অপহরণের মামলায় ১৪ বছর কারাদণ্ড, হাইকোর্টে খালাস
ব্রাহ্মণকন্যা সুস্মিতাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন হরিজন সম্প্রদায়ের ছেলে তুষার দাস ওরফে রাজ। পরে নাবালিকা মেয়েকে অপহরণের অভিযোগে মামলা করেছিলেন সুস্মিতার মা। সেই মামলায় বিচারিক আদালতে ১৪ বছর কারাদণ্ড পান রাজ। অবশেষে আপিল শুনানি শেষে হাইকোর্টে খালাস পেলেন তিনি।
রোববার (১২ ডিসেম্বর) বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।
২০১৯ সালে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, শরীয়তপুরের সুস্মিতা ও রাজ ভালোবেসে বিয়ে করেন প্রায় দুই বছর আগে। এরই মধ্যে তাদের কোলজুড়ে এসেছে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান। কিন্তু এখনও তাদের বিয়ে মেনে নিতে পারেননি সুস্মিতার বাবা-মা।
মেয়ে ‘নাবালিকা’ এমন অভিযোগে সুস্মিতার মা অপহরণ ও ধর্ষণের মামলা করেন রাজের নামে। ওই মামলায় ৮ মাসের মতো জেলও খাটেন তিনি। বিচার শেষে এ মামলায় তাকে ২০১৯ সালের ২৩ জুলাই ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন শরীয়তপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক।
রায়ে বলা হয়, আসামি তুষার দাস ওরফে রাজ ভুক্তভোগী সুস্মিতা ওরফে অদিতিকে অপহরণের পর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে নিয়ে বিয়ে করেন। আসামি শিশু সুস্মিতাকে বিয়ে করবেন—এ আশ্বাস দিয়ে অপহরণ করেছেন, যা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ কারণে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হলো।
বিচারক রায়ে বলেন, আসামি রাজ ধর্ষণ করেছে মর্মে চাক্ষুস সাক্ষী নেই। ভুক্তভোগীর সঙ্গে আসামির দৈহিক মেলামেশা হয়েছিল কি না এ মর্মে ২২ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে কোনো বক্তব্য দেননি সুস্মিতা। তবে, তিনি তার জবানবন্দির শেষের দিকে বলেন, তিনি (সুস্মিতা) স্বেচ্ছায় আসামিকে বিয়ে করেছেন ও বিয়ের পর তার সঙ্গে ১১ দিন ঘর-সংসার করেছেন। উভয়পক্ষের স্বীকৃতি মতে গত ৩ মে সুস্মিতা এক কন্যাসন্তান জন্ম দেন। এ সন্তানের জন্মতারিখ পর্যালোচনা করে ধরে নেওয়া যায়, জন্মের কমপক্ষে ১০ মাস ১০ দিন আগে সে তার মায়ের গর্ভে এসেছিল।
‘ওপরের আলোচনায় এ কথা পরিষ্কার যে, সুস্মিতার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছিল আসামি রাজ। কিন্তু, সেটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় অপরাধ কি না, রাষ্ট্রপক্ষ উপযুক্ত সাক্ষ্য-প্রমাণের মাধ্যমে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে না পারায় তাকে ওই ধারায় সাজা দেওয়া যায় না।’
রায়ের পর গত ২৩ জুলাই রাজকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে তিনি আপিল করেন। তার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে ২০১৯ সালের ১ আগস্ট তাকে জামিন দেন হাইকোর্ট। পরে ৭ আগস্ট কাশিমপুর কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে আসেন রাজ।
রাজের জামিনের পর সুস্মিতা সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আদালত আমাকে ন্যায়বিচার দিয়েছে। জামিন আদেশে ছোট্ট মেয়েটা ওর বাবাকে কাছে পাবে। আমি ভালোবেসে স্বেচ্ছায় তাকে বিয়ে করেছি। জাতি-ধর্ম-বর্ণ বিবেচনা না করে সবাইকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। আমার বাবাকে বলতে চাই—‘তোমরা ভালো ও সুখে থেক। যদি পার আমার কাছে এস, এসে সবকিছু মেনে নাও। কারণ, ভালোবাসায় কোনো উঁচু-নিচু বর্ণ নেই।’
এমএ/এসএন