অট্টালিকার ওজনে নেমে যাচ্ছে নিউ ইয়র্ক!
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী নিউ ইয়র্ক আকাশচুম্বী অট্টালিকাগুলোর কারণে নেমে যাচ্ছে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। একইসঙ্গে বৈশ্বিক উষ্ণতা ত্বরান্বিত হওয়ার ফলে শহরটিতে প্লাবন ঝুঁকিও বাড়ছে।
গবেষকদের মতে, শহরটি প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১ থেকে ২ মিলিমিটার নেমে যাচ্ছে, নিউ ইয়র্ক শহরের কিছু এলাকায় এই হার দ্বিগুণেরও বেশি। ১৯৫০ সাল থেকে নিউ ইয়র্ক সিটির চারপাশে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে ৯ ইঞ্চি বা ২২ সেন্টিমিটার।
গবেষকরা আশঙ্কা করছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এই শতাব্দীর শেষের দিকে বড় বন্যার ঘটনাগুলি এখন থেকে আরও গুরুতর হতে পারে এবং হারিকেনের মতো মারাত্মক আবহাওয়ায় পরিণত হতে পারে।
আর্থস ফিউচার জার্নাল'এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনি তথ্য দিয়েছেন গবেষকরা। তাদের দাবি, নিউ ইয়র্ক শহরের ৮ দশমিক ৪ মিলিয়ন মানুষ বণ্যাসহ বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকির সম্মুখীন।
গবেষকরা বলছেন, কেবল নিউইয়র্ক সিটি নয় জলবায়ু সংকট তীব্র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য উপকূলীয় শহরেও এ ঝুঁকি বৃধি পাবে। টেকটোনিক এবং নৃতাত্ত্বিকতা হ্রাসের সংমিশ্রণ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং হারিকেনের ক্রমবর্ধমান তীব্রতা উপকূলীয় এবং নদীতীরবর্তী অঞ্চলে সমস্যা ত্বরান্বিত করবে।
এই গবেষণায় বিশেষজ্ঞরা নিউ ইয়র্ক শহরের কাঠামোর গাণিতিক বিশ্লেষণ করেছেন, যার মধ্যে বিখ্যাত এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং এবং ক্রাইসলার বিল্ডিং রয়েছে, যার ওজন মোট ১ দশমিক ৬৮ ট্রিলিয়ন পাউন্ড।
গবেষণায় বলা হয়েছে, লোয়ার ম্যানহাটন, ব্রুকলিন, কুইন্স এবং লং আইল্যান্ডের কিছু অংশ কমে যাওয়ার লক্ষণ দেখা গেছে। বিশ্বব্যাপী উপকূলীয় শহর যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি নির্মাণ ঘনত্ব এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সংমিশ্রণে প্লাবনের ঝুঁকিও বাড়ছে।
উপকূলীয়, নদী বা লেকফ্রন্ট সেটিংসে নির্মিত প্রতিটি অতিরিক্ত উচ্চ ভবন ভবিষ্যতে বন্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে এবং সেই দুর্যোগ প্রশমনের কৌশলগুলি সম্পর্কে সচেতন করাই এই গবেষণা পত্রের মূল উদ্দেশ্য বলে মন্তব্য করেছেন গবেষকরা।
তাদের দাবি, এই বিশাল কাঠামোগুলো মাটিকে নিচের দিকে যেতে বাধ্য করছে। এখানে বেডরক, অন্যান্য বালির মিশ্রণ এবং কাদামাটিসহ বেশ কিছু উপকরণ রয়েছে যা ডুবে যাওয়ার জন্য অবদান রাখছে। এই ডুবন্ত প্রভাব মার্কিন পূর্ব উপকূলেও দেখা গেছে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপের প্রধান গবেষক এবং ভূ-পদার্থবিজ্ঞানী টম পার্সনস বলেছেন, 'এখনই আতঙ্কিত হওয়ার মতো বিষয় এটি নয়, তবে চলমান এই প্রক্রিয়াটি বন্যায় প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।'
তিনি আরও বলেন, 'মাটি যত নরম, ভবনগুলোর চাপ তত বেশি। নিউ ইয়র্কে এত বড় অট্টালিকা তৈরি করা কোনও ভুল নয়। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে প্রতিবার যখন সেখানে কিছু তৈরি করা হবে ততোবার মাটিতে আরও কিছুটা নেমে যেতে চাপ প্রয়োগ করা হবে।'
২০১২ সালে নিউ ইয়র্ক শহরে আঘাত হানে হারিকেন স্যান্ডি যা সাবওয়েগুলোকে প্লাবিত করেছিল এবং বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নসহ বেশ কিছু ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল৷ এর পরে হারিকেন ইডার আঘাতেও শহরটির বেশ কয়েকজন লোক ডুবে যায়। বিজ্ঞানীদের মতে, দুটি ঘটনাই ঘটেছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে।
টম পার্সনস বলেন, 'নিউ ইয়র্ক এবং অন্যান্য উপকূলীয় শহরগুলিকে এর জন্য পরিকল্পনা করতে হবে। বারবার সমুদ্রের জলের সংস্পর্শে আসলে ইস্পাত ক্ষয় হতে পারে যার ফলে ভবনগুলো অস্থিতিশীল হতে পারে, যা স্পষ্টতই কেউই চান না। এ ছাড়া বন্যার কারনে মানুষ মারা যায়, যা সবচেয়ে বড় উদ্বেগ।'
/এএস