বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন ফটোগ্রাফার প্যাট্রিক ডিমার্কিলিয়ার মারা গিয়েছেন
‘ডায়না-প্রিন্সেস অব ওয়েলস’র মতো হাই প্রোফাইলের সঙ্গে কাজ করা বিখ্যাত ফরাসি ফ্যাশন ফটোগ্রাফার প্যাট্রিক ডিমার্কিলিয়ার মারা গিয়েছেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৮।
গতকাল বৃহস্পতিবার তার মৃত্যু সংবাদ ঘোষণা করেছেন প্রতিনিধিরা। তারা ইনস্ট্রাগ্রামে লিখেছেন, ‘এটি একটি বড় ধরণের বেদনা। তিনি স্ত্রী মিয়া, তিনটি ছেলে-গুস্তাভ, আর্থার ও ভিক্টরকে রেখে গিয়েছেন। তাদের ঘরে তার তিনটি নাতি-নাতনি আছে।’
১৯৯১ সালের ডিসেম্বরের ভোগ কভার ইস্যুটি করেছেন ডিমাকিলিয়ার। সেখানে তিনি প্রিন্সেস ডায়নাকে নিয়ে কাজ করেছেন। এছাড়াও কটি প্রধান ম্যাগাজিন যেমন হারপার’স বাজার, ইলে ও রোলিং স্টোনের জন্য কাজ করেছেন। এর বাদেও অনেকগুলো উচ্চদামের ফ্যাশন ব্যান্ডের ছবি তুলেছেন। নামকরা প্রসাধনী ব্যান্ড ডিঅর, শ্যানেল, ইভ স্যানরো রন, টমি হেলফিগার ও ক্যারোলাইনা হারেরাকে তাদের বিজ্ঞাপন তৈরি এবং বাজার বড় করতে সাহায্য করেছেন।
এছাড়াও দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ডিমাকিলিয়ার হাই প্রফাইল সেলিব্রেটি বা তারকাদের মধ্যে বিয়ন্সে, জেরিফার লোপেজ এবং ম্যাডোনার বিশেষ ছবি তুলেছেন।
তবে জীবনের শেষ বেলায় ৭১ বছর বয়সে এই আলোকচিত্রীর বিপক্ষে সাতজন নারী মডেল একত্রে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। বিবৃতিতে তিনি অস্বীকার করেন। উল্টো অসম্ভব বলে তাদের বিপক্ষে অভিযোগ আনেন। তবে এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে এরপর বৈশ্বিক গণমাধ্যম কম্পানি কনডে তার সঙ্গে প্রকাশনার কাজ বন্ধ করে দেয়।
২০০৬ সালের ‘দি ডেভিল ওয়্যারস প্রাডা’ ছবিতে তিনি আছেন। সেখানে তাকে খুঁজে বের করেছেন ফ্যাশন দেবী মারান্ডা প্রিস্টলি। এই কাল্পনিক চরিত্রটি করেছেন মেরিল স্ট্রিপ।
তার মৃত্যুকে শোক প্রকাশ করেছেন, মার্কিন ডিজাইনার ভেরা ওয়াং। বেলা হাদিদ, সিন্ডি ক্র্যাফোড, হেইলি বিবারের মতো বিশ্বখ্যাত নারী মডেল তাকে মৃত্যুর পর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
ওয়াং বলেছেন, তিনি খবরটি জেনে ‘মর্মস্থলে আঘাত পেয়েছেন’। আরো বলেছেন, ‘সবসময়ই ডিমার্কিলিয়ারের মেধা ও দয়াকে সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।’
তাদের দুজনের সর্বশেষ কাজগুলোর একটির ছবি দিয়ে লিখেছেন, “আমরা একটি শপহাউন্ডে আমাদের ফ্যাশন যাত্রা শুরু করেছিলাম। এই কাজটি করেছিলাম আমেরিকান ভোগের জন্য। সেখানেই স্ত্রী মিরার সঙ্গে তার প্রথম দেখা হয়েছে। আমি সবসময় তার মেধা, দয়াশীলতা ও আমাদের দীর্ঘদিনের ইতিহাসকে সম্পদ ও সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করব। তিনি আমার সঙ্গে ভোগে অনেক কাজ করেছেন। এরপর আমার ‘ভেরা ওয়াং দি কম্পানি’র প্রচারের জন্য বিজ্ঞাপনগুলো ছবি হিসেবে বানিয়ে দিয়েছেন। তার স্ত্রী ও পরিবারের জন্য আমার ভালোবাসা প্রেরণ করেছি। তিনি চিরকালে আরো ভালোভাবে শান্তি লাভ করুন।”
তারকা হেয়ার স্টাইলিস্ট স্যাম ম্যাকনাইট, এই পুরুষও ডায়নার সঙ্গে সেই ইস্যুতে ভোগে তার সঙ্গে কাজ করেছেন। বলেছেন, এই কাজের জন্য তিনি যথেষ্ট ধন্যবাদ জানিয়েছেন ডিমার্কিলিয়ারকে। লিখেছেন, ‘আমি তার চলে যাওয়াতে অত্যন্ত দুঃখ পেয়েছি।’ তাকে ‘প্যাট্রিক’ নামে ডাকতেন তিনি। ভেরা ওয়াংয়ের পোস্টের উত্তরে কথাগুলো বলেছেন তিনি। আরো লিখেছেন, ‘তার সঙ্গে আমার সেরা সময়গুলো ছিল। আরো ছিল অসংখ্য আইকনিক ছবি। চমৎকার স্মৃতি, সারাজীবন হাসি-তামাসার-এজন্য আামি তাকে অনেক ধন্যবাদ জানাই। তার মতো আরেকজন আর কখনো আসবে না সেখানে।’ আরো লিখেছেন, ‘ওহ প্রিয় প্যাট্রিক, কীভাবে তুমি আমাদের হাসাতে। এই সুন্দর যাত্রাটি আমাকে চারদিক থেকে দেবার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। আমার বন্ধু শান্তিতে ঘুমাও।’
বেলা হাদিদ লিখেছেন, ‘আপনার লেন্সের সামনে আসতে পারায় আমি খুবই কৃতজ্ঞ। সবচেয়ে বড় রাজার মতো, সবচেয়ে ভদ্রভাবে নম্রতার জীবনে পূর্ণ হয়ে আপনি আমাকে নিয়ে কাজ করেছেন। আপনার অভাব বোধ করব প্যাট্রিক। শান্তিতে ঘুমান। আমি আপনাকে এবং এই দিনটিকে মনে রাখব, অভাববোধ করব আপনার।’
ডিমার্কিলিয়ার তার যে ছবিগুলো তুলেছেন, তার কটি দিয়ে সিন্ডি ক্র্যাফোর্ড লিখেছেন, ‘শান্তিতে ঘুমান। অপনাকে এতগুলো মহান, স্মৃতি ও সুন্দর এবং চিরকালীন ছবির জন্য ধন্যবাদ।’
অভিনেত্রী কেট হাডসন লিখেছেন, তিনি এই আলোকচিত্রীর সঙ্গে কাজ করাকে সবসময় উপভোগ করেছেন। তিনি তার পরিবারের প্রতি ‘এক টন ভালোবাসা’ প্রেরণ করেছেন। আরো লিখেছেন, ‘আমি প্যাট্রিকের কাছ থেকে অনেকগুলো স্মৃতি পেয়েছি ও প্রায়ই তার ছবি তোলার জন্য অনুগ্রহ লাভ করেছি। তার সঙ্গ সবসময় উপভোগ করেছি। তার দলের সঙ্গেও কাজ করে অনেক আনন্দ পেয়েছি।’
ছবি : প্যাট্রিক ডিমার্কিলিয়ারের ক্যামেরায় সিন্ডি ক্র্যাফোর্ড।