বরখাস্ত ডিআইজি পার্থ গোপাল বণিকের ৮ বছরের কারাদণ্ড
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের বরখাস্তকৃত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজনস) পার্থ গোপাল বণিকের বিরুদ্ধে অর্থপাচারসহ (মানিলন্ডারিং) বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে করা মামলার রায়ে ৮ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
রোববার (৯ জানুয়ারি) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
কারাগারের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৯ সালের ২৮ জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ে পার্থ গোপাল বণিককে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে অভিযানে যায় কমিশন। ওইদিন বিকালে রাজধানীর ধানমন্ডির ভূতের গলিতে পার্থ গোপালের ফ্ল্যাট থেকে নগদ ৮০ লাখ টাকা উদ্ধার করে দুদক। এরপরই আটক করা হয় তাকে।
পরের দিন ২৯ জুলাই তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৬১ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ৪ (২) ধারায় দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলা করে দুদক।
২০২০ সালের ৪ নভেম্বর সাবেক ডিআইজি পার্থের বিচার শুরু হয়। ঘুষ গ্রহণ ও মানিলন্ডারিং আইনের মামলায় তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে আদালত। চার্জ গঠনের ফলে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। ওইদিন ঢাকার বিশেষ জজ-১০ এর বিচারক নজরুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন। একই সঙ্গে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ওই বছরের ১৮ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।
এরপর পার্থ গোপাল বণিকের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় দুদক। গত বছরের ২৪ আগস্ট দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. সালাউদ্দিন সংশ্লিষ্ট আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, উপমহাপরিদর্শক পার্থ গোপাল বণিক (বরখাস্ত) সরকারি চাকরিতে দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষের মাধ্যমে ৮০ লাখ টাকা অবৈধভাবে অর্জন করেন। এসব টাকা গোপন করে তার নামীয় কোনো ব্যাংক হিসাবে জমা না রেখে বিদেশে পাচারের উদ্দেশে নিজ বাসস্থানে লুকিয়ে রেখে দণ্ডবিধির ১৬১ ধারা, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
যদিও ডিআইজি পার্থ দাবি করেছেন, ৮০ লাখ টাকা তার বৈধ আয় থেকে অর্জিত। এর মধ্যে ৩০ লাখ টাকা শাশুড়ি দিয়েছেন। বাকি ৫০ লাখ টাকা সারাজীবনের জমানো।
২০২১ সারের ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলমের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
পার্থর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ধারা। এই ধারায় উল্লেখ আছে, ‘কোনো ব্যক্তি মানিলন্ডারিং অপরাধ করিলে বা মানিলন্ডারিং অপরাধ সংঘটনের চেষ্টা, সহায়তা বা ষড়যন্ত্র করিলে তিনি অন্যূন ৪ (চার) বছর এবং অনধিক ১২ (বার) বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির দ্বিগুণ মূল্যের সমপরিমাণ বা ১০ (দশ) লাখ টাকা পর্যন্ত, যাহা অধিক, অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’
আর আইনের ১৬১ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি যদি সরকারি কর্মচারী হিসেবে অথবা সরকারি কর্মচারী হবে বলে আশা করে কোনো সরকারি কাজ করা অথবা করা হতে বিরত থাকার উদ্দেশে বা পুরস্কার হিসেবে অথবা সরকারি দায়িত্ব সম্পাদনকালে কোনো ব্যক্তিকে অনুগ্রহ প্রদর্শন বা নিগ্ৰহ প্রদর্শন করার জন্য বা করা হতে বিরত থাকার জন্য অথবা বাংলাদেশের সরকার বা আইনসভা দ্বারা অথবা কোনো সরকারি কর্মচারী দ্বারা কোনো ব্যক্তির উপকার বা অপকার করার জন্য বা তা করার চেষ্টায় নিজের অথবা অপর কোনো ব্যক্তির জন্য কারো নিকট থেকে আইনসম্মত পারিশ্রমিক ছাড়াই অপর যে কোনোরূপ পারিতোষিক গ্রহণ করে বা লাভ বা গ্রহণ করতে সম্মত হয় বা লাভ করতে চেষ্টা করে, তবে উক্ত ব্যক্তি তিন বৎসর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা অর্থদণ্ডে অথবা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত হবে।’
আর দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারী যদি অপরাধমূলক অসদাচরণ সংঘটিত করে অথবা উদ্যোগ গ্রহণ করে তবে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড অথবা জরিমানা অথবা উভয়বিধ দণ্ডে দণ্ডিত হইবে, [এবং অপরাধমূলক অসদাচরণ সংক্রান্ত আর্থিক সম্পদ বা সম্পত্তি রাষ্ট্রের নিকট বাজেয়াপ্ত করা যাইতে পারে৷] এই অংশটুকু দুর্নীতি প্রতিরোধ (সংশোধন) আইন, ১৯৯২ দ্বারা সংযোজিত।
তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের আরেকটি ধারা হচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা। এই ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি তাহার নিজ নামে বা তাহার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তির নামে এমন কোনো স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তির দখলে রহিয়াছেন বা মালিকানা অর্জন করিয়াছেন, যাহা অসাধু উপায়ে অর্জিত হইয়াছে এবং তাহার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সহিত অসঙ্গতিপূর্ণ বলিয়া মনে করিবার যথেষ্ট কারণ রহিয়াছে এবং তিনি উক্তরূপ সম্পত্তি দখল সম্পর্কে আদালতের নিকট বিচারে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা প্রদান করিতে ব্যর্থ হইলে উক্ত ব্যক্তি অনূর্ধ্ব ১০ (দশ) বছর এবং অন্যূন ৩ (তিন) বছর পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদে কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং তদুপরি অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন এবং উক্তরূপ সম্পত্তিসমূহ বাজেয়াপ্ত যোগ্য হইবে।’
এমএ/