কারাগারে বিয়ে, জামিন বহাল রেখে আসামিকে মুক্তির নির্দেশ
কারাগারে বিয়ে। ছবি: সংগৃহীত
দুই পরিবারের সম্মতি এবং আপিল বিভাগের আদেশে ধর্ষণের শিকার ১৭ বছরের নাবালিকার সঙ্গে ধর্ষকের বিয়ের আয়োজন সম্পন্ন করেছে লালমনিরহাট কারা কর্তৃপক্ষ। তাদের বিয়ে হওয়ায় ওই ধর্ষণ মামলার আসামির জামিন বহাল রেখে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
ধর্ষণ মামলার ওই আসামির নাম মো. রকিবুজ্জামান রকিব। তিনি লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার বাসিন্দা। সোমবার (৪ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ৬ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. ওজি উল্লাহ বলেন, লালমনিরহাটের কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভুক্তভোগীর সঙ্গে আসামি রকিবের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। বিয়ের অনুষ্ঠানে দুই পরিবারের অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন। শুনানি শেষে আদালত আসামি রকিবকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রেখে মুক্তির নির্দেশ দেন।
এর আগে, গত ২০ নভেম্বর লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় ধর্ষণের শিকার হওয়া ১৭ বছরের নাবালিকার সঙ্গে একই উপজেলার আসামি রকিবের বিয়ের আয়োজন করতে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। ১৫ দিনের মধ্যে লালমনিরহাটের কারা কর্তৃপক্ষকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। দুই পরিবারের অভিভাবকের সম্মতি ও মতামত নিয়ে এই আদেশ দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
সেদিন আইনজীবী মো. ওজি উল্লাহ বলেছিলেন, ২০২২ সালের ১৩ জুলাই লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সাহাবুদ্দিন সাবুর নাবালিকা মেয়েকে অপহরণ করে একই এলাকার রকিব। পরে ২০২৩ সালের ৮ এপ্রিল অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে রকিবের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। একইদিন অপহরণের শিকার হওয়া নাবালিকাকে উদ্ধার করে পুলিশ। একইসঙ্গে মো. রকিবুজ্জামান রকিবকে গ্রেপ্তার করা হয়। মেডিকেল পরীক্ষায় ওই নাবালিকা গর্ভবতী বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে গর্ভের সন্তান পরে নষ্ট হয়ে যায়।
অপহরণের পর স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাসের জন্য কাবিন নামা তৈরি করা হয়। মামলায় গত জুন মাসে আসামিকে জামিন দেন হাইকোর্ট বেঞ্চ। এই জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে আসামি রকিবুজ্জামান রকিবের জামিন স্থগিত করে বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেন চেম্বার আদালত।এর মধ্যে জামিন স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করে আসামিপক্ষও। পরে আজ (সোমবার) আপিল শুনানি হয়। শুনানিতে আসামিপক্ষ লিখিতভাবে আদালতকে জানান, ভুক্তভোগীর সঙ্গে আসামির বিয়ের ব্যবস্থা করতে উভয়পক্ষ রাজি হয়েছেন। এরপর ভুক্তভোগীকে বিয়ের শর্তে আসামির জামিন প্রার্থনা করা হয়।
এদিকে, শুনানিতে উপস্থিত থাকা ভুক্তভোগীর বাবা মো. সাহাবুদ্দিন সাবু আপিল বিভাগকে জানান, তার মেয়েও বিয়ে করতে আগ্রহী। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ আদেশ পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে লালমনিরহাটের কারা কর্তৃপক্ষকে বিয়ের আয়োজন করতে নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে পরবর্তী আদেশের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন। এর মধ্যে বিয়ের কাবিন নামাসহ যাবতীয় নথি আদালতে দাখিল করতে বলা হয়। বিয়ের কাবিন নামা দাখিলের পর সর্বোচ্চ আদালত আসামির জামিন বিবেচনা করবেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।