নিঃসংকোচে সমালোচনা করবেন: প্রধান বিচারপতি
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী
আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে বিচার বিভাগকে নিয়ে যে কোনো গঠনমূলক আলোচনা ও সমালোচনাকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, ‘আপনারা যারা বিচার বিভাগের আলোচক ও সমালোচক বন্ধু রয়েছেন তারা বিচার বিভাগের সমস্যা উপলব্ধি করবেন। নিঃসংকোচে আলোচনা বা সমালোচনা করবেন, তবে রাষ্ট্র ও জনগণের বৃহত্তর কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিয়ে।’
রবিবার (২ জানুয়ারি) নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতিকে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির এজলাস কক্ষে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এজলাসে এ সময় প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের উভয় (হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ) বিভাগের বিচারকরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আপিল ও হাইকোর্ট উভয় বিভাগের বিচারপতি, সাংবাদিক, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্যবৃন্দসহ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার কোনো অশুভ শক্তি বা গোষ্ঠীর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হোক, তা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের (আইন, শাসন ও বিচার বিভাগ) একটি অঙ্গ যদি দুর্বল, সমস্যাগ্রস্ত হয় তবে রাষ্ট্র শক্তিশালী হতে পারবে না। সে কারণে আমি বিশ্বাস করি, রাষ্ট্রের অন্য দুটি বিভাগ তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিচার বিভাগের সমস্যা সমাধানে দৃশ্যমান ও কার্যকর ভূমিকা রাখবে। রাষ্ট্রের সব বিভাগ ও ব্যক্তিকে বারবার স্মরণ করতে হবে-ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে গণতান্ত্রিক শক্তি পরাজিত হবে।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ন্যায়বিচার জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া জনগণের প্রতি দয়া নয় বরং এটি জনগণের সহজাত অধিকার। এ অধিকারকে কেবল সাংবিধানিক অধিকার বলে সাব্যস্ত করতে রাজি নই।’
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ন্যায়বিচারের সৌন্দর্য ও আইনের রাজকীয়তা প্রকৃতপক্ষে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন বটে। সে কারণে দেশের সব বিচারককে নিরপেক্ষতার সঙ্গে, নির্মোহ হয়ে, নির্ভয়ে ও স্বাধীনভাবে জনগণের ন্যায়বিচার পাওয়ার সহজাত অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগে কোনো দুষ্ট ক্ষতকে ন্যূনতম প্রশ্রয় দেওয়া হবে না উল্লেখ করে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের সব শাখার অস্বচ্ছতা, অনিয়ম, অলসতা ও অযোগ্যতা নির্মূলে যে কোনো পদক্ষেপ নিতে আমি সবাইকে পাশে পাবো, এ আশাবাদ ব্যক্ত করছি।’
তিনি বলেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় যারা নিয়ামক শক্তি তারা সবাই আমাদের প্রতি ইতিবাচক ও গঠনমূলক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন, এটা তার একান্ত আবেদন। ‘ন্যায়বিচার বাধাগ্রস্ত হয় এমন সব কারণ চিহ্নিত করে তা দূর করার জন্য আমরা বদ্ধপরিকর হবো’।
বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে আট বিভাগে একজন করে হাইকোর্টের বিচারপতিকে প্রধান করে মনিটরিং সেল গঠন করা হবে বলেও জানান প্রধান বিচারপতি।
তিনি বলেন, ‘প্রতি মাসে আমি তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে প্রতিবেদন গ্রহণ করব। পুরোনো মামলাগুলো সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে নিষ্পত্তির বিষয়ে সুপারভাইস ও মনিটরিং করা হবে।
এমএ/এমএমএ/