শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি রোধে কমিটি গঠনের নির্দেশ কেন নয়: হাইকোর্ট
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব প্রতিষ্ঠানে নারী ও শিশুদের যৌন হয়রানি রোধে কমিটি গঠন করার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
রবিবার (৯ জানুয়ারি) সংশ্লিষ্ট এক রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এসএম মনিরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এই আদেশ দেন।
নারী ও শিশু কল্যাণ সচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, সমাজকল্যাণ সচিব, জনপ্রশাসন সচিবসহ ৪০টি মন্ত্রণালয়ের সচিব, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রুলে শিক্ষাঙ্গনসহ দেশের সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নারী ও শিশুদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশনা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট। তিন মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্টাদের এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এদিন আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন সৈয়দা নাসরিন ও মো. শাহিনুজ্জামান।
হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে সে মোতাবেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ দেশের সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নারী ও শিশুদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কমিটি গঠন না করায় গত ২১ অক্টোবর হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।
এ ছাড়া হাইকোর্টের পূর্ববর্তী রায় বাস্তবায়নে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না এবং রায় বাস্তবায়নে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না, সে মর্মে রুল জারির আর্জিও জানানো হয়েছে। এ ছাড়া রায় বাস্তবায়নের একটি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা চাওয়া হয়।
২০০৮ সালের ৭ আগস্ট বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী কর্মস্থল এবং শিক্ষাঙ্গনে নারী ও শিশুদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধের জন্য দিকনির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে জনস্বার্থে একটি রিট দায়ের করেন।
রিটের শুনানি শেষে ২০০৯ সালের ১৪ মে হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের (সদ্য অবসরে যাওয়া প্রধান বিচারপতি) নেতৃত্বে একটি হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণা করে। রায়ে হাইকোর্ট দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে অভিযোগ গ্রহণের জন্য ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি’ গঠনসহ বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছিল। তবে, ওই রায়ের পর প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় অতিবাহিত হলেও রায়টি বাস্তবায়ন হয়নি। তাই রায়টির বাস্তবায়ন চেয়ে পুনরায় হাইকোর্টে রিট দায়ের করে আসক।
২০০৯ সালের হাইকোর্টের নির্দেশনাটি যাতে মানা হয় সেজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রের জন্য কিছু সুপারিশ করা হয়। সুপারিশে বলা হয়, বর্তমান অবস্থাকে বিবেচনা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে আদালতের নির্দেশনা শিক্ষার্থীদের জানাতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা নোটিশ বা অন্যান্য কার্যক্রমের মাধ্যমে হাইকোর্টের নির্দেশনা শিক্ষার্থীদের বিস্তারিত অবহিত করবেন। শিক্ষার্থী, শিক্ষক-শিক্ষিকামণ্ডলী ও কর্মীদের মাঝে যৌন হয়রানি সংক্রান্ত আইন, প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা এবং আদালতের নির্দেশনা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
সুপারিশে আরও বলা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের দায়িত্ব হবে বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে একটি তদারকি ও পর্যবেক্ষণ কৌশল গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা।
এতে আরও বলা হয়, কর্মক্ষেত্রে প্রতিটি কর্মী ও ব্যবস্থাপকের জন্য সচেতনতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রশিক্ষণ নির্দেশিকা, ব্যবহারিক ও প্রচারণার নথিপত্র তৈরি করতে হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তদারকি কৌশল গ্রহণ করতে হবে।
এমএ/এমএমএ/