জ্বালানি খরচ কমাবেন যেভাবে
দ্রব্যমূল্যের ঘোড়া ছুটছে লাগামহীন। জনগণের নাভিশ্বাস উঠছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলেছে, তবে সেই তুলনায় বাড়ছে না কর্মজীবীদের বেতন-ভাতা ও পারিশ্রমিক। বিপাকে পড়েছেন মানুষ। সংসারে হিসাব সামলাতে গিয়ে খাবি খাচ্ছে জনগণ। এরই মধ্যে সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে প্রায় ৫১ শতাংশ। এ যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। তবে জীবন তো থেমে থাকবে না। যারা ব্যক্তিগত পরিবহন ব্যবহার করেন, তাদের অবশ্যই জ্বালানি খরচ কমানো প্রয়োজন। জ্বালানি খরচ কমাতে আবার অনেকেই গাড়িকে সিএনজিচালিত গাড়িতে রূপান্তর করে ফেলেন। তবে সেই সিএনজি হোক বা তেল জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি সেদিকেও প্রভাব ফেলছে। এজন্য গাড়ির জ্বালানি খরচ কমানোর কিছু কৌশল জেনে নিই-
* গাড়ি সব সময় স্বাভাবিক গতিতে চালান। খালি রাস্তা পেয়ে ইচ্ছে মতো গতি তুলে গাড়ি চালাবেন না। এতে গাড়ির ইঞ্জিন ও জ্বালানি উভয়ের ক্ষতি হয়। ইঞ্জিনের উপর চাপ বেশি পড়ায় জ্বালানি খরচ বেশি হবে। তাই এত তাড়াহুড়ো না করে একটা গতিসীমা ঠিক করে গাড়ি চালান।
* অনেকেই জানেন না শুধু ইঞ্জিনই নয়, গাড়ির টায়ার তেল খায়! গাড়ির টায়ারেরও তেল খাওয়ার ক্ষমতা আছে। আর এই ক্ষমতা গাড়ির টায়ার তখনি পায় যখন আপনার গাড়ির টায়ারের চাপ ঠিক থাকে না। ইনফ্ল্যাটেড টায়ার গাড়ির জ্বালানি খরচ বাড়ার একটি অন্যতম কারণ। ইনফ্ল্যাটেড টায়ার বা গাড়ির টায়ার চাপ কম থাকলে সেটি রাস্তায় স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারে না। ফলে ইঞ্জিনের উপর চাপ পড়ে। আর ইঞ্জিনের উপর চাপ পড়লেই সে গাড়ির জ্বালানি বেশি খরচ করে ফেলে। ফলে ইনফ্ল্যাটেড টায়ারের কারণে খরচ হচ্ছে অতিরিক্ত জ্বালানি। গাড়ির টায়ারের প্রেশার সবসময় ঠিক রাখুন। মাস শেষে দেখবেন, কম ফুয়েলেই গাড়ি চলেছে আগের চাইতে বেশি পথ। অর্থাৎ মাইলেজ পাবেন বেশি।
* গাড়ির এয়ার ফিল্টার পরিচ্ছন্ন রাখুন। এতে জ্বালানি খরচ অনেকাংশেই কম হয়। অপরিচ্ছন্ন এয়ার ফিল্টারের কারণে ইঞ্জিনে বাতাস চলাচলে বাধা পায়। ফলে ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতা কমে যায়। আর এই কারণে ইঞ্জিন বেশি তেল বা জ্বালানি খরচ করে ফেলে। এয়ার ফিল্টার পরীক্ষা করা খুবই সহজ কাজ। গাড়ির ইউজার ম্যানুয়াল দেখে ফিল্টার খুলে সূর্যের নিচে ধরুন। তারপর এর মধ্যে দিয়ে সূর্যের দিকে তাকান। যদি ফিল্টারের মধ্যে দিয়ে সূর্যরশ্মি আপনার চোখে এসে পড়ে তাহলে বুঝবেন ফিল্টার পরিষ্কার আছে, আর যদি সূর্যরশ্মি আসতে বাধা পায় বা না আসে তাহলে বুঝবেন তা পরিষ্কার করতে হবে।
* অনেকেই আছেন হুটহাট ব্রেক আর স্পিড আপ করেন। এ কাজটি ভুলেও করবেন না। এতে জাবালানি বেশি লাগে। দীর্ঘ ট্রাফিক জ্যামে পড়ে থাকলে খেয়াল করে দেখবেন, ট্রাকগুলো যত কম গতিতে হোক না কেন, চলমান থাকার চেষ্টা করে। জ্যাম ছুটলে হঠাৎ গতি বাড়ায় না, আবার জ্যাম লাগলে হুট করে ব্রেকও করে না। এতে করে ইঞ্জিনের উপর চাপ কম পড়ে এবং জ্বালানি খরচ কম হয়।
* সবসময় গাড়ির মধ্যে এসি চালিয়ে না রেখে, মাঝে মাঝে গাড়ির জানালা খুলে দিন। অফ রোড বা লং রোডে ড্রাইভ করার সময় গাড়ির জানালা খুলে একটু প্রকৃতির স্বাদ নিন। এতে করে গাড়ির জ্বালানি ব্যয় কমে যাবে।
* অনেকেই গাড়ি নতুন করতে বা হ্যান্ডেলিং ঠিক রাখতে গাড়ির চাকা বা টায়ার বদলাচ্ছেন। কিন্তু নতুন চাকার আয়তন কিন্তু পুরোনো চাকা থেকে বেশি থাকে কিছুটা হলেও। যা চোখের আন্দাজে টের পাওয়া যায় না। আবার এই শক্ত নতুন চাকাকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্যও ইঞ্জিনকে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করতে হয়। ফলে টায়ার বা চাকা বদলালে জ্বালানি খরচ বাড়ে। তাই পুরোনো চাকাটি স্টকে রাখুন। দীর্ঘ পথে বা প্রয়োজনে সেটি ব্যবহার করে গাড়ির জ্বালানি খরচ কিছুটা কমাতে পারেন।
* গাড়ি পরিষ্কার পরিছন্ন রাখলে গাড়ির জ্বালানি খরচ কমে যায় অনেকটাই। গাড়ি যত পরিষ্কার পরিছন্ন থাকবে, গাড়ির ওজনও থাকবে তত অপটিমাইজড। গাড়ির তেল খরচ বেশি হওয়ার একটা কারণ গাড়ির অতিরিক্ত ওজন। মাঝে মাঝে অনেকেই গাড়িতে অতিরিক্ত পার্টস ব্যবহার করেন বা অপরিষ্কার রাখেন। এতে গাড়ির ওজন বাড়ে, বাড়ে জ্বালানি ব্যয়।
* গাড়ির জ্বালানি খরচ কমাতে ভেইকেল ট্র্যাকার ব্যবহার করতে পারেন। বর্তমানে গাড়ির তেলচুরি খুবই সাধারণ একটা বিষয়। গাড়ির তেল নিয়ে এত দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় যে, মাঝে মাঝে গাড়ির উপরই বিরক্তি চলে আসে, এইসব বিরক্তি থেকে মুক্তি দিতে এবং গাড়ির তেল চুরি ঠেকাতে গাড়িতে ব্যবহার করতে পারেন ভেইকেল ট্র্যাকিং সার্ভিস। এতে করে আপনি আপনার গাড়ির সব কিছু মনিটর করতে পারবেন মোবাইলেই। এমনকি আপনি যদি গাড়িতে নাও থাকেন তাও গাড়ি থাকবে আপনার নজরদারিতে।
এসএন