পুত্র-কন্যা ও স্ত্রী হত্যা
আলমগীরের মৃত্যুদণ্ড হাইকোর্টে বহাল
পুত্র-কন্যা ও স্ত্রীকে হত্যার দায়ে নিম্ন আদালতের দেওয়া পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় মো. আলমগীর হোসেনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে হাইকোর্ট। বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার (২৮ মার্চ) এ রায় দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নির্মল কুমার দাস, শবনম মুশতারী ও তারিকুল ইসলাম হীরা। আর আসামির পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রীয় খরচে নিযুক্ত আইনজীবী হাফিজুর রহমান খান।
মামলাসূত্রে বলা যায়, নিজের পরকীয়ার জন্য স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যা করেন আলমগীর। রায়ের পর্যবেক্ষণ আদালত বলেন, আসামি যেভাবে তার স্ত্রী, পুত্র ও কন্যাকে হত্যা করেছে, তা সমাজ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। এমন অপরাধ নমনীয় দৃষ্টিতে দেখার অবকাশ নেই। এমন হত্যাকারী আদালত থেকে অনুকম্পা পেতে পারেন না।
এরপর স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েকে হত্যার দায়ে হাইকোর্ট আসামি মো. আলমগীর হোসেনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন।
জানা যায়, ২০০৮ সালের ২২ জুন পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার পাঠাকাটা গ্রামে পল্লী চিকিৎসক আলমগীর তার স্ত্রী হাফিজা বেগম ১১ বছরের ছেলে আশরাফুল ও তিন বছরের কন্যা জামিলাকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ান। পরে তাদের ঘুমন্ত অবস্থায় কুপিয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনায় পরদিন হাফেজার ভাই মঠবাড়িয়া থানায় মামলা করেন। সেদিনই গ্রেপ্তার হন আলমগীর। পরে ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়ে বেরিয়ে যান তিনি।
ওই মামলায় ২০১৬ সালের ১ আগস্ট পিরোজপুরের অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত রায় দেয়। রায়ে আলমগীরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। নিম্ন আদালতের রায় ঘোষণার আগের থেকেই আলমগীর পলাতক বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
উল্লেখ্য নিম্ন আদালতের রায়ে কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে তা নিশ্চিতে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে। এটি ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে পরিচিত। এ অনুসারে নিম্ন আদালতের রায়সহ নথিপত্র হাইকোর্টে পাঠানো হয়, যা ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। এ ডেথ রেফারেন্সের ওপর শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট সোমবার আসামি আলমগীরের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় ঘোষণা করে।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ বলেন, পরকীয়ার কারণে আলমগীর যেভাবে তার স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েকে খুন করেছেন, তা পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট বলে রায়ে এসেছে। আলমগীর ব্যথা কমানোর কথা বলে স্ত্রীকে ঘুমের ইনজেকশন পুশ করেন ও দুই সন্তানকে খাবার স্যালাইনের মাধ্যমে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেন। পরে স্ত্রী ও সন্তানদের দা দিয়ে কুপিয়ে তিনি হত্যা করেন। স্বীকারোক্তিতে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর ডাকাত এসে তিনজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে প্রথমে ঘটনা সাজানোর চেষ্টা করেন আলমগীর। তার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় হাইকোর্ট ওই পর্যবেক্ষণ দিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে।
এমএ/