শীতে ঠোট ফাটার কারন ও রোধের উপায়
ছবি সংগৃহিত
শীতের সময় ঘনিয়ে আসছে। এখন থেকেই ঠোঁট শুকিয়ে চামড়ায় টান পড়ছে। মুখে হালকা ময়েশ্চারাইজার মাখতেই হচ্ছে। আর কয়েকদিন পর থেকে বেছে নিতে হবে ভারী ময়েশ্চারাইজার। কিন্তু শুধু লিপ বাম ব্যবহার করে ঠোঁট ফাটার সমস্যাকে এড়ানো যায় না।
শীতের শুষ্ক ও ঠাণ্ডা আবহাওয়ার প্রভাব শুধু শরীরের ওপরই পড়ে না,ঠোঁটের ওপরও পড়ে ভীষণভাবে। এতে এ সময় নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবারই ঠোঁট শুষ্ক থাকে এবং ঠোঁট ফাটতে দেখা যায়। অনেকের আবার শুধু শীতকালই নয়, সারা বছরে ঠোঁট শুষ্ক থাকে ও ফাটে।
ঠোঁট ফেটে যাওয়া কোনো হতাশাজনক ঘটনা নয়। তবে অনেকেই ঠোঁট ফেটে যাওয়াকে স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারে না। তারা ডাক্তারি পরামর্শ নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলে। আবার অনেকেই ঠোঁট ফেটে যাওয়া বন্ধ করতে ঠোঁটের আলাদা যত্ন নিতে শুরু করেন, যার বেশীরভাগই বিফলে যায়।
সিবেসিয়াস গ্রন্থি(Sebaceous glands) নামক আণুবীক্ষণিক এক্সক্রনিক গ্রন্থি রয়েছে আমাদের ত্বকে বা চামড়ায়। যা থেকে একধরনের তৈলাক্ত(মেদ) বা মোমের মত রস ক্ষরিত হয় যাকে বলে সিবাম(sebum), যা আমাদের ঘামের সাথে মিশে পুরো চামড়ায় ছড়িয়ে যায় এবং চামড়াকে মসৃণ ও জলরোধী রাখে। এর ফলে চামড়া ফাটে না।
কিন্তু শীতকালে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমে যাবার ফলে আমাদের ঘাম কম হয়। যার কারনে সিবেসিয়াস গ্রন্থি থেকে বেরিয়ে আসা তেলতেলে পদার্থ শরীরের চামড়ায় ঠিকমতো ছড়িয়ে পড়তে পারে না। শরীরের শুকনো জায়গাগুলো তখন কুঁচকে গিয়ে ফেটে যায়। শরীরের অন্য জায়গার তুলনায় আমাদের ঠোঁটের চামড়া পাতলা। তাছাড়া ঠোঁটের অবস্থান নাকের ঠিক নিচে থাকার জন্য নিশ্বাসের সাথে বেরিয়ে আসা গরম বাতাস ঠোঁট দুটোকে আরও শুকিয়ে দেয়। যার কারনে শরীরের অন্য জায়গার তুলনায় ঠোঁট বেশী ফাটে।
ঠোঁট ফাটার অন্যতম আরেকটি কারণ হচ্ছে ঠোঁট ও শরীরে আর্দ্রতার ভারসাম্যের অভাব। শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকে বলে ঠোঁট আর্দ্রতা হারায় খুব তাড়াতাড়ি। খেয়াল করে দেখবেন, কোনো কারণে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়লে যে কোনো ঋতুতেই ঠোঁট ফেটে থাকে আমাদের। শীতের আগের মৌসুমী ঠান্ডা হাওয়া ছাড়াও আরও কিছু বিষয় আছে, যা ঠোঁট ফাটাকে ত্বরান্বিত করে বা বাড়িয়ে দেয়। যেমন বারবার জিব দিয়ে ঠোঁট চাটার অভ্যেস, পুষ্টিহীনতা ও ভিটামিনের অভাব, প্রখর সূর্যের তাপ ও পানিশূন্যতা, বিভিন্ন প্রকার ওষুধ সেবন।
শীত মৌসুমে ঠোঁট ফাটার সমস্যা কীভাবে এড়াবেন?
১) বারবার ঠোঁটে জিভ লাগাবেন না। এটি আপনার ঠোঁটের আর্দ্রতা কেড়ে নেয় এবং ঠোঁটকে শুষ্ক করে দেয়। তাছাড়া সালভিয়ার মধ্যে যে এনজাইম রয়েছে, যা খাদ্য হজমের জন্য। কিন্তু এটি ঠোঁটের সংস্পর্শে এলে অস্বস্তি তৈরি করে।
২) এমন কোনো লিপ বাম ব্যবহার করবেন না, যার মধ্যে কর্পূর, ইউক্যালিপটাস ও মেনথলের মতো উপাদান রয়েছে। এই ধরনের উপাদানগুলো ঠোঁটকে শুষ্ক করে দেয় এবং ঠোঁটের অবস্থা আরও খারাপ করে দেয়।
৩) ফাটা ঠোঁটের যত্ন না নিলে এখান থেকে সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। তাই শীত পড়ার আগে থেকেই ঠোঁটের যত্ন নিন। ঠোঁট অন্যান্য অংশের ত্বকের তুলনায় দ্রুত শুকিয়ে যায়। তাই ঠোঁটে সকাল-বিকেল লিপ বাম লাগিয়ে রাখুন।
৪) পেট্রোলিয়াম জেল, এসেনশিয়াল অয়েল বা গ্লিসারিন রয়েছে, এমন লিপ বাম ব্যবহার করুন। এই সব উপাদানগুলো আপনার ঠোঁটকে দীর্ঘক্ষণ সুরক্ষা প্রদান করবে। পাশাপাশি ঠোঁটের আর্দ্রতা বজায় রাখবে।
৫) ঠোঁটে সানস্ক্রিন লাগাতে ভুলবেন না। প্রতিদিন ঠোঁটে সানস্ক্রিন লাগান। এতে ঠোঁট গোলাপি আভা চিরকাল বজায় রাখতে পারবেন।
৬) শীতকালে খুব বেশি জল তেষ্টা পায় না। কিন্তু ঠোঁটকে শুষ্কতার হাত থেকে রক্ষা করতে গেলে আপনাকে হাইড্রেটেড থাকতে হবে। তবেই ফাটা ঠোঁটের সমস্যা রুখতে পারবেন।
৭) ঠোঁটের সৌন্দর্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর ডায়েটও জরুরি। রোজকার খাবার পাতে ভিটামিন, মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার রাখুন। বিশেষত, ভিটামিন এ স্বাস্থ্যকর ঠোঁট গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
৮) ঠোঁট থেকে মরা কোষ দূর করা জরুরি। তবেই, শুষ্ক আবহাওয়ার মধ্যেও ঠোঁট থাকবে নরম ও কোমল। নির্দিষ্ট সময় অন্তর ঠোঁট এক্সফোলিয়েট করুন। চিনির সঙ্গে অল্প মধু মিশিয়ে ঠোঁটের ওপর ঘষুন। খুব বেশি চাপ দেবেন না। এরপর ঈষদুষ্ণ গরম জল দিয়ে ঠোঁট ধুয়ে ফেলুন। তারপর অবশ্যই লিপ বাম লাগিয়ে নিন। এতে ফাটা ঠোঁটের সমস্যা সহজেই এড়াতে পারবেন।