১৪ বছরের আইনি লড়াই শেষে পরিবারের কাছে ফিরলেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ
ছবি: সংগৃহীত
দীর্ঘ ১৪ বছরের আইনি লড়াই শেষে মুক্ত মানুষ হিসেবে পরিবারের কাছে ফিরলেন উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। ৫২ বছর বয়সী অ্যাসাঞ্জ ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে করে স্থানীয় সময় বুধবার রাত ৮ টার দিকে অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরায় পৌঁছান। এসময় তাঁর স্ত্রী স্টেলা অ্যাসাঞ্জ, বাবা জন শিপটনসহ পরিবার উপস্থিত ছিলেন। এসময় তাঁকে পেয়ে জড়িয়ে ধরেন পরিবারের সদস্যরা।
এদিকে, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ দেশে ফেরার পর এক সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনী আলবানিজ বলেছেন, ‘ জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে দেশে ফেরাতে সহযোগিতার জন্য আমেরিকা এবং ব্রিটেনকে ধন্যবাদ, আমি খুব আনন্দিত যে মামলাটি শেষ হয়েছে।’
এসময় তিনি জানান জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে সরাসরি দেখা হয়নি তবে ফোনে কথা হয়েছে।
এদিকে এ বিষয় নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কের কোনো অবনতি হবে কিনা এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ আমেরিকার সঙ্গে আমাদের খুবই ইতিবাচক সম্পর্ক এবং বাইডেনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। আমি মনে করি আমাদের সম্পর্ক আগের মতোই থাকবে।’
জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ দেশটির প্রধানমন্ত্রী আলবানিজকে বলেছেন, ‘আপনি আমার জীবন বাঁচিয়েছেন।’
বিবিসি জানিয়েছে, আজ বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের নর্দান মারিয়ানা আইল্যান্ডসের একটি আদালতে হাজির হয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত তথ্য ফাঁসের ষড়যন্ত্রে সঙ্গে জড়িত থাকার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেন উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। এরপর শুনানি শেষে অ্যাসাঞ্জকে মুক্ত ঘোষণা করেন আদালত। এর পরে তিনি নিজ দেশ অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে রাওয়া দেন। জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে মুক্ত ঘোষণার মধ্যে দিয়ে ১৪ বছরের আইনি লড়াইয়ের অবসান হলো আজ।
অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ ২০০৬ সালে উইকিলিকস প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১০ সালে উইকিলিকস থেকে মার্কিন সামরিক বাহিনীর বহু গোপন নথি প্রকাশ করে দেন তিনি। এতে ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ গোপন সামরিক-কূটনৈতিক নথি প্রকাশ্য হয়ে পড়ে। এরপর সারা বিশ্বে শোরগোল পড়ে যায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের রোষানলে পড়েন অ্যাসাঞ্জ। তাঁর বিরুদ্ধে ১৮টি মামলার তদন্ত শুরু করে মার্কিন বিচার বিভাগ।
তখন লন্ডনে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর দুই বছর আত্মগোপনে ছিলেন। এরপর ২০১২ সালে ইকুয়েডরের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ করেন।
তার পর থেকেই লন্ডনে ইকুয়েডরের দূতাবাসে ছিলেন অ্যাসাঞ্জ। অবশেষে ইকুয়েডরে তাঁর নাগরিকত্বের মেয়াদ শেষ হলে, ২০১৯ সালে তাঁকে গ্রেপ্তার করে জেলে ভরে ব্রিটিশ পুলিশ।
পাঁচ বছরের বেশি সময় অ্যাসাঞ্জ যুক্তরাজ্যের কারাগারে ছিলেন। সেখান থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালাচ্ছিলেন তিনি। গত সোমবার জানা যায়, মার্কিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তির ভিত্তিতে তিনি মুক্তি পেতে যাচ্ছেন। চুক্তিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের গোপন তথ্য ফাঁসের যে ফৌজদারি অভিযোগ অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, আদালতে তিনি তা স্বীকার করবেন।
এরপর চুক্তি অনুযায়ী তিনি আজ যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপটিতে যান। সেখানকার আদালতে তিন ঘণ্টার শুনানিতে অংশ নেন এবং নিজের দোষ স্বীকার করেন অ্যাসাঞ্জ।
তবে দোষ স্বীকার করলেও অ্যাসাঞ্জ বলেছেন, তিনি মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর ওপর আস্থা রাখেন। আর সেটা মুক্তমতের চর্চা এবং তাঁর কর্মকাণ্ডকে সুরক্ষা দেয়।
প্রধান ডিস্ট্রিক্ট জজ রামনা ভি মাংলনা অ্যাসাঞ্জের স্বীকারোক্তি গ্রহণ করেন। এরই মধ্যে অ্যাসাঞ্জ যুক্তরাজ্যের কারাগারে পাঁচ বছর সাজা ভোগ করে ফেলেছেন, তাই তাঁকে মুক্ত ঘোষণা করেন আদালত।
অ্যাসাঞ্জের আইনজীবী ব্যারি পোলাক বলেন, ‘আমার মক্কেলকে গুপ্তচরবৃত্তি আইনে অভিযুক্ত করা মোটেও উচিত হয়নি। তিনি এমন কাজ করেছেন, যা সাংবাদিকেরা নিয়মিতই করেন।’ উইকিলিকসের কাজ অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
শুনানি শেষে আদালতের বাইরে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন অ্যাসাঞ্জ। এরপর তিনি একটি সাদা রঙের এসইউভি গাড়িতে ওঠেন।
কৌঁসুলিরা জানিয়েছেন, অ্যাসাঞ্জ যুক্তরাষ্ট্রের মুল ভূখণ্ডে যেতে রাজি না হওয়ায় এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে কাছাকাছি হওয়ায় নর্দার্ন মারিয়ানা আইল্যান্ডসের সাইপান দ্বীপ এলাকার আদালতকে বিচার কাজের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল।