপালে ব্রণ, ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। গ্লুটেন অ্যালার্জির ফলে ত্বকে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে।
৫. অ্যালকোহল বা মদ্যপানের ফলে ত্বকে বলিরেখা দেখা দিতে পারে। চোখ আর মুখের ফোলা ভাব বেড়ে যেতে পারে। ডবল চিন বা থুতনির নিচে অতিরিক্ত মেদও জমতে পারে।
প্রকৃতিতে আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে আমাদের খাদ্যাভ্যাসেও কিছু পরিবর্তন দরকারি। শীতের সময় শুষ্ক ত্বক এবং চুল পড়াও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই এসময়ে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খেয়ে এসব সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে।