প্রেমিকার হাত ধরে রাস্তায় হাঁটলেই শাস্তি হয় যে দেশে
ছবি সংগৃহিত
না, সতেরশ কিংবা আঠারশ শতাব্দীর কোনো আইনের কথা বলছি না। বলছি এমন এক দেশের কথা যেখানে এখনো এই আইন বহাল রয়েছে। যেখানে আপনি আপনার প্রেমিকার হাত ধরতে পারবেন না। কোনো বৃষ্টির দিনে দুজনে হাতে হাত রেখে বৃষ্টির দিনে পারবেন না। একবিংশ শতাব্দীতে এসে এমন কথা বিশ্বাস করা সত্যিই কঠিন।
তবে এমনই এক অদ্ভুত আইন আছে এশিয়ারই একটি দেশে। যেটি বর্তমানে বিশ্বের উদ্ভট দেশের মধ্যে অন্যতম। এমনকি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডেও নাম উঠেছে এর। তবে সেটা এই অদ্ভুত আইনের কারণে নয়। এই দেশে শুধু যে প্রেমিকার হাত ধরে হাঁটা নিষেধ তা নয়, কালো রঙের গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হলেও রক্ষে নেই। দিতে হয় বিপুল জরিমানা। সঙ্গে উপরি পাওনা হাজতবাস!
মধ্য এশিয়ার তুর্কমেনিস্তানের আইন-কানুন সত্যিই সর্বনেশে। এক সময় সোভিয়েত রাশিয়ার অন্তর্গত ছিল এই দেশ। ১৯৯১-তে রাশিয়া ভেঙে যাওয়ার সময় স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে কাস্পিয়ান সাগরের তীরের এই দেশ। যার রাজধানী হল আশগাবাত।
কয়েক বছর আগেই গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম ওঠে তুর্কমেনিস্তানের রাজধানীর। সেখানকার অধিকাংশ বাড়ি সাদা মার্বেল পাথরে তৈরি হওয়ায় এই তকমা পেয়েছে আশগাবাত। বিশ্বের সেরা সাজানো-গোছানো শহর হিসেবেও খ্যাতি রয়েছে এর।
তুর্কমেনিস্তানের আইন অনুযায়ী রাজধানীর সাদা মার্বেল পাথরের তৈরি বাড়িতে কাউকে থাকতে দেওয়া হয় না। বাড়িগুলো সরকারি বা বেসরকারি অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এমনটাও নয়। শহরে অতিরিক্ত জনসমাগম হলে বাড়বে দূষণ। সেই যুক্তিতে বাড়িতে বসবাস বা অফিস খোলার অনুমতি বাতিল করেছে প্রশাসন। এজন্য এই শহরকে দেখে মনে হবে হয়তো পরিত্যক্ত কোনো শহর। এজন্য একে ‘মৃতদের শহর’ও বলা হয়। এখানে লোকজন দেখা একেবারেই অসম্ভব।
সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য আশগাবাতে রয়েছে ঝরনার সবচেয়ে বড় কমপ্লেক্স। এছাড়া দুনিয়ার সবচেয়ে লম্বা পতাকা দণ্ডও রয়েছে এই শহরে। তারপরও খুব কম পর্যটকই এই দেশটিতে বেড়াতে আসেন। এর পিছনে রয়েছে এদেশের কঠোর ভিসানীতি। শুধু একটি লাইসেন্সযুক্ত গাইডেড ট্যুর দিয়ে যেতে পারবেন এ দেশে। প্রতি বছর ৭ হাজারেরও কম ভ্রমণকারীরা যান সেখানে।
সোভিয়েত রাশিয়া ভেঙে স্বাধীন তুর্কমেনিস্তান তৈরির পর সেদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট হন সাপারমুরাত নিয়াজভ। দেশ থেকে রুশ প্রভাব পুরোপুরি মুছে ফেলতে একাধিক পদক্ষেপ করেন তিনি। যার মধ্যে অন্যতম ছিল রুশ নামগুলো মুছে ফেলা। ক্ষমতায় এসেই রাজধানী আশগাবাতে সোনায় মোড়া নিজের মূর্তি তৈরি করেন প্রেসিডেন্ট নিয়াজভ। এর জন্য খরচ হয়েছিল কোটি কোটি টাকা। যা প্রভাব ফেলেছিল তুর্কমেনিস্তানের অর্থনীতিতে। যদিও বিষয়টি গ্রাহ্যই করেননি তৎকালীন প্রেসিডেন্ট।
বর্তমানে তুর্কমেনিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন সেরদার বেরদিমুহাম্মদ। ক্ষমতায় বসার পরই নারী-পুরুষের প্রকাশ্য়ে মেলামেশা বন্ধ করতে কড়া আইন পাশ করেন তিনি। এর পর থেকেই প্রকাশ্য়ে কোনো নারীর হাত ধরে ঘোরা নিষিদ্ধ হয়েছে মধ্য এশিয়ার এই দেশে। এমনকি পুরুষদের লম্বা চুল বা দাড়ি রাখা নিষিদ্ধ করেছেন, অপেরা নিষিদ্ধ করেছেন, শহর থেকে কুকুরকে তাড়িয়ে দিয়েছেন এবং এমনকি বছরের দিন ও মাসের নাম পরিবর্তন করেছেন তার পরিবারের সদস্যদের নামে।
বেরদিমুহাম্মদের বাবাও ছিলেন তুর্কমেনিস্তানের প্রেসিডেন্ট। কালো রং একদম সহ্য করতে পারতেন না তিনি। ফলে রাস্তায় কালো রঙের গাড়ি চলাচল বন্ধ করতে নতুন আইন পাশ করেন তিনি। রাতারাতি সব কালো রঙের গাড়ি বাতিল হওয়ায় বেজায় বিপাকে পড়েন গাড়ি মালিকরা। বিপুল টাকা খরচ করে গাড়ির রং বদলাতে হয়েছিল তাদের।