সাংবাদিক হত্যা: এক আসামির দণ্ড কমে যাবজ্জীবন
বরিশালের মুলাদী উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মনির হোসেন রাঢ়ী হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামির সাজা পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ মামলার বিষয়ে আসামির আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষে রবিবার (২৭ মার্চ) বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি মো. জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, রায়ে রাসেল রাঢ়ীর মৃত্যুদণ্ডের সাজা পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছেন আদালত।
রায়ে তাদের ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডও দিয়েছেন আদালত। তবে রাসেলের বাবা আলাউদ্দিন রাঢ়ী কারাগারে মৃত্যুবরণ করায় তার নাম আপিল শুনানি থেকে বাদ করে দেন আদালত।
আদালতে এদিন আসামিপক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এসএম শাহজাহান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত। আর লিগ্যালএইডের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী রিমি নাহরীন।
মামলাসূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর মুলাদী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা দলিল উদ্দিন ও আনোয়ার হোসেনের বাড়ির চলাচলের পথ বন্ধ করতে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করছিলেন আলাউদ্দিন রাঢ়ী ও তার ছেলেরা। এসময় প্রতিবেশীরা চলাচলের পথ বন্ধ করার বিষয়টি সাংবাদিক মনির রাঢ়ীকে জানান। মনির রাঢ়ী আলাউদ্দিন রাঢ়ীর আপন চাচাত ভাই এবং একই বাড়ির বাসিন্দা।
মনির প্রতিবেশীদের চলাচলের পথে প্রাচীর নির্মাণ না করতে তার চাচাতো ভাই আলাউদ্দিনকে অনুরোধ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আলাউদ্দিন ও তার সন্তানরা মনিরের সঙ্গে বাকবিণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।
এক পর্যায়ে আলাউদ্দিন রাঢ়ীর হুকুমে রাসেল রাঢ়ী হত্যার উদ্দেশে মনির রাঢ়ীর মাথায় কোদাল দিয়ে কোপ দেন এবং সোহাগ রাঢ়ী হাতুরি দিয়ে পিটিয়ে আহত করেন। পরে গুরুতর অবস্থায় মনিরকে উদ্ধার করে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজে আনা হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা স্থানান্তর করা হয়। পরে ঢাকা নেওয়ার পথে মনির মারা যান। এ ঘটনায় মনিরের ভাই জসিম উদ্দিন মুলাদী থানায় মামলা করেন।
২০১১ সালের ১৭ মার্চ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মো. কায়কোবাদ পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দেন। ২০১৪ সালের ২ জুলাই এক আসামি মোতালেব মারা যান। ২০১৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আরেক আসামি আলেয়া বেগমকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে আলাউদ্দিন ও তার দুই ছেলে সোহাগ ও রাসেলের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
মামলার ২২ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও বিচার শেষে ২০১৬ সালে বরিশালের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ সুদীপ্ত দাস রায় ঘোষণা করেন। রায়ে দণ্ডিতরা হলেন- মুলাদী পৌর শহরের বাসিন্দা আলাউদ্দিন রাঢ়ী ও তার ছেলে রাসেল রাঢ়ী।
মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আলাউদ্দিন রাঢ়ীর বড় ছেলে সোহাগ রাঢ়ীকে খালাস দেয় আদালত। পরে ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা আপিল করেন।
এমএ/এসএ/