বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি করার অনুমতি চেয়ে হাইকোর্টে রিট
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতি করার অনুমতি চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়েছে।
সোমবার (১ এপ্রিল) বুয়েটের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ রাব্বি এ রিট দায়ের করেন। রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার হারুনুর রশিদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, গতকাল ৩১ মার্চ রোববার ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের ইস্যুতে আবারও উত্তাল হয়ে উঠে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। ছয় দফা দাবিতে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। অপরদিকে ছাত্র রাজনীতি ফেরানোর দাবিতে কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্রলীগ।
মধ্যরাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রবেশের ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রহিমের হলের সিট বাতিল করে প্রশাসন। কিন্তু আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এর সঙ্গে আরও পাঁচটি দাবি উত্থাপন করেছেন তারা। অপরদিকে বুয়েট ক্যাম্পাসে চার বছর ধরে নিষিদ্ধ থাকা ছাত্ররাজনীতি ফিরিয়ে আনার দাবিতে সরব হয়েছে ছাত্রলীগ।
শনিবার (৩০ মার্চ) লিখিত বক্তব্যে আন্দোলনকারীরা জানান, আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা গত ২৮ মার্চ মধ্যরাতে ক্যাম্পাসে বহিরাগত অনুপ্রবেশে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি। এই মর্মে বুয়েট ক্যাম্পাসকে নিরাপদ করার লক্ষ্যে বুয়েট প্রশাসনের নিকট নিম্নোক্ত দাবিগুলো গতকাল (শুক্রবার) পেশ করেছিলাম।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো-
১. মধ্যরাতে ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক সমাগমের মূল সংগঠক ইমতিয়াজ রাব্বি ‘বুয়েটে সব রকম রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ’ এই নীতিমালা ভঙ্গ করায় ইমতিয়াজ রাব্বির বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার এবং হলের সিট বাতিলের দাবি। প্রশাসন ইমতিয়াজ রাব্বির হলের সিট বাতিল করলেও বুয়েট থেকে তাকে স্থায়ী অ্যাকাডেমিক বহিষ্কার করেনি। আন্দোলনকারীরা ইমতিয়াজ রাব্বির স্থায়ী অ্যাকাডেমিক বহিষ্কারের দাবি জানান।
২. উক্ত ঘটনায় ইমতিয়াজ রাব্বির সঙ্গে বুয়েটের বাকি যেসব শিক্ষার্থী জড়িত তাদের মধ্যে এ এস এম আনাস ফেরদৌস (আইডি: ১৮১৮০০৪), মোহাম্মদ হাসিন আরমান নিহাল (আইডি: ২১০৬১০১), অনিরুদ্ধ মজুমদার (আইডি: ২১০৬০৭৯), জাহিরুল ইসলাম ইমন (আইডি: ২১১২০৩১) এবং সায়েম মাহমুদ সাজেদিন রিফাতকে (আইডি: ২১০৬১২৬) বুয়েট ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক অপশক্তি অনুপ্রবেশ করানোর চেষ্টা করায় স্থায়ী অ্যাকাডেমিক এবং হল বহিষ্কারের দাবি জানান তারা। এদের বাইরে বাকি আরও যারা জড়িত ছিল তাদের শনাক্ত করে সবাইকেই উল্লিখিত অভিযুক্তদের মতোই একই মেয়াদে শাস্তির ব্যবস্থা করার দাবি জানান।
৩. ক্যাম্পাসে প্রবেশ করা বহিরাগত রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না, তারা কেন, কীভাবে প্রবেশ করার অনুমতি পেলো এই ব্যাপারে সুস্পষ্ট সদুত্তর এবং জবাবদিহিতা চেয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। তার পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েট উপাচার্য ব্যবস্থা নেয়ার মৌখিক আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান তারা। দাবিটির বিষয়ে বুয়েট প্রশাসনের কাছ থেকে লিখিত নোটিশ এবং বাস্তবায়নের দাবি আন্দোলনকারীদের।
8. শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য ‘রাত সাড়ে ১০টার পর সব ছাত্রছাত্রীর ক্যাম্পাসে থাকা নিষেধ’ এবং যেকোনো প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের রাত সাড়ে ১০টার পরও ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদফতরের পরিচালকের (ডিএসডব্লিউ) অনুমতির প্রয়োজন পড়ে। ডিএসডব্লিউর প্রটোকল ভেঙে বহিরাগতরা মধ্যরাতে সেমিনার রুমে মিটিং করতে সক্ষম হয়েছে। নিজের প্রটোকল অব্যাহত রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় অথবা ‘বুয়েটে সব প্রকার রাজনৈতিক সংগঠন এবং কার্যক্রম নিষিদ্ধ’ ইহার লঙ্ঘন করায় ডিএসডব্লিউর দ্রুততম সময়ের মধ্যে পদত্যাগ দাবি করেন তারা।
৫. ক্যাম্পাসে মধ্যরাতে বহিরাগতদের প্রবেশের কারণে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা জানিয়ে এর প্রতিবাদ হিসেবে ৩০ মার্চের টার্ম ফাইনাল বর্জন এবং ৩১ মার্চের টার্ম ফাইনালসহ সব অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বর্জন।
৬. আন্দোলনরত বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনোরকম হয়রানিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যাবে না এই মর্মে লিখিত প্রতিশ্রুতি দাবি।