যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী শিখ বিচারক মনপ্রীত মনিকা সিং
ভারতীয় বংশোদ্ভুত মার্কিন নাগরিক মনপ্রীত মনিকা সিং যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের হ্যারিস কাউন্টি সিভিল কোর্টের একজন বিচারক হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন। তিনিই যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম শিখ নারী বিচারক। আইনী ধারা-৪ মোতাবেক শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) তিনি শপথ নিয়েছেন। সাধারণ মামলাগুলোর বিচারপতি হিসেবে কাজ করবেন তিনি।
বিচারকদের শপথ অনুষ্ঠানের পর মনিকা সিং বলেছেন, 'এই পবিত্র শপথ আমার কাছে অনেক কিছু। কারণ আমি ‘এইচ-টাউন কে (হিউসটন নামের বিরাট মহানগরের ডাকনাম) সবচেয়ে ভালোবাসি। আজকে পর্যন্ত সে আমাদের জন্য যা করেছে, সেজন্য আমি তার প্রতি খুশি।'
তার আগে এই অঙ্গরাজ্যের প্রথম দক্ষিণ এশীয় বিচারক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন রাভি সান্ধিল। তিনি মনপ্রীত মনিকা সিংয়ের শপথানুষ্ঠান পরিচালনা করেছেন। তাদের এই শপথে কোর্টরুম ভরা বিচারক ও আইনজীবি ছিল।
সান্ধিল বলেছেন, ‘আসলে সত্যিই শিখ সমাজের জন্য এটি একটি বড় ঘটনা। তারা যখন কাউকে দেখেন ভিন্ন গাত্র বর্ণের, এমন কেউ সামান্য আলাদা, তারা মনে করেন, তাদের কাছে এই মানুষটি লভ্য হয়েছেন। আর মনপ্রীত কেবল শিখদের একজন দূতই নন, তিনি ভিন্ন বর্ণের নারীদেরও একজন অগ্রদূত।'
প্রকাশিত সংবাদগুলোর ভিত্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় পাঁচ লাখ শিখ বসবাস করেন। তাদের মধ্যে ২০ হাজারের বাস হিউসটনে। এর আগে কোনোদিনই কোনো শিখ নারী এই কাউন্টিরও বিচারক ছিলেন না।
হিউসটন মহানগরের মেয়র সিলভেস্টার টার্নার বলেছেন, ‘শিখ সমাজের জন্য এই দিনটি ছিল একটি গর্বের দিন। তবে দিনটি নানা বর্ণের মানুষদেরও একটি গর্বের দিন। সবাই হিউসটন শহরের বৈচিত্র্য আদালতের বৈচিত্র্যে দেখলেন।’
মনপ্রীত মনিকা সিংয়ের জীবনী
তিনি জন্মেছেন ও বড় হয়েছেন হিউসটন মহানগরে। তিনি এই শহরের হ্যারিস কাউন্টির দক্ষিণপশ্চিমের শহর ব্যালেতে বসবাস করেন। তার স্বামী ও দুজন সন্তান আছে। ১৯ বছর আগে মনদ্বীপকে বিয়ে করেন তিনি। তার বাবা এ জে একজন খ্যাতনামা নকশা স্থপতি, ১৯৭০ দশকের প্রথম দিকে ১৯৬৫ সালের অভিবাসী আইন অনুসারে একটি গ্রিন কার্ড লাভের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এসে কর্মজীবনের শুরু করেন।
মনিকা পড়ালেখা করেছেন ক্লাইন ফরেস্ট হাই স্কুলে। তিনি উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেছেন ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট অস্টিনে এবং এরপর আইনের উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন সাউথ টেক্সাস কলেজ অব ল’তে। তিনি ২০২০ সালে সবদিকে দক্ষ ও সবচেয়ে ভালো অ্যার্টনি হিসেবে হিউসটন ইয়ং লইায়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের বিচারে ‘রানার-আপ’ পদক জয় করেছেন। অসাধারণ এই কর্মজীবনের সুবাদে ২০১৭ সালে তিনি জয় করেছেন দি সাউথ এশিয়ান বার অ্যাসোসিয়েশনের ‘ডিসটিংগুইশড মেম্বার অ্যাওয়ার্ড’।
মনপ্রীত মনিকা সিং আইনী পেশায় সাফল্য ও মেধার সঙ্গে যুক্ত আছেন টানা ২০ বছর। তিনি মামলা লড়েছেন শতাধিক। তিনি জাতীয়, অঙ্গরাজ্য, শহর ও কাউন্টির উল্লেখযোগ্য আইনী অধিকার সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্ত এবং ‘দি আমেরিকান সিভিল লিবাটিজ ইউনিয়ন’র টেক্সাস অঙ্গরাজ্য শাখার পরিচালনা পর্ষদের একজন সদস্য। এছাড়াও ‘দি টেক্সাস লাইসিয়াম (টেক্সাস সাহিত্য সমিতি)’ এবং ‘দি শিখ কোয়ালিশন’রও একজন ট্রাস্টি হিসেবে কাজ করছেন তিনি।
এছাড়াও তিনি ‘দি এক্সক্লুসিভ আমেরিকান বোড অব ট্রায়াল অ্যাডভোকেটস’এ একজন চ্যাপ্টার প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের টেক্সাস বারে তিনি ‘সিএলসি (অনলাইন কন্টিনিউইং লিগ্যাল এডুকেশন)’এ শিক্ষক হিসেবে পড়াচ্ছেন।
গত বছরের নভেম্বরে হ্যারিস কাউন্টি সিভিল কোর্টের একজন বিচারক হিসেবে নিজের প্রতিদ্বদ্বীতার কথা ঘোষণা করেছিলেন মনপ্রীত মনিকা সিং। তিনি টুইটারে লিখেছিলেন, ‘আজ আমি উত্তেজিত ও গর্বিত, হ্যারিস কাউন্টি সিভিল কোর্টে আইনী ধারা-৪ অনুসারে নিজেকে বিচারক পদে ঘোষণা করে। হিউসটনের একজন স্থানীয় অধিবাসী হিসেবে আমার আশা আছে, আমার সমাজকে প্রতিনিধিত্ব করব-যারা নানাভাবে মানুষের বৈচিত্র্যতাকে পুরস্কার প্রদান করছেন ও তাদের নেতা হিসেবে আমি কাজ করব।’
তিনি জয়লাভের পর ভারতের বিখ্যাত সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেছেন, ‘আমার সমাজকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারা একটি সম্মানের কাজ। আমি আশা করি, আমার প্রতি সারা বিশ্বের সকল শিখের আর্শীবাদ থাকবে।’
ওএফএস/এএস