যুক্তরাষ্ট্রে বিমান চলাচল বাতিল
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সকল অভ্যন্তরীন ও বর্হিগমন বিমান চলাচল সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্রীয় বিমান প্রশাসন। এমনকি দেশের ওপর দিয়েও সব বিমান চলাচল নিষিদ্ধ করেছে দেশটি।
একরাতের মধ্যে পাইলটদের প্রি-ফ্লাইট সেফটি নোটিশ ব্যবস্থা প্রযুক্তিগতভাবে নষ্ট হয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বুধবার (১১ জানুয়ারি) থেকে এই সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে।
দি ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএসএ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিমান কোম্পানিগুলোকে পশ্চিমা সময় অন্তত সকাল নয়টা পর্যন্ত তাদের বিমান চলাচল বন্ধ করতে তারা নির্দেশ প্রদান করেছেন। এই সময়ের মধ্যে কোনো বিমান চালানো যাবে না। এর মধ্যে তারা ‘নটামস’ বা ‘নোটিশ টু এয়ার মিশনস সিস্টেমস’ চালু করতে চেষ্টা করবেন। এই ব্যবস্থা আবার চালু না হওয়া পর্যন্ত সব বিমান চলাচল বন্ধ রাখতে হবে।
পরে সংস্থাটি আবার জানিয়েছে, আবার ফ্লাইট চালানো শুরু হয়েছে নিউইয়র্ক লিবার্টি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট ও হাটসফিল্ড-জ্যাকসন আটলান্টা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে। অন্য বিমানবন্দরগুলোতে আবার বহির্গমন শুরু করা যাবে সকাল ৯টার মধ্যে।
এই পরিস্থিতির সঙ্গে পরিচিত একটি বিমানপথ সূত্র জানিয়েছে, বিমানপথগুলো হয়তো গ্রাউন্ড ডিলে প্রোগ্রামে বা স্থানে দেরি করার ব্যবস্থা প্রয়োগ করতে পারে। এটি হয়ত ভবিষ্যতের সময় ব্যবস্থাপনার বিষয়গুলোকে নেতৃত্ব দিতে পারে।
এর আগে এফএসএ একটি বিবৃতি তে জানিয়েছিল, ‘আমরা তথ্যগুলোর শুদ্ধতার চূড়ান্ত হ্যাঁ বোধক পরীক্ষাগুলো করছি এবং আবার ব্যবস্থাটিকে ভর্তি করছি। ন্যাশনাল এয়ারস্পেস সিস্টেমসের অপারেশন ব্যবস্থার পুরোটাই আক্রান্ত হয়েছে। যখনই আমরা উন্নতি করতে পারব; সঙ্গে, সঙ্গে আপডেট বা উন্নয়ন তথ্যগুলো জানিয়ে দেব।’
আমেরিকা মহাদেশের বিমানপথগুলো, যাদের সহযোগিতায় মার্কিন বিমানপথগুলোকে প্রতিনিধিত্ব করে, তারা জানিয়েছেন, এই ব্যর্থতার ফলে নির্দিষ্টভাবে অপারেশনগুলো পরিচালনা করতে দেরি হচ্ছে।
প্রধান মার্কিন বিমান চলাচল কোম্পানির মধ্যে আছে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স, ডেল্টা ও আমেরিকান এয়ারলাইনস। তারা সবাই বলেছেন, এই পরিস্থিতিতে সাড়া দিয়ে তাদের সব ফ্লাইটকে মাটিতে বসিয়ে রেখেছেন।
এই বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তার দেশে দ্বিতীয় বড় বিমান পথের দুর্যোগের এই ব্যর্থতার কারণ কী সেটির সঙ্গে, সঙ্গে কোনো তথ্য ছিল না।
তিনি আরও জানিয়েছেন তাকে এই পরিস্থিতি সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানানো হয়েছে এবং তিনি চলাচল মন্ত্রী পিট বুটেজেজের সঙ্গে অন্তরঙ্গভাবে কাজ করছেন। ‘আমি কেবলই বুটেজেজের সঙ্গে কথা বলেছি’, তিনি হোয়াইট হাউজের ভেতরে সাংবাদিকদের বলেছেন। তিনি আরও বলেছেন, ‘তারা জানেন না কারণটি কী। তবে তার সঙ্গে কমপক্ষে ১০ মিনিট ফোনে ছিলাম। আমি তাদের জানিয়েছি, যখনই তারা খুঁজে বের করতে পারবেন, আমাকে সরাসরি রিপোর্ট করবেন। বিমানগুলো সমস্যার সমাধান হবার আগ পর্যন্ত যেন নিরাপদে ল্যান্ড করে থাকে, যেন উড়ে না যায়। তারা আশা করছেন কয়েক ঘন্টার মধ্যে কী ঘটেছে সে বিষয়ে তাদের একটি ভালো ধারণা হবে এবং তখন তারা জানাবেন।’
এটি কী কোনো ধরণের সাইবার আক্রমণ? উত্তরে মাকিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, ‘তারা জানেন না, তারা খুঁজে বের করবেন।’
এর আগে হোয়াইট হাউজের গণমাধ্যম সচিব কারিন জন-পিয়েরি একটি বিবৃতিতে জানিয়েছিলেন, এই বিষয়ে সাইবার আক্রমণের কোনো তথ্য বা প্রমাণ কোনোখানে ছিল না। তবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার পরিবহন মন্ত্রনালয়কে একটি তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
ফ্ল্যাইট অ্যাওয়ার, যে ব্যবস্থাটি দেরী ও বাতিল করার কারণগুলো নিয়ে কাজ করে-তারা প্রদর্শন করেছেন যে, ৪ হাজারের বেশি ফ্লাইট যুক্তরাষ্ট্র থেকে যেতে দেরি করেছে সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের মধ্যে এর এর মধ্যে ৬শ ৯৬টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে।
এর আগে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল ব্যবস্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংযুক্ত আমেস্টারডাম ও প্যারিসের বিমানগুলো উড়ে চলছিল। স্কিপহোল নামের আমেস্টারডামের একজন মুখপাত্র সিএনএনকে জানিয়েছেন, ‘চারদিকে কাজ করতে একটি নির্দেশ জারি করা হয়েছে এবং আমস্টারডাম থেকে বিমানগুলো চলে যাচ্ছিল তখনো।’
এর আগে প্যারিসের চার্লস দ্য গল এয়ারপোর্টের কোনো বিমান উড্ডয়ন বাতিল করা হয়নি। বিমানবন্দরের গণমাধ্যম অফিস জানিয়েছে, তবে তাদের দেরি করা আশা করা হচ্ছিল।
তার আগে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুট এয়ারপোর্টও সিএনএনকে জানিয়েছে, তারা আক্রান্ত হননি। ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনের হিথ্রো এয়ারপোর্টের একজন মুখপাত্র সিএনএনকে বলেছেন, তারা এর আগে তাদের ফ্লাইটগুলোকে বাতিল করার বিষয়ে সচেতন ছিলেন না এবং যেগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে সম্প্রতি উড়ে গিয়েছে, সেগুলোর কোনো অসুবিধা হচ্ছে বলেও কোনো খবর পাননি।’ তবে সেখানে এরপর যাত্রীরা নির্দিষ্টভাবে দেরি করার রিপোর্ট করেছেন। শবনম আমিনি নামের একজন বিশেষ নারী যাত্রী সিএনএনকে বলেছেন, তিনি ও অন্য ভ্রমণকারীদের আমেরিকানস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৫১ ডালাসের উদ্দেশ্যে উড়ে যাবার সময় বসে থাকতে হয়েছে অন্তত তিনটি ঘন্টা হিথ্রোতে এফএএর বিভ্রাটের কারণে। তিনি বলেছেন, তাদের দেরি হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে তবে তাদের বিমানের মধ্যে বসেই থাকতে হয়েছে।
বাণিজ্যিক বিমানগুলোর পাইলট বা চালকরা নটামস রিয়েল টাইম ইনফরমেশন ফ্লাইটের বিপদগুলো ও বিধিনিষেধের জন্য ব্যবহার করেন। এফএএর তথ্যব্যবস্থা কার্যকর না থাকার ফলে অন্য তথ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে কিছু ফ্লাইট নিশ্চিন্ত নিরাপত্তা তথ্যাবলী সংগ্রহ করতে পারবে।
ওএফএস/এএস