কোমরের ব্যথায় করণীয়
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকের নানা রকম শারীরিক সমস্যা দেয়। এর মধ্যে খুবই সাধারণ একটি সমস্যা হলো কোমর ব্যথা। বয়স ৩০ পার হওয়ার পর থেকে অনেকের কোমর ব্যথা শুরু হয়। কর্মজীবীদের দিনের অধিকাংশ সময়ই বসে বসে কাজ করতে হয়। সাধারণত নারীরা কোমরব্যথায় বেশি ভোগেন। ভুল দেহভঙ্গিতে কাজকর্ম করাই এর প্রধানতম কারণ। এতে মেরুদণ্ডে ব্যথা হয়। কখনো কখনো মেরুদণ্ড বা কোমারের হাড়ের ক্ষয়ের কারণে ব্যথা হয়। তবে নিয়মিত ব্যায়াম করে কোমরের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। কিছু নিয়ম মেনে চললে এ ব্যথা অনেকটাই এড়ানো সম্ভব।
কোমর ব্যথার কারণগুলো আগে জেনে নিই-
- বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোমরের হাড়গুলো ক্ষয় হতে থাকে। সাধারণত ৪০ বছর বয়সের পর থেকে এই ক্ষয় শুরু হয়। হাড় ক্ষয়ের কারণে কোমরে ব্যথা হতে পারে।
- পিএলআইডি বা প্রলাপ্সড ভাট্রিব্রাল ডিস্ক সাধারণত ২৫ থেকে ৪০ বছরের মানুষের ক্ষেত্রে বেশি হয়। কোমরের প্রতিটি হাড়ের মধ্যে নরম ডিস্ক থাকে। এই ডিস্ক যদি স্থানচ্যুত হয়ে স্নায়ুমূলের ওপর চাপ ফেলে, তাহলে কোমরে ব্যথা হতে পারে।
- ভারী বস্তু তোলার কাজ করলে, কোমরে আঘাত পেলে বা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে, বসে বা সামনে ঝুঁকে কাজ করলেও কোমরে ব্যথা হয়।
- নিয়মিত দীর্ঘ সময় গাড়ি চালালে আবার কুঁজো হয়ে হাঁটলে বা বসলে কোমরে ব্যথা হয়।
- শরীরের ওজন উচ্চতা অনুযায়ী বেশি হলে কোমরে ব্যথা হয়।
কোমর ব্যথা দূর করতে করণীয়
- শরীর সামনে বাঁকানো যাবে না। কোনো কিছু নিচ থেকে তোলার সময় শরীর না বাঁকিয়ে হাঁটু ভেঙে বসে তুলতে হবে।
- এক হাতে কোনো ভারী জিনিস বহন করা যাবে না। যে হাতে বহন করবেন, সে পাশের স্পাইনের মাংস পেশিতে টান লাগবে।
- ল্যাপটপ বা ডেস্কটপে কাজ করার সময় কোমর সোজা রেখে বসতে হবে। এর জন্য চেয়ারে লাম্বার রোল বা ছোট কুশন ব্যবহার করা যেতে পারে। চেয়ার–টেবিলের উচ্চতায় সামঞ্জস্য থাকতে হবে।
- শক্ত বিছানায় ঘুমাতে হবে। জাজিম ও পাতলা একটি তোশকের বিছানায় ঘুমাবেন। কোনো ফোম ব্যবহার করবেন না।
- দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকবেন না। যদি দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, তাহলে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে না থেকে ২০ মিনিট পরপর ৫ মিনিট করে বসে পড়ুন।
- দাঁড়ানোর সময় ফুটরেস্ট ব্যবহার করতে পারেন। অনেকক্ষণ দাঁড়াতে হলে কিছুক্ষণ পরপর শরীরের ভর এক পা থেকে অন্য পায়ে নিন।
- বিছানা থেকে ওঠার সময় সব সময় এক পাশে কাত হয়ে উঠবেন।
- অল্প হিলের জুতা বা স্যান্ডেল ব্যবহার করতে হবে।
- তরকারি কাটা, মসলা বাটা, কাপড় কাচা ও ঘর মোছার সময় মেরুদণ্ড যাতে সোজা অবস্থায় থাকে, সে জন্য উঁচু টুল, টেবিল বা চেয়ার ব্যবহার করবেন।
কোমরে ব্যথায় ঘরোয়া কিছু টোটকা ব্যবহার করলে সুফল পাওয়া যেতে পারে। যেমন-
- কোমরের যে জায়গায় ব্যথা সেখানে সেঁক দিলে যন্ত্রণা থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়া যাবে।
- আদাতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। এ পটাশিয়ামের অভাবের ফলে নার্ভের সমস্যা দেখা দেয়। প্রতিদিন নিয়মিত আদা খেলে কোমরের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
- দুধের সঙ্গে নিয়ম করে হলুদ খেলে কোমরের ব্যথা অনেকটাই কমতে পারে।
- মেথি বীজের গুড়ো দুধের সঙ্গে মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন। ব্যথার জায়গায় এই মিশ্রণ লাগালে উপকার পাবেন।
- লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। ভিটামিন সি যন্ত্রণা উপশমে খুবই কার্যকারী।
- প্রতিদিন নিয়ম করে অ্যালোভেরা শরবত খেলে কোমরের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
- ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম জাতীয় খাদ্য- প্রতিদিন নিয়ম করে দুধ, ঘি, পনির, ফল, শাকসবজি, বাদাম ইত্যাদি খেলে কোমরের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
এসএন