রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত। আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম সোমবার (১ আগস্ট) এ আদেশ দেন।

পদ্মা ব্যাংকের (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) পৌনে ৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের মামলায় তার জামিন স্থগিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশিদ আলম খান।

গত ২৮ জুলাই মো. সাহেদকে এই জামিন দেন হাইকোর্ট। পরে জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করে কমিশন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার চেম্বার আদালত তার জামিন স্থগিত করে।

ঋণের নামে জালিয়াতি করে ২০২০ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পদ্মা ব্যাংকের (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) পৌনে তিন কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ করিম, বাবুল চিশতীসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করে কমিশন।

দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহাজাহান মিরাজ বাদী হয়ে কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এ মামলা করেন। কমিশন জানায়, পরস্পর যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার, বিশ্বাস ভঙ্গ করে অর্থ স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে ঋণের নামে পদ্মা ব্যাংকের এক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন, যা চলতি বছরের ১৫ জুলাই পর্যন্ত সুদ-আসলে দাঁড়ায় দুই কোটি ৭১ লাখ টাকা। কমিশন আসামিদের বিরুদ্ধে পৌনে তিন কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনেছে।

মামলায় অন্যতম আসামিরা হলেন-সাবেক ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) উদ্যোক্তা পরিচালক ও ক্রেডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতী, বাবুল চিশতীর ছেলে রাশেদুল হক চিশতী ও রিজেন্ট হাসপাতালের এমডি মো. ইব্রাহিম খলিল।

আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২-এর ৪ ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়।

জানা গেছে, সাহেদ রিজেন্ট হাসপাতালের এমআরআই মেশিন কেনার জন্য দুই কোটি টাকার ঋণের জন্য পদ্মা ব্যাংকের গুলশান করপোরেট শাখায় আবেদন করেন ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি। ২০১৫ সালের ১৯ জানুয়ারি পদ্মা ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ওই মেশিন কেনার জন্য সরবরাহকারী হিসেবে ‘আর্বটস মেডিকেল ইকুইপমেন্ট’-এর নামে দুই কোটি টাকার পে-অর্ডার ইস্যু করা হয়। পে-অর্ডারটি একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। পরে সেই হিসাব থেকেই দুই কোটি টাকা উত্তোলন করা হয় ২০১৫ সালের ২১ জানুয়ারি।

ওই দুই কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুর করার আগেই সাহেদ ঘুষ হিসেবে পদ্মা ব্যাংকের বকশীগঞ্জ শাখায় বাবুল চিশতীর মালিকানাধীন বকশীগঞ্জ জুট স্পিনার্স লিমিটেডের নামে ০১১১১০০০০২৩৬৩ নং হিসাবে ৩৫ লাখ টাকা জমা করেন। জমা রশিদ নং-৩০। পরে জমা করা ওই টাকা ২০১৫ সালের ১৮ ও ২০ জানুয়ারি উত্তোলন করেন বকশীগঞ্জ জুট স্পিনার্স লিমিটেডের এমডি ও বাবুল চিশতীর ছেলে রাশেদুল হক চিশতী।

কমিশন জানায়, ঘুষের ৩৫ লাখ টাকা বাবুল চিশতীর ছেলে রাশেদুল চিশতী বকশীগঞ্জ জুট স্পিনার্স লিমিটেডের হিসাব থেকে উত্তোলন করলেও ঘুষ গ্রহণের পেছনে সব কলকাঠি নেড়েছেন বাবুল চিশতী। তিনি বকশীগঞ্জ জুট স্পিনার্সের চেয়ারম্যান।

২০২০ সালের ৬ জুলাই সাহেদের বিরুদ্ধে করোনা শনাক্তে জালিয়াতির অভিযোগ ওঠার পর রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় অভিযান চালায় র‌্যাব। অভিযানে ভুয়া করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট, করোনা চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়সহ বিভিন্ন অনিয়ম উঠে আসে। ওই বছরের ৭ জুলাই রাতে উত্তরা পশ্চিম থানায় সাহেদসহ ১৭ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়।

পরে ১৫ জুলাই সাহেদকে সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

এমএ/এমএমএ/